অসমের এই চাল চিত্র সারা দেশব্যাপী হতে চলেছে, উন্নয়নের মডেল ছেড়ে সরাসরি দাঙ্গা মডেলে এখন গৌরিক বাহিনী।
রামজন্মভূমি ও মর্যাদা পুরুষোত্তম রামচন্দ্র আবার সেই উগ্র হিন্দুত্বের কল্কি অবতারের যুদ্ধাস্ত্র।নির্বোচণী বিধি ভঙ্গের দায় নেই,এমনই যখন পরিস্থিতি অসম কান্ডে কিন্তু অশনিসংকেত ভয়ন্কর প্রলয়ন্কর।
পলাশ বিশ্বাস
বুঝুন ঠ্যালা,অশ্লীল ওয়েবসাইট বন্ধ করলে সমস্ত তথ্যের নাগাল থেকে বঞ্চিত হবেন ইন্টারনেটের গ্রাহকরা। রক্ষা পাবে না বিশ্বের তাবড় সাহিত্য কীর্তিও, জানাল কেন্দ্র।মুক্তবাজারি সংস্কৃতির জয়জয়কার।
রাজনীতিও সামনতালে পর্ণো।
নির্বাচণীর টক ঝাল নোনতায় অশ্লীল আনন্দ এবং অবশ্যই অশ্লীল সহিংসতা।
যারা গ্রাহকদের স্বার্থে অশ্লীল সংস্কৃতি আমদানি করছেন,তাঁরাই আবার সমানভাবে ধর্মোন্মাদ।
ধর্মোন্মাদ ধর্মীয় জাতিয়তাবাদী জাযনবাদী করপোরেট জনসংহারি।
অসমের চালচিত্র দেখার আগে, শ্রীরামপুরে নমো উদ্গার আত্মস্থ করার ও ঢের আগে রাজধানী দিল্লীতে বার বার বর্ণবৈষম্যের নগ্ন টিত্র আজও চিত্রার্পিত।
এক দিকে অসমে দাঙ্গায় গুজরাতের উন্নয়ন মডেল ত অন্যদিকে দিল্লীর উপকন্ঠে কাশ্মীরের ছাত্রদের মারধর।
দুটি ঘটনার সঙ্গে আপাতদৃষ্টিতে কোনো যোগাযোগ নেই।বুদ্ধিমানরা আমাদের মগজির বস্তু নিয়ে তাত্বিক বিশ্লেষণ করতেই পারেন।কিন্তু দুটি ঘটনাই শ্রীরামপুর থেকে শুরু উগ্র হিন্দুত্বের বিজয়যাত্রার দুটি মাইল ফলক।বহুসংখ্য সাম্প্রদায়িকতা সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িকতাকে আগ্রাসি মনোভাবে অতিক্রম করে চলেছে।
গৌরিক সহিংস সংস্কৃতির অশ্লীল উত্সবে,মানবতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজীতিতে যারা আশন্কিত নন,তাঁদের দিল ও দিমাগ সত্যিই ইস্পাত কঠিন,তাঁরাই দিল্লীতে মুদিখানার স্থপতি।
বাংলাদেশ থেকে আসা 'হিন্দু শরণার্থীদের ভারতের সব রাজ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পুনর্বাসন করা হবে' - বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী এই আশ্বাস দেওয়ার পর - কংগ্রেসও বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের ... বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসা মুসলিমরা অনুপ্রবেশকারী, কিন্তু হিন্দুরা শরণার্থী – এটা ভারতের হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি-র বহু পুরনো অবস্থান।
আজ পশ্চিম বঙ্গ ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি ও কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে মোদীকে গ্রেফ্তারের মমতার দাবির জবাবে এই অবস্থানই স্পষ্ট করে এত জলঘোলার পরও দাবি করেছেন যে হিন্দূ শরণার্থিরা স্বাগত লেকিন এপার বাংলায় দ্বিতীয় সংসার পাতার ইজাজত অনুপ্রবেশকারিদের দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য,শুধু মোদী নয়,বরং আসামের রাজধানী গৌহাটিতে এক নির্বাচনী সমাবেশে এমন দাবি জানিয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা সুব্রহ্মনিয়ন স্বামী,প্র চুর বাংলাদেশি ভারতে অনুপ্রবেশ করছে। তারা এখানকার জমি দখল করে বসবাস করছে। এইসব অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশকে উদ্যোগ নিতে হবে। আর যদি এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ না নেয়া হয় তাহলে ক্ষতিপূরণবাবদ বাংলাদেশের কাছ থেকে জমি নিতে হবে।
উগ্রপন্থীদের ঘাড়ে অসমে অনুপ্রবেশকারীবিরোধী দাঙ্গার দায় বর্তানো হলেও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে বাংলার বুকে সঙ্ঘপরিবারের প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ্মমুখে হিন্দু মুস্লিম,স্থানীয় প্রবাসী ভেদাভেদের উস্কানি আক্ষরিক অর্থে গুজরাত মডেল প্রয়োগশালায় রুপান্তরিত করছে আবার অসমকে,যেখানে অনুপ্রবেশ বিরোধী সুর রাজনীতির স্থায়ীভাব।
সিপিএম ও বামপন্থীদের ঘুম দেরিতে ভাঙ্গলেও সারা দেশের জনগণ বুঝতে পারছে সারা দেশে কি কালো আগুন ছড়াতে শুরু করেছে।
অসমের এই চাল চিত্র সারা দেশব্যাপী হতে চলেছে,এই সমুহ বিপদ উপেক্ষা করে যারা রামাবলি গায়ে গৌরিক বাহিনীর পায়দল বাহিনী হতে উত্সাহী আজও,তাঁরা ভবিষতে পুন্রবিবেচনার সুযোগও পাবেন না।
বিজেপির তাবত ছোট বড় মাঝারি নেতা ময় ভাবী গৌরিক প্রধানমন্ত্রী,সাইবার সেনা ও কথিত বুদ্ধিজীবিরা অনুশোচনা দুরে থাকুক,এক্কেবারে গুজরাতি মেজাজে প্রমাণ করতে শুরু করেছেন যে তাঁদের মন্তব্য একমাত্র মুসলিম অনুপ্রবেশকারিদের বিরুদ্ধে ,আদৌ হিন্দু শরণার্থীদের বিরুদ্ধে নয়।
নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাঝামাঝি এই রণহুন্কার ভয় জাগানো সমাবেশ,ডিভির পর্দায়,খবরের কাগজ থেকে সর্বত্র আকাশ বাতাস মথিত করছে।
উন্নয়নের মডেল ছেড়ে সরাসরি দাঙ্গা মডেলে এখন গৌরিক বাহিনী।
রামজন্মভূমি ও মর্যাদা পুরুষোত্তম রামচন্দ্র আবার সেই উগ্র হিন্দুত্বের কল্কি অবতারের যুদ্ধাস্ত্র।নির্বোচণী বিধি ভঙ্গের দায় নেই,এমনই যখন পরিস্থিতি অসম কান্ডে কিন্তু অশনিসংকেত ভয়ন্কর প্রলয়ন্কর।মনে রাখা দরকার,রাজনৈতিক কারণে ভারতে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হবে বলে মন্তব্য করেছেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী।
আসামের এক সভায় তিনি এমন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশি হিন্দুদের ভারতে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দেয়া হবে তবে রাজনৈতিক কারণে অনুপ্রবেশকারীদের অবশ্যই ফেরত পাঠানো হবে। বাংলাদেশের হিন্দুরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু হওয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে প্রবেশ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবে আসামসহ ভারতের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশের হিন্দু শরণার্থীদের প্রবেশ এবং বসবাসের সুযোগ দিতে খুব শিগগিরই একটি নীতি প্রণয়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
ইতিমধ্যে বিধিভঙ্গের অভিযোগে ভারতের হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীকে গ্রেফতার করতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
মোদী সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের কড়া সমালোচনায় সরব ডান বাম দুই শিবিরই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হঁশিয়ারি একজন বাঙালির গায়ে হাত পড়লেও দিল্লি তোলপাড় হবে।মোদীকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি করেছেন তিনি। বামেদের দাবি, মোদীর সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক প্রচার বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিক নির্বাচন কমিশন।
বাংলাদেশ থেকে আসা সবাইকে ফেরত যেতে হবে। নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য ঘিরে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়। কড়া আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বাঁকুড়ার জনসভায় অবস্থান স্পষ্ট করলেন মোদী। বললেন, ধর্মীয় কারণে বিতাড়িতরা শরনার্থী। তাঁরা যথাযোগ্য সম্মান নিয়ে এদেশেই থাকবেন। কিন্তু অন্যদের ফেরত যেতে হবে।
সারদা থেকে টেট। বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারি এতদিন ছিল লোকসভা ভোট প্রচারের ভরকেন্দ্রে। শ্রীরামপুরের জনসভায় এসে প্রথমবার সাম্প্রদায়িকতার তাসটা খেলেছিলেন মোদী। বলেছিলেন বাংলাদেশ থেকে আসা সকলকে ফেরত যেতে হবে। রবিবার বাঁকুড়ার জনসভায় অবস্থান আরও স্পষ্ট করলেন মোদী। বুঝিয়ে দিলেন, ভোটের আগে সুর না চড়ালেও বিজেপি তার সাম্প্রদায়িক লাইন থেকে সরেনি।
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে এই চিঠিটি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, "পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে এসে বিধি ভেঙে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। বাঙালি-অবাঙালির মধ্যে বিভেদ তৈরি করার পাশাপাশি তিনি 'বাংলাদেশি খেদাও' হুমকি দিচ্ছেন। তাই অবিলম্বে মোদীর বিরুদ্ধে এফআইআর করে তাকে গ্রেফতার করতে হবে।" চিঠিতে মোদীর উস্কানিমূলক বক্তব্যের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবি করা হয়েছে।
তৃণমূলের মুখপাত্র ডেরেক ও'ব্রায়েন জানিয়েছেন, রোববার পশ্চিমবঙ্গের দু'টি জনসভায় নরেন্দ্র মোদী সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। এছাড়া, তিনি ধর্মের নামে ভোট চেয়েছেন। এসব বিষয়েই নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, অযোধ্যার ফৈজাবাদে মোদীর জনসভার পেছনে রাম ও প্রস্তাবিত রাম মন্দিরের ছবি ব্যবহারের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে তৃণমূলের চিঠিতে।
প্রসঙ্গত, রোববার পশ্চিমবঙ্গে দু'টি জনসভায় ভাষণ দেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মুসলমানদেরকে 'অনুপ্রবেশকারী' আখ্যা দিয়ে তাদেরকে তাড়ানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। এর আগে গত সপ্তাহে শ্রীরামপুরের সভায় মোদী বলেছিলেন, "১৯৪৭ সালের পরে যারা ভারতে এসেছেন, তারা বিছানা-বেডিং বেঁধে রাখুন। ১৬ মে'র পরে তাদের বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে।"
মোদীর ওই বক্তব্যের পর কৃষ্ণনগরে এক নির্বাচনী জনসভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, "মোদী দেশের ইতিহাস ও ভূগোল জানেন না। আর বাংলার মানুষকেও জানেন না। এ জন্যই তিনি এমন কথা বলছেন। তিনি বলেন, "যে মানুষ দাঙ্গা বাঁধান, বাক্স-প্যাটরা নিয়ে চলে যেতে বলেন, এমন মানুষকে রাজনীতি করতে দেয়া উচিত নয়। আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে তাকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানাব। তাকে কোমরে দড়ি বেঁধে জেলে ভরা উচিত।"
মমতা ব্যানার্জির এ বক্তব্যের পরই তৃণমূলের পক্ষ থেকে মোদীর গ্রেফতার চেয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিল।
বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী কিছুটা হলেও ঠেকানো সম্ভব হবে। এমন মন্তব্যে অনেকটা জলঘোলা হওয়ার পরে এ বিষয়ে আবারও মুখ খুললেন নরেন্দ্র মোদী।
বাঁকুড়ায় বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারের সমর্থনে জনসভায় তিনি বলেন, শরণার্থী আর অনুপ্রবেশকারী এক নয়। মমতা সরকার ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করছে এবং অনুপ্রবেশকারীদের মদদ দিচ্ছে।
মোদী বলেন, শরণার্থীরা ভারতবাসীর মতোই থাকবেন। পৃথিবীর যেকোনো স্থানে হিন্দুস্তানি থাকতে পারে, যাদের রক্তে ভারতের রক্ত আছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বহু বছর আগে ভারত ছেড়েছেন, তাদের পাসপোর্টের রঙও বদলে গেছে। কিন্তু এখন যদি তাদের ওপর জুলুম হয় তাহলে তারা কোথায় আশ্রয় নেবেন? তখন কি ভারত মা নিজের ছেলেকে আপন করে নেবেন না?
