উড়ীষ্যাঃ৬২ বৎসরের পুনর্বাসিত পরিবারকে বাস্তুচ্যুত করার সরকারি অপপ্রচেষ্টা
হস্তক্ষেপ প্রতিনিধিচিল্কা লেক থেকে– ১৪.১১.২০১৪ ভুষণ্ডপুর – গত আগষ্ট ২০১৪ থেকে ভুষণ্ডপুর অঞ্চলে বসবাসরত ২৬ টি পরিবারে সদস্যদের রাতের ঘুম আর দিনের আহার বন্ধ হয়ে গেছে । দেশভাগের দুর্বিষহ যন্ত্রণা সহ্য করে চোদ্দ পুরুষের বাস্তু ভিটা থেকে উৎখাত হওয়া নিরিহ মানুষগুলো আজ আবার সরকারি কলের হুমকিতে আতঙ্কিত, ভয়ভীত । দেশ ভাগের জন্য যে নিরিহ মানুষেরা কোন মতেই দায়ী নয় কিন্তু তাদেরকেই পেতে হোয়েছে চরম শাস্তি । কি দোষ ছিল এই খেটে খাওয়া, মাটির মানুষগুলোর যার ফলে তাদেরকে পারি জমাতে হয়েছিল নিরুদ্দেশ্যের পথে । তাদের প্রতি প্রথম থেকেই শুরু হল অবমাননার ব্যবহার । উদ্বাস্তু, রিফ্যুজী, শরণার্থী, অনুপ্রবেশকারীর আখ্যা নিয়ে সেই ১৯৪৭-৪৮ সাল থেকে তারা এক অপমানিতে জীবন যাপন করে আসছে । আজ তাদের চতুর্থ প্রজন্মেও তারা ভারতে সামজিক, অর্থনৈতিক ও শৈক্ষনিক ভাবে সমকক্ষতা লাভ করে নাই, কি দোষ তাদের ?
এই বাস্তুহারা বঞ্চিত লোকদের সুষ্ঠু পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়ে ভারত সরকার দায়সারা ভাবে কাজ সেরেছে, বিশেষ করে ওড়িশার খোর্দ্ধা জেলার ভুষণ্ডপুর এলাকাতে । এখানে পুনর্বসিত ৯৩১ টি পরিবারকে ৬ টি কলোনীতে (গ্রাম নয়) পুনর্বাসন করা হয়েছিল ১৯৫০ সালের পর থেকে কয়েকটি দফায় । তাদের মধ্যে মাত্র ১৭৫ টি পরিবারই জমির মালিকানা হাসিল করতে সক্ষম হয়েছে । অবশিষ্ট ৭৫৬ টি পরিবারের কাছে জমির অস্থায়ী নথী-পত্র থাকলেও এই ২৬ টি পরিবারেরকে বাস্তু ভিটার কোন নথি পত্র প্রাদান করে নাই প্রশাসন । কারণ যে জায়গায় তাদেরকে ঘর তৈরী করে প্রদান করা হয়েছিল সরকারী রেকর্ডে সেই জায়গা নাকি শ্মশান ও গোচর ভুমি যার কারণে প্রশাসন জমির নথী-পত্র প্রদান করে নাই । উল্লেখযোগ্য যে এরা সকলেই প্রাপ্ত চাষের জমির মালিকানার স্বত্ব পেয়েছেন । এই সরকারী গাফিলতি জানার কোন উপায় ছিল না শিক্ষাহীন নিরিহ মানুষগুলোর পক্ষে । ৩১/০৭/২০১৪তারিখেকিছু হীনমনা ব্যক্তি হাই কোর্টে পি আই এল কেস করে উচ্চ ন্যায়ালয়ের কাছে আবেদন করে যে এই সব জমি মাফিয়েদের দ্বারা দখল করা সরকারী জায়গা বেদখল করা হোক । উচ্চ ন্যায়ালয় টাঙ্গী তহশীলদারকে ব্যপারটা পরীক্ষা করে বিধিবদ্ধ কার্যপন্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়, ন্যায়লয় কখনই তাদেরকে বাস্তুচ্যুত করার কথা বলেন নাই। উক্ত আদেশের বলে স্থানীয় তহশীলদার মহাশয়া নিজের সক্ষমতা জাহির করতে সেই ২৬ টি বসত বাড়ি ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য হুমকি দেন বারম্বার । গত ১১/১১/২০১৪ সালে তহশীলদার মহাশয়া পুলিস ফোর্স নিয়ে ঘর ভাঙ্গা শুরু করে দেন এবং কিছু দোকান ঘর, প্রাচীর ইত্যাদি ভাঙ্গতে সক্ষম হন । তবে স্থানীয় জনগণ ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিরোধ করাতে বসত বাড়ি ভাঙা আপাতঃত স্থগিত রয়েছে ।
তহশীলদার মহাশয়া ঘর ভাঙ্গতে না পারাতে প্রভাবিত লোকেদের উপর নিজের রোষ জাহির করে হুমকি দেন যে আপনারা চাষের জমিতে গিয়ে থাকুন, আপনারা আজ না হয় আমাকে ঠেকিয়েছেন আগামী দিনে আমি আরো বেশী পুলিস ফোর্স নিয়ে আসব তখন আপনাদের দেখিয়ে দেব । এই ঘটনার খবর পেয়েই নিখিল ভারত উদ্বাস্তু সমন্বয় সমিতির রাজ্য শাখার সভাপতি শ্রীদামকান্তি বিশ্বাস ও উপসভাপতি লালন দাস মহাশয় ভুষণ্ডপুরে উপস্থিত হন ১৩/১১/২০১৪ সকাল বেলায় । ওনারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর অপরাহ্নে বালিপাটপুরে গোবিন্দ মন্দির প্রাঙ্গনে এক বিরাট জন সভা করেন তাঁরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন ও বলেন যে নিখিল ভারত সমন্বয় সমিতি সবরকম সাহায্য করতে প্রস্তুত । ১৪ তারিখে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন রাজ্য শাখার যুগ্ম সম্পাদক উজ্জ্বল বিশ্বাস সহ কেন্দ্র সমিতির উপদেষ্টা তথা মালকানগিরির পূর্বতন বিধায়ক নিমাইঁ চন্দ্র সরকার মাহাশয় । ওনারা যৌথ ভাবে পুনরায় প্রভাবিত অঞ্চল পরিদর্শন করে প্রভাবিত ব্যক্তিদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে তাদেরকে আশ্বাসনা প্রদান করেন ও ঐক্যবদ্ধ ভাবে থাকার পরামর্শ দেন ।
উক্ত দিনের সন্ধায় পুনরায় বালিপাটপুরে গোবিন্দ মন্দির প্রাঙ্গনে মাননীয় সূধীর সর্দার মহাশয়ের সভাপতিত্বে এক জনসভায় চার কর্মকর্ত্তাই যোগ দেন । খোর্দ্ধ জেলা শাখার সভাপতি শ্রী মনোরঞ্জন হালদার উক্ত ঘটনাবলি উপস্থাপন করেন সেখানে নিমাইঁ বাবু তার ভাষণে উপস্থিত জনমানসকে একজুট হয়ে লড়াই করার পরামর্শ দেন এবং উল্লেখ করেন যে তিনি নিজে সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত এবং লড়াইএর সামনের সাড়িতে তিনি নিজে থাকবেন ।শেষে উজ্জ্বল বাবুর প্রস্তাবক্রমে সভায় উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তি নর্মল মালি, অশ্বিনি মণ্ডল এবং অন্যান্য জনগণ আগামী দিনে ওড়িশা বিধান সভা চলাকালীন ভুবনেশ্বরে ধর্ণা তথা রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারকে জ্ঞাপন দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং সকলেই সমস্বরে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার প্রতিশ্রুতি দেন ।
ইতিমধ্যে রাজ্য শাখার উপসভাপতি খগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, সমাজসবী গোবিন্দলাল রায়, গোবর্দ্ধনপুর কলোনির জগন্নাথ সরকার প্রমুখ ব্যক্তিগণ হাই কোর্ট থেকে রহিতাদেশ বের করতে সমর্থ হয়ছেন ।