মোদির সফরের পর বাংলাদেশ
মাসুম খলিলী
০৪ জুন ২০১৫,বৃহস্পতিবার, ১৮:৩৭
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের পর দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে বলে উল্লেখ করছেন দুই দেশের অনেক বিশ্লেষক। মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নরেন্দ্রজীর দ্বিতীয় ঘর হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে ঢাকা সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সে আমন্ত্রণ বাস্তবে রূপ পেতে বছরকাল সময় নিলো। শুরুতে কংগ্রেস মিত্র হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রধানের সাথে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব যে মোদির ছিল, সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই। হয়তো বা এ কারণে মোদির শপথ অনুষ্ঠানে সার্ক নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর পর জাপান সফরের পূর্বসূচির কথা বলে শেখ হাসিনা দিল্লি যাননি। সে সময় তিনি হয়তো বা মোদির মুখোমুখি হতে চাননি। এর পর ঢাকা ও দিল্লির বাইরে নরেন্দ্র মোদির সাথে শেখ হাসিনার একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে; কিন্তু বিজেপি আমলে দুই নেতার প্রতিপক্ষ দেশে রাষ্ট্রীয় সফর এই প্রথম। যদিও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সার্ক দেশ সফরের যে কর্মসূচি আগেই নিয়েছিলেন, তার ধারাবাহিকতায় ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার পর বাংলাদেশে সফর করছেন।
নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি বাংলাদেশে এ সফর এমন এক সময়ে করছেন, যখন বিজেপির এই নেতা ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতি ও প্রশাসনের ওপর এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি বাংলাদেশ নিয়ে যেসব এজেন্ডাকে এগিয়ে নেবেন, তা হবে একটি দীর্ঘ বা মধ্যমেয়াদি কৌশলেরই অংশ। এই কৌশল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের সময় নেয়া হলেও সেটাকে নিজের অনুসরণীয় বলে মনে করতে পারেন নরেন্দ্র মোদিও। আওয়ামী লীগের প্রচেষ্টার পাশাপাশি ভারতের আমলা ও গোয়েন্দা স্টাবলিশমেন্টের চেষ্টা এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো।
সাক্ষাৎ হচ্ছে, কৌশলগত আলোচনা নয়
কংগ্রেসের সাথে আওয়ামী লীগের যে দলগত বা আদর্শিক মৈত্রী রয়েছে তা যে বিজেপির সাথে নেই, এ কথা সত্যি; কিন্তু সরকার হিসেবে আওয়ামী লীগ বা হাসিনা প্রশাসন কী দিচ্ছে সেটি মোদির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই লেনদেনের হিসাব-নিকাশে এসে অনেক কিছু পাল্টে গেছে সাম্প্রতিক সময়ে। এক সময় ভারতের এনডিএ সরকার চাইছিল, বাংলাদেশের পুরো রাজনীতিকে ভারতকেন্দ্রিক করতে সব দলের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে। এর অংশ হিসেবে মোদির এই সফরে এ দেশের সরকার এবং কার্যকর বিরোধী দলের মধ্যে এক ধরনের যোগসূত্র তৈরি করে দেয়ার চিন্তাভাবনা হয়েছিল; কিন্তু সরকারের সর্বাত্মক বিরোধিতায় সেটি আর হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিরোধী জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার সাথে নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ হচ্ছে; কিন্তু স্বল্প সময়ের সেই সাক্ষাতে কৌশলগত আলোচনা কিছু হবে কি না তাতে সন্দেহ রয়েছে। প্রটোকলের বাইরে আরো কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাতের জন্য সফরের দ্বিতীয় দিন যে সময় ঠিক করা হয়েছে, তার মধ্যে মোদিজী বাংলাদেশের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা যাচ্ছে।