বিজেপি'র প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী বলেন, বাংলাদেশ থেকে যাদের বিতাড়িত করা হয়েছে, যারা এখনও আমাদের দুর্গাৎসবে মিলিত হন, বাংলা বলেন, তাদের সুরক্ষা, তাদের সম্মান, তাদের গৌরব ভারতে বসবাসকারী ভারতীয়দের মতোই থাকবে। এরা শরণার্থী কিন্তু যারা ভারতের আর্থিক বোঝা বাড়ায়, তাদের ফিরতেই হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রথম কাজ ভারতের বেকারত্ব ঘোচানো। তাই অনুপ্রবেশকারীদের কিছুতেই আশ্রয় দেওয়া হবে না।
মোদীর এই ধরনের বক্তব্যের জেরে রাজনৈতিক মহলে অনেকেই তাকে হিন্দুত্বের পোস্টার বয় বলেও কটাক্ষ করেন। আর তা থেকে বেরিয়ে এসে উন্নয়নের পোস্টার বয়ের লক্ষ্যে পৌঁছেতে দ্বিতীয় জনসভা বাবুল সুপ্রিয়ের সমর্থনে আসানসোলে তিনি তুলে ধরেন সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের পরিকাঠামো।
প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী বলেন, উন্নয়নের দিক দিয়ে গুজরাট বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়ের থেকে অনেকটা এগিয়ে। এ প্রসঙ্গে তিনি হজের উদাহরণ টানেন। পাশাপাশি তিনি সংখ্যালঘুদের জন্য কি করেছেন তাও পরিষ্কার করে দেন।
অসমে বোড়ো জঙ্গি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৪। সেনাবাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে তিন জঙ্গিরও। হিংসা রুখতে সেনাবাহিনীকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। বোড়ো জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে সেনাও। অসম- অরুণাচল সীমানায় শোনিতপুরে সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে তিন জঙ্গি।
কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও হিংসা অব্যাহত অসমে। রবিবারও মৃত্যু মিছিল দেখল উত্তর পূর্বের এই রাজ্যটি। তবে রবিবার অসম- অরুণাচল সীমানার শোনিতপুরে সেনা-জঙ্গি লড়াইয়ে নিহত হয়েছে তিন জঙ্গি। নিহতদের থেকে উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র ও গ্রেনেড। অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ জানিয়েছেন, হিংসা মোকাবিলায় আরও বাহিনী মোতায়েনের করা হবে।
তবে রবিবারও অসমের হিংসা নিয়ে কেন্দ্রকে দুষেছে বিজেপি। হিংসা রুখতে সরকারি ব্যর্থতার অভিযোগে রবিবারও হয়েছে বিক্ষোভ। শালবাড়ির নানকেখাদরাবাড়িতে রাজ্য সরকার বিরোধী বিক্ষোভে নামেন জঙ্গি হামলায় নিহতদের পরিজনরা। বিক্ষোভকারীরা জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এলাকায় না এলে পরিজনদের মৃতদেহ অন্ত্যেষ্টি হবে না। শেষ পর্যন্ত দোষীদের কড়া শাস্তির আশ্বাস দেওয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এরপরই অন্ত্যেষ্টি হয় হিংসায় নিহতদের।
গ্রেটার নয়ডায় ফের কাশ্মীরী ছাত্রদের কেন্দ্র করে বিতর্ক।তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, লাঞ্ছনার অভিযোগ।
এবিপি আনন্দের রিপোর্ট অনুযায়ী আট ছাত্রের একটি দল নয়ডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এনআইইউ) তিন কাশ্মীরী ছাত্রকে হস্টেলে মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।প্রহৃত ছাত্রদের দাবি, তাদের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে বলা হয়েছিল।'ভারত মাতা কী জয়'বলতেও চাপ দেওয়া হয়েছিল।কিন্তু তারা রাজি না হওয়ায় তাদের মারধর করে ওই আটজন।শনিবার রাতের এই ঘটনার পর কাশ্মীর থেকে এনআইইউ-তে পড়তে আসা শতাধিক কাশ্মীরী ছাত্রকে ওই হস্টেল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্রের খবর
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের হেনস্থার ঘটনাটিকে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ এনেছে কাশ্মীরী ছাত্ররা।তাদের বক্তব্য, তাদের ওপর জোরজবরদস্তি খাটানোর অভিযোগ জানানো হলেও সেভাবে সাড়া দেয়নি কর্তৃপক্ষ।ঘটনাটিকে মামুলি বলে দায় এড়াচ্ছে তারা।অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সাধারণত হস্টেলে ছাত্রদের মধ্য।।কখনও সখনও ঝামেলা, গণ্ডগোল হয়েই থাকে।এটাও তেমনই ব্যাপার এর পিছনে কোনও জাতপাত, ধর্ম, সম্প্রদায়ের ব্যাপার নেই। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতরে ঘটনাটি ঘটেনি।অধিকাংশ ছাত্র থাকে নানা প্রাইভেট হস্টেলে।ওই চত্বরেই ঘটেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত আক্রমণকারী ছাত্ররা প্রিয়দর্শিনী ইনস্টিটিউটের পড়ুয়া।
পুলিশের বক্তব্য, যে হস্টেলে মারধরের ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত।সেখানে ওই এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পডুয়ারাই থাকে।একটি কলেজের ছাত্ররা অন্য একটি কলেজের ছাত্রদের মারধর করেছে।
কয়েক মাস আগেই মীরাটের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানকে সমর্থনের অভিযোগে কাশ্মীরী ছাত্রদের মারধর করা হয়েছিল বলে অভিযোগ দেশদ্রোহিতার অভিযোগও আনা হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে।।সেবার জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ঘটনাটির প্রতিবাদে হস্তক্ষেপ করায় দেশদ্রোহিতার অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
গ্রেটার নয়ডার ঘটনায়ও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ সিংহ যাদবের সরকারের সমালোচনা করেছেন ওমর।ট্যুইটারে তিনি বলেছেন, আসুন, আমরা মেরেধরে কাশ্মীরী ছাত্রদের দেশপ্রেমের শিক্ষা দিই।কাশ্মীরীদের মন থেকে আতঙ্ক, বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি দূর করার দারুণ উপায়।চমত্কার!
নরেন্দ্র মোদীকে এবার 'দাঙ্গাবাবু'আখ্যা দিলেন মমতা ব্যানার্জি। একই সঙ্গে লাগামহীন বক্তব্য, 'অনুপ্রবেশকারী'ইস্যুতে লাগাতার বিষোদগার, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একের পর উস্কানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী মোদীকে সতর্ক করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
পশ্চিমবঙ্গে এসে হিংসায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে বিজেপির এই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে গ্রেপ্তারের দাবিও জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগের ঝাঁপি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন, দাঙ্গাবাবু, আপনাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, জনগণ আপনাকে প্রধানমন্ত্রী করবে না৷ আমাদের দল আপনার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে যাবে৷
কার্যত মোদীকে 'গ্যাসবেলুনবাবু', 'হরিদাস পাল', 'কাগুজে বাঘ'ইত্যাদি তকমা দিয়েছিলেন আগেই। রোববার রানাঘাটে শেষ বিকেলের এক জনসভায় তার সঙ্গে 'দাঙ্গাবাবু'তকমাটি জুড়ে দিয়েছেন মমতা। আরো দিয়েছেন 'হিংসুটে', 'চকমকেবাবু'ইত্যাদি আখ্যা।
মোদীর কড়া সমালোচনা করে তিনি আরো বলেছেন, দেশের ইতিহাস জানেন না মোদী৷ ভূগোল জানেন না৷ আর বাংলার মানুষকেও জানেন না৷
মোদীকে সতর্ক করে দিয়ে তৃণমূল প্রধান এও বলেছেন, এ রাজ্যে একটা লোকের গায়ে হাত পড়লে আমি ছেড়ে কথা বলব না৷
মমতার সাফ কথা, যে মানুষ দাঙ্গা বাঁধান, বাক্স-প্যাটরা নিয়ে চলে যেতে বলেন, তিনি এ রাজ্যে হিংসায় উস্কানি দিচ্ছেন৷ এমন মানুষকে রাজনীতি করতে দেওয়া উচিত নয়৷ আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানাব।তাকে কোমরে দড়ি বেঁধে জেলে ভরা উচিত৷
অনেক কাল আগে ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষকে এখন শরণার্থী বা অনুপ্রবেশকারী বলা যাবে কি না প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, বাক্স-প্যাটরা গুছিয়ে তাঁদের চলে যেতে বলার সাহস মোদী পাচ্ছেন কোন অধিকারে? উদ্বাস্ত্ত, শরণার্থী বলার তুমি কে?'
