অবশেষে অনশন প্রত্যাহার করে নিলেন মতুযারা বিজেপির ভরসায় সুব্রতঠাকুরের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর
তাহলে মতুয়ারা কি এবার বিজেপিতে এবং তাতে কি উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব সমস্যার সমাধান হবে?
প্রশ্ন উঠছে স্বঘোষিত মতুয়া মমতাব্যানার্জিকে সমর্থন করে উদ্বাস্তুদের ও মতুয়াদের কি লাভটা হল?
প্রশ্ন উঠছে তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী হিসাবে তাহলে সুব্রত ঠাকুরের পিতা এ যাবত কি করতে পেরেছেন?
প্রশ্ন উঠচে উদ্বাস্তু নেতা উপেন বিশ্বাসের ভূমিকা নিয়ে ও অন্যান্য তৃণমূলি নেতাদের ভূমিকা নিয়েও,তাঁরা তৃণমূলে থেকে কিছুই করতে পারলেন না,সিপিএম শাসনের দীর্ঘ পয়ত্রিশ বছরে কিছুই করতে পারলেন না ,আর ঠিক ভোটের আগে প্রতিবার আন্দোলন,অনশন করার পর পালাবদলের এই অনুষ্ঠানে মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের কি লাভ হবে?
পলাশ বিশ্বাস
অবশেষে অনশন প্রত্যাহার করে নিলেন মতুযারা বিজেপির ভরসায় সুব্রতঠাকুরের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর।
মা মাটি মানুষের তৃণমুলি সরকারে উদ্বাস্তু মন্ত্রী মন্জুল কৃষ্য় ঠাকুরের ছেলে সুব্রতঠাকুর ও তাঁদের অনুগামীপাল্টা মতুয়া সংঘের একুশ জন প্রতিনিধি দল এই সিদ্ভান্ত করেন দীর্ঘক্ষণ বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সুব্রতঠাকূরের রুদ্ধদ্বার বেঠকের পর।
গত মাসের সাতাশ তারিখ থেকে মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছিলেন একূশ জন মতুয়া।রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার করণপাত করেনি,রাজনৈতিক সমর্থন আসেনি তৃণমুলিদের তরফ থেকেও।
রেল অবরোধেও কাজের কাজ কিচ্ছু হল না।
আগের দফা মতুয়াদের আমরণ অনশন লেবু জল খাইয়ে ভেঙ্গেছিলেন রিপাবলিকান সাংসদ রামদাস আঠাওয়ালে,এবার তিনিও নেই।
বিজেপির তপসিলি মোর্চার সভাপতি দত্তা কৃষ্ণমুর্তি মান্ডিরনেতৃত্বে রাজ্যও জেলারনেতাদের সঙ্গ রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর অনশন শেষ।কেন্দ্রীয় কোনো নেতা অবশ্যছিলেন না কেউ,কেন্দ্র সরকারে ক্ষমতাধীন বিজেপিরই পাশ করা আইন বাতিলের দাবিতে রাজ্যও জেলা বিজেপির নেতারা সুব্রত ঠাকুরকে ঠিক কি ভরসা যোগাতে পেরেছেন,তা নিয়েও ধোঁয়াশা থাকল।অবশ্য বাবার সম্মতিতেই বিজেপির সঙ্গে তাঁর এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক,একথা জানিয়ে তৃণমুলে মন্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের ভবিষত নিয়েও রহস্য তৈরি করে দিলেন সুব্রত ঠাকুর।
ইতিমধ্যে নরেন্দ্র ভাই মোদী পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আগত পাঁচ সাল আগের হিন্দু ও শিখ শরণার্থিদের নাগরিকত্ব দেওযার অজুহাতে আবার যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন তৈরি করতে যাচ্ছে ,তার প্রস্তাবিত খসড়া বিলে এদেশে সেই ভারতভাগের পর থেকে বসবাসকারী পূর্ববঙ্গীয় বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেয়ার কোনো বার্তা নেই তাতে। উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, নদিয়া, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান এবং কোলকাতাযছাড়াও সারা বাংলায়এবং সারা ভারতে বসবাসকারী নাগরিকত্বহীন মানুষদের বড় অংশই তপসিলি এবং তাঁদের অনেকেই মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত।
উদ্বাস্তু ও অনুপ্রবেশকারি,হিন্দু ও মুসলিম বিভাজনসত্বেও মোদীকে ধন্যবাদ যে তিনি বাংলার নেতা নেত্রীদের মুখোশ খুলে দিতে পেরেছেন। নাগরিকত্ব সংশোধণী আইন পাশে যাদের সবারই সমান ভূমিকা। সেই আইন অনুযায়ীই মোদী 1947 সালের পর সব্বাইকে তল্পি তল্পা গুছিয়ে নিতে বলেছেন এবং সে আইন বলবত থাকছেই শুধু নয় সেই আইনের পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দুত্ব বাহিনী সারা দেশে বাঙালি হিন্দু শরণার্থীদের বিতাড়ন অভিযান নূতন করে শুরু করে দিয়েছে।
