শীতের সকাল। পাখি ডাকছিল, বাস গুলো নিয়মানুগ ভাবে যাতায়াত শুরু করে দিয়েছে, রোজকার মত আজ আরেকটা দিন, ঘুম থেকে উঠে সবাই নিয়ম মত 'প্রাতঃকৃত্য'-এ মন দিয়েচে, মানুষ মোটামুটি দিন কাটিয়ে চলেছে। স্বাভাবিক, উদ্বেগহীণ, স্বার্থপর জীবন-জীবিকা। চায়ের দোকানে লোকজনের আরবিট গল্প চলছিল, এর মাঝেই একসময়...দুজন হাউস-গার্ড গোছের লোক এল চা খেতে।
প্রথম জন চশমার ফাঁক দিয়ে, "কমরেড! দু-কাপ চা দাও তো"
পাশের পরিচিত লোকজন যথারীতি প্রাতঃকালীন সৌজন্য ও ঠাট্টা-আদি বিনিময় করতে শুরু করে দিয়েচে।
দোকানি , "চা নাও হে কমরেড! ; কমরেড-কমরেড ভাই-ভাই "
বেঁটেখাটো, অভিজ্ঞতা না বয়স জানিনা, তবে চুল দ্বারা পরিত্যক্ত, 'ধড়'-ধামের বোঝা মাথা চুলকে একটা 'বাল-চুল'মুখবিকার করে দ্বিতীয় গার্ড গোছের লোকটা বলল, "ভাই-ভাই চুদির ভাই...'বাম'থেকে সব 'রাম'হয়ে গেল, আর 'কমরেড' ! চৌত্রিশ বছরে তো বাংলাটা গাড়ে দিলেই, আর এক-দুবছর থাকলে বেচেই দিতে হয়তো। আমাদের 'দিদি'থাকলে ঠিক উন্নয়ন হবে, সবে তো তিন বছর, একটু সময় ত দিতে হবে "গলায় একটা 'persuasion'এর সুর।
প্রথম ব্যক্তি আর দোকানি প্রায় এক ছন্দে, "তোমরা তো সব সাধারণ মানুষের টাকা, সারদা করে খেলে বাপু, আবার এসব বুলি কিসের?"
বেঁটে ভদ্রলোকটি কিঞ্চিত অপ্রস্তুত হয়েই তৎক্ষণাৎ নিজকে গুছিয়ে নিয়ে বলে, "তা কেন? তা কেন? ওই লোক গুলোকে তো কেবল ডেকেচে থানায়, তদন্ত চলচে এখনও, এখনই তোরা ওদের চোর-ছ্যাঁচড় বলবি, এসব কি ঠিক? থানায় ডাকলেই কি সে দোষী নাকি? তোদের রবীন দেব কেও তো ডেকেছিল, তখন তো দিব্যি বললি 'আগে প্রমাণ হোক!'"
