নবান্ন নিরাপদ।আমরা কতটা নিরাপদ,এই প্রশ্ন বার বার বারম্বার বাংলার আকাশে বাতাসে বসন্তের বজ্রনিণাদ।
পলাশ বিশ্বাস
নবান্ন নিরাপদ।আমরা কতটা নিরাপদ,এই প্রশ্ন বার বার বারম্বার বাংলার আকাশে বাতাসে বসন্তের বজ্রনিনাদ।
গিয়েছিলাম নৈনীতালের বাঙালি উদ্বাস্তু বসতিতে,নতুন জেলা উধম সিংহ নগরের বাসন্তীপুর গ্রামে।
নিজের শহর নৈনীতালে ছিলাম,ছিলাম উত্তরাখন্ডের রাজধানী দেহরাদুনে।
পয়ত্রিশ বত্সর পর দেখা করলাম চিপকো আন্দোলন ও পরিবেশ চেতনার ভীষ্ম পিতামহ সুন্দরলাল বহুগুণার সঙ্গে।
যিনি পয়ত্রিশ বছর পরও আামায় ভোলেন নি।
বার বার বললেন,কলকাতায় ফিরে যেন ইন্ডিয়ান স্কুল অফ ম্যানেজমেন্টে গিয়ে জয়ন্ত বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে অবশ্যই দেখা করি।
উনি জানতেন আমি দিল্লীতে যাচ্ছি কিন্তু দিল্লীর একটি নামও মুখে আনলেন না,এতই নাড়ির টান।
প্রথমেই সাতাশি বছরের বহুগুণাজি সহ্ঘী জীবনসঙিনী সবিতাকে পাশে বসিয়ে বললেন,আমরাও বাঙালি এবং বন্দোপাধ্যায়।
বললেন বহু পুরুষ আগেই তাঁর তিন পূর্ব পুরুষ কেদার দর্শনে উত্তরাখন্ডে গিয়ে ফিরতি পথে টেহরির বুথানী গ্রামে রাত্রি বিশ্রাম করছিলেন।
তাঁদের মধ্যে ছিলেন একজন বৈদ্য.যিনি সেই রাতেই গুরুতর অসুস্থ রাজাকে সুস্থ করে তোলেন এবং রাজা তাঁদের ঔ গ্রামে রেখে দেন ।
তাঁরাই হলেন বহুগুণা।
সবিতা এবং আমি অনেক বার জিজ্ঞাসা করলাম,কোথা থেকে তাঁরা গিয়েছিলেন যদি বলেন,তাহলে আমরা সেই শিকড়ের সন্ধ্যান করি,তিনি বলতে পারলেন না।
অথচ হিমালয়ে গোমুখে মরুস্থল দর্শন করে পাহাড়িদের অতি প্রিয় ভাক তিনি ছেড়েছেন,প্রকৃতির বিপর্যয়ে এই ভারত মহাদেশে জলের আকাল হচ্ছে খূবই শীগ্গির এবং অন্নে সঙকট ত হচ্ছেই,ধান আর হবে না কোথাও,তাঈ আগে ভাগে ভাতে উপবাস।
এমনি করেই,কুমাযুঁতে কৌশানী গ্রামে সেন বংশের উত্তরাধিকারীদের সঙ্গে ছাত্র জীবনে দেখা সাক্ষাত হয়েছে বহুবার,এবং তাঁরা বাংলার সেন বংশে নিজের শিকড় খুঁজে মরেন।
হেমবতী নন্দন বহুগুণা এবং সুন্দরলাল বহুগুণার একই উত্স।
বাঙালিত্বে তাঁদের পরিচয়।
কিন্তু তাঁরা বাংলা লিখতে বলতে পারেন না।
পাহাড়ে সেন বংশের উত্তরসুরিরাও বাংলা বলতে পারেন না।
এবং আমরা যারা বাংলার বাইরে বাস করি উদ্বাস্তু পুন্রবাসনের সৌজন্যে,স্বাধীনতার পর তাঁরাও বাংলা বলতে লিখতে পারিনা।
অথছ আমরা বাংলার পথে ঘাটে মার খাওয়া ,খাল পাড়ে,বিল পাড়ে অনাথ ওপার বাংলার মানুষদের তুলনায় ঢের ভালো আছি।
দন্ডকারণ্য থেকে যারা মরিচঝাংফিতে বসতি করতে এসেছিলেন,তাঁরা কোনো দিন ভাবেন নি,সেখানে বাঙালিরা এত ভালো থাকবেন।
কম্যুনিস্টরা পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তুদের নূতন হোমল্যান্ড আন্দামান থেকে বন্চিত করেছেন উদ্বাস্তুদের বাংলাতেই পুনর্বাসনের দাবিতে,সেই আন্দামানেও বাঙালিরা মোটামুটি বালো আছেন।
ভালো আছেন মহারাষ্ট্রে, তামিলনাডুতে, উড়ীষ্যায়, রাজস্থানে, অন্ধ্রে, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখন্ডে।
আমার গ্রামের মেয়েরা বউরা,ছেলেরা সবাই টাকরি করে,অনেক বাড়িতে চার চাকা গাড়ি।
ব বাড়িই পাকা।
আমার গ্রামের চারদিকে পাকা রাস্তা।
আমার গ্রামে হাসপাতাল,স্কুল এবং রাজ্যের নেতাজি জয়ন্তী এব বিভিন্ন খেলার প্রতিযোগিতাও আমাদের গ্রামে।
আমরা ভালো আছি।
কিন্তু বিজেপি সরকার আমাদের বেনাগরিক করে আমাদের নাগরিকত্ব হরণ করেছ সর্বত্র।
উত্তরাখন্ডে 2003 এ বাংলার সমর্থনে প্রবল আন্দোলনের ফলে বাঙালিদের এখন বাংলাদেশি বলছেন না কেউ,কিন্তু উত্তর প্রদেশের জেলায় জেলায় যেখানে পুনর্বাসন কলোনী,সেখানে তাঁরা অবশ্যই মুলনিবাসী বলে মান্যতা পাছ্ছেন না,তাঁদের চাকরিও হচ্ছে না।