যারা 1971 সালের পর এসেছেন,তাঁরাও অনেকে এ রাজ্যে মন্ত্রী এমএলএ এমপি হয়ে সব সুবিধা ভোগ করেছেন,করছেন,সংরক্ষণে জমিয়ে চাকরি করছেন, তাঁরা নিজেদের চামড়া বাঁচাতে 1947 এর আগে পরে আসা সর্বস্বহারাদের বলির পাঁঠা করে দিচ্ছেন সারা ভারতে।
পূর্ববঙ্গ থেকে ভারতভাগের বলি এবং পরে বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘু উত্পীড়নের জেরে আসা উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবিতে চলা আমরন অনশন নিয়ে কেন্দ্র সরকারের মাথা ব্যথা হওয়ার কোনো কারণ নেই।কেন্দ্র সরকারের হেল দোল না দেখে মতুয়ারা ধ্যান আকর্ষণের জন্য রেল অবরোধও করে ফেলেছেন,এখন সম্মান জনক ভাবে অনশন শেষ করার পালা,যেমনটি আগেও হয়েছে।ইতিমধ্যে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি প্রবল পরাক্রমী নরেন্দ্র মোদী কোলকাতায় প্রকাশ্যজন সমাবেশ হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে প্রবল শাসকীয় আপত্তির পর সফল করে দেখিয়েছেন এবং অমিত বিক্রমে বাংলা দখল অভিযান শুরু করেছেন।ডাক দিয়েছেন তৃণমূল কে নির্মূল করার।কিন্তু ভোটের অন্ক এখনো বাংলার অন্ততঃ তিরিশ শতাংশ ভোটের সমর্থনের পর নির্ভর করে ,তাই আজানের সময় চুপ করে ছিলেন হিন্দুত্বের ধর্মোন্মাদকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া অমিত শাহ।কাশ্মীরে অভূতপূর্ব ভোটের রহস্যবিজেপিকে ক্ষমতা থেকে বাইরে রাকার জন্য মুসলমান জনসংখ্যার প্রবল মতদান।এই নিরিখে বলাই যায় রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা নিয়ে দু চারজন মুসলমান যদি বিজেপিতে যোগ দেন বা রাজনৈতিক দলগুলির সমস্থ বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠিও গৌরিক পতাকার শরণে চলে আসেন,বাংলা দখল এখনো দুর অস্ত।
গত লোকসভা ভোটের প্রচারে নরেন্দ্র মোদি একসময় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব পোষণ করেছিলেন। তিনি অনুপ্রবেশকারীদের পোটলা-পুটলি বেঁধে দেশ ছাড়ার জন্য তৈরি থাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য মতুয়া ভোটের কথা মাথায় রেখে খানিকটা বদলে যান তিনি। নরেন্দ্র মোদি পরবর্তীতে ঘোষণা করেছিলেন,'মতুয়ারা ভারতমাতার নামে স্লোগান দেন। তা সত্ত্বেও তাদের অনেকেই আজও ভোটাধিকার পান নি কেন? আমরা ক্ষমতায় এলে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেয়ার ব্যবস্থা করব। অন্য দলগুলো এদের নিয়ে শুধু রাজনীতিই করে।'
এখন দেখা যাচ্ছে যে মতুয়া ও উদ্বাস্তু ভোটই বিজেপির বাংলা দখলের তুরুপের তাস এবং নাগরিকত্বের টানাপোড়েনে যেমন বাংলার বাইরের বাংলার চেয়ে অনেক ভোট তাঁরা নিযমিত উদ্বাস্তু বিতাড়ন অভিযান চালিযে আতন্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় মুসলমানদের সমান অবস্থানে ফেলে দিয়ে তাঁরা দখল করতে সফল হয়েছেন,সেই পথেই বিজেপি হাঁটছেঅনুপ্রবেশকারিরা তল্পি তল্পা নিয়ে বাংলা সীমান্ত না পেরোলেও কেন্দ্র সরকার উদ্বাস্তু বিতাড়ন অভিযান সমান তালে চালূ রেখে নিরাপত্তাহীন বাংলার মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের ভোট দখল করতে চলেছে।
নাগরিকত্বের দাবি না মেনে মতুয়া উত্তরাধিকারি সুব্রত ঠাকুরের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের রহস্য এটাই।তাঁর পিতা মন্জুল কৃষ্ণ ঠাকুর পশ্টিম বঙ্গ সরকারের উদ্বাস্তু মন্ত্রী এবং তিনি নিজে তাঁর প্রয়াত জ্যাঠা মশায়ের জায়গায বনগাঁ সংরক্ষিত সিটের উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটের প্রবসল দাবিদার, এমত পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তাঁর রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর প্রশ্ন উঠছে কি তাহলে মতুযারা কি এবার বিজেপিতে এবং তাতে কি উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান হবে?
প্রশ্ন উঠছে স্বঘোষিত মতুয়া মমতাব্যানার্জিকে সমর্থন করে উদ্বাস্তুদের ও মতুয়াদের কি লাভটা হল?
প্রশ্ন উঠছে তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী হিসাবে তাহলে সুব্রত ঠাকুরের পিতা এ যাবত কি করতে পেরেছেন?