শুধু মমতাই নন, আগ্রাসী বক্তব্যের জন্য মোদীকে ধুলোধুনো করছে সিপিএমও। রোববারই মেদিনীপুরের এক নির্বাচনী জনসভায় পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, মোদীর হাতে দাঙ্গার রক্ত লেগে আছে৷
তার অনুসারীরা আরো আগ বাড়িয়ে বলেন, মোদীর মুখে রক্ত, বুকে রক্ত, কপালে রক্ত, পায়ের নখ পর্যন্ত রক্তমাখা৷
তারা আরো বলেন, শুধু ভোট পাওয়ার জন্য কুত্সা রটাতে হবে, দাঙ্গা বাঁধাতে হবে- এটা ভয়ঙ্কর৷
মোদ্দা কথা, রাজনৈতিক বিরোধিতা যাই থাক না কেন, মোদী প্রশ্নে ক্ষেপে আছে সিপিএম ও তৃণমূল উভয় দলই।
গুজরাটের ন্যক্কারজনক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য তারা বরাবরই মোদীকে দুষছেন।
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ অসম রাজ্যের বোড়োল্যান্ডে সংঘটিত হত্যাকান্ডের জন্য নরেন্দ্র মোদিকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী তার ভাষণের মধ্য দিয়ে লোকজনের মনে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষ সঞ্চারিত করেন। তিনি বলেন, মোদির ভাষণ ও হত্যাকান্ডের মধ্যে কোথাও কোন সংযোগ রয়েছে। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অনলাইনের।
ওমর আবদুল্লাহ শনিবার তাংমার্গে এক জনসমাবেশে বলেন, অসমে ৩০ জন মুসলমানকে হত্যা করা হলো। কিন্তু কেন? কারণ, মোদি সাহেব তার ভাষণে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লোকজনকে বিষিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, এটাই ঘটনা এবং তা অস্বীকার করা যাবে না।
ওমর রাজ্যের বারমুল্লা নির্বাচনী কেন্দ্রে প্রচার সমাবেশে ভাষণে বলেন, তিনদিন আগে তিনি (মোদি) বোড়োল্যান্ডে যান। তিনি সেখানকার সকল মুসলমানকে বাংলাদেশী বলে উল্লেখ করেন এবং আজ ৩০ জন মুসলমান শায়িত রয়েছেন তাদের কবরে।
ওমর মোদিকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি তীব্র সাম্প্রদায়িক ভাষায় নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্রোধ উস্কে দেয়ার ঝুঁকি রয়েছে আপনার ভাষণে। এটা তো কাকতালীয় ঘটনা হতে পারে না যে, অসম রাজ্যের একটি অংশে আপনি নির্বাচনী অভিযান চালালেন, যেখানে সকল মুসলমানকে আপনি অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসী বলে অভিহিত করলেন এবং তারপরই, অকস্মাত বিনা উস্কানিতে সহিংসতায় নিহত হলো ৩০ জন মুসলমান। এটা পরিষ্কার, এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে কোন কিছুর সংযোগ রয়েছে।
ওমর আবদ্ল্লুাহ বলেন, মানুষকে সাম্পদ্রায়িকতার ভিত্তিতে বিভক্ত করার পরিণাম হচ্ছে এ হত্যাকা-। আপনি বিশেষ করে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে জনগণকে বিভক্ত করার চেষ্টা করলে, জনগণের মনে ভীতি সঞ্চারের চেষ্টা করলে, ফল এ রকমটাই হবে। আপনি ভীতি সঞ্চার করে এ দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না, বিভাজন সৃষ্টি করে এ দেশকে নেতৃত্ব দিতে সমর্থ হবেন না। এ জন্যই আমরা রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেতে আগ্রহী।
তলোয়ার হাতে রে রে করে এগিয়ে আসছে একটা দল। এই দল থেকে সাবধান। বিজেপি সম্পর্কে ভোটারদের এভাবেই সতর্ক করে দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।খবর আজকাল অনলাইনের।
তিনি বলেন, মোদির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরএসএস।ওরা দেশের সংবিধান মানে না?হিন্দু, মুসলমান, খ্রীস্টান ভেদাভেদ করে। খোলাখুলি শিল্পপতিদের বলা হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদিকে বাঁচাও। প্রতিবাদ করলে গুঁড়িয়ে দাও।কিন্তু গরিবদের জন্য পরিকল্পনা না করা হলে কল-কারখানা মালিকরা দেশকে বাঁচাতে পারবে না।এরকম একটি দল সম্পর্কে আপনারা সজাগ থাকবেন।
শনিবার সোদপুর অমরাবতীর মাঠে সি পি এম প্রার্থী ড. অসীম দাশগুপ্তর সমর্থনে সভা করেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যসভায় বক্তব্য পেশ করেন সি পি আই-এর মঞ্জুকুমার মজুমদার, ফরওয়ার্ড ব্লকের বরুণ মুখার্জি, আর এস পি'র মনোজ ভট্টাচার্য। বক্তব্য পেশ করেন দমদম কেন্দ্রের প্রার্থী ড. অসীম দাশগুপ্ত। ছিলেন সি পি এমের মানস মুখার্জি, গোপাল ভট্টাচার্য, দুলাল মুখার্জি প্রমুখ।
বুদ্ধদেববাবু সভা শুরুর মিনিট পাঁচেকের মধ্যে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। সঙ্গে বৃষ্টিও। উপস্থিত মানুষ যাতে সমস্যায় না পড়েন তার জন্য সভা বন্ধ করে দেয়া হয়।
সভার শুরুতেই বুদ্ধদেববাবু কংগ্রেস, বি জে পি সম্পর্কে বলেন, আপনারা ওদের হটান। কী হচ্ছে! কে, কি বলছে আপনারা সবই বোঝেন। কংগ্রেসকে বলেছি আপনারা চলে যান। আপনারা আর পারবেন না। সারা দেশে কংগ্রেসের চেহারা দেখুন। ওরা আর পারবে না। সারা দেশের মানুষ বুঝতে পারছে কংগ্রেস শেষ হয়ে গেছে। গত ১০ বছরে কংগ্রেস দেশের মধ্যে আরেকটা দেশ গড়ে তুলেছে।
আজকালের খবরঃ
ফের নরেন্দ্র মোদিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ রবিবার কৃষ্ণনগরে এক সভায় মমতা বলেছেন, 'মোদিকে গ্রেপ্তার করে কোমরে দড়ি বেঁধে জেলে পোরা উচিত৷ উনি বলছেন বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছে, তাদের বা'-প্যাঁটরা নিয়ে নাকি তাড়িয়ে দেবেন৷ একজনেরও গায়ে হাত দিয়ে দেখুন, তার পর দেখব৷ কত ধানে কত চাল বুঝিয়েও দেব৷'এর আগে রানাঘাটে তৃণমূল প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে এসে একই ভাবে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেন৷ কৃষ্ণনগরের কারবালা ময়দানে সভায় মোদিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, উনি বাংলায় বহিরাগত৷ বাংলায় এসে এ কথা উনি বলতে পারেন না৷ উনি ঠিক করার কে, কে অনুপ্রবেশকারী আর কে শরণার্থী? কেউ জানাক আর না জানাক আমরা কমিশনকে সব জানাব৷ তাঁর কটাক্ষ, যিনি ধর্মনিরপেক্ষতা মানেন না তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন কেন? দাঙ্গাবাবু আপনাকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে না৷ মমতা বলেন, সি বি আই, সি বি আই বলা হচ্ছে৷ সি বি আই ভগবানের বাবা নাকি৷ আগে শ্রদ্ধা করতাম৷ এখন করি না৷ কারণ সি বি আই হয়ে গেছে কংগ্রেস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামী দিনে ঝাড়খণ্ড ও ত্রিপুরায় আমরা সরকার গড়ব৷ রবিবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার রানাঘাট স্বাস্হ্য উন্নতির মাঠে নামে৷ নেমেই মঞ্চে চলে আসেন তৃণমূল নেত্রী৷ সভা সেরে চলে আসেন কৃষ্ণনগরের প্রার্থী তাপস পালের সমর্থনে সভা করতে৷ দুই সভাতেই তিনি মোদিকে এক হাত নেন৷ অভিযোগ করেন, বিজ্ঞাপনের জন্য মোদি এত টাকা পেলেন কোথায়? তা আগে বলুন৷ এত কালো টাকা এল কোথা থেকে? তা জানাতে হবে৷ আসলে বিজ্ঞাপন ও কিছু সংবাদপত্রের কথায় বেলুনের মতো ফুলে গেছে বি জে পি৷ আপনারা জেনে রাখুন দার্জিলিঙে বি জে পি জিতবে না৷ তথ্য দিয়ে মমতা আরও বলেন, চকচকে বাবু (মোদি) আপনার ওখানে মাথাপিছু আয় কত? আমার বাংলায় দেখে যান৷ ১০০ দিনের কাজে গুজরাট খরচ করেছে ৫০০ কোটি টাকা৷ আমাদের রাজ্যে খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা৷ এর পরও বলবেন এ রাজ্যে উন্নয়ন হয়নি? মোদি এসে বলছেন, মেয়েদের ওপর অত্যাচার নাকি এখানে বেশি৷ বিচার হয় না৷ সব মিথ্যে৷ শুধু কুৎসা আর কুৎসা৷ জেনে রাখুন দাঙ্গা এখানে হয় না৷ আসামে দাঙ্গা হচ্ছে৷ অনেকে মারা গেছে৷ ওখানে তো কংগ্রেস সরকার৷ ওখানে দাঙ্গা হচ্ছে কেন? আমি বলছি, ওখান থেকে যাঁরা আসতে চান, বাংলায় আসুন৷ বাংলা আশ্রয় দেয়৷ এটাই ঐতিহ্য, রক্তের হোলি খেলে বাংলায় নির্বাচন হয় না৷ সি পি এম মিথ্যে বলে জানি, আমি কখনও ভাবিনি কংগ্রেস, বি জে পি-ও মিথ্যার আশ্রয় নেয়৷ এখন এখানে সি পি এমের বুলি কংগ্রেস-বি জে পি বলছে৷ কংগ্রেস বলছে আমি জিতব না, সি পি এমকে ভোট দাও, বি জে পি বলছে আমি জিতব না, সি পি এমকে ভোট দাও৷ ভোট ভাগাভাগি করতে এসেছে৷ আমি বলছি, ওদের ৩ জনকেই হারাও৷ আসলে ওরা মানুষকে বোকা ভাবে৷ মানুষ এত বোকা নয়৷ এ ছাড়াও বাণী রায়, পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন৷ সভায় তৃণমূল নেত্রী রানাঘাট লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী ড. তাপস মণ্ডল ও শাম্তিপুর ও চাকদা বিধানসভার উপনির্বাচনের প্রার্থী অজয় দে ও রত্না ঘোষকে পরিচয় করিয়ে দেন৷
