সর্বনাশা গেরুয়া সুনামির কবলে মতুয়ারা এবং সারা ভারতের উদ্বাস্তুরাও বেনাগরিক হয়ে থাকতে অভিশপ্ত,কথা রাখলেন না নমো মহারাজ৷
পলাশ বিশ্বাস
সর্বনাশা গেরুয়া সুনামির কবলে মতুয়ারা এবং সারা ভারতের উদ্বাস্তুরাও বেনাগরিক হয়ে থাকতে অভিশপ্ত,কথা রাখলেন না নমো মহারাজ৷
আমার বাবার সঙ্গে আমার রাজনীতি নিয়ে কোনো কথা হত না,কারণ উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে নারায়ণ দত্ততেওয়ারি,কেসি প্নত,ইন্দিরাগান্ধী,অটল বিহারী বাজপেয়ী ও অন্নান্য রাজনেতিক নেতাদের মুখোপেক্ষী হয়েছিল বাঙালি উদ্বাস্তু আন্দোলন৷
বাংলার বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উদ্বাস্তুদের শাসক জোটের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলা ছাড়া গতি ছিল না কোনোদিন,আজও নেই৷
অথচ আমি চিরদিনই জেনে এসেছি উদ্বাস্তু সমস্যার জন্য এই শাসক শ্রেণীই সবচেয়ে বেশি দায়ী৷
তাঁরা নানা সমস্যায় ফেলে বাংলার বাইরে বেনাগরিক করে রেখে,মাতৃভাষা ,সংরক্ষণ থেকে আমাদের বন্চিত করে আমাদের শুধু ভোট ব্যান্ক করে রেখেছে৷
আমরা পৃথক উত্তরাখন্ড রাজ্য সমর্থন করেছিলাম৷ বাবাও করেছিলেন এবং তার সবচেয়ে বড় কারণ হল প্রশাসনিক সুবিধা এবং ছোট বিধানসভা এলাকায় আমাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধেত্বের আশা৷
নূতন রাজ্য হওয়ায় প্নতনগর গদরপুর বিধানসভা এলাকা থেকে পর পর দুবার এমএলএ নির্বাচিত হন বহুসংখ্য বাঙালি ভোটে দিনেশপুর অন্চলের বাঙালি উদ্বাস্তু সন্তান প্রেমানন্দ মহাজন৷
কিন্তু গত নির্বাচনে ঔ এলাকার অর্ধেক ভোটারদের ফেলে দেওয়া হল রুদ্রপুরে৷ ফলে প্রেমানন্দ প্রবল জনপ্রিয়তা সত্বেও হেরে যান৷
সিতারগন্জ থেকে বাঙালি এমএএলএ হন এবার কিরণ মন্ডল বিজেপির টিকিটে৷
তিনি তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণার জন্য সিট ছেড়ে কংগ্রেসে গিয়ে মন্ত্রী সমান নিগম অধ্যক্ষ হয়েছেন ,কিন্তু কার্যতঃ উত্তরাখন্ড বিধানসভায় বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব নেই৷
শক্তিফার্ম এলাকায় বাঙালিদের ভুমিধারি হক দেওয়ার ওয়াদা করে বিজয় বহুগুণা মুখ্যমন্ত্রিত্ব শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেননি,এবম এখন নূতন মুখ্যমন্ত্রীর কোনো ইন্টারেস্ট নেই বহুগুণার কথা রেখে বাঙালিদের জন্য কিছু করার৷
অন্যদিকে বাঙালি ভোটে বিজেপির ভগত সিংহ কোশ্যারি নৈনীতালের এমপি ,যেমন তেওয়ারি পন্তরা হয়েছিলেন৷
অথচ উত্তরাখন্ডের প্রথম বিজেপি সরকারই সর্বপ্রথম নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হওযার অনেক আগেই 2003 সালে৷
উত্তরাখন্ডে বাঙালিদের নাগরিকত্বের দাবিতে উত্তরাখন্ডের আন্দোলনকে সেদিন পশ্চিম বাংলা সমর্থন করেছিল,তাই বিতাড়ন স্থগিত ছিল৷
রাজ্যে কংগ্রেস সরকারের পতনের পর নূতন বিজেপি সরকার সেই পুণ্য কর্মটি এবার সমাধা করতেই পারে৷
নাগরিকত্ব আইনও প্রণযন করে ঔ বিজেপি৷বাঙালি উদ্বাস্তুদের সারা দেশ থেকে বিতাড়িত করা বিজেপির এজেন্ডা৷
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপড়ন ও ভারত ভাগের সঙ্ঘ পরিবারের হিন্দুত্ববাদী গপ্পোর সঙ্গে বাঙালি তফসিলী উদ্বাস্তুদের জীবন মরণের কোনো সম্পর্ক নেই৷
সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও মুসলিম বিদ্বেষে গেরুয়া মেরুকরণ ও মনুস্মৃতি শাসনের করপোরেট রাজই বিজেপির মতাদর্শ,অথচ তাঁদের চরম লক্ষ্যউদংবাস্তুদের জ্যান্ত মেরে ফেলা৷
মালকানগিরি তে নদে বাসী বিশ্বাস,অরবিন্দ ঢালি ও পরে নারায়ণ বিশ্বাস,বোধ হয়,এমএলএ হওয়ার পর সেই রাজ্যের ঔ এলাকা এখন আদিবাসিদের জন্য সংরক্ষিত বিধানসভা এলাকা এবং উড়ীষা বিধানসভায় বাঙালি উদ্বাস্তু প্রতিনিধিত্বের জমানা শেষ৷