প্রশ্ন উঠচে উদ্বাস্তু নেতা উপেন বিশ্বাসের ভূমিকা নিয়ে ও অন্যান্য তৃণমূলি নেতাদের ভূমিকা নিয়েও,তাঁরা তৃণমূলে থেকে কিছুই করতে পারলেন না,সিপিএম শাসনের দীর্ঘ পয়ত্রিশ বছরে কিছুই করতে পারলেন না ,আর ঠিক ভোটের আগে প্রতিবার আন্দোলন,অনশন করার পর পালাবদলের এই অনুষ্ঠানে মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের কি লাভ হবে?
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, বনগাঁর প্রয়াত তৃণমূল এমপি ও তৎকালীন মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর অবশ্য মোদির বক্তব্যকে সেই সময় নস্যাৎ করে ঠাকুর বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন, 'নরেন্দ্র মোদি 'মতুয়া'শব্দের অর্থই জানেন না। উনি কাকাতুয়ার মত শেখান বুলি আওড়াচ্ছেন। মোদি যে উক্তি করেছেন, আমি তার তীব্র প্রতিবাদ করছি। উনি ভোটে চমক সৃষ্টি করার জন্যই এসব কথা বলছেন।'
কপিল বাবু আরো বলেছিলেন, 'এতদিন এসব কথা বলেননি কেন মোদি? মতুয়াদের সম্পর্কে উনি কিচ্ছু জানেন না। তার সব কথাই মস্ত ভেক মাত্র।'#
উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবিতে আজ (বৃহস্পতিবার) অনশন ও গণকনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। আজ থেকে আমরণ অনশন শুরু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগণার ঠাকুর নগরের মতুয়া ধামে। সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের পক্ষ থেকে এই অনশন শুরু হয়েছে। মোট ২১ জন আজ প্রথম দিনের অনশনে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লক –এর পক্ষ থেকে উত্তর ২৪ পরগণা জেলা কমিটির ডাকে এক গণকনভেনশন অনুষ্ঠিত হয় বনগাঁয়।
অনশনের তৃতীয় দিনেই শনিবার অনশনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪ জন অসুস্থ্ হয়ে পড়ে। অসুস্থরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে চাচ্ছে না। মতুয়া মহাসঙ্ঘের পক্ষ থেকে তাদের জন্য স্যালাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এনিয়ে শনিবার বনগাঁর মহকুমা শাসক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান,'গাইঘাটার বিডিও স্পটে রয়েছেন। অনশনে অংশগ্রহণকারী দের রুটিন চেকআপ করা হচ্ছে।'গাইঘাটার বিডিও পার্থ মন্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,'একজনের শারীরিক অবস্থা খারাপ মনে হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য চেষ্টা চলছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
সারাভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত ঠাকুর বলেছেন,'এই অনশনে সামিল হয়ে গোঁসাই হরিদাস রায় (৫৮),গোঁসাই বিজিত মণ্ডল (৬৫),গোঁসাই নিত্যানন্দ সিকদার(৬৪) এবং গোঁসাই রবীন্দ্রনাথ(৬৫) অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে হরিদাস রায় বেশি অসুস্থ হওয়ায় তাকে নিজেদের পক্ষ থেকে স্যলাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গাইঘাটা বিডিও'র নেতৃত্বে সরকারি চিকিৎসকরা বার বার প্রেসার, পালস এবং অন্যান্য পরীক্ষাও করছেন বলেও সুব্রত ঠাকুর জানিয়েছেন।
এদিকে, নাগরিকত্বের দাবিতে অনশন কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়ে ওপার বাংলার ওড়াকান্দি থেকে বার্তা এসেছে বলে সুব্রত বাবু জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার থেকে আমরণ অনশন শুরু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগণার ঠাকুর নগরের মতুয়া ধামে। সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের পক্ষ থেকে এই অনশনে মোট ২১ জন প্রথম দিনের অনশনে উপস্থিত ছিলেন। দুজন পারিবারিক কারণে বাড়ি যাওয়ায় এখন ১৯ জন অনশন মঞ্চে রয়েছেন।
বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবি, ওপার বাংলায় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদসহ ৬ দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু হয়েছে সারা ভারত মতুয়া মহা সংঘের পক্ষ থেকে।
সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত ঠাকুর জানান, দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে,'পূর্ববাংলা থেকে আসা হিন্দু, মতুয়া, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরকারকে প্রতিবাদ জানাতে হবে, মতুয়া ধর্মকে স্বাধীন, স্বতন্ত্র ধর্ম হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি দেয়া, হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা, গুরুচাঁদ ঠাকুরের জীবনী ও কর্মধারাকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা ও হরিগুরু চাঁদ ঠাকুরের নামে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা প্রভৃতি।'ঠাকুর নগরের ঠাকুর বাড়িতে এসব দাবি নিয়ে ২৭ নভেম্বর থেকে আমরণ অনশন শুরু হয়েছে।
এদিকে,'জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি ফর বাঙালী রিফিউজিস-এর সর্বভারতীয় প্রেসিডেন্ট সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাস অনশনরত অবস্থায় আজ (শনিবার) এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, '১৯৫০ সালের যে আইন ছিল তাতে বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামার কারণে হিন্দু,বৌদ্ধ, খৃস্টান, মতুয়া উদ্বাস্তুরা নাগরিকত্বের সুবিধা পেতেন। কিন্তু ২০০৩ সালে বিজেপি সরকার নতুন আইনে সেই পুরনো ব্যবস্থা তুলে দিয়েছে। এতে বিনা পাসপোর্টে যারাই বাংলাদেশ থেকে আসুক না কেন তাদের সবাইকে অনুপ্রবেশকারী হিসবে গণ্য করা হবে। ফলে, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান বা মতুয়া যারা ১৯৫০ সালের আইন বলে নাগরিকত্ব লাভ করার সুবিধা পেতেন তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখানে বিশেষ করে হিন্দুদের যে 'রক্ষা কবচ'ছিল তা বিজেপিই তুলে দিয়েছে।'
সুকৃতি রঞ্জন বাবু বলেন,'এখন বিজেপি যেটা বলছে, অনুপ্রবেশকারী হিন্দুরা শরণার্থী এর কোনো ভিত্তি নেই। হিন্দুদের শরণার্থী বলে যে প্রচার চালানো হচ্ছে; ২০০৩ সালের আইন অনুযায়ী তার কোনো ভিত্তি নেই। মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিজেপি এসব কথা বলছে। এই 'দ্বিচারিতা'কে আমরা মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাই।'
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের এক সময় নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, 'আমি দিল্লিতে গিয়ে মতুয়াদের নাগরিকত্বের অধিকার দেব'।এ প্রসঙ্গে সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস জানান, 'কেন্দ্রে ৬-৭ মাস হয়ে গেল, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, এনিয়ে আর কোনো কথা বলেন নি। বরঞ্চ শীতকালীন অধিবেশনে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে যেটি করা হচ্ছে তাতে বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়টি নেই। সুতরাং, বিজেপি হিন্দু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেবে বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।'