সত্য সেলুকাস, বিচিত্র এই দেশ, কিছু লোকের চুলের সাথে চেতনা খশে পড়ে, কিছু লোকের চালসের সাথে দৃষ্টিভঙ্গী। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অসদ্বিম্বের মধ্যে বছরের পর বছর হাতড়ে বেড়ায় 'সততা'। শুন্যতার মধ্যে স্বকন্ঠের প্রতিধ্বনি শুনতে পেয়েও অবুঝের মত, বলে 'আমরা-তোমরা', কিছু আছেন তর্কের খাতিরে 'তৃতীয়'ব্যক্তি, বাকিটা, নিতান্তই জ্ঞানপাপী।
'কমরেড'-দের মধ্যে কে একটা বলল, "এই তো দেখ না বিজেপি আসছে, তোর 'দিদি'-র শিরে সংক্রান্তি।"
কড়া প্রত্যুত্তর এল, "অন্যের ভাগ্যে নিজের পুত্রলাভ ! তবে মোদি লোকটা কিন্তু বেশ! কত কিই তো করছে, এই সব ভুলভাল বাইরের লোকগুলোই যত নষ্টের গোড়া, ওদের জন্যই লোকে চাকরী পায় না। মোদি ঠিক হিল্লে করবে একটা। গুজরাতে ত শুনেচি কত চাকরী! আমাদের দাদা-দিদি তো ছিঁড়ল।"
আলোচনায় হঠাৎ 'বিকল্প'উঠে এল অজান্তেই। হঠাৎ-ই দুই রক্ত-মাংশের মানুষের 'মর্কট'-এ রূপান্তর। দেখলাম, একটা অদৃশ্য লেজ, ক্রমশ মানুষ-জাতে বিভেদ আনছে। সহসা, স্বতস্ফুর্ত, মহামারী-স্বরূপ। আকাশে একটা 'গেরুয়া'সুর্য উঠেছে, দিনগুলো অন্ধকারতর । রাতগুলো দেয় 'মাৎস্যন্যায়'এর অশণি-সংকেত।
এক দেহাতি চেহারার শীর্ণকায় চতুর্থ ব্যক্তি অনেকক্ষণ বসে ছিল দোকানে, কোলকাতাসহ আপামর ভারতবাসীর 'শীতঘুমের'মাঝে একটা হাফ-হাতা জামা পরে। কারখানার মজুর। সবকিছু শুনছিল হাঁটুমুড়ে বেঞ্চিতে বসে। বলল, "দূর কারো দ্বারা কিস্যু হবেনা, সবাই শালা গরীবের গাড় মারে, পেটে ভাত পড়েনা কারখাণায় চরকি চালাও ! শালা জেলও তো ভাল, অন্তত খেতে পেতাম, ছেলেপুলে মানুষ আর কি করব, পড়তে টাকা লাগে, সস্তার কলেজে সস্তা জিনিষ শেখায় "
কমরেডগণ রই রই করে বলল, "আরে তোমাদের লড়াই-আন্দোলনের পাশে তো আমরা সবসময়ই আছি। "
দেহাতি ভদ্রলোক চায়ে চুমুক দিয়ে ঘোলাটে চোখে বিড়িতে টান দিয়ে বলল, "দাদা, কল-টা বোধহয় উঠে যাবে, দুমাস বেতন নাই, কার সাথে লড়াই করব, ঘাসফুল না পদ্দোফুল? মালিক তো শুধু লাভ বোঝে, ঘাস-পদ্দোর তো ওই লাভই চাই। দুনিয়ায় সবাই লাভ বোঝে, আমিও লাভ করতে চাই, কি করি, জন্মের দোষ, খোদার কিরপা নাই "
পাশের আরেকটা মজুর গোছের লোক আড়চোখে বলল, "তুমি মুসলমান? "
বিঃ দ্রঃ - বাস্তব অবলম্বনে নয়। কঠোর বাস্তব অবলম্বনে।বাস্তব আসলে সেটাই যেটা ভেবে মানুষ বেঁচে থাকার রসদ জোটায়। বাস্তব সেটাই যেটা মানুষ নিজের মত করে বানিয়ে নেয়। তা বেশ, 'এই তো বেশ আছি'বলে নিশ্বাস নিতে থাকা সমাজে যখন ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে, তখন সময় ঘনিয়ে আসে আমি জীবিত বলে চীৎকার করে ওঠার, দরকার পড়ে বাস্তবের নগ্নতা নিজের মনে উন্মোচনের, সময় আসে পথ বেছে নেওয়ার।ভগবান আর ধর্মের দোহাই দিয়ে যখন আঘাত নামে মনুষ্যত্বে, মানুষের পরিচয় কে ধর্ম আর পিতৃ-পরিচয় দিয়ে নির্ণয় করা হয়, লাভের হিসেবে অতৃপ্ত অর্থণীতি যখন বেছে নেয় ফ্যাসিবাদের হাতিয়ার, সংস্কৃতির বিকৃতি যখন মানব-সভ্যতার ইতিহাস বদলের মাধ্যমে শুরু করা হয়, তখন দরকার কঠোর বাস্তবের, দরকার জোট বাঁধার, নতুন দিনের জন্য...