আনন্দবাদজারের এই খবরটি বিবেচনা করে দেখুনঃ
অনুপ্রবেশকারী নিয়ে মন্তব্যে মোদীর গ্রেফতারি চান মমতা
শরণার্থী ও অনুপ্রবেশকারী নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন নরেন্দ্র মোদী। ব্যাখ্যা দিলেন তাঁর আগের বারের মন্তব্যের। কিন্তু তাতে বিতর্ক কমল না। বরং, বাংলার মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টার জন্য মোদীকে গ্রেফতারের দাবি তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রশ্নে তৃণমূলের মতোই কড়া অবস্থান নিয়ে মোদীর বক্তব্য খতিয়ে দেখার জন্য নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে আবেদন জানিয়েছেন সিপিএম নেতা বিমান বসুও।
বাঁকুড়ার তামলিবাঁধ স্টেডিয়ামের জনসভায় রবিবার বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীরা এ দেশে স্বাগত। কিন্তু অনুপ্রবেশকারীদের ফিরে যেতেই হবে। একই সঙ্গে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলে মোদী তৃণমূল নেত্রীকে এক হাত নিয়েছেন। অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থী প্রসঙ্গে মোদী এ দিন যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটা বিজেপি-র দীর্ঘ দিনের অবস্থান।
গত সপ্তাহে শ্রীরামপুরের সভায় মোদী বলে গিয়েছিলেন, "১৯৪৭ সালের পরে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা বিছানা-বেডিং বেঁধে রাখুন। ১৬ মে-র পরে তাঁদের বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে।"
তৃণমূল নেত্রী তখনই মোদীর বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ তুলছিলেন। বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ এর পরে রাজ্যে এসে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জানান, যাঁরা বিনা ভিসা-পাসপোর্টে এখানে এসেছেন, তাঁদের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়াই উচিত। মোদীও এ দিন স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে দু'ধরনের লোক এসেছে। এক দল শরণার্থী, যাঁদের জোর করে ওই দেশ থেকে ধর্মের নামে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য দল বেআইনি অনুপ্রবেশকারী। মোদীর কথায়, "পৃথিবীর যে দেশেই হিন্দুস্তানি রয়েছেন, পাসপোর্টের রং তাঁদের যা-ই হোক, তাঁরা হিন্দুস্তানে আসবেন না? কোথায় যাবেন তাঁরা?"শরণার্থীদের রক্ষা করা তাঁদের কর্তব্য বলেও জানিয়েছেন মোদী। কিন্তু 'ভোটব্যাঙ্কের'কথা ভেবে যে অনুপ্রবেশকারীদের ঢোকানো হয়েছে বলে বিজেপি মনে করে, তাদের ফিরে যেতে হবেই বলে মোদী মন্তব্য করেছেন।
"কমিশনকে বলব, তাঁকে (মোদীকে) গ্রেফতার করুক। যে এমন কথা বলে, তাকে ইমিডিয়েট কোমরে দড়ি দিয়ে জেলে পাঠানো উচিত।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (প্রসঙ্গ অনুপ্রবেশকারী) |
মোদীর এ দিনের বক্তব্যের পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রশ্ন তুলেছেন, যাঁরা ঘৃণা ছড়াচ্ছেন, হিংসায় উস্কানি দিচ্ছেন, তাঁদের কেন গ্রেফতার করা হবে না? কৃষ্ণনগরের কারবালার মাঠে জনসভায় তাঁর তীব্র প্রতিক্রিয়া, "বাংলার একটা মানুষের গায়ে হাত তুলতে দেব না! নির্বাচন কমিশনকে বলব, তাঁকে গ্রেফতার করুক। কোমরে দড়ি দিয়ে নিয়ে যাক! এই ব্যক্তি রাজনীতিতে শোভা পায় না!"তৃণমূল নেত্রীর চ্যালেঞ্জ, "আমি এখনও বলছি, একটা লোকের গায়ে হাত দিয়ে দেখ! কে শরণার্থী, কে অনুপ্রবেশকারী, তা তুমি বলার কে? এরা সবাই নাগরিক। বাংলাদেশের যুদ্ধের আগে এসেছে। বাংলার বাইরে থেকে এসে এ কথা কেউ বলতে পারেন না!"
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও মোদীর কড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, "এ রাজ্যেও মোদী যে ভাষায় কথা বলছেন, তা ভয়ঙ্কর! ওঁর বক্তব্য নির্বাচন কমিশনের খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।"বিমানবাবুর আশঙ্কা, মোদী যা বলতে শুরু করেছেন, এর পরে হয়তো বলবেন 'বঙ্গালি খেদাও।'
তাঁর অভিযোগ, "কিছু ভোটের জন্য মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছেন মোদী। বিভ্রান্ত করতে চাইছেন রাজ্যের বাকি ২৩টি কেন্দ্রের ভোটারদের।"পাশের রাজ্য অসমের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনার উল্লেখ করে এ রাজ্যে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন মমতা-বিমান, দু'জনেই।
বাংলাদেশিদের তাড়াতে হলে আমাকেও তাড়াতে হবে: অধীর
মেদিনীপুর: নরেন্দ্র মোদীর 'বাংলাদেশি এবং অনুপ্রবেশকারী মন্তব্যের বিরুদ্ধে এবারে সরব হল কংগ্রেস। সোমবার দুপুরে খড়গপুরে এক জনসভায় দাঁড়িয়ে রীতিমত মোদীকে তুলোধোনা করলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী অধীর চৌধুরি। সভায় অধীর বলেন, "অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতে হলে সবার আগে লালকৃষ্ণ আডবানীকে তাড়াতে হবে। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদী কি সেটি পারবেন? এই প্রসঙ্গ তুলে অধীর আরও বলেছেন, "মোদিজির এই সাহস হবে না৷"পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদীকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী অধীর বলেছেন, "বাংলাদেশি তাড়াতে হলে আমাকেও তাড়াতে হবে৷ আর এই কাজ দম থাকলে নরেন্দ্র মোদী চেষ্টা করে দেখুন৷"তারপরেই তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, "বাংলাদেশি তাড়ালেই কি দেশের উন্নতি হবে?"বরং তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এইসব মন্তব্যে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে মৌলবাদীরা উত্সাহিত হবে৷
এই প্রসঙ্গে অধীরের চৌধুরির অভিযোগ, বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তির হাত শক্ত করার চেষ্টা করছেন নরেন্দ্র মোদি৷ দেশকে দুর্বল করার জন্য সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা বলা হচ্ছে। আসলে এইসব কথা বলে মোদী দেশের মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেই অভিযোগ অধীরের। পাশাপাশি, দেশেও অশান্তি বাড়বে বলে মত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির।
ঘোর বাংলাদেশবিরোধী মোদীর সুর নরম
ভারতভাগের সময়ে তৎকালীন পূর্ববাংলা থেকে দেশটিতে যাওয়া অভিবাসীদের বের করে দেওয়ার হুঙ্কার দিলেও ক্রমেই নরম হয়ে আসছে বিজেপির প্রধানমন্ত্রীপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর সুর। এমন আগ্রাসী কথাবার্তায় নাকি দলের ভেতরেই কড়া সমালোচনায় পড়েছেন গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অন্যতম রূপকার হিসেবে বিবেচিত এই বিজেপি নেতা।
এমনকি 'অনুপ্রবেশকারী'দের বের করে দেওয়ার হুঙ্কারের ফলে ফের কোনো দাঙ্গা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা বিজেপির জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন দলটির অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা। মোদীর এমন আগ্রাসী বক্তব্যে বিব্রত তারাও।
এমনকি এখনো পর্যন্ত মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ভাবা হলেও তার বক্তব্যের জেরে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায়ভার নিতে দলও খুব একটা উৎসাহ দেখাবে না বলেই আভাস মিলছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে। সেক্ষেত্রে আলোচনার অগ্রভাগে থাকার পরও কেবল আগ্রাসী বিতর্কের জন্ম দেওয়ার জন্যই কপাল পুড়তে পারে মোদীর।
এমন পরিস্থিতিতে চলমান ভোটে বিজেপি জিতলেও প্রধানমন্ত্রী পদে মোদীর পরিবর্তে অন্য কোনো অভিজ্ঞ নেতার প্রধানমন্ত্রী পদে চলে আসাও বিচিত্র নয়।
শনিবার ঢাকায় লেকশোর হোটেলে 'ভারতের নির্বাচন-২০১৪: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক'নিয়ে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেওয়া ভারতীয় সাংবাদিকরাও কড়া সমালোচনা করেন মোদীর।
তাদের ধারণা, মোদী যা বলেছেন তার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর সম্ভব নয় বলেই এরই মধ্যে মোদীর সুর নরম হয়ে আসতে শুরু করেছে।