উল্লেখ্য খবরে প্রকাশ,রবিবার হাবরার সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ নাম না করে তীব্র আক্রমণ শানালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে। বললেন, "আগে বারবার উনি মতুয়াদের অফিসে আসতেন মায়ের (মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণিদেবী, 'বড়মা'নামেই যিনি পরিচিত) আশীর্বাদ নিতে। এখন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে আর মাকে মনে পড়ে না। কাজ তো সারা হয়ে গিয়েছে।"ঘটনাচক্রে, রাহুলের সভার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বনগাঁয় সরকারি কাজে আসছেন মমতা। তৃণমূল সাংসদ তথা সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মৃত্যুতে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন আসন্ন। এই পরিস্থিতিতে বনগাঁয় মমতা সরকারি সফরে এসেও উপনির্বাচন কেন্দ্রিক বার্তা দেবেন বলেই অনেকের মত। এখন দেখার, তিনি রাহুলের অভিযোগের জবাব দেন কি না।
আজকালের প্রতিবেদনঃ
মতুয়াদের অভ্যম্তরীণ বিরোধ বুঝতে গেলে একটু অতীতে ডুব দেওয়া দরকার৷ তারও আগে মতুয়া শব্দটির উৎপত্তি জানা দরকার৷ এই ধর্মভাবের জন্মদাতা শ্রীশ্রীহরিচাঁদ৷ তিনি কপিলকৃষ্ণের ঠাকুরদা শশিভূষণের ঠাকুরদা৷ তাঁকে ঘিরে ঠুংরি তালে রচিত এক নগর কীর্তনের বোল এরকম– 'আয় কে যাবি, হরিচাঁদের আনন্দ মেলায়, ভবপারের ভেলায়,৷ আমরা এমন তো আর দেখি নাই রে, নামে প্রেমে জগৎ মাতায়৷'যারা মাতে তারাই মতো মতুয়া৷ হরিচাঁদ ও তাঁর স্ত্রী শাম্তি মা আরাধ্য জ্ঞানে পুজো পান৷ যেমন পান হরিচাঁদ পুত্র ও পুত্রবধূ গুরুচাঁদ ও সত্যভামা৷ ঠাকুরনগরে পাশাপাশি দুটি মন্দির৷ তিন বছর আগেও দুটি মন্দিরই ছিল অনুচ্চ সাধারণ দেবালয়৷ এখন হরিচাঁদের মন্দিরটি আকাশ ছোঁয়া শ্বেতপাথরের৷ ওদের মন্দিরের চূড়া থাকে না৷ এক্ষেত্রেও নেই৷ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে মতুয়াদের ওপর গবেষণা করে স্বীকৃতি প্রাপক ড. নন্দদুলাল মোহম্ত বলেছেন, মতুয়াদের প্রধান কোনও নারী হতে পারবেন না, এমন কোনও বিধি সাংগঠনিক বিধিতে লেখা নেই৷ তাছাড়া হরিচাঁদ, গুরুচাঁদের স্ত্রী পুজো পান৷ পি আর ঠাকুরের স্ত্রী বীণাপাণি অঘোষিতভাবে মতুয়া প্রধান৷ তাহলে মমতা ঠাকুরের ক্ষেত্রে মঞ্জুল ঠাকুর আপত্তি তুলছেন কেন? মঞ্জুল-পুত্র শাম্তনু বলছেন, জেঠিমার প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই৷ তাছাড়া যে দক্ষতা, বিচক্ষণতা দরকার তা-ও নেই৷ আমরা পুরোপুরি সহযোগিতা করি বলেই ওনার ওইটুকু প্রতিপত্তি আছে৷ উনি বোধহয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইছেন৷ মতুয়া মহাসঙেঘর প্রধান হয়ে যাবতীয় সম্পদের কর্তৃত্ব চাইছেন৷ আমাদের অভ্যম্তরীণ কাজকর্মের যে বিধি তাতে কোনও নারী সঙঘ প্রধান হতে পারেন না৷ নগর কীর্তনে 'হরিচাঁদের আনন্দমেলা'বলে যেটাকে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটাই রাসমেলা৷ এবার এই রাসমেলার দুদিন আগে মমতা ঠাকুর মতুয়া মহাসভার একটি কমিটি গঠন করেন৷ যেখানে মঞ্জুল ঠাকুর নেই৷ আর রাসমেলার দিন বড়মা বীণাপাণি দেবীকে সামনে রেখে মঞ্জুল ঠাকুর মতুয়া মহাসভার একটি কমিটি ঘোষণা করেছেন, যার মাথায় মঞ্জুল নিজে৷ পরে বীণাপাণি বলেছেন, আমাকে দিয়ে মঞ্জুল ওই কমিটির কথা বলেছে, আমি নিজে বলিনি৷ কপিলের ওপর আমার ভরসা ছিল৷ মমতার ওপর আছে৷ আমি ওর কাছেই থাকতে চাই৷ এই পটভূমিতে শনিবার দুপুরে ঠাকুরনগরে হাজির হলাম৷
বনগাঁর দশ কিলোমিটার আগে যশোর রোড ছেড়ে সামান্য ঢুকলেই ত্রিকোণপাড়া, ইথাপুর, শিমুলপাড়া– এই তিনটি এলাকা নিয়ে ঠাকুরনগর৷ কপিলের বাবা প্রমথরঞ্জন ঠাকুর স্বাধীনতার কিছু আগে ঠাকুরল্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পত্তন করেন৷ এখানে বেশির ভাগ জমিতেই মতুয়াদের বাস৷ প্রায় পুরো গ্রামটাই মতুয়া মহাসভা কিংবা ঠাকুরবাড়ির ভূ-সম্পত্তি৷ ভক্তরা জানে সবই হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে সমর্পিত৷ বাস্তব কিন্তু উল্টো কথা বলে৷ এই যে লক্ষ লক্ষ বিঘা জমি, এমনকী গড়চিরোলি, চাঁদা বা চন্দ্রপুরে (মহারাষ্ট্র) যে ভূ-সম্পত্তি তা সবই ঠাকুর পরিবারের জ্ঞাতিগুষ্টির