ভারত ভাগের বলি পূর্ব বাংলার শরণার্থিরা কি হিন্দু নয়?
পাকিস্তান আফগানিস্তান থেকে যারা পাঁচ বছর আগেও এসেছেন সেই হিন্দু ও শিখদের নাগরিকত্ব,আর বাংলাভাষী মানেই বাংলাদেশি,অনুপ্রবেশকারি?
মোদ্দাকথা বুঝতে হলে,স্বাধীনতার আগের ইতিহাসে ও ভারতভাগের প্রেক্ষাপটে ফিরে যেতে হয়,বাংলা শুধু নয়,অসম সহ পুর্বোত্তর ভারত,বিহার , উড়ীষ্যা সহ গোটা এই অনার্য বিজাতীয় ভূগোলের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও বন্চনার ইতিহাসে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষ সমস্ত জনগণই দিল্লীর একচেটিয়া ক্ষমতাদখলকারি আর্য হিন্দুদের গণসংহারের নিশানায়।
পলাশ বিশ্বাস
হিন্দুত্বের ধুয়ো তুলে লোকসভা ভোটে মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের ভোট দখল করে বিজেপি দু দুটো আসন জিতেছিল,ইতিহাস।
হিন্দুত্বের দোহাই দিয়ে ধর্মান্ধ মেরুকরণের হাই ওয়ে হয়ে বিজেপির নীল নক্শা এখন বাংলা দখলের।দলে দলে দল মত নির্বিশেষ বাঙালি এখন গৌরিক পতাকা হাতে বিজেপির ছাদনাতলায়।
আবার বাংলা ভারত ভাগের ইতিহাসের মুখোমুখি।
বাংলা এবং বাঙালির মনে নেই,ভারত ভাগে যেমন ভাগ হয়েছিল বাংলা তেমনিই ভাগ হয়েছিল পান্জাব।
যুদ্ধ স্তরে শিখ ও পান্জাবিদের পুনর্বাসন শেষ হল,ক্ষতিপুরণ মিলল জনে জনে,উদ্বাস্ত হয়ে ভারতে সীমানায় ঢোকা মাত্রেই তাঁরা ভারতের নাগরিকত্ব,অথচ সন সাতচল্লিশের সমস্ত বাঙালি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন হল না।
তাঁরা বাংলায় ও বাংলার বাইরে বেনাগরিক দিনমজুর বস্তিবাসী।
নামকা ওযাস্তে ট্রান্জিট ক্যাম্পে ডোল দিয়ে পচিয়ে রাখার পর যত্রকিন্চিত ছড়িয়ে দিয়ে সারা দেশে আদিবাসীবহুল জঙ্গল এলাকায় আন্দামান থেকে উত্তরাখন্ড,দন্ডকারণ্য থেকে দক্ষিন ভারতে যাদের পুনর্বাসন দেওয়া হল, তাঁদের অধিকাংশকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি।
তাঁরা সংরক্ষণ বন্চিত,রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব বন্চিত এবং মাতৃভাষা শিক্ষার ও তাঁদের অধিকার নেই।
তাঁরা ক্ষতিপুরণ পাননি কস্মিনকালে।
আজ জমি অতিশয় মহার্ঘ্য।
আদিবাসীদের যেমন বেদখল করা হচ্ছে জল জমি জঙ্গল থেকে,তেমনি উদ্বাস্তু এলাকার জমি কয়েক দশক পরে অতি মহার্ঘ্য।
সেই জমি দখলের লক্ষ্যে নূতন নাগরিকত্বা সংশোধনী,যার ঔচিত্য
নিয়ে মাননীয় ড. অশোক মিত্রকে পর্যন্তকলম ধরতে হল।
বিজেপি ঔ আইন প্রণয়ন করে সবার আগে উত্তরাখন্ডে 1950 সাল থেকে পুন্রবাসিত উদ্বাস্তুদের বেনাগরিক ঘোষণা করে।উড়ীষ্যায় নোয়াখানি দাঙ্গার শিকার উদ্বাস্তুদেরও বিদেশি বলে চিন্হিত করা হয়েছে।উত্তরপ্রদেশে চাকরির জন্য অনিবার্য মুলনিবাসী সার্টিপিকেট কোনো বাঙালিকে দেওয়া হচ্ছেনা।দিল্লী ও মুম্বাইয়ে বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি।
বাংলার সমর্থনে সে যাত্রায় উত্তরাখন্ডে উদ্বাস্তু বিতাড়ন ঠেকানো গেলেও সারা ভারতবর্ষে বিতাড়ন অভিযান,এমনকি এই পশ্চিম বঙ্গেও থেমে থেমে চলছে।
মোদী মহারাজ খুল্লমখুল্লা বলেছিলে যে যারা সাতচল্লিশের পর এসেছেন,বাক্স প্যাঁটরা গুছিয়ে রাখুন,ইলেক্শানের পরে তাঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।পরে তিনি ঘোষণা করেন যে হিন্দু উদ্বাস্তুরা শরণার্থী এবং মুসলমানেরা অনুপ্রবেশকারি।
বিজেপি লাগাতার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে,যে হিন্দু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
আবার নাগরিকত্ব সংশোধনী আনছে বিজেপি।
নূতন আইনে পাঁচ বছর আগেও পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যে শিখ ও হিন্দুরা ভারতে বসবাস করছেন তাঁদের ঢালাও নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু পূর্ব বাংলা থেকে আগত ভারত বিভাজনের বলি হিন্দুদের জন্য় এই আইনে নগরিকত্বের ব্যাবস্থা নেই।
একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গে মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়ে ফের সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্র সরকার নাগরিকত্ব বিল সংশোধন করতে যাওয়ায় এই সংশয় স্পষ্ট হয়েছে। সংসদের আগামী অধিবেশনে একটি সংশোধনী বিল পেশ করতে চলেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন নরেন্দ্র মোদি সরকার। কিন্তু প্রস্তাবিত খসড়া বিলে এদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেয়ার কোনো বার্তা নেই তাতে।
ঐ খসড়া বিলকেই আইন করার গ্রীন সিগন্যাল দিয়ে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং বলা বাহুল্য বিজেপির কথা মত বাঙালি হিন্দু শরণারথীদের নাগরিকত্ব দেওয়া এবং মুম্বাই থেকে উড়িয়ে এনে বাবুল সুপ্রিয়কে মন্ত্রী করে বাঙালির মাথায় কাঁঠাল ভাঙ্গা এক কথা নয়।
প্রসঙ্গতঃ ভোটব্যান্কের নিরিখেই বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্বের প্রশ্ন বিবেচনা করা বাঙালিদের অভ্যাস যেহেতু বাঙালিরা রাজনীতি ছাড়া কিছুই বোঝে না আজকাল।তাই বীর বিক্রমে বলা হচ্ছে, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, নদিয়া, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান এবং কোলকাতায় বসবাসকারী নাগরিকত্বহীন মানুষদের বড় অংশই মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। সব রাজনৈতিক দলই এই মতুয়াদের সমর্থন পেতে জোরালো প্রচেষ্টা শুরু করেছে।
সামনেই বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। এই কেন্দ্রের অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা ক্ষেত্রই তপশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। উপনির্বাচনে জয় পরাজয় অনেকটাই নির্ভর করবে মতুয়া ভোটের উপরই।
গত লোকসভা ভোটের প্রচারে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব নিয়েছিলেন। তিনি অনুপ্রবেশকারীদের পোটলা-পুটলি বেঁধে দেশ ছাড়ার জন্য তৈরি থাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য মতুয়া ভোটের কথা মাথায় রেখে খানিকটা বদলে যান তিনি।
নরেন্দ্র মোদি পরবর্তীতে ঘোষণা করেছিলেন, 'মতুয়ারা ভারতমাতার নামে স্লোগান দেন। তা সত্ত্বেওও তাদের অনেকেই আজও ভোটাধিকার পান নি কেন? আমরা ক্ষমতায় এলে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেয়ার ব্যবস্থা করব। অন্য দলগুলো এদের নিয়ে শুধু রাজনীতিই করে।'
পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি'র একমাত্র বিধায়ক শমিক ভট্টাচার্যও দাবি করেছেন, একমাত্র বিজেপিই পারে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দিতে। কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিং বলেছেন, উদ্বাস্তুদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কিছুই করছে না।
বনগাঁর প্রয়াত এমপি কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর অবশ্য মোদির বক্তব্যকে সেই সময় নস্যাৎ করে ঠাকুর বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন, 'নরেন্দ্র মোদি 'মতুয়া'শব্দের অর্থই জানেন না। উনি কাকাতুয়ার মত শেখান বুলি আওড়াচ্ছেন। মোদি যে উক্তি করেছেন, আমি তার তীব্র প্রতিবাদ করছি। উনি ভোটে চমক সৃষ্টি করার জন্যই এসব কথা বলছেন।'
কপিল বাবু আরো বলেছিলেন, 'এতদিন এসব কথা বলেননি কেন মোদি? মতুয়াদের সম্পর্কে উনি কিচ্ছু জানেন না। কি কাজ করবেন উনি, এসবের মানেটা কী? কথাটা ভেক।'
হিন্দু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে চলেছে বাংলাদেশ উদ্বাস্তু উন্নয়ন সংসদ। ওই সংগঠনের প্রেসিডেন্ট বিমল মজুমদারের অভিযোগ, 'বিজেপি কোনো দিনই আমাদের জন্য কিছু করবে না। আগের বিজপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারই আইন করে আমাদের নাগরিক হওয়া আটকে দিয়েছে।'
বিমল বাবুর মন্তব্যেই স্পষ্ট হয়েছে বিজেপি সম্পর্কে তাঁদের বর্তমান মনোভাবের বিষয়টি। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধন খসড়া বিলে বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের বিষয়টি না থাকায় মতুয়াদের ঠাকুর বাড়ির ছেলে সুব্রত ঠাকুর বলেছেন, নাগরিকত্বের দাবিতে আমরা শিগগিরই আন্দোলন শুরু করব।
বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভাঙার অভিযোগে মতুয়ারা সরব হওয়ায় উদ্বাস্তু, নাগরিকত্ব ইস্যুতে ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে বিজেপি। অন্যদিকে, একই ইস্যু নিয়ে সিপিএম এবং তৃণমূল কংগ্রেস মতুয়াদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে ভোট বাক্সে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। মতুয়ারা অবশ্য বরাবরই তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর আস্থা রেখেছেন। অন্যরা চাইছেন যেভাবেই হোক তৃণমূলের এই ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে।
ইতিপূর্বে খবর ছিল,ভারতের আসাম রাজ্য সরকার গত ৪৩ বছর ধরে সেখানে বসবাসরত অমুসলিম বাংলাদেশীদের নাগরিকত্ব দিতে যাচ্ছে। কংগ্রেসি রাজ্য সরকার বুধবার এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে বলে ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকা গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে।
বলা বাহুল্য,অসমেও অমুসলিমদের নাগরিকত্ব হচ্চে না।
অথচ ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্মীয় নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর আসামে প্রবেশ করা লোকদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে না।
যদিও আসামে ঠিক কতজন উদ্বাস্তু রয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে তাদের সংখ্যা হবে ৮৫ লাখ। তাদের বেশিরভাগই হিন্দু। বাকিরা বৌদ্ধ, গারো, রাজবংশী, আদিবাসী উপজাতি ও বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি। এসব উদ্বাস্তু বাংলাদেশ সংলগ্ন আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় বাস করছে।
আসামের বন ও পরিবেশমন্ত্রী রকিবুল হোসেন টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, এসব লোক বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত হবে না। তারা বিচার ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার পাবে, তারা বহিষ্কারের হুমকিতে পড়বে না, এবং গুজরাট ও রাজস্তানে একই ধরনের পরিস্থিতির শিকার লোকজনকে যেভাবে নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে, তাদেরকেও দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর উপস্থিতিতে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত আসাম চুক্তিতে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের মধ্যরাতের পর থেকে আসামে প্রবেশকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে বহিষ্কারের কথা বলা হয়েছিল। বিদেশিবিরোধী ছয় বছরের আন্দোলনের পর ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
তাহলে কি ওপার বাংলা থেকে আসা উদ্বাস্তুরা আদৌ হিন্দু নন,অন্ততঃ সঙ্গ পরিবারের নজরে?
মোদ্দাকথা বুঝতে হলে,স্বাধীনতার আগের ইতিহাসে ও ভারতভাগের প্রেক্ষাপটে ফিরে যেতে হয়,বাংলা শুধু নয়,অসম সহ পুর্বোত্তর ভারত,বিহার , উড়ীষ্যা সহ গোটা এই অনার্য বিজাতীয় ভূগোলের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও বন্চনার ইতিহাসে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষ সমস্ত জনগণই দিল্লীর একচেটিয়া ক্ষমতাদখলকারি আর্য হিন্দুদের গণসংহারের নিশানায়।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য,সত্তরের দশকে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ছবি ছিল গরম হাওয়া। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের ওপর তৈরি ছবি পরিচালনা করেছিলেন এমএশ সাথ্যু। তার দশক পর সেই ছবি আবার মুক্তি পেতে চলেছে।
ইশান আর্য প্রযোজিত ছবি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৪ সালে। ঠিক চল্লিশ বছর পর আগামী শুক্রবার মুক্তি পেতে চলেছে গরম হাওয়া। যদিও আবার নতুন করে সাম্প্রদায়িক সমস্যা উসকে দেওয়ার অশঙ্কায় প্রথমে ছবির মুক্তিতে ছাড়পত্র দিতে চায়নি সেন্সর বোর্ড। দেশের মোট ৮টি শহরের ৭০টি প্রেক্ষাগৃহে পুণরায় মুক্তি পাচ্ছে গরম হাওয়া।
সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোকে রাষ্ট্রক্ষমতা সঁপে দেওয়ার পর এি সিনেমাটি দেখা অতি আবশ্যক।