বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর অবদানের কথা স্মরণ করে মনুমেন্ট তৈরী করা জরুরী, তবে .........................
নয়ন চ্যাটার্জি
সম্প্রতি বাংলাদেশের টিভি উপস্থাপক অঞ্জন রায় মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর অবদানের জন্য মনুমেন্ট নির্মাণের দাবি করেছে। তার মতে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ৪ হাজার ভারতীয় সেনা নিহত এবং ১০ হাজার আহত হয়েছে।
খুব ভালো কথা। আসুন এবার দেখি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবদান কোন অংশে ছিলো---না আমার মুখে নয়, ঐতিহাসিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের মুখেই শুনি।
১) সূত্র: বই: 'বাংলাদেশ পাস্ট এন্ড প্রেজেন্ট', লেখক: সালাহউদ্দিন আহমদ----
"যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পর ভারতীয় সৈন্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিক সময় অবস্থান করতে থাকায় ভারত সমালোচিত হতে থাকে। অভিযোগ উঠে যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ট্রাক বহরে করে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও সাজসরঞ্জাম সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পরিণামে বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদাশালী রাষ্ট্রের পরিবর্তে ভারত একটি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় এমন একটি আশঙ্কা দেখা দেয়। তাতে ভারতীয় নীতির বিরুদ্ধে উত্তেজনা ও সংশয় সৃষ্টি হয়।" (বইটি কিনতে পারেন: http://goo.gl/koedZE)
২) সূত্র: বই: 'র অ্যান্ড বাংলাদেশ', লেখক: মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন-----
"পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণের পর ভারতীয় সৈন্যদের ব্যাপক লুটতরাজ দেখতে পেয়ে ভারতের প্রকৃত চেহারা আমার কাছে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। ভারতীয় সৈন্যরা যা কিছু দেখতে পেতো তার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়তো এবং সেগুলো ভারতে বহন করে নিয়ে যেতো। লুটতরাজ সহজতর করার জন্য তারা আমাদের শহর, শিল্প স্থাপনা, বন্দর, সেনানিবাস, বাণিজ্যিক কেন্দ্র এমনকি আবাসিক এলাকায় কারফিউ জারি করে। তারা সিলিং ফ্যান থেকে শুরু করে সামরিক সাজসরঞ্জাম, তৈজষপত্র ও পানির ট্যাপ পর্যন্ত উঠিয়ে নিয়ে যায়। লুণ্ঠিত মালামাল ভারতে পরিবহনের জন্য হাজার হাজার সামরিক যান ব্যবহার করা হয়।" ('র অ্যান্ড বাংলাদেশ'বইটি ১৯৯৫ সালে মদীনা পাবলিশার থেকে বের হয়)
৩) সূত্র বই: 'র অ্যান্ড বাংলাদেশ', লেখক: মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন---
"বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ভারত অর্থনৈতিক, সামরিক, কৌশলগত ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক লাভবান হয়েছে। এ কারণে দেশটি তার নিজের স্বার্থে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়, আমাদের স্বার্থে নয়।"
৪) সূত্র: আট নম্বর সেক্টরের সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসাবে অংশগ্রহণকারী মেজর জেনারেল খোন্দকার মুহম্মদ নূরন্নবী (অব.) এর লেখা 'ঢাকা স্টেডিয়াম থেকে সেক্টর আট'নামক বইয়ের ১৬৪/১৬৫ পৃষ্ঠা, সাহাদত হোসেন খান লিখিত 'ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক হস্তক্ষেপ'বইয়ের পৃষ্ঠা: ৩০২-৩০৪--------------
"সীমান্ত খোলা পেয়ে ভারতীয় মাড়োয়ারী ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে এবং স্থানীয় বাজার ও দোকানপাট থেকে সব বিদেশী মালামাল বিশেষ করে রেডিও, টেলিভিশন, খুচরা যন্ত্রাংশ, বিদেশী ওষুধপত্র অর্থাৎ যা কিছু বিদেশী সব কিনে নিচ্ছিল। এমনকি পাকিস্তানি ধাতবমুদ্রাও। এটা আমাদের জন্য একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এসময় সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ মঞ্জুর আমাদের এলাকায় এলেন। আমরা তাকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি জানালেন যশোরেও একই অবস্থা। সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ মঞ্জুর ভারতীয় মাড়োয়ারীদের এ ব্যবসার ব্যাপারে ভারতের চতুর্থ মাউন্টেন ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল ব্রারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ভারতীয় জেনারেল ব্রার সে সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ মঞ্জুরকে জানায় যে, এদের নিয়ে সবাই অতিষ্ঠ।"
(বই দুটি রকমারি থেকে কিনতে পারবেন,http://www.rokomari.com/book/76916,http://www.rokomari.com/book/48389)
https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=658440330953811&id=616661671798344