'প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে রানা প্লাজার টাকা নেই, এটি ভয়ঙ্কর খবর': অধ্যাপক আনু মোহাম্মাদ
২৬ এপ্রিল(রেডিও তেহরান): বাংলাদেশের সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল নয়টায় ঘটে এ দুর্ঘটনা। সরকারি হিসেবেই এ ঘটনায় নিহত হয়েছে ১১৩৬ জন। এ ঘটনা কেবল বাংলাদেশকেই নয়, গোটা বিশ্বকেই স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। মানবসৃষ্ট সবচেয়ে ভয়াবহ এই বিপর্যয়ের রেশ এখনো রয়ে গেছে। সরকারি হিসেবেই এখনো পর্যন্ত 'নিশ্চিত নিখোঁজের'তালিকায় রয়েছে ১৩৫জন শ্রমিকের নাম। চিকিৎসাধীন রয়েছেন অসংখ্য আহত শ্রমিক। রানা প্লাজা ধসের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা কথা বলেছি তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মাদের সাথে।
পুরো সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করা হলো। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।
রেডিও তেহরান: বাংলাদেশের সাভারের রানা প্লাজা ধসের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। দুই বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্তরা এখনও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পায়নি? পাওয়া যায়নি নিখোঁজদের কোনো সন্ধান? দুই বছর পার হওয়ার পরও কেন এ অবস্থা?
অধ্যাপক আনু মোহাম্মাদ: রানা প্লাজা ধসের ঘটনার মতো ঘটনা বিশ্বে কারখানা ধসের ইতিহাসে আর নেই। আর রানা প্লাজা ধসের একটা পরিপ্রেক্ষিত ছিল। বাংলাদেশে গার্মেন্টস খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করছিল। সেটার ভিত্তি যে দুর্বল ছিল বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো যে ঠিকমতো দাঁড়ায়নি তারই প্রমাণ এই রানা প্লাজা ধসের ঘটনা।
রানা প্লাজা ধসের ব্যাপারে বলব, এমন একটি ভবনে এই কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে যেটি আইনগতভাবে অবৈধ ছিল। ভবনের জমি জোর জবরদস্তি করে দখল করে নেয় মালিকপক্ষ। তাছাড়া কারখানাটি যেভাবে বসানো হয়েছিল তাও আইনসম্মত ছিল না। রানা প্লাজার পুরোটাই একটা অবৈধ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছিল। আর সেখানে জোর করে শ্রমিকদের ঢুকানো হয়েছিল।
রানা প্লাজা ধসের বিষয়টি যদি আমরা ব্যাখ্যা করি তাহলে পুরো পরিস্থিতির জন্য ৩ টা গ্রুপকে দায়ী করতে পারি।
প্রথম গ্রুপটি হচ্ছে এই ভবন এবং কারখানার মালিক এবং কারখানাগুলো সমন্বয়ের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান আছে যেমন বিজিএমইএ তাদের দায়িত্ব ছিল এগুলো দেখাশুনা করার। তারা প্রথম দায়ী।
দ্বিতীয় দায়ী হিসেবে আমরা বলতে পারি, যারা এসব কারখানায় পোশাকের জন্য অর্ডার দেয় অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বায়ার যারা রয়েছেন। তাদের অবশ্যই দেখার দায়িত্ব ছিল যে কোন জায়গা থেকে তাদের এই পোশাকগুলো তৈরি হচ্ছে। সেখানে শ্রমিকদের অবস্থা কি, সেখানে কাজের পরিবেশ কেমন এসব বিষয় অবশ্যই তাদের দেখার দায়িত্ব ছিল।
আর তৃতীয়ত এবং কেন্দ্রীয়ভাবে দায়ী হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের দেখার দায়িত্ব ছিল- ভবন ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, আইনসম্মত হচ্ছে কি না, শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ নিরাপদ কি না এবং তারা ঠিকমতো বেতন ভাতা পাচ্ছে কিনা। উল্লেখিত এই তিনটি গ্রুপই মূলত রানা প্লাজা ধসের জন্য দায়ী। এই তিনটি গোষ্ঠীর কোনো ভূমিকা এখানে আমরা দেখি না। আমাদের একটা ক্ষীণ প্রত্যাশা ছিল যে এত ভয়ঙ্কর এবং মর্মান্তিক একটা ঘটনা ঘটার পর তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব বা কাজের ধরণের কিছুটা পরিবর্তন হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এই তিন গোষ্ঠী যাদের কারণে এতবড় একটা ঘটনা ঘটল গত দুই বছরে তাদের অবস্থানের কোনো পরির্বতন হয়নি। তাদের সীমাহীন লোভ এবং উচ্চ মুনাফা লাভের যে দৃষ্টিভঙ্গি পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যে মালিকদের পক্ষে নগ্নভাবে ভূমিকা পালন করে- সেটার কারণে গত দুই বছরে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