উড়ীষ্যার নওরঙদেওপুর জেলা ও সারা ভারতে বিজেপি রাজে নূতন করে উদ্বাস্তু বিতাড়নের জোর প্রস্তুতি চলছে৷
আবার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ করতে চলেছে নমো সরকার৷অথচ বাংলাদেশ থেকে যেসব উদ্বাস্তু ভারতে আসছেন তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলেন মোদি। রাহুল সিনহা বলেন, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের মানুষ এবং সার্বভৌমতের প্রতি যথেষ্ট ভালোবাসা ও সম্মানবোধ আছে নরেন্দ্র মোদির। বিজেপি সবসময়ই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্কে আগ্রহী।
সারা ভারত দাপিয়ে হিন্দুদের শরণার্থী ও মুসলিমদের অনুপ্রবেশকারি বলে জোর গৈরিক মেরুকরণ ও বাংলা দখলের ছক কষে ফেলা সত্বে এই নূতন আইনে ভারত ভাগের বলি বাহালি উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের কোনো ব্যবস্থা নেই,অথচ উদ্বাস্তু নেতারা গাডকরির সঙ্গে ফটো তুলে বিশ্বাস করে বসে আচেন এবার তাঁদের নরক যন্ত্রণা শেষ হচ্ছে৷
অথচ কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বড়সড় ছাপ রাখতে পারে৷ পশ্চিমবঙ্গের দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান এবং কলকাতায় বসবাসকারী নাগরিকত্বহীন এই মানুষদের বড় অংশই মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত, সব দলই যাদের সমর্থন পেতে মরিয়া৷
আসল কথা হল,বিজেপির নীতিগত অবস্থান,ভারতে অবৈধভাবে যেসব বাংলাদেশী অভিবাসী রয়েছেন তাদের উদ্বাস্তু মর্যাদা দেয়ার বিপক্ষে বিজেপি।
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সিদ্ধার্থ সিং শনিবার কলকাতায় সাংবাদিকদের বলেন, ব্যবসা বা অন্য কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে যেসব বাংলাদেশী বেআইনিভাবে ভারতে এসেছেন তাদের কোনভাবেই উদ্বাস্তুর মর্যাদা দেয়া হবে না।
বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারেও সেকথা বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
লোকসভা নির্বাচনের সময় শ্রীরামপুরে এক জনসভায় বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, তারা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠাবেন। সেজন্য বাংলাদেশী অভিবাসীদের বাক্স-পেটরা বেঁধে তৈরি থাকতে বলেছেন।
অথচ লোকসভা নির্বাচনের সময়কালীন বিজেপির সভাপতি রাজনাথ সিং পশ্চিমবঙ্গে এক নির্বাচনী জনসভায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে অত্যাচার করে মানুষ তাড়িয়ে দেয়া হবে, এতে আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। ১৯৭১ সালের পর থেকে যারা ভারতে এসেছেন তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।
বাংলাদেশীদের তাড়ানোর ব্যাপারে মোদি যে কথা বলেছেন তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে অমিত শাহের আগের বিজেপি সভাপতি। তিনি জানিয়েছেন, মোদিজি কাউকে আঘাত করতে চাননি। ভারতে দীর্ঘদিন ধরে যারা বসবাস করছে তারাও এদেশের মানুষ কিন্তু যাদের ভিসা-পাসপোর্ট নেই তাদের থাকতে দেয়া হবে না।
বহিরাগতদের অনুপ্রবেশকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে নানা সমস্যার অন্যতম বলে নির্বাচনী প্রচারে এসে সরব হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি।
বিজেপি ক্ষমতায় এলে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনের পর সেই কাজেই মোদির সরকারকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তার পার্টি।
অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজেপির বিশেষ সেল গঠন
পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ ও জঙ্গি আনাগোনা ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারির জন্য রাজ্য বিজেপি বিশেষ সেল গঠন করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ওই সব এলাকায় সমান্তরাল নজরদারি চালাবে দলের বিশেষ কমিটি। যে কমিটিগুলির মাথায় আছেন দলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন সেনা ও পুলিশকর্তারা।
আরএসএস এই ধরনের কমিটির সাহায্যে সারা বছর সীমান্তে নজর রাখে বলে বিভিন্ন সময়ে শোনা গেলেও কোনো রাজনৈতিক দলের তরফে এমন কমিটি গড়ে নজরদারি চালানোর কথা অতীতে শোনা যায়নি। বিজেপি প্রকাশ্যেই এই কমিটি গড়ার কথা জানাচ্ছে।
এ বিষয়ে বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে লোকসভা ভোটের আগেই কেন্দ্রীয় স্তরে ও সব রাজ্যে সিকিউরিটি সেল তৈরি করেন মোদি। সম্প্রতি পশ্চিবঙ্গে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব সেই টিম গঠনের কাজ শুরু করেছেন।
সেলের আহ্বায়ক রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি শঙ্করনাথ মুখোপাধ্যায়৷ তবে পুরো কমিটি এখনও তৈরি হয়নি৷ শঙ্করনাথ ইতিমধ্যে বনগাঁ, বসিরহাট ও মুর্শিদাবাদের সীমান্ত এলাকায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন৷ গত সপ্তাহে দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সেলের প্রভারী বা সর্বাধিনায়ক প্রাক্তন লেফট্যানান্ট জেনারেল এন এস মালিককে এই সংক্রান্ত প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছেন তিনি৷
জাতীয় নিরাপত্তা সেলের আহ্বায়ক পি চন্দ্রশেখর রাও পেরালার ভাষ্য মতে, 'পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তে বেআইনি অনুপ্রবেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার খুবই উদ্বিগ্ন৷ সেই কারণে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি রাখতে স্থানীয় মানুষকে সচেতন করার জন্য দল এই সেল তৈরি করেছে৷ কমিটির সদস্যরা সীমান্তে যাচ্ছে৷'পেরালা জানিয়েছেন, দিন দশেকের মধ্যে তিনি এ রাজ্যে আসবেন৷ যেতে পারেন কয়েকটি সীমান্ত এলাকাতেও৷ তারপর দিল্লি ফিরে দলের সভাপতি অমিত শাহ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে রিপোর্ট দেবেন তিনি৷
লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে মোদি বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশে ফেরানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। মোদির বক্তব্যের তখনই কড়া জবাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তোপ দেগেছিল বাম ও কংগ্রেস শিবিরও৷ তারা বলেছিল, মোদি আসলে উদ্বাস্তু মানুষদের দেশ থেকে তাড়াতে চাইছেন৷ বিজেপির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর অবশ্য নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, তিনি উদ্বাস্তু বা শরণার্থীদের নয়, অনুপ্রবেশকারীদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তা টিমের কর্তাদের সঙ্গে মোদি, অমিত শাহ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্থরা দফায় দফায় বৈঠক করে সেলের কর্ম পদ্ধতির রূপরেখা ঠিক করেছেন৷ বিজেপির সিদ্ধান্ত, সীমান্ত এলাকার মানুষকে অনুপ্রবেশ, জঙ্গি ও গরু পাচারের মতো সমস্যা নিয়ে সচেতন করতে এবং সেদিকে কড়া নজর রাখতে শিবির করবে৷ দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার কথায়, 'অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে সেল আমাদের রিপোর্ট পাঠালে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে তা জানিয়ে দেব৷'
- See more at: http://www.newsbreakbd.com/1111223.htm#sthash.QQ5AlUDi.dpuf