বেগম জিয়ার এই সাক্ষাৎকারের প্রতীকী গুরুত্ব নিশ্চয়ই রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের ইচ্ছা ছিল ভারতকে তাদের চাওয়া-পাওয়ার সবটাই তারা দেবে, তবে কোনোভাবেই যেন ২০ দল বা বিএনপি নেত্রীকে সাক্ষাৎকার না দেন নরেন্দ্র মোদি। এ ব্যাপারে ভারতীয় রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকদের পক্ষে আনতে ব্যাপক তৎপরতা চালানো হয়। এক মাসের বেশি সময় ধরে সেখানে একজন না একজন উপদেষ্টাকে রাখা হয়েছে এ ব্যাপারে মোদি প্রশাসনকে প্রভাবিত করতে। একাধিক মন্ত্রী প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে বারবার সফর করেছেন দিল্লিতে। ভারতের সাবেক হাইকমিশনারদের মধ্যে অনেককে নানাভাবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কাজ করতে নিয়োগ করা হয়েছে। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত সাবেক কোনো কোনো হাইকমিশনারকে সেখানে নানা কাজের নামে রেখে দেয়া হয়েছে। এসব প্রচেষ্টার লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারকে মোদি প্রশাসনের সমর্থন জোগানো। বিরোধী জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার সাথে মোদির বাংলাদেশ সফরকালে যে আলোচনার পরিকল্পনা ছিল তা শেষ পর্যন্ত সীমিত করার মধ্যে দিল্লির এক ধরনের ভারসাম্য আনার চেষ্টাই হয়তো রয়েছে। এতে বিএনপির সাথে যোগাযোগের সূত্রটিও থাকল আর কানেক্টিভিটিসহ যেসব চুক্তি-সমঝোতা সরকারের সাথে হবে, তার প্রতি এক ধরনের সমর্থনও এতে বিরোধী পক্ষের পাওয়া যেতে পারে।
ভারতের প্রাপ্তি
মোদির এ সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের কী এজেন্ডা রয়েছে, তার অনেক কিছু নিয়েই এখন আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশে ভারতের সুবিস্তৃত কৌশলের কয়েকটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করার মতো কোনো তৎপরতা যাতে না থাকে সেটি নিশ্চিত করা। এ ব্যাপারে শুধু সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রদান এবং সেটি প্রতিপালনের মধ্যে সন্তুষ্ট থাকতে চায় না ভারত। প্রতিবেশী দেশটি চায় এ দেশের কোনো সরকার ক্ষমতায় আসার পর যাতে এ ধরনের কাজ করার সক্ষমতাই অবশিষ্ট না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে। এ কারণে বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনীগুলোর তৎপরতাকে এক ধরনের নজরদারির আওতায় নিয়ে আসার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। এ ইস্যুতে ভারতের মোদি বা মনমোহন এ দুই সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের ভারতবিরোধী যে মনোভাব এবং দিল্লি বৈরী শক্তির সক্রিয়তা রয়েছে বলে মনে করা হয়, সেটিকে মূলোৎপাটন করা। ইউপিএ সরকারের সময় ভারতবিরোধিতার সূতিকাগার হিসেবে ইসলামিস্ট রাজনীতি এবং বিএনপি নেতৃত্বের একটি অংশকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এ শক্তিকে নির্মূল করার জন্য সর্বাত্মক কার্যক্রমের শর্তটি প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা ঢাকার ক্ষমতাসীনদের ওপর ছিল। কংগ্রেস শাসনের পুরো সময়জুড়ে এখানকার রাজনৈতিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে এটি স্থান পেয়েছিল। মানবতাবিরোধী অপরাধ আদালতের বিচারিক কার্যক্রম এবং ইসলামিস্ট দমনকে এর একটি অংশ বলে ধারণা করা হয়। বিজেপি সরকার আমলে এর ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত বড় রকমের কোনো ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে না। তবে মাত্রাগত ওঠানামা মাঝে মধ্যে দেখা যায়। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কংগ্রেস ও বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের ট্রানজিট বা কানেক্টিভিটি পাওয়া। বাংলাদেশকে ভারতের অর্থনৈতিক বাজার হিসেবে পাওয়ার ওপর এক সময় বেশ গুরুত্ব দিয়েছিল নয়াদিল্লি; কিন্তু এখন মনে করা হয়, অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মেই এটি ঘটবে। এখানে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, এ বাজার অব্যাহত থাকবে। এখন অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা উভয় স্বার্থের ক্ষেত্রে শীর্ষে রাখা হয়েছে ট্রানজিট বা কানেক্টিভিটিকে। ট্রানজিটের নিরাপত্তাগত একটি দিক থাকার কারণে চীন-আমেরিকার অনিচ্ছা থাকলে এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। মনমোহনের সফরের সময় তিস্তা চুক্তি না হওয়ার কারণে ট্রানজিটের বাস্তবায়নচুক্তি করা হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কার্যত তখন চুক্তি না হওয়ার পেছনে চীনের বড় রকমের আপত্তি ছিল বলেই সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এবার মোদির ঢাকা সফরের সময় ট্রানজিট ও কানেক্টিভিটি নিয়ে সব ধরনের চুক্তি ও সমঝোতা সম্পন্ন হওয়ার ব্যাপারে বোঝাপড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। মোদির চীন সফরের সময় বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে কানেক্টিভিটি দেয়ার ব্যাপারে চীনের অনাপত্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে বিসিআইএম (বাংলাদেশ-চায়না-ইন্ডিয়া-মিয়ানমার) অর্থনৈতিক করিডোর-সংশ্লিষ্ট কানেক্টিভিটির ব্যাপারেও ভারতের আপত্তি থাকবে না। বস্তুত বিসিআইএম করিডোরের মাধ্যমে চীনের মেরিটাইম সিল্করোড ও 'ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড'পরিকল্পনার সাথে কলকাতা-ঢাকা-ত্রিপুরা-মিয়ানমার হয়ে ইউনান পর্যন্ত সংযোগ তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেখান থেকে এই মহাসড়ক চলে যাবে তুরস্কের ইস্তাম্বুল পর্যন্ত। মোদির সফরের পর চীনা প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় এটিও চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে। এই নেটওয়ার্কের সাথে গভীর সমুদ্রবন্দরের একটি যোগসূত্র রয়েছে। তবে এখনো নিশ্চিত হয়নি চীন, না ভারতীয় কনসোর্টিয়াম এটি করবে। ভারতীয় কনসোর্টিয়াম করলে এটি হতে পারে পায়রায়। এতে কলকাতা বন্দরের কাছাকাছি হবে গভীর সমুদ্রবন্দরটি। আর চীন এটি নির্মাণ করলে তা হতে পারে সোনাদিয়ায়। গভীর সমুদ্রবন্দরের ব্যাপারে ভারত-চীন সমঝোতা না হলে এটি নিয়ে বাংলাদেশ সিদ্ধান্তের পর্যায়ে নাও যেতে পারে।
চতুর্থত, ভারত বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের ধরনটি নেপালের আদলে গড়ে তুলতে চায়। সার্কের কাঠামোয় যে অর্থনৈতিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার প্রস্তাব এক সময় ছিল, সেটি উপ-আঞ্চলিক পর্যায়ে তৈরি করতে চায় দিল্লি। এ লক্ষ্যে এবার বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের মধ্যে এক দেশের যানবাহন অন্য দেশের ওপর দিয়ে চলার বিষয়টি। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে এ ধরনের একটি সমঝোতার আভাসও দিয়েছেন। এটি দুই দেশের জন্য প্রযোজ্য হলেও বাংলাদেশের যানবাহন আসলে ভারতের ওপর দিয়ে ভুটান বা নেপালে যাওয়ার সুযোগ সেভাবে ভারতীয় শ্রমিক ইউনিয়ন বা অন্য প্রতিবন্ধকতার কারণে নাও পেতে পারে। তবে ট্রানজিটের মালামাল পরিবহনের ব্যাপারে এ সুযোগ ভারতীয় যানবাহনের ক্ষেত্রে কার্যকর হয়ে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের বিষয়টি এবারের আলোচনা ও চুক্তির শীর্ষে থাকতে পারে। এ বিষয় চূড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী একবার দিল্লি সফর করে এসেছেন। এ ছাড়া আরেকটি সমঝোতা হতে পারে দুই দেশের ল্যাবরেটরির সার্টিফিকেট অন্য দেশ গ্রহণ করার ব্যাপারে। এতে বাংলাদেশের বিএসটিআইয়ের সনদ যেমন ভারতে চলবে, তেমনি সে দেশের সনদ বাংলাদেশ গ্রহণ করবে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য স্থানীয় মুদ্রায় করার বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে। আর একসময় এক দেশের মুদ্রা অন্য দেশে গ্রহণের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে, যেটি এখন নেপালে রয়েছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিকপর্যায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো সহযোগিতা তৈরি করার কথা বলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের আসল চাওয়া