নামে সরকারি দপ্তরে নথিভুক্ত৷ জন্মের অনেক পরে মতুয়া মহাসভার নামে সামান্য জমি (কেউ কেউ বলে ৬ কাঠা) নথিভুক্ত৷ শুধু রাসমেলা, চৈত্র মাসের আমবারুনি কিংবা অন্য কোনও অনুষ্ঠানে নয়, সারা বছরই প্রচুর দান, প্রণামীর অর্থ, সোনা, দ্রব্যসামগ্রী জমা পড়ে মন্দিরে মন্দিরে৷ কিন্তু তার হিসেব কখনও কোনও স্বীকৃত সংস্হাকে দিয়ে করানো হয়নি৷ ব্যাঙ্কেও টাকা সোনাদানা রাখা হয় না৷ যদিও মঞ্জুল ঠাকুর এক সময়ে ব্যাঙ্ককর্মী ছিলেন৷ তিনি ও শাম্তনু ঠাকুর বললেন, ভক্তরা চায় না ব্যাঙ্কে রেখে আমরা সুদে টাকা রোজগার করি৷ আমরা চাইলেও হবে না, কারণ মতুয়া নীতি বিরোধী৷ আশ্চর্য মতুয়াদের বিক্ষুব্ধ নেত্রী মমতাও সম্পত্তি ব্যাঙ্কে রাখার কথা বলছেন না৷ বলছেন, সবই দেবোত্তর৷ তবে চন্দ্রপুর, গড়চিরোলির সম্পত্তি কপিলকৃষ্ণের নিজের৷
ভারতের বিভিন্ন মন্দির, মঠ, কর্তৃপক্ষের অর্থ ও সোনা ব্যাঙ্কে না রেখে, গোপন ভান্ডারে রাখার অভ্যাস নতুন নয়৷ এজন্যই নাদির শাহ সোমনাথের মন্দির লুট করেছিলেন৷ হালেও দক্ষিণ ভারতের এক স্বল্পখ্যাত মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রচুর ধনরত্ন পাওয়া গেছে৷ এজন্যই মন্দির কর্তৃপক্ষের মধ্যে দলাদলি, খুন পর্যম্ত হয়েছে৷ কিন্তু তাঁরা তো সংসদীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েননি৷ সংসদীয় রাজনীতির সুযোগ-সুবিধা নেব অথচ আইন ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মানব না– এটা তো হতে পারে না৷ মতুয়া প্রধান ঠাকুর বাড়ির মাননীয়৷মাননীয়ারা চিরকাল সেটাই করে এসেছেন৷ বাংলার নিম্নবর্ণের চাঁড়াল সম্প্রদায়ের সরল মানুষেরা তাঁদেরই বিশ্বাস করে চলেছেন৷ আর কাশ্মীরি তালে গেয়ে চলেছেন৷...৷ (দাদা গো) আমায় ভাই বলে রাখিও স্মরণ.. আমি ভুলি না যেন ওই রাঙা চরণ৷ বলা হয়, 'রাঢ়দেশে ছিল রাস৷নাম তার রামদাস৷'
এই রামদাসই নাকি সকুর বংশের প্রথম পুরুষ৷ ওদের দাবি তিনি ছিলেন মৈথিলী ব্রাহ্মণ৷ নিম্নবর্ণের মানুষদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন বলে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণের কুনজরে পড়েন৷ প্রথমে ছিলেন যশোরে নবগঙ্গা নদীর তীরে লক্ষ্মীপাসা গ্রামে৷ সেন রাজাদের আমলে পরিব্রাজক রামদাস ফরিদপুরের (বাংলাদেশ) ওরাইকান্দিতে চলে যান৷ তাঁর পুত্র চন্দ্রমোহনকে নাকি কোনও ব্রাহ্মণ কন্যা বিয়ে করতে রাজি হননি৷ চাঁড়াল কন্যা রাজলক্ষ্মীর সঙ্গে বিয়ে হয়৷ অতঃপর এই বংশের উত্তম পুরুষ শুকদেব, কালিদাস, নিধিরাম, মুকুন্দরাম কেন ব্রাহ্মণত্ব হারালেন, গবেষকরা তার জবাব পাননি৷ মুকুন্দপুত্র যশোবম্ত৷ যশোবম্তের দ্বিতীয় পুত্র হরিচাঁদ৷ ১৮৭১-৭২ সালে অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন জায়গায় সামাজিক মর্যাদার দাবিতে চণ্ডাল আন্দোলন হয়৷ বাখরগঞ্জ, বরিশাল, ওয়াইকান্দি, ফরিদপুর– সর্বত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে৷ এর সঙ্গে ইংরেজ-বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সরাসরি সম্পর্ক নেই৷ তখন তো চণ্ডালদের সঙ্গে জল অচল সম্পর্ক৷ ভারতবাসীর স্বাধিকারের লড়াই কিংবা কংগ্রেসি অনেককাল আগে শুরু হলেও, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী পরে এমন নেতৃত্ব দেন যে মহাত্মা হয়ে যান৷ ঠিক এভাবেই হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ এমন নেতৃত্ব দিলেন যে চণ্ডাল মুভমেন্ট তাদের নামে মাতোয়ারা হল৷ সেই সময়ে অস্ট্রেলীয় পাত্রী সেসিল (ন্তুন্দ্বন্তুন্প্ত) সিলাস (ব্দন্প্ত্রব্দ) মিড (ত্তন্দ্ব্রস্তু) ফরিদপুরে গিয়েছিলেন খ্রিস্টধর্ম প্রচারে৷ গুরুচাঁদ তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন৷ অস্ট্রেলীয় সাহেব ইংরেজ শাসকদের বোঝাতে পেরেছিলেন