রাজনৈতিক খুনোখুনি: বেশিরভাগই ঘটছে শাসক দলে, দায়ীও নিজেরাই
দলীয় নেতা-কর্মীদের রক্তে হাত রাঙাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সরকারের চলতি মেয়াদে যেসব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার বেশির ভাগেরই শিকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। আর নিজ দলীয় প্রতিপক্ষ বা বিবাদমান কোনও না কোনও গ্রুপের দ্বারা এসব হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন-আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক) গত ১৩ অক্টোবর এ বছরের ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) রাজনৈতিক সহিংসতা বিষয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, এ সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৫৪ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীন কোন্দলে নিহত হয়েছে ২৬ জন। যার মধ্যে ২৩ জনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনও না কোনও পর্যায়ের নেতা-কর্মী। তারা দলীয় বিবদমান গ্রুপের হাতে নিহত হয়েছে বলে আসক তার প্রতিবেদনে জানিয়েছে। অপরদিকে ৯ মাসে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির হাতে নিহত হয়েছে নিজ দলীয় ৩জন কর্মী।
এদিকে গত অক্টোবর থেকে চলতি মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় অন্তত ১৫জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদলের কর্মী। বাকি সকলেই ক্ষমতাসীন দলের কোনও না কোনও সংগঠনের নেতা বা কর্মী। পুলিশ এসব হত্যাকাণ্ডকে দুর্বৃত্তের কাজ বলে উল্লেখ করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে নিজ দলীয় নেতা-কর্মীর নাম উঠে আসছে।
আসক এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ বছরের নয় মাসে ১৭১টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় মোট ১২৮জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষে নিহত হয় ৭৪জন। বাকি ৫৪ জন নিহত হয় রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের হাতে।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে নিহত হয় ২৩ জন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সংঘর্ষে নিহত হয় ১ জন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের সংঘর্ষে নিহত হয় ৩জন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষে নিহত হয় ৫ জন এবং বিএনপির সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষে নিহত হয় ৩জন।
প্রসঙ্গত গত ২০ অক্টোবর মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১২-১৩ অর্থ বছরের তুলনায় ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে খুন বেড়েছে ৪৬৬টি। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে যেখানে খুন হয়েছিল ৪ হাজার ১৩৩জন সেখানে গেল ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে তা বেড়ে হয় ৪ হাজার ৫৯৯জন।