কিন্তু আমাদের সারা দেশ ব্যাপী উদ্বাস্তি জনপদে বাংলা সাহিত্য,বাংলা ভাষা এবং বাংলা সংস্কৃতির চর্চা বন্ধ হয়ে গেছে।
পশ্চিম বঙ্গের জনসংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি তফসিলী মানুষজন বাংলার ইতিহাস ভুগোল থেকে বেদখল হয়ে গেলেন এবং বাংলা তাঁদের জন্যচোখের জল ফেলবে না।
অনেকের টাকা হয়েছে প্রচুর,কিন্তু তাঁরা রবীন্দ্রনাথ নজরুল বিবেকানন্দ নাম শুনেছেন,কিন্তু তাঁদের তেমনকরে চেনেন না যেমন তাঁরা সব ভাষাই শিখছেন,বাংলা অক্ষর চেনেন না।
তাঁরা বাংলাভাষায় সংলাপ আলাপ আলোচনায় আদৌ অভ্যস্ত নয়।বাংলা ভাষা নিয়ে যাদের বড়ই গরব,বাঙালির জাত্যাভিমানে যাদের ছাতি হরকিউলাস,তাঁরা বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির এই বিপর্যয় নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
কিন্তু এবার উত্তরাখন্ডে গিযে হাড়ে হাড়ে বুঝলাম আমরাও বহুগুণাদের মত,সেনদের মত আর বাঙালি থাকতে পারছি না।
জানিনা বাঙ্গালিদের কাছে এই মর্মবেদনার কোনো মানে হয় কিনা।
তবু বাংলার বাইরে তৃতীয়শ্রেণীর নাগরিক বেনাগরিক ঘুসপেঠিয়া হয়েও আমরা নিরাপদ আছি।
কিন্তু এই বাংলায়,হবাঙালির নিরাপত্তার হাল হকীকত তে এখন কাগজে কাগজে ,টিভি চ্যানেলে ,সবজান্তা প্যানেলে ফর্দাফাইং যাচ্ছে তাই,অথচ বাংলার বাইরের মানুষজন বাঙালিত্বে যাদের আজও পরিচয়,তাঁকা বাংলা কাগজ দেখেন না,টিভিতে সিরিয়াল সিনেমা খেলা দেখলেও খবর দেখেন না,তেমন কোনো বন্দোবস্ত সেখানে নেই।
প্রায় কুড়ি দিন স্বজনদের পাশে থেকে কলকাতায় ফিরে যেন আবার সন্ত্রাসের রাজত্বে ফিরে এলাম যেখানে নবান্নের নিরাপত্তা আছে,কিন্তু মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই।
তাহলে কি গোটা হবাঙালি জাতিকে কি এবার বাংলার বাইরে পাছিয়ে দিয়ে তাঁদের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে হবে,বুঝতে পারছি না।
যে বিজেপির জন্য রাজ্যে রাজ্যে বাঙালিদের চরম বিপর্যয়,সেই বিজেপিকে ক্ষমতায় বসাতে বাংলায় প্রচন়্ড সুনামী চলছে,লজ্জায় মুখ ঢাকার জায়গা নেই।
আনন্দবাজারের খবরে প্রকাশ,রাজ্য সরকারের সদর দফতরের আশপাশে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা নতুন ঘটনা নয়। সে ব্যবস্থা মহাকরণ ঘিরে বরাবরই আছে। কাছাকাছি লালবাজার, রাজভবন, বিধানসভা ভবন, হাইকোর্ট ইত্যাদি থাকায় সেই নিষেধাজ্ঞার পরিধিও গোটা বিবাদী বাগ চত্বর জুড়ে। কিন্তু নবান্নের ক্ষেত্রে এত দিন তা ছিল চারপাশের ১০০ মিটার পর্যন্ত। এ বার তা অন্তত ছ'গুণ বেড়ে গেল। যার অনেকটাই ঘনবসতি এলাকা।
আহা কি আনন্দ,আনন্দবাদজারেরই খবর,রক্ত ঝরার সাত দিন বাদে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিল মাখড়া। এক দিকে, মহরমের কারণে এলাকায় জারি থাকা ১৪৪ ধারা শিথিল করল বীরভূম জেলা পুলিশ-প্রশাসন। অন্য দিকে, তারই ফাঁক গলে সোমবার মাখড়া ও লাগোয়া চৌমণ্ডলপুর গ্রামে ত্রাণ নিয়ে ঢুকল বিজেপির প্রতিনিধি দল। গ্রামবাসীদের একাংশ যেমন বিজেপির মিছিলে সামিল হলেন, তেমনই যোগ দিলেন নিত্য দিনের কাজে।
এই হল গিযা আমাদের প্রগতিশীল উদার ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা সকল দেশের রানী সেযে আমার বাংলাদেশ কাঁটাতারে রক্তাক্ত,মৃতপ্রায়।
একুনি সুন্দর লাল জি যেমন গোমুখে মরুদর্শন করে ভাত ছেড়েছেন,বাংলার সন্তার্স দর্শনে কি আমাদের বাংলাই ছাড়তে হবে,আমায় ভাবাচ্ছে,আপনাদের ভাবাবে কিনা জানিনা।
|