''প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য, ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা"
প্রথম জন চশমার ফাঁক দিয়ে, "কমরেড! দু-কাপ চা দাও তো"
পাশের পরিচিত লোকজন যথারীতি প্রাতঃকালীন সৌজন্য ও ঠাট্টা-আদি বিনিময় করতে শুরু করে দিয়েচে।
দোকানি , "চা নাও হে কমরেড! ; কমরেড-কমরেড ভাই-ভাই "
বেঁটেখাটো, অভিজ্ঞতা না বয়স জানিনা, তবে চুল দ্বারা পরিত্যক্ত, 'ধড়'-ধামের বোঝা মাথা চুলকে একটা 'বাল-চুল'মুখবিকার করে দ্বিতীয় গার্ড গোছের লোকটা বলল, "ভাই-ভাই চুদির ভাই...'বাম'থেকে সব 'রাম'হয়ে গেল, আর 'কমরেড' ! চৌত্রিশ বছরে তো বাংলাটা গাড়ে দিলেই, আর এক-দুবছর থাকলে বেচেই দিতে হয়তো। আমাদের 'দিদি'থাকলে ঠিক উন্নয়ন হবে, সবে তো তিন বছর, একটু সময় ত দিতে হবে "গলায় একটা 'persuasion'এর সুর।
প্রথম ব্যক্তি আর দোকানি প্রায় এক ছন্দে, "তোমরা তো সব সাধারণ মানুষের টাকা, সারদা করে খেলে বাপু, আবার এসব বুলি কিসের?"
বেঁটে ভদ্রলোকটি কিঞ্চিত অপ্রস্তুত হয়েই তৎক্ষণাৎ নিজকে গুছিয়ে নিয়ে বলে, "তা কেন? তা কেন? ওই লোক গুলোকে তো কেবল ডেকেচে থানায়, তদন্ত চলচে এখনও, এখনই তোরা ওদের চোর-ছ্যাঁচড় বলবি, এসব কি ঠিক? থানায় ডাকলেই কি সে দোষী নাকি? তোদের রবীন দেব কেও তো ডেকেছিল, তখন তো দিব্যি বললি 'আগে প্রমাণ হোক!'"
সত্য সেলুকাস, বিচিত্র এই দেশ, কিছু লোকের চুলের সাথে চেতনা খশে পড়ে, কিছু লোকের চালসের সাথে দৃষ্টিভঙ্গী। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অসদ্বিম্বের মধ্যে বছরের পর বছর হাতড়ে বেড়ায় 'সততা'। শুন্যতার মধ্যে স্বকন্ঠের প্রতিধ্বনি শুনতে পেয়েও অবুঝের মত, বলে 'আমরা-তোমরা', কিছু আছেন তর্কের খাতিরে 'তৃতীয়'ব্যক্তি, বাকিটা, নিতান্তই জ্ঞানপাপী।
'কমরেড'-দের মধ্যে কে একটা বলল, "এই তো দেখ না বিজেপি আসছে, তোর 'দিদি'-র শিরে সংক্রান্তি।"
কড়া প্রত্যুত্তর এল, "অন্যের ভাগ্যে নিজের পুত্রলাভ ! তবে মোদি লোকটা কিন্তু বেশ! কত কিই তো করছে, এই সব ভুলভাল বাইরের লোকগুলোই যত নষ্টের গোড়া, ওদের জন্যই লোকে চাকরী পায় না। মোদি ঠিক হিল্লে করবে একটা। গুজরাতে ত শুনেচি কত চাকরী! আমাদের দাদা-দিদি তো ছিঁড়ল।"