রানা প্লাজা ধসের পর যেটি হওয়া উচিত ছিল সেটি হচ্ছে- সাথে সাথে একটি কমিটি গঠন করে ক্ষতিপূরণ নীতিমালা নির্ধারণ করা। আর ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য কারখানা মালিক, বিজিএমইএ এবং আন্তর্জাতিক যেসব বায়ার আছেন তাদের কাছ থেকে টাকাটা সংগ্রহ করে সমন্বিতভাবে সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেয়া। সরকার সেই কাজটি করেনি। এ ব্যাপারে সরকার কোনো কাজ না করার ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারটি এখনও পর্যন্ত ঝুলে আছে।
এখন যেটা হচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অনুদান দেয়া হচ্ছে কিন্তু সনির্দিষ্ট নীতিমালার অধীনে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। বেশিরভাগ শ্রমিক ঠিকমতো কোনো অনুদান পায়নি। মাঝখানে দেখা যাচ্ছে কিছু মধ্যস্বত্ত্বভোগী টাউট বাটপার তৈরি হয়েছে। তারা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলে শ্রমিকদের জীবন আরো দুর্বিষহ করে তুলেছে। গত দুই বছরে রানা প্লাজার শ্রমিকদের জীবনের ক্ষতটা তো দূর হয়নি উপরন্তু নতুন নতুন দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে তারা দিন কাটাচ্ছে।
রেডিও তেহরান: রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে গত কয়েকদিন মিডিয়াগুলোতে নানা খবর এসেছে। সেসব খবরে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে শতাধিক কোটি টাকা জমা রয়েছে। তো এতগুলো টাকা জমা থাকার পরও কেন রানা প্লাজা ধসের ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না। আপনি এ ব্যাপারে কি বলবেন।
অধ্যাপক আনু মোহাম্মাদ: দেখুন এ প্রশ্ন আমার নিজেরও। একবছরপূর্তি উপলক্ষ্যে আমি এই একই প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলাম। তার আগেও আমি বলেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে শতাধিক কোটি টাকা জমা রয়েছে এগুলো যদি ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া হয় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবার প্রায় ১০ লাখ টাকা করে পেত। আর যদি তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে এ সহযোগিতা করা হতো তাহলে তারা একটা শ্বাস নেয়ার একটা জায়গা পেত। প্রাথমিক যে ধাক্কা সেটা হয়তো কিছুটা সামলে নিতে পারত। তারপর ক্ষতিপূরণ নীতিমালা করে তবে বাকিটা দিতে পারতো। কিন্তু সেটা না করে দুই বছরে বিভিন্ন জায়গায় মাত্র ২২ কোটি টাকার মতো বিতরণ করেছে। তারপরও এসব বিতরণ তাদের সিলেকটিভ কিছু বিতরণ। কিন্তু বাকি ১০৭/১০৮ কোটি টাকার মতো এখন পর্যন্ত তারা ব্যবহারই করেনি।
বর্তমানে পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর এই কারণে যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হলো যে রানা প্লাজা তহবিল নামে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনো তহবিল নেই। এ কথা শোনার পর আমি যারপরনাই স্তম্ভিত হলাম। কি নামে টাকা রাখা হয়েছে সেটা তো আর আমরা জানিনা কিন্তু রানা প্লাজা ধসের পর বিভিন্ন জন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যে চাঁদা দিয়েছে সেই টাকার কথা সরকারি তথ্য বিবরণীতে তখন ছিল। আর সর্বমোট টাকার অংকটাও এ ঘটনার একবছরপূর্তিতেও বলা হয়েছে। তখন বলা হয়েছিল এই পরিমাণ টাকা বিতরণ করা হয়েছে এবং এই টাকাটা জমা আছে। অথচ এ বছর বলছে এই নামে কোনো টাকা নেই। হয়তো রানা প্লাজা নামে কোনো তহবিল না থাকতে পারে তবে শ্রমিকদের জন্য যে টাকা জমা হয়েছে সেটি প্রকাশিত সত্য। অথচ এখন বলা হচ্ছে কোনো টাকা নেই। তারমানে কি, তারমানে শ্রমিকরা কি এই টাকাটা আর পাবে না। তার মানে এই টাকাটা কি গায়েব হয়ে যাচ্ছে! এটা তো আরো ভয়ঙ্কর একটা বিষয়।
রেডিও তেহরান: সরকারি হিসেবেই বলা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত ১৩৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা আরও বেশি। একটি দুর্ঘটনায় এত বেশি সংখ্যক শ্রমিক নিখোঁজ থাকার কারণ কী? উদ্ধার কার্যক্রম ও লাশ হস্তান্তর ব্যবস্থায় কি ত্রুটি ছিল?