ভারতের কাছে বাংলাদেশের এজেন্ডার বিষয়টি এখন অনেকটাই তিস্তার পানিবণ্টনে এসে ঠেকেছে। যদিও এবার তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা বা চুক্তি যে হবে না, সেটি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে ৫৪টি নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এই আলোচনা অবশ্য কার্যকর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো আয়োজন থাকবে না। বাংলাদেশের জনমতকে সামনে রেখে ট্রানজিটের মাশুল আদায়ের কথা থাকবে; কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো হারের কথা উল্লেখ থাকবে না, যাতে মোটের ওপর কিছু একটা দিয়ে ট্রানজিটের মালামাল পরিবহন করা সম্ভব হয়। ভারতের সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনকে বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হিসেবে দেখানো অব্যাহত থাকবে। যদিও এর মধ্যে বাংলাদেশের সে রকম একান্ত কোনো প্রাপ্তি নেই। এই চুক্তি করা হয়েছিল মূলত পাকিস্তান আমলে নেহরু ও ফিরোজ খান নুনের সময়, যেটি ইন্দিরা ও মুজিব ১৯৭৪ সালে নতুন করে স্বাক্ষর করেছিলেন। সেই চুক্তিটি তিনবিঘা করিডোরের সার্বভৌমত্ব হস্তান্তরের বিষয়টি ছাড়া অনুমোদন করা হয়েছে ভারতীয় সংসদে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নেপথ্য মূল এজেন্ডাটি হলো এখানে নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারে ভারত সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতা। মুক্ত গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে এটি সম্ভব না হওয়ায় নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র বা কার্যত এক দল ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে হবে সরকারকে। এ ব্যাপারে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের সমর্থন ছিল। এখন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার নিশ্চিত করলে, সেটিই হবে বর্তমান সরকারের বড় অর্জন।
এ ব্যাপারে একটি রোডম্যাপও রয়েছে বর্তমান সরকারের সামনে। সেই রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী মে-জুন নাগাদ একটি নির্বাচন করা হবে। তার আগে বিরোধী জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারার বিষয়টি মামলার রায়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে। মূল ধারার বাইরে বিএনপির একটি ধারাকে নির্বাচনে নিয়ে গিয়ে সেটাকে গ্রহণযোগ্যতা দানের চেষ্টা করা হবে। এ ধরনের নির্বাচন যদি অন্তর্বর্তী কোনো ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়, তাতেও বড় কোনো ঝুঁকি দেখছে না ক্ষমতাসীনেরা। এর মাধ্যমে আগামীতেও আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। এ পরিকল্পনায় মোদির সম্মতি পাওয়া গেলে সেটি হবে সরকারের মূল অর্জন। এ ক্ষেত্রে ভারতকে তাদের চাওয়া সব সুবিধা দিতে রাজি থাকবে সরকার, তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেসব বাধা আসতে পারে তা দূর করতে ভূমিকা রাখতে হবে প্রতিবেশী দেশটিকে। ট্রানজিটের ক্ষেত্রে এটি পালন করেছে নয়াদিল্লি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাব্যবস্থায় ভারতের প্রভাব আওয়ামী লীগের ক্ষমতা প্রাকৃতিকভাবে নিশ্চিত করবে বলে দলের নীতি-উপদেষ্টারা মনে করেন। - See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/27776#sthash.llP8bQrj.dpuf