আলোচনায় হঠাৎ 'বিকল্প'উঠে এল অজান্তেই। হঠাৎ-ই দুই রক্ত-মাংশের মানুষের 'মর্কট'-এ রূপান্তর। দেখলাম, একটা অদৃশ্য লেজ, ক্রমশ মানুষ-জাতে বিভেদ আনছে। সহসা, স্বতস্ফুর্ত, মহামারী-স্বরূপ। আকাশে একটা 'গেরুয়া'সুর্য উঠেছে, দিনগুলো অন্ধকারতর । রাতগুলো দেয় 'মাৎস্যন্যায়'এর অশণি-সংকেত।
এক দেহাতি চেহারার শীর্ণকায় চতুর্থ ব্যক্তি অনেকক্ষণ বসে ছিল দোকানে, কোলকাতাসহ আপামর ভারতবাসীর 'শীতঘুমের'মাঝে একটা হাফ-হাতা জামা পরে। কারখানার মজুর। সবকিছু শুনছিল হাঁটুমুড়ে বেঞ্চিতে বসে। বলল, "দূর কারো দ্বারা কিস্যু হবেনা, সবাই শালা গরীবের গাড় মারে, পেটে ভাত পড়েনা কারখাণায় চরকি চালাও ! শালা জেলও তো ভাল, অন্তত খেতে পেতাম, ছেলেপুলে মানুষ আর কি করব, পড়তে টাকা লাগে, সস্তার কলেজে সস্তা জিনিষ শেখায় "
কমরেডগণ রই রই করে বলল, "আরে তোমাদের লড়াই-আন্দোলনের পাশে তো আমরা সবসময়ই আছি। "
দেহাতি ভদ্রলোক চায়ে চুমুক দিয়ে ঘোলাটে চোখে বিড়িতে টান দিয়ে বলল, "দাদা, কল-টা বোধহয় উঠে যাবে, দুমাস বেতন নাই, কার সাথে লড়াই করব, ঘাসফুল না পদ্দোফুল? মালিক তো শুধু লাভ বোঝে, ঘাস-পদ্দোর তো ওই লাভই চাই। দুনিয়ায় সবাই লাভ বোঝে, আমিও লাভ করতে চাই, কি করি, জন্মের দোষ, খোদার কিরপা নাই "
পাশের আরেকটা মজুর গোছের লোক আড়চোখে বলল, "তুমি মুসলমান? "
বিঃ দ্রঃ - বাস্তব অবলম্বনে নয়। কঠোর বাস্তব অবলম্বনে।বাস্তব আসলে সেটাই যেটা ভেবে মানুষ বেঁচে থাকার রসদ জোটায়। বাস্তব সেটাই যেটা মানুষ নিজের মত করে বানিয়ে নেয়। তা বেশ, 'এই তো বেশ আছি'বলে নিশ্বাস নিতে থাকা সমাজে যখন ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে, তখন সময় ঘনিয়ে আসে আমি জীবিত বলে চীৎকার করে ওঠার, দরকার পড়ে বাস্তবের নগ্নতা নিজের মনে উন্মোচনের, সময় আসে পথ বেছে নেওয়ার।ভগবান আর ধর্মের দোহাই দিয়ে যখন আঘাত নামে মনুষ্যত্বে, মানুষের পরিচয় কে ধর্ম আর পিতৃ-পরিচয় দিয়ে নির্ণয় করা হয়, লাভের হিসেবে অতৃপ্ত অর্থণীতি যখন বেছে নেয় ফ্যাসিবাদের হাতিয়ার, সংস্কৃতির বিকৃতি যখন মানব-সভ্যতার ইতিহাস বদলের মাধ্যমে শুরু করা হয়, তখন দরকার কঠোর বাস্তবের, দরকার জোট বাঁধার, নতুন দিনের জন্য...
''প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য, ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা"