নিশা দেশাইকে নিয়ে সৈয়দ আশরাফের মন্তব্য ঢাকা–ওয়াশিংটন সম্পর্ক অবনতির আশঙ্কা--prothom alo daily
হাসান ফেরদৌস, বিশেষ প্রতিনিধি, যুক্তরাষ্ট্র | আপডেট: ০৭:৫৮, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৪ | প্রিন্ট সংস্করণ
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাইকে নিয়ে বাংলাদেশের একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর মন্তব্যে মার্কিন কূটনীতিকেরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, ওয়াশিংটনকে লক্ষ্য করে ঢাকা থেকে অকারণ এমন মন্তব্য চলতে থাকলে তা দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটাবে।
গত ২৭ নভেম্বর রাতে তিন দিনের সফরে ঢাকায় গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। ২৮ নভেম্বর তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গেও তিনি একই দিনে সাক্ষাৎ করেন। এ দুই 'রুটিন'সাক্ষাৎকালে মার্কিন মন্ত্রী পরবর্তী নির্বাচন কবে জানতে চান। ২৯ নভেম্বর ঢাকা ছাড়ার আগে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি মন্তব্য করেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের বিকাশ দেখতে চায় এবং সে লক্ষ্যে কাজ করে যাবে।
একই দিন প্রায় একই সময়ে খুলনা সার্কিট হাউসে মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নিশা দেশাইকে 'দুই আনার মন্ত্রী'বলে উপহাস করেন। তিনি বলেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই আনা মন্ত্রী, চার আনাও না, এক মন্ত্রী আছে নিশা দেশাই।'তিনি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনাকে 'কাজের মেয়ে মর্জিনা'উল্লেখ করে বলেন, 'বাংলাদেশ কিন্তু ওই অবস্থায় নাই যে কাজের মেয়ে মর্জিনা বাংলাদেশের ক্ষমতার রদবদল করতে পারে।'
বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীর হঠাৎ এমন মন্তব্যের কারণ বুঝতে পারছে না কোনো মহল। এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্তব্য জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর (সৈয়দ আশরাফ) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর বদলে এই প্রতিবেদক ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, এ ব্যাপারে তাদের বলার কিছু নেই। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অথবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হয়তো সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবে।
সরকারের কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ সময়ে নিশা দেশাইয়ের ঢাকা সফর সরকারের উচ্চপর্যায়ে একধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। সরকার মনে করে, বিএনপির আন্তর্জাতিক লবিংয়ের অংশ হিসেবে তিনি ঢাকায় আসেন। তাই প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সাক্ষাৎ দেননি। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে নিশা দেশাইয়ের সাক্ষাতের বিষয়টি সরকার ভালোভাবে নেয়নি। কারণ, তিনি এখন আর বিরোধীদলীয় নেতা নন। পাশাপাশি পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে নিশা দেশাইয়ের মন্তব্যেও সরকারে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে।
তবে সরকারের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন এ ধরনের বক্তব্য এ উদ্যোগের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এমন মন্তব্য যে যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবে নেয় না, তা ওয়াশিংটন সম্প্রতি ঢাকাকে জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রে চারজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর মন্তব্যের উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র তাদের হতাশা বাংলাদেশকে জানিয়েছে। নিশা দেশাই ও ড্যান মজীনাকে নিয়ে তির্যক মন্তব্য করে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ওই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হলেন।
বিষয়টি বোঝার জন্য এই প্রতিবেদক একাধিক সাবেক মার্কিন কূটনীতিকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা সবাই বিস্ময় ও অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেখানকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো কোনো কর্মকর্তার মতে, ওয়াশিংটনকে লক্ষ্য করে ঢাকা থেকে অকারণে কাদা ছোড়া চলতে থাকলে তার ক্ষতিকর প্রভাব দুই দেশের সম্পর্কে পড়তে বাধ্য। এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম প্রধান আমদানিকারক দেশ। এশিয়ায় আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের পর বাংলাদেশই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক বৈদেশিক সাহায্য পেয়ে থাকে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিজস্ব মূল্যায়ন অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তার একটি 'গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র'হিসেবে বিবেচনা করে। গত মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এ দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে অংশীদারত্বের সংলাপেও উভয় পক্ষই পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারের পক্ষে মত দেয়।
নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা জানান, তাঁদের জন্য এ মুহূর্তে অগ্রাধিকার হলো আগামী বছরের প্রথমার্ধে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর ওয়াশিংটন সফর। এ ব্যাপারে উভয় পক্ষই নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ওই কর্মকর্তা আশঙ্কা ব্যক্ত করেন, ঢাকা যদি অকারণে এভাবে কাদা ছোড়া বন্ধ না করে, তাহলে এ সফর বিলম্বিত হতে পারে। এমন হলে তা হবে একটি কূটনৈতিক বিপর্যয়। ওই কর্মকর্তার ধারণা, নিশা দেশাই অথবা রাষ্ট্রদূত মজীনা সম্পর্কে এমন মন্তব্য সম্ভবত কোনো পরিকল্পিত নীতির প্রকাশ নয়।
কোনো কোনো মার্কিন বিশেষজ্ঞের ধারণা, কাদা ছোড়ার ঘটনাটি যতটা না কূটনৈতিক, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক, যার 'টার্গেট'অভ্যন্তরীণ শ্রোতৃমণ্ডলী। নব্বই দশকে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা উইলিয়াম বি মাইলাম দীর্ঘ আলাপে এই প্রতিবেদককে বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে যেকোনো মন্তব্যকেই বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব সুনজরে দেখবে না। মধ্যবর্তী নির্বাচন দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা এই সরকারের নেই। ফলে নির্বাচনবিষয়ক যেকোনো ইঙ্গিত তাদের গাত্রদাহের কারণ হতে পারে।
বর্তমানে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা উইলসন সেন্টারের সিনিয়র পলিসি স্কলারের পদে কর্মরত মাইলাম বলেন, 'সম্ভবত আওয়ামী লীগ মনে করে, তাদের আমেরিকাকে প্রয়োজন নেই। আমি আজই (গত মঙ্গলবার) পড়ছিলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানি না করে আমেরিকার কোনো উপায় নেই। কারণ, বাংলাদেশ থেকে আমদানি বন্ধ করলে আমেরিকা তৈরি পোশাকের সংকটে পড়বে। তাঁর এ কথার অর্থ সম্ভবত এই যে আমেরিকাকে বাংলাদেশের যতটা প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি আমেরিকার প্রয়োজন বাংলাদেশকেই। বলাই বাহুল্য, এ রকম ধারণা হাস্যকর।'তিনি বলেন, 'দীর্ঘমেয়াদি হিসাবে এই নীতি অনুসরণের ফল ভয়াবহ হবে। তবে চলতি সরকার দীর্ঘ মেয়াদের কথা ভাবছে বলে মনে হয় না।'
'বাংলাদেশ এখন পশ্চিমের বদলে পুবের দিকে তাকাচ্ছে'—বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাইলাম জানান, বাংলাদেশ সম্ভবত একই সঙ্গে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশকে জানান দিতে চায় যে চীন তাদের হাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ তাস। তিনি তাঁর আগের আশঙ্কা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ ক্রমশ কার্যত একদলীয় সরকারব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। ওবামা সরকার যে বাংলাদেশের চলতি 'একতান্ত্রিক লক্ষণের'বিরুদ্ধে কোনো কঠোর অবস্থান নেয়নি, তাতে মাইলাম তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের অংশীদারত্বের সংলাপ শেষে যৌথ বিবৃতিতে গণতন্ত্র বিষয়টির আদৌ কোনো উল্লেখ না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইলাম বলেন, 'ব্যাপারটি খুবই দুঃখজনক।'সবশেষে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র দরকার তার নিজের প্রয়োজনে, আমেরিকার প্রয়োজনে নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পর্যায়ে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক এ দূরত্ব কমানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। উপরন্তু সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে মার্কিন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য এ দূরত্ব কমাতে মোটেও সহায়ক হবে না।
গত ২৭ নভেম্বর রাতে তিন দিনের সফরে ঢাকায় গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। ২৮ নভেম্বর তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গেও তিনি একই দিনে সাক্ষাৎ করেন। এ দুই 'রুটিন'সাক্ষাৎকালে মার্কিন মন্ত্রী পরবর্তী নির্বাচন কবে জানতে চান। ২৯ নভেম্বর ঢাকা ছাড়ার আগে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি মন্তব্য করেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের বিকাশ দেখতে চায় এবং সে লক্ষ্যে কাজ করে যাবে।
একই দিন প্রায় একই সময়ে খুলনা সার্কিট হাউসে মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নিশা দেশাইকে 'দুই আনার মন্ত্রী'বলে উপহাস করেন। তিনি বলেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই আনা মন্ত্রী, চার আনাও না, এক মন্ত্রী আছে নিশা দেশাই।'তিনি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনাকে 'কাজের মেয়ে মর্জিনা'উল্লেখ করে বলেন, 'বাংলাদেশ কিন্তু ওই অবস্থায় নাই যে কাজের মেয়ে মর্জিনা বাংলাদেশের ক্ষমতার রদবদল করতে পারে।'
বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীর হঠাৎ এমন মন্তব্যের কারণ বুঝতে পারছে না কোনো মহল। এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্তব্য জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর (সৈয়দ আশরাফ) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর বদলে এই প্রতিবেদক ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, এ ব্যাপারে তাদের বলার কিছু নেই। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অথবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হয়তো সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবে।
সরকারের কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ সময়ে নিশা দেশাইয়ের ঢাকা সফর সরকারের উচ্চপর্যায়ে একধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। সরকার মনে করে, বিএনপির আন্তর্জাতিক লবিংয়ের অংশ হিসেবে তিনি ঢাকায় আসেন। তাই প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সাক্ষাৎ দেননি। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে নিশা দেশাইয়ের সাক্ষাতের বিষয়টি সরকার ভালোভাবে নেয়নি। কারণ, তিনি এখন আর বিরোধীদলীয় নেতা নন। পাশাপাশি পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে নিশা দেশাইয়ের মন্তব্যেও সরকারে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে।
তবে সরকারের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন এ ধরনের বক্তব্য এ উদ্যোগের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এমন মন্তব্য যে যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবে নেয় না, তা ওয়াশিংটন সম্প্রতি ঢাকাকে জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রে চারজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর মন্তব্যের উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র তাদের হতাশা বাংলাদেশকে জানিয়েছে। নিশা দেশাই ও ড্যান মজীনাকে নিয়ে তির্যক মন্তব্য করে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ওই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হলেন।
বিষয়টি বোঝার জন্য এই প্রতিবেদক একাধিক সাবেক মার্কিন কূটনীতিকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা সবাই বিস্ময় ও অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেখানকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো কোনো কর্মকর্তার মতে, ওয়াশিংটনকে লক্ষ্য করে ঢাকা থেকে অকারণে কাদা ছোড়া চলতে থাকলে তার ক্ষতিকর প্রভাব দুই দেশের সম্পর্কে পড়তে বাধ্য। এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম প্রধান আমদানিকারক দেশ। এশিয়ায় আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের পর বাংলাদেশই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক বৈদেশিক সাহায্য পেয়ে থাকে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিজস্ব মূল্যায়ন অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তার একটি 'গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র'হিসেবে বিবেচনা করে। গত মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এ দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে অংশীদারত্বের সংলাপেও উভয় পক্ষই পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারের পক্ষে মত দেয়।
নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা জানান, তাঁদের জন্য এ মুহূর্তে অগ্রাধিকার হলো আগামী বছরের প্রথমার্ধে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর ওয়াশিংটন সফর। এ ব্যাপারে উভয় পক্ষই নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ওই কর্মকর্তা আশঙ্কা ব্যক্ত করেন, ঢাকা যদি অকারণে এভাবে কাদা ছোড়া বন্ধ না করে, তাহলে এ সফর বিলম্বিত হতে পারে। এমন হলে তা হবে একটি কূটনৈতিক বিপর্যয়। ওই কর্মকর্তার ধারণা, নিশা দেশাই অথবা রাষ্ট্রদূত মজীনা সম্পর্কে এমন মন্তব্য সম্ভবত কোনো পরিকল্পিত নীতির প্রকাশ নয়।
কোনো কোনো মার্কিন বিশেষজ্ঞের ধারণা, কাদা ছোড়ার ঘটনাটি যতটা না কূটনৈতিক, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক, যার 'টার্গেট'অভ্যন্তরীণ শ্রোতৃমণ্ডলী। নব্বই দশকে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা উইলিয়াম বি মাইলাম দীর্ঘ আলাপে এই প্রতিবেদককে বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে যেকোনো মন্তব্যকেই বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব সুনজরে দেখবে না। মধ্যবর্তী নির্বাচন দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা এই সরকারের নেই। ফলে নির্বাচনবিষয়ক যেকোনো ইঙ্গিত তাদের গাত্রদাহের কারণ হতে পারে।
বর্তমানে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা উইলসন সেন্টারের সিনিয়র পলিসি স্কলারের পদে কর্মরত মাইলাম বলেন, 'সম্ভবত আওয়ামী লীগ মনে করে, তাদের আমেরিকাকে প্রয়োজন নেই। আমি আজই (গত মঙ্গলবার) পড়ছিলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানি না করে আমেরিকার কোনো উপায় নেই। কারণ, বাংলাদেশ থেকে আমদানি বন্ধ করলে আমেরিকা তৈরি পোশাকের সংকটে পড়বে। তাঁর এ কথার অর্থ সম্ভবত এই যে আমেরিকাকে বাংলাদেশের যতটা প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি আমেরিকার প্রয়োজন বাংলাদেশকেই। বলাই বাহুল্য, এ রকম ধারণা হাস্যকর।'তিনি বলেন, 'দীর্ঘমেয়াদি হিসাবে এই নীতি অনুসরণের ফল ভয়াবহ হবে। তবে চলতি সরকার দীর্ঘ মেয়াদের কথা ভাবছে বলে মনে হয় না।'
'বাংলাদেশ এখন পশ্চিমের বদলে পুবের দিকে তাকাচ্ছে'—বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাইলাম জানান, বাংলাদেশ সম্ভবত একই সঙ্গে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশকে জানান দিতে চায় যে চীন তাদের হাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ তাস। তিনি তাঁর আগের আশঙ্কা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ ক্রমশ কার্যত একদলীয় সরকারব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। ওবামা সরকার যে বাংলাদেশের চলতি 'একতান্ত্রিক লক্ষণের'বিরুদ্ধে কোনো কঠোর অবস্থান নেয়নি, তাতে মাইলাম তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের অংশীদারত্বের সংলাপ শেষে যৌথ বিবৃতিতে গণতন্ত্র বিষয়টির আদৌ কোনো উল্লেখ না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইলাম বলেন, 'ব্যাপারটি খুবই দুঃখজনক।'সবশেষে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র দরকার তার নিজের প্রয়োজনে, আমেরিকার প্রয়োজনে নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পর্যায়ে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক এ দূরত্ব কমানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। উপরন্তু সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে মার্কিন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য এ দূরত্ব কমাতে মোটেও সহায়ক হবে না।