গত ২৭ এপ্রিল শ্রীরামপুরের নির্বাচনী সভায় মোদী বলেন, ১৯৪৭ সালের পর যারা ভারতে এসেছেন, তারা বিছানা বোর্ডিং বেঁধে রাখুন। ১৬ মে'র পর তাদের বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু শুক্রবার মেদিনীপুরে তার দলের সভাপতি রাজনাথ সিংও বলেন, যারা বিনা ভিসা-পাসপোর্টে এখানে এসেছেন, তাদের ফিরে যাওয়াই উচিত। আমরা তাদের চিহ্নিত করবো।
কিন্তু শনিবার কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোদী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সুম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশের আর্থিক উন্নয়নে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সব দিক থেকে সুসস্পর্ক গড়ে তোলা হবে।
এ বক্তব্যের পাশাপাশি আক্রমণের তীর বাংলাদেশের দিক থেকে কিছুটা সরিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশ অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাংক বানায় না। দীর্ঘদিনের কংগ্রেসের শাসনে এটি হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীরা শুধু রাজ্য নয়, দেশের অর্থনীতিকে বিপন্ন করে।
একই সঙ্গে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির কারণেই কি না কে জানে অনুপ্রবেশবিরোধী কিছুটা বক্তব্যও উঠে আসে মোদীর কথায়।
অনুপ্রবেশকে মেনে নেওয়ার পূর্বশর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক করতে হবে কেন- এই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের, যারা বিদেশি নাগরিক তাদের রেশন কার্ড দিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলা, সেটি হতে দেওয়া হবে না।
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার কট্টর অবস্থান থেকে স্পষ্টতই সরে এসেছেন মোদী।
তার দেশেরই বিশিষ্ট সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার শনিবার ঢাকার গোলটেবিলে বলেছেন, বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। আর যদি হনও তা বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকির কারণ হবে না।
যুক্তি হিসেবে কুলদীপ নায়ার বলেন, ভারতের সংবিধানে সবার ওপরে গণতন্ত্র। গণতন্ত্র একক কারো বিষয় নয়, এটা সকলের বিষয়। গণতন্ত্র মানে বহুতন্ত্রবাদ। তাই এক মোদী চাইলেই সবকিছু হবে না। তার ওপর রয়েছে সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের শক্ত অবস্থান।
কুলদীপ নায়ারের মতে, এবারের নির্বাচনে এতো সহজে ভারতে সরকার গঠন করতে পারছেন না মোদী। কারণ লোকসভার ৫৪৩ আসনের ২৭৩টি এককভাবে পাওয়া সম্ভব হবে না তার দলের জন্যে। এক্ষেত্রে জোটের শরণাপন্ন হতেই হবে।
তিনি বলেন, ভারতে এ নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেক্যুলারিজম একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মোদীর অনুপ্রবেশকারীদের বের করে দেওয়ার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কুলদীপ নায়ার বলেন, এটি রাজনৈতিক বক্তব্য। তিনি চাইলেই এটি করতে পারবেন না। কারণ বাংলাদেশের যেসব মানুষ এখন ভারতে থাকে, তারা ভারতকে ধারণ করে।
তিনি বলেন, মোদীকে বুঝতে হবে ভারতে ১৮ কোটির মতো মুসলমান রয়েছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জগগোষ্ঠীকে তিনি উপেক্ষা করতে পারেন না। তারা যেটা চায় না, মোদী সেটা করতে পারেন না।
গুজরাট দাঙ্গায় ৩ হাজারের মতো মুসলিম মারা গেলেও এ বিষয়ে মোদীর কোনো মন্তব্য না দেওয়ারও তীব্র নিন্দা জানান কুলদীপ নায়ার।
এক্ই আলোচনায় অংশ নিয়ে মোদীর দেশের অপর সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল বলেন, ভারতে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী যে মন্তব্য করেছেন সেটাকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে।
তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশ দুটিই স্বাধীন দেশ, দুটি দেশের পররাষ্ট্রনীতিই সাবালক। সুতরাং দুই দেশকেই নিজেদের অবস্থান রেখেই প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করতে হবে।
কূটনীতির একটি নিজস্ব গতিধারা আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় শন্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে ভূমিকা পালন করেছে, তাতে ভারতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাদেরকে বাংলাদেশের সঙ্গে অবশ্যই ভাল সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
জয়ন্ত ঘোষাল বলেন, এখানে মোদীর দেওয়া বক্তব্যের জের ধরে অনুপ্রবেশ নিয়ে কথা হয়েছে। আমি আমার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, এক্ষেত্রে খুবই মানবিক আচরণ করতে হবে। মোদী বলেছেন, অনুপ্রবেশ নিয়ে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। একে তিনি অর্থনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত করতে চেয়েছেন। আমি মনে করি, এটা বাঙালিদের উসকে দেওয়ার চেষ্টা।
তিরি আরো বলেন, কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দুই দেশের মানুষের সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থানের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, ভারত ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দুই দেশের মানুষের ক্ষেত্রেই এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করেন। তাই আমি দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাপারে আশাবাদী।
নিজাম উদ্দিন
সিনিয়ররিপোর্টার
অলনিউজবিডি।
ভাওতা
নৈহাটি, কেশিয়ারি, ৩ মে : ভাবগতিক এখনও ঠিক ঠাহর করা যাচ্ছে না। পক্ষ-বিপক্ষ বোঝা দায়। হয়তো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়প্রসঙ্গে আপাতত কখনও গরম-কখনও নরম পন্থাই গ্রহণ করেছে সমতা বজায় রাখতে চাইছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই তো নরেন্দ্র মোদীর 'মমতা আক্রমণের' পরেই রাজনাথ সিংআবার মমতার প্রতি সুর নরম করলেন।
শুক্রবার এ রাজ্যে একজনসভায় বক্তৃতা রাখতে উঠে ক্ষমতায় এলে বাংলাকে সর্বোচ্চ আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার ঘোষণা করেন রাজনাথ সিং। কিন্তু তার থেকেও বেশি অর্থবহ মমতার প্রতি রাজনাথের সরাসরি বার্তা, আমাদের সঙ্গে সংঘাত কেন? লড়াই করুন কংগ্রেসের সঙ্গে। সম্প্রতি রাজ্যে এসে সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে মমতাকে তীব্র আক্রমণ করেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীনরেন্দ্র মোদী। একইসঙ্গে তাঁর আঁকা ছবি নিয়েও কটাক্ষ করেন মোদী। তাঁর পাঁচ দিনের মাথায় রাজনাথের এই নরম সুর বেশ ইতিবাচক বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
ইতিমধ্যেই রাজ্যে ৩ বার এসে একাধিক জনসভা করে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। প্রথম কলকাতা জনসভাতেও রাজ্য বিজেপি সভাপতি রাহুল সিনহা মমতা প্রসঙ্গে সমালোচনায় মুখর হলেও মোদী-রাজনাথ উভয়ই মমতা প্রসঙ্গে অত্যন্ত নরম মনোভাব দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এর পর বিজেপির সঙ্গে জোটে না যাওয়ার তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়ে মমতা তার প্রত্যেকটি সভায় মোদীর সমালোচনা শুরু করেন। শ্রীরামপুরে শেষ জনসভায় মোদীও তার পাল্টা জবাব দেন সারদা প্রসঙ্গ টেনে। এর পরেই তৃণমূল-বিজেপি বিরোধিতা যায় চরমে। সেই ক্ষতেই এদিন প্রলেপ লাগানোর চেষ্টা করেন রাজনাথ।
রাজনাথ বলেন, আমরা নিশ্চিত লোকসভা নির্বাচনে আমরা ৩০০র অধিক আসন পাব। আমরা ক্ষমতায় এলে বাংলার দারিদ্র দূর করতে সর্বোচ্চ আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া হবে এ রাজ্যকে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা বিজেপি ভাবছে যদি এনডিএ সংখ্যা গরিষ্ঠতা না পায় সে ক্ষেত্রে মমতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন কেন্দ্র সরকার গঠনের ক্ষেত্রে। তাই এখনও মমতাকে চটাতে চাইছে না বিজেপি। কিন্তু একই সঙ্গে মমতার একতরফা বিরোধিতাও বরদাস্ত করতে চাইছে না বিজেপি তাই বিরোধিতাও একেবার বন্ধ করতে নারাজ বিজেপি।
http://bengali.oneindia.in/news/india/after-modi-attack-rajnath-goes-soft-on-mamata-001497.html
মোদি এলে সব লন্ডভন্ড, দেশে দাঙ্গা: বুদ্ধ
আবু রাইহান ও সৈকত মাইতি | |
|
অশনিসংকেত
বাঁকুড়া ও আসানসোল, ৪ মে: 'পেপার টাইগার' শব্দযুগলের পাল্টা 'স্ক্যাম বেঙ্গল'!
'দাঙ্গাবাজ' শব্দের বদলা 'ধর্মনিরপেক্ষতার গাইয়ে'!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের জবাবে পাল্টা তোপ দাগলেন নরেন্দ্র মোদী। রবিবার বাঁকুড়া এবং আসানসোলের জনসভায় মেজাজে ভাষণ দিলেন তিনি। সারদা কেলেঙ্কারি থেকে টেট দুর্নীতি, 'ধর্মনিরপেক্ষ' পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের করুণ অবস্থা, সবই উঠে এলে বক্তৃতায়।
এদিন নরেন্দ্র মোদীর প্রথম জনসভাটি ছিল বাঁকুড়ায়। সকাল সাড়ে দশটায় আসার কথা থাকলেও তিনি এসে পৌঁছন পৌনে বারোটায়। বাঁকুড়া থেকে জনসভা সেরে আসানসোল পৌঁছতেও তাই অনেকটা দেরি হয়ে যায়। তাতে অবশ্য মানুষের উৎসাহে ভাটা পড়েনি। ঠা-ঠা রোদ্দুরে লোক দাঁড়িয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ শোনার জন্য। তাই দু'জায়গাতেই মানুষকে ধন্যবাদ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, মানুষের এত উৎসাহ দেখে তিনি অভিভূত।
গতকালই ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, "প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বলে কোনও কথা হয়? বাচ্চা জন্মাল না, অন্নপ্রাশনের দিন ঠিক হয়ে গেল! লোক নেমন্তন্নও হয়ে গেল! যত সব পেপার টাইগার।"
এর জবাবে তিনি বলেন, "সারদা কেলেঙ্কারিতে লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছে। পথে বসেছে। কিন্তু দিদি আপনি কী করেছেন? চিটফান্ড বাংলাকে লুঠছে আর এই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা বসে বসে হাততালি বাজাচ্ছে। কোথায় গেল সাধারণ মানুষের টাকা? কেন আপনি যথাযথ তদন্ত করছেন না? আমি না হয় কাগুজে বাঘ। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) এত ভয় পাচ্ছে কেন সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত নিয়ে? সাহস থাকলে দোষীদের এক্ষুণি জেলে ঢোকান।" তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে সিপিএমের সঙ্গে 'লোকদেখানো' ঝগড়া করে, সেটা দাবি করে তিনি বলেন, "প্রথম ইউপিএ সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল সিপিএম। আর দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শরিক ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। অর্থাৎ দু'জনেরই উদ্দেশ্য কংগ্রেসকে বাঁচানো। গোপনে বোঝাপড়া আছে এদের। এরা রাজ্যে করে কুস্তি আর দিল্লিতে করে দোস্তি।"
টেট দুর্নীতি নিয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধেছেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছেন, "বাংলায় শিক্ষকতার চাকরি পেতে গেলে ঘুষ দিতে হয়। অথচ গুজরাতে শিক্ষক নিয়োগের পুরো ব্যবস্থা অনলাইনে। কম্পিউটারই ঠিক করে দেয়, কারা চাকরির উপযুক্ত। ওখানে দাদা-দিদি ধরার ব্যাপার নেই। তাই স্কুলে চাকরি পেতে গেলে চার লাখ-পাঁচ লাখ টাকা ঘুষও দিতে হয় না। দিল্লিতে মা-ছেলের সরকার 'স্ক্যাম ইন্ডিয়া' তৈরি করেছে আর রাজ্যে 'স্ক্যাম বেঙ্গল' তৈরি করেছেন দিদি। আমার লক্ষ্য হল, 'স্কিলড ইন্ডিয়া' তৈরি করা।"
ভোট কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণকে বিঁধে বললেন,"আরও একটা মামলা ঠুকুন"
প্রসঙ্গত, ২৭ এপ্রিল শ্রীরামপুরের জনসভায় নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ১৬ মে-র পর বোঁচকাবুঁচকি নিয়ে ফিরে যেতে হবে। জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, "বাঙালিদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে বলছে, এত বড় সাহস! একজনের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক!" বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী আর বাঙালি যে এক নয়, তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমোর সেই অজ্ঞানতা দূর করার চেষ্টা করে রবিবার নরেন্দ্র মোদী বলেন, "বাংলাদেশ থেকে দু'ধরনের লোক আসে। একদল যাদের ধর্মের ভিত্তিতে ওখান থেকে তাড়ানো হয়েছে। সব খুইয়ে মানুষগুলো এখানে বাঁচতে এসেছে। এরা শরণার্থী। এদের রক্ষা করব। আর একদল আছে, যারা চোরাপথে এদেশে এসে নানা গোলমাল পাকাচ্ছে। আমার দেশের তরুণদের কাজের সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে। এরা অনুপ্রবেশকারী। এদেরকে তাড়িয়েই ছাড়ব।"
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'মুসলিম দরদী' ভাবমূর্তিকে পরিসংখ্যান সহযোগে নস্যাৎ করেছেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। বলেছেন, "আমাকে মুসলিম-বিরোধী বলে গালাগালি করেন দিদি। তা হলে শুনুন, গুজরাতে হজযাত্রীদের জন্য কোটা হল চার হাজার। আবেদন আসে ৪০ হাজার। আর পশ্চিমবঙ্গে হজযাত্রীদের জন্য কোটা হল ১২ হাজার। আবেদন আসে ১২ হাজারের কম। আমার প্রশ্ন, যদি গুজরাতে মুসলিমরা ভালো না থাকত, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হত, তা হলে হজের জন্য এত আবেদন কেন পড়ত? কেন বাংলায় এই কোটা খালি থেকে যায়? বাংলার মুসলমানদের দুরবস্থার দায় কে নেবে? এই পরিসংখ্যান আমার মনগড়া নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের।"
তিনি আরও বলেছেন, "গুজরাতে মোট জনসংখ্যার ৮-৯ শতাংশ হল মুসলিম। বাংলায় সেটা ২০-২২ শতাংশ। গুজরাতের গ্রামে একজন মুসলিমের মাথাপিছু আয় হল ৭০০ টাকার বেশি। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে একজন গ্রামীণ মুসলিমের মাথাপিছু আয় ৫০০ টাকার কম। গুজরাতে একজন শহুরে মুসলিমের মাথাপিছু আয় ৯০০ টাকার বেশি। বাংলায় এটা ৭০০ টাকার কম। গুজরাতে প্রতি মুসলিমের ব্যাঙ্ক ডিপোজিটের পরিমাণ হল গড়ে ৩৫ হাজার টাকা। পশ্চিমবঙ্গে এটা গড়ে ১১ হাজার টাকা। গুজরাতে রাজ্য সরকারের বড় পদে রয়েছে ৮.৫ শতাংশ মুসলিম। অথচ পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারের বড় পদে রয়েছে মাত্র ১.২ শতাংশ মুসলিম। এর পরও কি বলা যায়, আগের বামফ্রন্ট সরকার বা এখন দিদি মুসলিমদের অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে? এরা শুধু ভোটব্যাঙ্কের খাতিরে মুসলিমদের ব্যবহার করে। আমি নাকি সাম্প্রদায়িক! তা হলে ধর্মনিরপেক্ষতার গাইয়ে যারা যেমন কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল কংগ্রেস কী করল?"
তাঁর দাবি, কেন্দ্রে বিজেপি সরকার গঠিত হলে বাংলার উন্নয়ন হবে। তখন তার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চাপে পড়ে রাজ্যের উন্নয়ন করতে বাধ্য হবেন। ফলে বিজেপি-কে ক্ষমতায় আনলে বাংলারই লাভ। ৬০ বছর ধরে মানুষ শাসক বেছেছে, এবার বাছুক সেবক।
আসানসোলের জনসভায় দাঁড়িয়ে সরাসরি নির্বাচন কমিশনকেও তোপ দাগেন নরেন্দ্র মোদী। বলেন, "বাংলায় গত ৩০ এপ্রিলের ভোটে যে রিগিং, সন্ত্রাস হয়েছে, তার পর বলব আপনারা ঠিক করে কাজ করতে পারেননি। আপনারা অকর্মণ্য। কেন্দ্রের প্রভুরা আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে জানি। কিন্তু দেশের কাছে আপনারা দায়বদ্ধ। তাই প্রভুদের কথা না ভেবে পক্ষপাতহীনভাবে কাজ করুন। আমার এই কথা যদি আপনাদের খারাপ লাগে, তা হলে যান আরও একটা মামলা ঠুকুন আমার বিরুদ্ধে।"
ভাষণ শেষ করে যখন মঞ্চ ছেড়ে নামছেন তিনি, তখনও 'মোদী মোদী' বলে মানুষের চিৎকার চলছে। বাঁকুড়া ও আসানসোল, দু'জায়গাতেই একই ছবি দেখা গিয়েছে।
আজমগড় 'জঙ্গিদের ঘাঁটি', অমিত শাহের মন্তব্যে জলঘোলা
নয়াদিল্লি, ৫ মে: উত্তরপ্রদেশের আজমগড়কে 'জঙ্গিদের ঘাঁটি' বলে বর্ণনা করে সমালোচনার মুখে পড়লেন নরেন্দ্র মোদীর 'ডান হাত' অমিত শাহ। কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির দাবি, এক্ষুণি ব্যবস্থা নিক নির্বাচন কমিশন।
সোমবার আজমগড়ের বিজেপি প্রার্থী রমাকান্ত যাদবের সমর্থনে একটি জনসভায় বক্তব্য রাখছিলেন গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, "এই আজমগড় হল জঙ্গিদের ঘাঁটি। এখানে কেউ সরকারকে ভয় করে না। কারণ সরকারই ওদের ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে। গুজরাতে বোমা বিস্ফোরণে অভিযুক্ত গিয়েছিল এই আজমগড় থেকে। তখন আমি গুজরাতের স্বরাষ্ট্র দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতারের ব্যবস্থা করি। তার পর থেকে গুজরাতে একটিও জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি। এটা উত্তরপ্রদেশে হলে সরকার কিছুই করত না।"
প্রসঙ্গত, আজমগড়ে বিজেপি প্রার্থী রমাকান্ত যাদবের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন সমাজবাদী পার্টি সুপ্রিমো মুলায়ম সিং যাদব। তাই তাঁকে কটাক্ষ করে অমিত শাহ বলেন, "মুলায়মজির সমাজবাদ হল স্বজনপোষণবাদ। শুধু নিজের লোকেদের সুবিধা পাইয়ে দাও। গত দশ বছরে সমাজবাদী পার্টি ১২ লক্ষ কোটি টাকা তছরুপ করেছে।"
এদিকে, অমিত শাহের এই মন্তব্য নিয়ে তোপ দেগেছে কংগ্রেস। দলের নেতা দিগ্বিজয় সিং বলেন, "আমি কঠোরভাবে এই বক্তব্যের নিন্দা করছি। নির্বাচন কমিশন অবশ্যই ব্যবস্থা নিক।" আর কংগ্রেস নেতা রশিদ আলভি বলেছেন, "যে কোনও জায়গা নিয়ে এমন কথা বলা অনুচিত। আমি জানি না, উনি কী ধরনের রাজনীতি করেন আর কেন আজমগড়কে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছেন? উনি তো আজমগড়ের মানুষদের সরাসরি জঙ্গি বলেছেন।"
বহুজন সমাজ পার্টি সুপ্রিমো মায়াবতী বলেন, "এমন মন্তব্যের জেরে আজমগড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিগড়ে যেতে পারে। আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে ওঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যদি আজমগড় 'জঙ্গিদের ঘাঁটি' হয়, তা হলে গুজরাতকেও 'সাম্প্রদায়িকতার ঘাঁটি' বলা যায়। উত্তরপ্রদেশে ঢোকার ব্যাপারে অমিত শাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করুক নির্বাচন কমিশন।" সমাজবাদী পার্টিও একই সুরে কথা বলেছে।
আসামে হিন্দুত্ববাদ, অরুণাচলে চিনকে হুমকি-ভোটের প্রচারে নরেন্দ্র মোদী
মোদী তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের মধ্যে বিভাজন রেখা টেনে দেন । হিন্দুদের শরণার্থী এবং অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদের অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করেন । "এখানে বাংলাদেশ থেকে দু'ধরনের মানুষ আসে । এক পক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে । দ্বিতীয় পক্ষ আসেন সে দেশের নির্যাতন সহ্য করতে না-পেরে । যারা নির্যাতিত , তাঁদের আশ্রয় দেওয়া ভারতীয় রীতি । বাংলাদেশ থেকে আসা কোন হিন্দু অনুপ্রবেশকারী হতে পারে না । তাঁরা শরণার্থী ।"মোদী এই হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ।
এঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন , "পাকিস্তানে নির্যাতিত হয়ে গুজরাত ও রাজস্থানে আসা হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে । একই ভাবে নাগরিকত্ব পাবেন বাংলাদেশ থেকে অসমে আসা হিন্দুরা ।"এরপর হিন্দুত্বের লাইনে সুর চড়িয়ে মোদী বলেন , "শুধু বাংলাদেশ কেন , বিশ্বের যে কোনও জায়গায় হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার হলে তাঁদের ভরসার জায়গা হবে হিন্দুস্তানই ।"এর আগে ত্রিপুরার আগরতলার সভায় 'হিন্দুস্তানের সুরক্ষা প্রসঙ্গে'মোদী বলেন , "ত্রিপুরার পাশেই রয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ । অনুপ্রবেশের সমস্যায় ত্রিপুরা ব্যতিব্যস্ত ।""গুজরাটের পাশে রয়েছে পাকিস্তান । পাকিস্তানের কাছে গুজরাতই কিন্তু 'পরেসানির'কারণ ।"
এরপর মোদী অরুণাচলের পাসিঘাট এর জনসভায় ভাষণ দেন । এখানে প্রায় ৪০,০০০ মানুষ উপস্থিত ছিলেন । চিনের প্রতি আক্রমনাত্মক হয়ে মোদী এখানে ঘোষণা করেন , "চিন এখনও পুরনো আমলের আগ্রাসন ও সাম্রাজ্য বিস্তারের নীতি আঁকড়ে বসে রয়েছে । ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ অরুণাচলকে বারবার নিজেদের অংশ বলে দাবী করছে । চিনকে মনে করিয়ে দিই , বিশ্বের কোনও ক্ষমতা অরুণাচলকে ভারত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না । আমরা চিনকে ভয় পাই না ।"
প্রসঙ্গত , ভারত ও চিনের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত রেখা নিয়ে বিবাদ বর্তমান । অরুণাচল সহ বেশ কিছু অংশ নিয়েই বিতর্ক রয়েছে । এরপর অরুণাচলকে ভারতের অখণ্ড অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে নরেন্দ্র মোদী পুরাণের আশ্রয় নেন । কালিকা পুরাণে উল্লেখ রয়েছে , অরুণাচলের নামনি দিবাং উপত্যকার নাম ছিল ভীষ্মকনগর । রাজা ভীষ্মকের মেয়ে রুক্মিণীকে দ্বারকাপতি কৃষ্ণ পালিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন । সেই ঘটনার উল্লেখ করে মোদী বলেন ,"এখানকার মেয়ের সঙ্গে গুজরাতবাসী , দ্বারকাধিপতি কৃষ্ণের বিয়ে হয়েছিল । গুজরাত ও অরুণাচলের সম্পর্ক সেই প্রাচীনকাল থেকেই আত্মীয়তায় বাঁধা । সেই আত্মীয়তা আরও মজবুত করার সময় এসেছে ।"মোদীর উত্তরপূর্বের জনসভাগুলিতে দেওয়া ভাষণ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র শাকিল আহমেদ বলেন , "মোদী রাজনৈতিকভাবে অসুস্থ । তাঁকে সহানুভূতি জানাচ্ছি । তিনি তো সারাক্ষণ দিবাস্বপ্ন দেখছেন । তাঁর চিকিৎসার দরকার ।"
http://www.satkahan.com/special-report/862-2014-02-23-12-23-35
বাঘ হওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে রসগোল্লার টোপ দিয়ে গেলেন মোদী
রাজ্যে ফের নির্বাচনী সভায় এসে ঝড় তুললেন নরেন্দ্র মোদী। এবার অবশ্য সুর কিছুটা নরম ছিল বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর। যদিও সারদা- টেট সহ বেশ কিছু ইস্যুতে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে ঘুরিয়ে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়েন মোদী। অনেকেই বলছেন শ্রীরামপুরের সভায় গরম, বাঁকুড়ার সভায় নরম মনোভাব দেখালেন মোদী।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক আজ রাজ্যে এসে মোদী ঠিক কী কী বললেন–
মমতাকে আক্রমণ-ওনার পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে, তাই এভাবে আমায় আক্রমণ করছে।
লাড্ডু থেকে রসগোল্লা- ব্রিগেড এসে রাজ্যবাসীকে দুই হাতে লাড্ডু পাওয়ার তত্ত্ব শুনিয়েছিলেন, এবার আসানসোলে শোনালেন রসগোল্লার তত্ত্ব। বললেন রাজ্যের সঙ্গে এতদিন বঞ্চনা করেছে কেন্দ্র। তিনি এলে দিন বদলে যাবে। তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজ্যে উন্নয়নের কাজ করতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। তাই ডবল ফায়দা হবে রাজ্যবাসীর। তাঁদের দুহাতেই থাকবে রসগোল্লা ।
নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যে এসে ফের ডবল ফায়দার তত্ত্ব দিলেন মোদী। বাঁকুড়ার সভায় তিনি বললেন, কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে রাজ্যের উন্নয়নে জোর দেবেন তিনি। আর সেই চাপেই রাজ্যেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উন্নয়নের কাজ করতে হবে। গত পাঁচই ফেব্রুয়ারি বলেছিলেন, রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রেখেই দিল্লিতে তাঁর সরকার তৈরি হলে রাজ্যবাসীর দ্বিগুণ লাভ হবে। এরপর ভোটপ্রচারে রাজ্যে এসে তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন তিনি। রবিবার প্রচারে এসে সুর কিছুটা নরম করে ফের সেই ডবল ফায়দার তত্ত্বই শোনালেন মোদী।
বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে– বাংলাদেশ থেকে আসা সবাইকে ফেরত যেতে হবে। নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য ঘিরে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়। কড়া আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বাঁকুড়ার জনসভায় অবস্থান স্পষ্ট করলেন মোদী। বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বললেন, ধর্মীয় কারণে বিতাড়িতরা শরনার্থী। তাঁরা যথাযোগ্য সম্মান নিয়ে এদেশেই থাকবেন। কিন্তু অন্যদের ফেরত যেতে হবে। বুঝিয়ে দিলেন, ভোটের আগে সুর না চড়ালেও বিজেপি তাঁর সাম্প্রদায়িক লাইন থেকে সরেনি।
প্রসঙ্গ রিগিং– রাজ্য তৃতীয় দফার ভোটে রিগিং নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করলেন নরেন্দ্র মোদী। আসানসোলের সভায় তাঁর অভিযোগ, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
সারদাকাণ্ড-সারদা চিটফাণ্ডে অভিযুক্তদের জেলে ঢোকালে তবে বুঝব মমতা ব্যানার্জি আসল বাঘ। সারদা ইস্যুতে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করলেন, কিন্তু এবার যেন সুর অনেকটা নরম। বাঁকুড়ার জনসভায় নরেন্দ্র মোদী বললেন, নিজেকে আসল বাঘ প্রমাণ করতে হলে সারলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ তুলেই আজ হাল্কা মেজাজে মোদীর চ্যালেঞ্জ, নিজেকে আসল বাঘ প্রমাণ করতে সারদায় দোষীদের আগে জেলে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী।
টেট কেলেঙ্কারি– সারদার পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদী মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন টেট কেলেঙ্কারি নিয়েও। বললেন, শিক্ষক দুর্নীতি নিয়ে জবাব দিন মমতা। মমতা আসলে দুর্নীতিময় বাংলা উপহার দিচ্ছেন। পাশাপাশি বললেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে পাল্লা দিয়ে মমতাকে কাজ করতে হবে, চ্যালেঞ্জ মোদির।
নারী নিরাপত্তা-রাজ্যে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায়, অথচ পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতনে পয়লা নম্বরে। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যের।
এদিকে, বুধবার রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোটের দিন আবার কলকাতায় আসছেন নরেন্দ্র মোদী৷ কাঁকুড়গাছিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা উত্তর কলকাতা কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী রাহুল সিনহার সমর্থনে সভা করতে চলেছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর৷
http://starbdnews24.com/?p=4432
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় যুব সমাজ : নরেন্দ্র মোদি
songbadbangla24 / February 7, 2014
Rate This
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য স্থানীয় মানুষরা চাকরিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। গত বুধবার কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ওই জনসভায় নরেন্দ্র মোদী বলেন, পশ্চিমবঙ্গ হোক বা আসাম, বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশের ফলে দুই রাজ্যেই সমস্যা বাড়ছে। ভারতীয় যুবক-যুবতীদের অন্ন সংস্থানের সুযোগ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনের আগে বিজেপি এবং অন্যান্য কট্টরপন্থী দলগুলোর প্রচার-প্রচারণায় বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ নিয়েও কথা শোনা যায়। এর আগেও, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে মোদীর নাম ঘোষিত হওয়ার পরে প্রথম জনসভায় দক্ষিণ ভারতের শহর হায়দরাবাদে তিনি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গে অনেকটা সময় ব্যয় করেছিলেন। জনসভায় এ বক্তব্য দেওয়ার সময় উপস্থিত বিজেপি সমর্থকদের হাত তুলে সমস্বরে মি মোদীর বক্তব্যে সায় দিতে দেখা গেছে।
পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্য আসামে মোদীর দল বিজেপি সব সময়ই বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ ইস্যুতে সরব। এ প্রশ্ন অসমীয়া জাতীয়তাবাদী দল আসাম গণপরিষদের সঙ্গে প্রায় একই সুরে কথা বলে থাকে বিজেপি।
ছিটমহল বিনিময়ের প্রটোকল চুক্তি ভারতের সংসদে পাস না করার পেছনে বিজেপি বলে থাকে, এমনিতেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে সমস্যা তৈরি হয়েছে। ছিটমহল বিনিময় হলে সেই অনুপ্রবেশ আরো বাড়বে বলে যুক্তি দিয়ে থাকে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি।
বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মোদীর শেষ উক্তি, উন্নয়নের সুফল হোক বা চাকরি সবই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের হাতে চলে যাচ্ছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা – songbadbangla24.com
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
ভারতের আসাম বা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নির্বাচনী প্রচারে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ নিয়মিতই উঠে আসছে। অথচ আঞ্চলিক অথবা জাতীয় দলের শীর্ষ নেতারা ভোটের সময়ে বাংলাভাষী মুসলমানদের বিষয়ে নানা কথা বললেও নির্বাচনের পরে সেইসব প্রসঙ্গ আর তোলেন না।
হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী ভোটের প্রচারে গিয়েছিলেন বরাক উপত্যকায়। একটা জনসভায় তিনি বলছিলেন "যদি কোনও দেশে হিন্দুদের ওপরে অত্যাচার হয়, তাহলে হিন্দুরা তো ভারতেই চলে আসবেন – আর কোথায় যাবেন! আর বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত এই হিন্দুদের দায়ভার শুধু তো আসামের নয়, সারা দেশই তাঁদের দায়িত্ব নেবে।"
শুধু শিলচর নয়, আসামের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচারে গিয়ে প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন মি. মোদী। বিজেপি আরও বলছে যে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা চলে এলে স্বাগত – তাঁদের শরণার্থী হিসাবে দেখা হবে, কিন্তু সেদেশ থেকে মুসলমানরা এলে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে – অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে আসামে চলে আসছে মুসলমানরা আর অসমীয়ারা কাজকর্ম পাচ্ছেন না।
বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর ওইসব ভাষণ শুনেছেন কোকড়াঝাড় জেলায় সাম্প্রতিক বোড়ো-মুসলমান দাঙ্গায় ঘরবাড়ী খুইয়ে বড়ভদেয়াগুড়ি গ্রামের অস্থায়ী ঘরে আশ্রয় নেওয়া মহম্মদ ফয়সল হক।
তাঁর কথায়, "মোদী সরকার আসুক, কংগ্রেস সরকার আসুক, অসম গণ পরিষদ সরকার আসুক। যদি তারা প্রমাণ করতে পারে আমরা বাংলাদেশী, তাহলে পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যাব। কিন্তু যদি প্রমাণ না করতে পারে যে আমি বিদেশী, তাহলে সেই সরকারের কী হবে?"
সেখানকারই আরেক বাসিন্দা শায়েদুল হক বলছিলেন মুসলমানদের বাংলাদেশী বলে আখ্যা দেওয়াটা একটা রাজনীতির চাল।
রাজনীতি যে হচ্ছে, সেটা বিজেপি-ও স্বীকার করছে। কিন্তু তাদের বক্তব্য, রাজনীতিটা করছে কংগ্রেস আর আসামের মুসলমানদের দল এআইইউডিএফ – কথিত অনুপ্রবেশকারীদের ভোট পাওয়ার আশায়।
আসাম বিজেপি-র সহ সভাপতি কামাখ্যা প্রসাদ তাশার কথায়, "অনুপ্রবেশকারীদের বিচারের জন্য যে ট্রাইবুনাল ছিল, সেই আইন বাতিল হয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অথচ বিদেশী আইনে পরিবর্তন আনা হল না। কেন? না ভোট ব্যাঙ্ক টিকিয়ে রাখার জন্য। সবাই জানে বিজেপি-র অবস্থান – যে অনুপ্রবেশের বিরোধী তারা। তাহলে কারা এই অনুপ্রবেশের থেকে ফায়দা তুলছে – এইসব অনুপ্রবেশকারীদের ভোট তো বিজেপি পায় না – কংগ্রেস আর এআইইউডিএফ পায় – তারাই রাজনৈতিক লাভের জন্য আইন পরিবর্তন করছে না।"
আসামের কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন ভোট এলেই বিজেপি এই প্রসঙ্গটা তোলে। কিন্তু তথ্য বলছে যে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ আদতে কমে গেছে অনেকটাই।
তরুণ গগৈ
বিবিসি বাংলাকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন ভোট এলেই বিজেপি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গটা তোলে।
মি. গগৈয়ের কথায়, "সত্যি কথা বলতে গেলে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে । বিজেপি যখন কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল তখন তো অনুপ্রবেশ আটকাতে কোনও পদক্ষেপ নেয় নি। আমি বারে বারে সীমান্তে নজরদারী বাড়ানো, বেড়া দেওয়ার কাজ শেষ করা, আলোর ব্যবস্থা করা – প্রভৃতির জন্য তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লাল কৃষ্ণ আদবানীর সঙ্গে দেখা করেছি। কিন্তু কিছুই করা হয় নি, যাতে ভোটের আগে আবারও বিষয়টা তোলা যায় আর স্বচ্ছন্দে পরে ভুলে যাওয়া যায়।"
মি. গগৈ যদিও দাবি করছিলেন যে বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গ তুলে আনছে ভোটের আগে, তাঁর দলও কিন্তু সম্প্রতি বরাক উপত্যকায় প্রচার চালানোর সময়ে হিন্দু বাংলাদেশীদের আশ্রয় দেওয়ার কথা বলেছে। আবার অন্যদিকে বাংলাভাষী মুসলমানদের নিয়মিতই হেনস্থা হতে হয় মি. গগৈ-এর পুলিশ প্রশাসনের কাছেই।
ধুবড়ী জেলার একটা চর এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সামাদ বলছিলেন, "আমরা যখন গুয়াহাটি যাই, পুলিশ বাঙালী দেখলেই ধরে জিগ্যেস করে কোথা থেকে এসেছি। ধুবড়ী-র নাম শুনলেই বলা হয় নিশ্চয়ই বাংলাদেশী। তখনই তার নামে সন্দেহজনক বিদেশী হিসাবে থানায় ডায়েরি করা হয়।"
শুধু পুলিশ প্রশাসনের কাছে নয়, আসামের বাংলাভাষীদের হেনস্থা হতে হয় নির্বাচনের ব্যাপারেও। আসাম-ই একমাত্র রাজ্য যেখানে সন্দেহজনক বা ডাউটফুল ভোটার বলে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে বহু মানুষকে। প্রশাসনের সন্দেহ – এঁরা সবাই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী।
সিটিজেনস রাইটস প্রিসারভেশন কমিটি-র প্রধান উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ চৌধুরী বলছিলেন, "১৯৯৭ সালে যখন ডি ভোটার চিহ্নিত করা শুরু হল, তখন প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ডি ভোটার হয়েছিল – বাঙালী নাম দেখলেই ডি ভোটার করে দেওয়া হয়েছিল – আলি বা আহমেদ বা ভট্টাচার্য, চ্যাটার্জী দেখলেই ডি ভোটার করে দেওয়া হয়েছে – শুধু ভাষার জন্য। এখন ডি ভোটারের সংখ্যাটা প্রায় দেড় লাখ। কিন্তু ২০১১ সাল পর্যন্ত বিদেশী ট্রাইবুনালে যে প্রায় ৮৩ হাজার মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে, তার মধ্যে মাত্রই সাড়ে পাঁচ হাজার সত্যিকারের বিদেশী পাওয়া গেছে। বাকি ৯২% ডি ভোটার কিন্তু ওই ১৩ বছর ধরে সব ধরণের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে রইল, সেটার কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হল না।"
আসামের রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজীব ভট্টাচার্য বলছিলেন দেশভাগের সময় থেকেই পূর্ব পাকিস্তান বা তারপরে বাংলাদেশ থেকে আসামে যেসব মানুষ চলে এসেছেন, তাঁদের সমস্যাটা জিইয়ে রাখা হয়েছে কারণ এই প্রসঙ্গটা তুললে নির্বাচনে ভোট পাওয়া যায়।
আসামে যখন বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে ডাউটফুল ভোটার বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে, সেই সময়েই পশ্চিমবঙ্গের ভেতরে বাংলাদেশের যেসব ছিটমহল রয়েছে, সেখানকার বাসিন্দাদের ভোটার তালিকায় নাম তুলতে সাহায্য করছে সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলো। কয়েকটি ছিটমহলের বাসিন্দা – যাঁরা ভোটার পরিচয় পত্র পেয়েছেন আর এবারের নির্বাচনে ভোটও দিয়েছেন, তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম বাংলাদেশী ছিটমহলের বাসিন্দা হয়েও কীভাবে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারলেন তাঁরা।
তাঁদের একজনের কথায়, "বাবা হিসাবে যার নাম ছিল, তাঁর পরিচয় দিয়েই ভোটার কার্ড করিয়েছি। নিজের বাবার তো কোনও পরিচয়পত্র নেই। আর এর জন্য পার্টির লোক ধরতে হয়েছে, অনেক টাকাপয়সাও দিতে হয়েছে।"
আর ছিটমহলে নতুন ভোটার তৈরি হয়েছে জেনে এবারই প্রথম পশ্চিমবঙ্গের সব দলই প্রচার চালিয়েছে।
ছিটমহলের অনেক বাসিন্দারই ভারতীয় ভোটার কার্ড আছে
ছিটমহল আন্দোলনের নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলছিলেন, "কোচবিহার কেন্দ্রে প্রায় কুড়ি হাজার এমন ভোটার আছেন, যাঁরা ছিটমহলের বাসিন্দা বা তাঁদের আত্মীয় পরিজন। এই ভোটটা সহজে যদি পাওয়া যায় – কিছু সন্তোষজনক কথা বলে, তাহলে ক্ষতি কী! এটা ভেবেই সব পার্টিই এবার ছিটমহলে গেছে – প্রচারের প্রধান বিষয় থেকেছে ছিটমহল।"
যেদিন ওই ছিটমহল বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তার কয়েকদিন আগেই মমতা ব্যানার্জী কোচবিহারে এক জনসভায় বলছিলেন, "আগের সরকার ছিটমহল নিয়ে কিছু করে নি। আমিই সার্ভে করাচ্ছি, জনগণনা করাচ্ছি। সেখানকার মানুষ যা চাইবেন, তাই হবে।"
এখন মমতা ব্যানার্জী ছিটমহলের মানুষ যা চাইবেন, তাই হবে বলে ঘোষণা করলেও তাঁরই আপত্তিতে আটকে গিয়েছিল ছিটমহল বিনিময়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আসাম হোক বা পশ্চিমবঙ্গ – কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ বা ছিটমহলের সমস্যা জিইয়ে রেখেছে রাজনৈতিক দলগুলো – নিজেদের স্বার্থেই।
তবে তাদের স্বার্থ পূরণ করার মধ্যেই কোথাও জাতি দাঙ্গায় প্রাণ হারাচ্ছেন দুই পক্ষেরই মানুষ – কোথাও পুরুষানুক্রমে ভারতে থাকা স্বত্ত্বেও হারাচ্ছেন সবরকম নাগরিক অধিকার – যদিও কেউ কেউ আবার নাগরিকত্বহীন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টায় হাত ধরছেন ওই রাজনৈতিক দলগুলোরই – ভোটের আগেই।
কারণ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্লেষক – সকলের কথাতেই পরিষ্কার – ভোট মিটে গেলে বাংলাদেশী প্রসঙ্গ আর কেউই তুলবে না।
সূত্র: বিবিসি অনলাইন।