অধ্যাপক আনু মোহাম্মাদ: উদ্ধার কার্যক্রমের মধ্যে তো একটা বড় দুর্বলতা ছিল। বহু বেআইনি ভবন তৈরি হচ্ছে যেগুলোর স্ট্রাকচারাল সমস্যা আছে, ভবন নির্মাণের মিনিমাম যেসব শর্ত রয়েছে সেগুলোও তারা পূরণ করে না। ফলে সেসব কারখানা ভবনে যদি দুর্ঘটনা ঘটে তখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তা মোকাবেলা করার জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা তৈরি করতে হয় সেটা বাংলাদেশে কখনও তৈরি করা হয়নি। হাজার হাজার কোটি টাকা নানা কাজে অপচয় করা হয় কিন্তু প্রয়োজনীয় এসব কাজে কখনও টাকা ব্যয় করা হয় না। আর সেটার প্রমাণ পেলাম প্রথমে তাজরীন ফ্যাশনে এবং দ্বিতীয় রানা প্লাজা ধসের ঘটনায়।
আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন রানা প্লাজা ধসের পর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক বড় ও ব্যাপক আকারে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে সেই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। আশেপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে যাওয়া সাধারণ মানুষ এবং আশপাশের কর্মজীবী মানুষ তারাই মিলে প্রাথমিক স্তরে অনেকটা অতি সাধারণ মানুষের যন্ত্রপাতি যেমন হাতুড়ি-বাটালি ইত্যাদি দিয়ে উদ্ধার কাজ চালিয়েছে।তারফলে পুরো উদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রথম থেকেই একটা দুর্বলতা ছিল। দেখা গেছে যে অনেক লাশ সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অথচ কোনো হিসাব ঠিকমতো রাখা হয়নি। একইসাথে আরেকটি সমস্যা সেখানে ছিল আসলে কতজন শ্রমিক সেখানে কাজ করতো তার কোনো তালিকা কারখানা মালিক ও বিজিএমইএ দেয়নি। অথচ ওখানকার শ্রমিকদের নামের তালিকা অবশ্যই তাদের কাছে থাকার কথা এবং বিজিএমইএর কাছেও থাকার কথা। সেই নামের তালিকাটা দিলে সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যেত। অথচ এসব না পাওয়ার কারণে এবং অনেক জনের কাজের কারণে অনেক লাশ পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও সবাই মিলে যে তালিকা করেছিল সেটা আছে বলেই আমরা মোটামুটি একটা কিছু পাচ্ছি যে আসলে কারা নিখোঁজ ছিল। তা নাহলে তো নিখোঁজের সংখ্যা আরো বেশি থাকত। তাছাড়া আরো একটি বিষয় এখানে আছে। সেটি হচ্ছে মালিক পক্ষ সবসময় যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে লাশ কমানোর চেষ্টা করে। ফলে লাশ গায়েব হলে তো তাদেরই ভালো।
রেডিও তেহরান: বাংলাদেশে শ্রমিকদের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি কেমন? রাজা প্লাজা ধসের ঘটনা থেকে সরকার কি যথাযথ শিক্ষা নিয়ে এ ধরনের ঘটনার পুণরাবৃত্তির ঠেকানোর পদক্ষেপ নিয়েছে?
অধ্যাপক আনু মোহাম্মাদ: দেখুন শ্রমিকদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তো আমি তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখিনি। তবে আন্তর্জাতিকভাবে যেহেতু বিষয়টি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল ফলে আন্তর্জাতিকভাবে উদ্যোগ নিয়ে দুটো প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়ন্স। আন্তর্জাতিক চাপের কারণে তারা বাংলাদেশে এসে কিছু ভবন সিকিউরিটি সিসটেম ও সেফটির ব্যাপারে কিছু জরিপ করেছে। তারা কিছু কিছু ভবন ঠিক করেছে এবং কিছু কিছু ভবনের ব্যাপারে তারা অবজেকশন দিয়েছে যে এখানে কারখানা করা যাবে না। আর রানা প্লাজার মতো কিছু ভবন ছিলো যেগুলোতে একইরকম ঘটনা ঘটতে পারতো- সেসব ভবনকে ঠিকঠাক করেছে।
এ ব্যাপারে আমি মনে করি, সরকারের প্রথমেই উচিত ছিল দুটো কমিটি গঠন করা। একটি হলো ক্ষতিপূরণ নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি এবং অন্যটি হলো ভবনগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা ও নির্ধারণ বিষয়ক কমিটি। তবে সেটা সরকারের পক্ষ থেকে হয়নি। অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়ন্স যে কাজ করছে তাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই ধরণের অসমন্বিত কিছু কাজ হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে এবং সামাজিকভাবে সরকারের যে দায়িত্ব যথাযথভাবে পূরণ না করার কারণে ঝুঁকিটা থেকেই যাচ্ছে।
পরিদর্শক থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি সবকিছুর ক্ষেত্রে একটা বড় ধরণের পরিবর্তনের দরকার ছিল। অথচ গত দুই বছরে তার লক্ষ্যণীয় কোনো পরিবর্তন আমরা দেখিনি।
রেডিও তেহরান: রানা প্লাজা ধসের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের সর্বশেষ অবস্থা কি?
অধ্যাপক আনু মোহাম্মাদ: সর্বশেষ অবস্থা হচ্ছে সে সময়কার চাপের কারণে যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে তাদের একটি গ্রুপ সরকারি কর্মকর্তা এবং অন্য গ্রুপটি ভবন মালিক। তারা তো সরকারি দলের লোক। তো সরকার গ্রেফতার করার পর সবার ধারণা হয়েছিল যে বিচারটা খুব দ্রুত হবে। কিন্তু গত দুই বছরেও বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। যারা গ্রেফতার অবস্থায় আছে তারা সেভাবেই আছে। মাঝেমধ্যে তাদের জামিনের কথা শোনা যায়। তবে বিচারপ্রক্রিয়া যদি যথাযথভাবে যথাযথ আইনে করা হয় তাহলে তাদের আসলে হত্যার বিচার হওয়া উচিত। কারণ তারা জোর করে শ্রমিকদের সেখানে নিয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে সহস্রাধিক শ্রমিক হত্যার বিচার হওয়া উচিত। সেইভাবে এই বিচারটাকে দাঁড় করানোর কোনো চেষ্টা করা হয়নি।
আমরা দেখলাম শ্রম বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি বলেছেন- রানা প্লাজ ধসে গ্রেফতারকৃতদের বিচার হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। অর্থাৎ শ্রম বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতিও বিচার নিয়ে সন্দেহপোষণ করেছেন যে আদৌ বিচার হবে কি না! তিনি এমনও মন্তব্য করেছেন যে তারা খুবই শক্তিশালী।
তো সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে সরকারের রয়েছে কেন্দ্রীয় এখতিয়ার। সরকার কেন এখানে অন্য ক্ষমতা প্রয়োগ করবে? সরকারের তো একটি সার্বভৌম দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। আর সেই কর্তব্য পালন করতে গেলে তে এদের বিচার খুব দ্রুতগতিতে করা উচিত। এটা নিয়ে একটা দৃষ্টান্তস্থাপন করা উচিত ছিল যে এভাবে যারা হত্যাকাণ্ড ঘটায় তাদের বিচার করতে সরকার প্রস্তুত। কিন্তু গত দুবছরে সেটা আমরা দেখলাম না। এটা খুবই বিপদজনক পরিস্থিতি। এরবার্তাটা হচ্ছে এধরণের অপরাধ করেও পার পাওয়া যায়।#