Quantcast
Channel: My story Troubled Galaxy Destroyed dreams
Viewing all articles
Browse latest Browse all 6050

চিটফান্ড আসলে বহুজনের বিরুদ্ধে ডিভাইন প্রভুদের যুদ্ধের শঙ্খনাদ।

$
0
0

চিটফান্ড আসলে বহুজনের বিরুদ্ধে ডিভাইন প্রভুদের যুদ্ধের শঙ্খনাদ।

শরদিন্দু বিশ্বাস

চিটফান্ড আসলে বহুজনের বিরুদ্ধে ডিভাইন প্রভুদের যুদ্ধের শঙ্খনাদ। 

সারদার জালিয়াতি কান্ড সামনে আসার পরে বেশ কয়েকটি আশঙ্কার কথা আলতো করে বাতাসে ভাসিয়ে দেবার চেষ্টা হচ্ছে। 
ক্রমশঃ জোরালো করে তোলা হচ্ছে এই আশঙ্কার পরিবেশ। পালা বন্দনার মতো গাওনা শুরু হয়েছে যে চিটফান্ড বন্ধ হলেঃ 
১) বাংলার ফুটবলের উপর বিরাট প্রভাব পড়বে।
২) বাংলার সুমহান ঐতিহ্য দুর্গা পূজার জৌলুস কমে যাবে।
৩) টিভি সিরিয়ালগুলির উপর প্রভাব পড়বে।
৪) সিনেমা শিল্পের অনেক তাবড় প্রযোজক পালিয়ে যাবেন।
৫) যাত্রা শিল্প পাততাড়ি গুটাতে বসবে। বড় চিত্র তারকাদের
পাওয়া যাবে না। 
৬) অনেক খবরের কাগজ কোম্পানি পথে বসবে।
৭) অনেক টিভি চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাবে।
৮) বড় বড় আবাসন প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।
৯) সান সিটি,ফান সিটি,গ্রীন সিটি বা হাইল্যান্ড,স্কাইল্যান্ড আগাছায় ভরে যাবে। 
১০) সাংবাদিকরা বেকার হয়ে রাস্তায় রাস্তায় কেঁদে বেড়াবে। ইত্যাদি...ইত্যাদি।

অর্থাৎ চিটফান্ড  যদি বন্ধ হয়ে যায় বাবুবিবিদের ও তাদের ছানাপুনাদের সব ফুটানি বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের ঝাঁচকচকে
গাড়িগুলির তেল ফুরিয়ে যাবে। কেতাদুরস্ত ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডারদের জলপানি বন্ধ হয়ে যাবে। বুদ্ধিজীবীরা উচ্ছিষ্ট পাবেনা।  টিভি চ্যানেলে এসে গুলতানী করা যাবেনা। রোজ রোজ মোচ্ছব করার ভাঁড়ারে টান পড়বে। বেকার হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ফেউ ফেউ করে ঘুরে বেড়াতে হবে তাদের চাঁদির চামচ মুখে নিয়ে জন্মানো ছানাপুনাদের। সুতরাং যে ভাবেই হোক বহুজন সমাজের নিরন্ন মানুষের রক্ত শুষে খাবার এই জালিয়াতি ব্যবসার সুযোগ করে দিতে হবে বাবু-বিবির ছানাপুনাদের এবং তাদের পোষ্য বশংবদদের। তাদের শ্রম এবং উৎপাদনের সমস্তটাই আত্মসাৎ করতে হবে। তাই যে যাই বলুক না কেন, বহুজন সমাজের মাথার উপর কাঁঠাল রেখে কোষ কেঁড়ে খাওয়ার নীতিকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করে ফেলতে হবে। এটাই উন্নয়নের আধুনিক পরিভাষা। অর্থনৈ্তিক বিকাশের একমাত্র অভিমুখ!   

বহুজন সমাজ কি এমনই? এতোটা সহিষ্ণু ! রক্ত বীজের ভান্ডার! মারলেও মরেনা। পদ দলিত করলেও অবনত হয়ে সহ্য করে নেয় অনন্ত ক্লেশ। ধ্বংস করে দিলেও থেকে যায় ধ্বংসাবশেষ। উজাড় করে দিলেও থেকে যায় অস্তিত্ব। একী ভীরুতা না ক্ষমাশীলতা! অজ্ঞতা না অমায়ীকতা! মূর্খতা না জ্ঞানশীলতার ভবিষ্যবানী!মৃত্যু পথযাত্রী না সঞ্জীবনী সুধা প্রাপ্ত মেধা। পথভোলা পথিক না যুগ থেকে যুগান্তরের প্রাজ্ঞ  মুসাফির!

এমনি একটি আত্মান্বেষণের অবকাশ অবশ্যই দরকার ছিল বহুজন সমাজের পুনর্বিন্যাসের জন্য। দরকার ছিল আত্মবিশ্লেষণের। কার্যকারণের ফলাফলের উপর এমন নির্মম অভিঘাত না এই বোধদয় সম্ভব হতনা। এমন নিশ্চিত ভাবে চিহ্নিত হত না নিজেদের আর্থ সামাজিক অবস্থান।  চিহ্নিত হতনা শোষক ও শোষণ যন্ত্রের ছলাকলা বিদ্যার কারিকুরি। শুধু এটুকু বলতে পারি যে, নিজেদের ভিটে-মাটি,সঞ্চয়-সম্পদ সব কিছু খুইয়েও বহুজন সমাজের হাতে বেঁচে থাকবে একটা অভিজ্ঞতা।  যে অভিজ্ঞতা সঞ্জাত জ্ঞান আবার তাদের আন্তসামাজিক পুনর্গঠনের সহায়ক হয়ে উঠবে।   

এমনি হয়। এমনি হয়ে আসছে। বিবর্তনের সরণী বেয়ে বহুজন সমাজই রুখা মাটিকে রূপময় করে তুলছে। উশর মরুভূমিতে গড়ে তুলছে মরূদ্যান। অনাবাদী পতিত জমি হয়ে উঠছে শ্যামল শোভন। আর সেই সম্পদকে করায়ত্ব করতে, লুন্ঠন করতে নিরন্তর রচিত হয়েছে দুর্বৃত্তায়নের ফাঁদ। শোষণ যন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদকদের উৎপন্ন ফসল যুগ ধরে কেড়ে খাচ্ছে অনুৎপাদ অমানুষেরা। এতে ওরা লজ্জিত হয় না। কুণ্ঠিত হয় না। বরং দুর্বল হলেই ভোজের উৎসবে মেতে ওঠে। দাঁত নখ বেরিয়ে আসে। জিভ লকলক করে ওঠে। নিজেরাতো চেটেপুটে খায়। ভবিষ্যতের বালবাচ্চাদের জন্যেও তুলে রাখে বহুজনের হাড়। এটাই ওদের ধর্ম। এটাই  ওদের অর্থ। এটাই ওদের কাম। এটাই ওদের মোক্ষ। 

এবার নির্মাণের কাল। রাষ্ট্রীয় ভাগিদারী বুঝে নেবার কাল। ওদের তৈরি করা বিভেদের বেড়াকে দুপায়ে মাড়িয়ে ভাইয়ের আঙিনায় গিয়ে ভাইচারা স্থাপনের কাল। শুধু এই কাজটি সুনিশ্চিত ভাবে করতে পারলে বাকি কাজ এমনি হয়ে যাবে। এমনিতেই ওরা বহুজন সমাজকে খতম করার জন্য ময়দানে নেমে পড়েছে। এবার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। বহুজন সমাজের সারল্যের সুযোগ নিয়েই ওরা জালিয়াতির ব্যবসা চালিয়ে এসেছে এতদিন। ধ্বংস করে দিয়েছে বহুজনের স্থিতিশীল সমাজ। বৈচিত্রময় প্রকৃতির সুনিবিড় বন্ধনের সাথে সাথে নষ্ট করে দিয়েছে বর্ণময় সংস্কৃতি। ভুলিয়ে দিয়েছে আত্মপরিচয় ,আত্মগৌরব ও আত্মমর্যাদা।

এবার পরিষ্কার হয়ে গেছে যে এই আর্থ সামজিক ব্যবস্থায় কেবল বহুজনের ঘর লুণ্ঠিত হয়। বহুজন পথে বসে। লাভবান হয় ডিভাইন প্রভুর,তাদের বংশধরেরা এবং বশংবদেরা। ডিভাইন প্রভুদের মুখে উন্নয়নের এই উচ্চকিত অমৃতভাষণ আসলে বহুজনের বিরুদ্ধে পৈশাচিক যুদ্ধের শঙ্খনাদ।



শরদিন্দু উদ্দীপন 
আহ্বায়ক, সচেতন বাংলা 


Viewing all articles
Browse latest Browse all 6050

Trending Articles