চণ্ডালদের সামাজিক মর্যাদা দেওয়া ভাল৷ দরকারে আইন করে৷ নইলে এই আন্দোলনই স্বদেশি আন্দোলনের চেহারায় নেবে৷ সেই থেকে চণ্ডালরা নমঃশূদ্র৷ জল অচল ঘুচল৷ দলিত জাগরণ ও মতুয়া আন্দোলন এক সুতোয় বাঁধা হয়ে গেল৷ গুরুচাঁদের পৌত্র প্রমথরঞ্জন কংগ্রেসের টিকিটে সংরক্ষিত আসনে বিধায়ক হন৷ তারও আগে কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেমব্লির সদস্য হন৷ অথচ বংশতালিকায় লিখে রাখেন মৈথিলী ব্রাহ্মণ রামদাসের বংশধর৷ একই কথা বললেন মঞ্জুল ঠাকুর৷ নির্বাচনী বিধি অনুসারে তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ বিধায়ক বা সাংসদ পদ চলে যাওয়া উচিত৷ ১৯১০ সালের একটি দলিলে মতুয়া গবেষক নন্দদুলাল মোহম্ত দেখেছেন, শশিভূষণ লিখেছেন পিতার নাম গুরুচাঁদ বিশ্বাস৷ ঠাকুর পদবি কীভাবে জুড়ে গেল তা স্পষ্ট নয়৷ শশিভূষণের পুত্র প্রমথরঞ্জন বনগাঁয় এসে ডালপালা ছড়ান৷ তার ভাই সুধন্যকুমার পুত্র শ্রীপতি ওয়াইকাম্তির আশ্রমের দখল নেন৷
এদের দু'জনের মধ্যেও লড়াই ছিল৷ প্রমথর পাশে দাঁড়ন বিধান রায়ের আমলের নাকাশিপাড়ার বিধায়ক মহানন্দ হালদার৷ তিনি লেখেন শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ চরিত৷ শ্রীপতির কথায় বীরেন সান্যাল লেখেন হরিগুরুচাঁদ চরিতসুধা৷ ফরিদপুরের মতুয়া মহাসঙঘ এখন দু'টুকরো৷ শ্রীপতির জ্যেষ্ঠ পুত্র অংশুপতির মৃত্যুর পর আর দুই ভাই হিমাংশুপতি ও সতীপতি লড়াই করছে৷ মুখে বলে ভক্তিতে মুক্তি৷ আসলে শক্তিতে আসল আসক্তি৷ মঞ্জুলের স্ত্রী ছবিরানী বললেন, আমার শাশুড়িকে কাউকে দেখতে হয় না৷ তিনিই দেখেন৷ দুর্গাপুজো করতেন৷ এখনও ছিন্নমস্তা, শ্যামার পুজো হয়৷ মঞ্জুলের বাড়িতে গণেশ, শিবের বিশাল মূর্তি৷ গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু নাকি বলেছিলেন, নিচ হয়ে করিব আমি নিচের উদ্ধার, অতি নিচে না নামিলে কীসে অবতার৷ ওদের দাবি গৌরাঙ্গই হরিচাঁদ৷ তাহলে কেন ব্রাহ্মণ বংশলতিকা তুলে ধরে৷ জাতপাতের অদ্ভুত খেলায় কপিল এক সময়ে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা হরিপদ বিশ্বাসকে ধরেছিলেন৷ আর মঞ্জুল ধরেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে৷ এখন সবাই তৃণমূল৷ তাই তৃণমূলই সমস্যায়৷ বীণাপাণি ৯২ বছরে শোকাতুর বৃদ্ধা৷ ঘরের মধ্য সবসময় তিন মহিলা পুলিস৷ এরকম জীর্ণ, দীর্ণ অবস্হা কোনও মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারেও বিশেষ দেখা যায় না৷ অনেকটা বন্দিদশার মতো৷ শাম্তনুকেই পুলিসের অনুমতি নিয়ে ঠাকুমার সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে৷ একতলা বাড়ির টালির ছাদ৷ পাশে মমতার ঘরও তাই৷ ছবিরানী বলছিলেন, শাশুড়ির এখন কথার ঠিক নেই৷ তাহলে মহাসভার অনুষ্ঠানে তাঁকে দিয়ে মঞ্জুলের নাম বলানো হল কেন? কপিলের প্রথম পক্ষের স্ত্রী এখন সুইৎজারল্যান্ডে৷ তাঁর একমাত্র সম্তান সিলভিয়া এখানেই থাকেন৷ তাঁকে নিয়েও দু'পক্ষে টানাটানি৷ মমতা বললেন, আমার সম্তানকে কতবার ওরা মারতে গেছে!
শাম্তনু বললেন, ওরা জ্যাঠার ঠিকমতো চিকিৎসা করায়নি৷ জেঠিমার ধর্ম ছেলে সুখেন অধিকারী৷ এই অশৌচের মধ্যেই তার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়েছে জ্যেঠিমা৷ আয়কর বিভাগে কাজ করে৷ তার কথাতেই চলছে জ্যেঠিমা৷ আর এক মেয়ে চন্দ্রলেখা সবসময়ে ঠাকুমা, মাকে পাহারা দিচ্ছে৷ দু'দিকেই কিছু ভক্তের ভিড়৷ বাকিরা ইতস্তত চরে বেড়াচ্ছে৷ তারা আবার কোনও রা কাটছে না৷ বাংলাদেশ থেকে একদল মতুয়া এসেছে৷ মন্দিরে বসে উলুধ্বনি দিয়ে ভিডিও তোলাচ্ছে৷ নাটমন্দিরের চাতালে সদ্য কাটা ধানের ছরা৷ এক মতুয়া গান ধরেছে–
গুরুকৃপা রসে ভরি,
আমায় সাজায়ে দিয়াছ তরী
কর্মদোষে যেন ডুবে না মরি
হয়ে রিপুর বস মানি৷...'
কে কাকে শোনায়?
http://www.aajkaal.net/16-11-2014/news/232424/
বিজেপি-র সঙ্গে সুব্রত ঠাকুরের রুদ্ধদ্বার বৈঠক
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে অনশন প্রত্যাহার করলেন রাজ্যের উদ্বাস্তু পুনর্বাসন মন্ত্রী মঞ্জুল কৃষ্ণ ঠাকুরের ছেলে সুব্রত ঠাকুর সহ মতুয়া সংঘের ২১ জনের প্রতিনিধি দল। নাগরিকত্বের দাবিতে গত মাসের ২৭ তারিখ থেকে উদ্বাস্তু মতুয়া সম্প্রদায়ের সকলের নাগরিকত্বের দাবিতে অনশনে বসেছিলেন ২১ জন। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার সহ বিষয়টি সব দলকে চিঠিতে জানানো হলেও বিজেপি ছাড়া কেউই তাতে কর্ণপাত করেনি। তাই মঙ্গলবার দলের নেতা সুব্রত ঠাকুর বিজেপি দলের তপসিলি মোর্চার সভাপতি দত্তা কৃষ্ণ মূর্তি মান্ডির নেতৃত্বাধীন রাজ্য ও জেলার বিজেপির ২৫ জনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রায় ৩ ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকের পর মান্ডি জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মোদীর সঙ্গে মতুয়া সম্প্রদায়ের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। সুব্রত ঠাকুর জানিয়েছেন, তিনি বাবা মঞ্জুল কৃষ্ণ ঠাকুরের সম্মতিতেই বিজেপি-র সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ দিনই ফেসবুকে দলের নাম না করে সুব্রতর কটাক্ষ, 'সংসদে কালো টাকা, লাল ডায়েরি, কালো শাল নিয়ে আন্দোলন হলেও বাঙালি হিন্দু, মতুয়া, বৌদ্ধ উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব নিয়ে কোনও আন্দোলন হল না।'ঘটনাটিকে তিনি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর এই মন্তব্যের পর বিজেপি প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর এই বৈঠক নিয়ে রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
মতুয়া
মতুয়া হিন্দুধর্মীয় একটি লোকসম্প্রদায়। গোপালগঞ্জ জেলার ওড়াকান্দি নিবাসী হরিচাঁদ ঠাকুরপ্রেমভক্তিরূপ সাধনধারাকে বেগবান করার জন্য যে সহজ সাধনপদ্ধতি প্রবর্তন করেন, তাকে বলা হয় 'মতুয়াবাদ'। এই মতবাদের অনুসারীরাই 'মতুয়া'নামে পরিচিত।
মতুয়া শব্দের অর্থ মেতে থাকা বা মাতোয়ারা হওয়া। হরিনামে যিনি মেতে থাকেন বা মাতোয়ারা হন তিনিই মতুয়া। মতান্তরে ধর্মে যার মত আছে সেই মতুয়া; অর্থাৎ ঈশ্বরে বিশ্বাস, গুরু-দেবতা-ব্রাহ্মণে ভক্তি-শ্রদ্ধা, নামে রুচি ও প্রেমে নিষ্ঠা আছে যার, সে-ই মতুয়া।
মতুয়া সম্প্রদায় একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী; তারা বৈদিক ক্রিয়া-কর্মে আস্থাশীল নয়। তাদের ভজন-সাধনের মাধ্যম হচ্ছে নাম সংকীর্তন; তাদের বিশ্বাস ভক্তিতেই মুক্তি। এই সাধনপদ্ধতির মাধ্যমে সত্যদর্শন অর্থাৎ ঈশ্বরলাভই তাদের মূল লক্ষ্য। প্রেম ঈশ্বর লাভের অন্যতম উপায়। পবিত্রতা শরীর-মনে প্রেম জাগ্রত করে; ফলে প্রেমময় হরি ভক্তের হূদয়ে আবির্ভূত হন। এখানে কোনো জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভেদ নেই, ধনী-দরিদ্র নেই; সকলেই ঈশ্বরের সন্তান এই মনোভাব নিয়ে পারস্পরিক সৌহার্দ্যের মধ্যে সকলে মিলিত হয়।
আদর্শ গার্হস্থ্য জীবনযাপনের মধ্য দিয়েই মতুয়া ধর্মের চর্চা করা যায়। মতুয়াদের বারোটি নিয়ম পালন করতে হয়, যা 'দ্বাদশ আজ্ঞা'নামে পরিচিত।
মতুয়া উৎসব
এই ধর্মে নারী-পুরুষের সমান অধিকার স্বীকৃত এবং এতে বিধবা-বিবাহকে উৎসাহিত ও বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করা হয়েছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই ধর্মের প্রচার করতে পারে; ধর্মপ্রচারককে বলা হয় 'গোঁসাই'।
মতুয়ারা প্রতি বুধবার একত্রিত হয়ে হরিস্মরণ করে; একে বলা হয় 'হরিসভা'। তারা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নাম-কীর্তন করে এবং ভাবের আবেগে অনেক সময় কীর্তনকরতে করতে বাহ্যজ্ঞানহীন হয়ে পড়ে। কীর্তনের সময় তারা জয়ডঙ্কা, কাঁসর, শঙ্খ, শিঙ্গা ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রব্যবহার করে।
গোঁসাইদের হাতে থাকে সওয়া হাত দীর্ঘ একটি দন্ড, যার নাম 'ছোটা'। এই ছোটা নিয়ে তাঁরা আগে আগে যান এবং ভক্তরা তাঁদের অনুসরণ করে। তাঁরা সাদা রঙে বেষ্টিত লাল নিশান ও গলায় করঙ্গের মালা ধারণ করেন। মতুয়াদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত। মতুয়া ধর্মের কয়েকটি মূল বাণী হলো: 'হরি ধ্যান হরি জ্ঞান হরি নাম সার। প্রেমেতে মাতোয়ারা মতুয়া নাম যার\; জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা। ইহা ছাড়া আর যত সব ক্রিয়া ভ্রষ্টা\; কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলে খাই। বেদ-বিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই\
বাংলাদেশের সর্বত্রই মতুয়ারা বাস করে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, আন্দামান প্রভৃতি স্থানেও মতুয়ারা রয়েছে। গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে মতুয়াদের প্রধান মন্দির অবস্থিত। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের ত্রয়োদশী তিথিতে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে সেখানে মেলা বসে। তাতে সমগ্র দেশ থেকে হাজার হাজার ভক্ত প্রণামী হিসেবে ধান-চাল-ডাল, তরি-তরকারি ইত্যাদি নিয়ে উপস্থিত হয়। [মনোরঞ্জন ঘোষ]
http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE