বাংলায় পুরুত প্রভুরা কি বেশি রকমের বাঙালি(অসুর) বিদ্বেষী? তারা কি অন্যান্য প্রদেশের ভূদবতাদের থেকে বেশী রক্ত পিপাসু? তা না হলে ধর্মের নামে বাঙালি নিধনের এমন ঢালাও পরিকল্পনা করলেন কেন? কেনইবা হিংসা, বিদ্বেষ, সন্ত্রাস ও নরহত্যার এমন ঢালাও প্রদর্শন টিকিয়ে রাখার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করছেন পুরুত প্রভুরা! দুর্গা-কালি পূজার নামে ঢালাও মদের যোগান দেওয়ার ঘোষণা এবং সরকারের প্রধানদের একে উৎসাহিত করার এমন উন্মত্ততা কিসের ইঙ্গিত বহন করে ! একি কোন বিকারগ্রস্থতা না ব্যবসায়ী ফন্দি! না আসু কোন প্রলয়ের জন্য বলির পাঁঠার মতো অসুর বাঙালীকে প্রস্তুত রাখা! যাতে সঠিক সময়ে অসুর বাঙালীর মুণ্ডু দিয়ে আবার ব্রাহ্মন্যবাদী কালীর অভিষেক হতে পারে ! এমন জিঘাংসা, এমন উন্মত্তা ও ভেদ নীতির সগর্ব আয়োজন পৃথিবীর সভ্য দেশগুলিতে খুঁজে পাওয়া দুরূহ। ঘটনা হল, বাংলায় এসব বহাল তবিয়তে চলছে, এবং একে মহিমান্বিত করার জন্য সরকারের প্রধানরা পর্যন্ত প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে গিয়ে অসুর বাঙালী নিধনের জন্য শিরা ফুলিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করছেন! শপথ গ্রহণ করছেন, "আসছে বছর আবার হবে"।
বাংলা এখন বর্বরতার আঁতুড়ঘর
আদিম হিংস্রতা, বর্বরতা ও পৈশাচিক প্রবৃত্তি নরতত্ব,সমাজতত্ব ও মনোবিজ্ঞানের একটি বিরলতম অধ্যায়। মানুষের জিনোটাইপ ও ফিনোটাইপের আড়ালে এগুলি কি ভাবে প্রচ্ছন্ন হয়ে আছে তাও গবেষণাগারের সিরিয়াস পরীক্ষা নিরীক্ষার চ্যাপ্টার। পৃথিবীর বিবর্তনের কারণেই হোক বা গতিজাড্যের কারণেই হোক হোমোইরেক্টাস যুগের আদিম বর্বর মানব প্রজাতি বাংলায় কিন্তু কেন্দ্রীভূত হয়েছে এবং যোগ্যতম প্রজাতি হিসেবে এই বিশেষ শ্রেণির মানুষেরা তাদের বিরলতম প্রতিভা এবং স্বভাবটি ধরে রেখেছে তাদের আচার, বিচার ও ধর্মীয় আচরণের মাধ্যমে। নিঃসন্দেহে একটি প্রজাতির ক্ষেত্রে এটি একটি প্রবল গুন। লক্ষণীয় বিষয় এই যে, হিংস্রতার এই প্রবল গুনটি তারা অন্য প্রজাতির মধ্যেও সঞ্চারিত করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে প্রবৃত্তিটি মানব মজ্জায় ঢুকে গিয়ে একটি স্থায়ী স্বভাবে রূপান্তরিত হয়ে পড়েছে। বিস্তার লাভ করেছে এবং মূলাধারটি জৈব বৈচিত্রের (জাত ব্যবস্থা) আড়ালে সুরক্ষিত হয়ে আছে। এহেন দুর্লভ, বিরল ও আদিম হিংস্র বিষয়টির জন্যই সম্ভবত বাংলা একসময় গোটা পৃথিবীর গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে চলেছে।
কালীপূজা এক বীভৎসতার প্রজেকশন?
হাতে ঝুলছে কাঁটা নরমুণ্ড । খড়্গ থেকে ঝরে পড়ছে টাটকা রক্ত । নরমুণ্ডুগুলি থেকে ঝরে পড়া রক্ত পান করছে পিশাচ ও শৃগাল। ইতিউতি পড়ে আছে পুরুষের মুণ্ডহীন ধড়। তিনি "কালী করাল বদনী, অসি,পাশধারিণী, বিচিত্র খট্বাঙ্গধারিণী, নরমুণ্ড ভূষিতা। তিনি ব্যাঘ্র চর্ম পরিহিতা, শুষ্ক মাংস ভৈরবীরূপিণী বিস্তৃত বদনা, লোল জিহ্বা, ভীষণা"। লকলকে জিভ দিয়ে চেটেপুটে পান করছেন সেই রক্ত! চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা শিবের(ঈশ্বর) বুকের উরপ পা তুলে এই তাণ্ডব নর্তন বীভৎসতার প্রতীক নয়! অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয় উল্লাস!
হ্যা, এমনটাই মেনে নিতে হবে। নতুবা মান-সম্মান-মুণ্ডু সবটাই যাবে। এই খট্বাঙ্গধারিণী, নরমুণ্ড ভূষিতা, ভৈরবীরূপিণী বিস্তৃত বদনা, লোল জিহ্বা, ভীষণা রূপের মাধুরী ও হুংকার ধ্বনি আকাশে বাতাসে উদ্গিরন করেই বাংলায় প্রভুদের বিজয় নর্তন শুরু হয়। রাজাকে বশীভূত করে, রাজ ক্ষমতা ব্যবহার করেই চলে তাণ্ডব নর্তনের রণ দামামা। রাজাকে নর্তকীদের নুপুর নিক্কন ও দেহবল্লরির ফাঁদে ফেলে রাজগুরু, রাজপুরোহিত, পণ্ডিত ও কবিরা মিলে রচিত করেন নরহত্যার বিজয় আলেখ্য। এই মহিমা কীর্তনগুলি লিপিবদ্ধ হয় পৌরাণিক কাহিনী রূপে। বিদ্যাপতির কালিকা পুরাণ এমনি এক আলেখ্য যেখানে দুর্গা বা কালীপুজা কি ভাবে কারা উচিৎ তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যাপতি শবরোৎসবের উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেনঃ 'কুমারী, বেশ্যা, নর্তকীদের নিয়ে শঙ্খ, তূর্য,মৃদঙ্গ, ঢোল বাজিয়ে বহুবিধ ধ্বজা বস্ত্র সহ খৈ, ফুল ছড়িয়ে, পরস্পরের প্রতি ধুলো কাঁদা ছিটিয়ে ক্রীড়া ও কৌতুক গান করতে করেতে যাত্রা করবে। ভগলিঙ্গ, যৌনউত্তেজক গান এবং তদৃশ্য বাক্যালাপ করে আনন্দ করবে, এই সময় যে ব্যক্তি অশ্লীলতা ভালোবাসেনা বা নিজেও অপরের বিরুদ্ধে এরূপ শব্দ ব্যবহার করেনা ভগবতী ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে শাপ দেবেন এবং বিনাশ করবেন'।
বৃহদ্ধর্ম পুরাণেও এই শবরোৎসবের বর্ণনা আছেঃ
'ভগ লিঙ্গাভিধানৈশ্চ শৃঙ্গার বচনৈ স্তথা –
গানং কার্যং ভোজয়চ্চ ব্রাহ্মনাৎ স্তোষয়েস্ত্রিয়া'।
( বৃহদ্ধর্ম পুরাণ ২২ অধ্যায় ২০-৩০পৃ )
ভূদেবতাদের কি অপূর্ব মহীমা! নাচ, গান, পান ভোজন এবং ভগলিঙ্গ সহ মধুর ভাষণের মাধ্যমে স্ত্রীলোক দ্বারা তাদের তুষ্ট করার এই বিধানের মধ্যে দিয়ে তারা বুঝিয়ে দিলেন যে, "ভর্গো দেবস্য ধীমোহী, ধীয়োযোনা প্রচোদায়ৎ"।
দ্বিজ রামপ্রসাদ তার গানের মধ্যে কিন্তু প্রশ্ন করে বসেছিলেন, 'বসন পর মা' বা 'শিব কেন তোর পদতলে, মুণ্ডু মালা কেন গলে'। কি জানি হয়তো সমস্ত মাতৃ জাতীর প্রতি এমন কদর্য ইঙ্গিত বা যৌনতার এমন ঢালাও ব্যবস্থা তিনি মেনে নিতে পারেননি। আজও কালী পূজার সময় পান্নালাল ভট্টাচার্যের গলায় তার এই আকুতি আমরা শুনতে পাই। কিন্তু পান ভোজন ও আদিমতার নেশায় মত্ত বাঙালির কাছ থেকে তার আকুতির কোন উত্তর পাওয়া যায়না। একেবারে রক্তের মধ্যে মিশে যাওয়া বা মজ্জাগত শ্বাপদ স্বভাবের তাই কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়না।
কিন্তু এমন নগ্ন যৌনতা ও বীভৎস কালী মূর্তি কেন রচনা করলেন বাংলার পণ্ডিত প্রবরেরা! কালচক্কযানি "তারা"যিনি গোতমা বুদ্ধের জীবিতাবস্থায় সমগ্র এশিয়া খন্ডে পূজনীয়া হয়েছিলেন। আজো যাকে প্রজ্ঞা ও পারমিতার সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হয় তার প্রকৃত অর্থ তারা বুঝতে অসমর্থ হয়েছিলেন! না চৌর্য বৃত্তিকালে "তারার"মহিমাকে বিকৃত করে একান্ত ভাবে তাদের আদিম বিকারগুলিকে ধর্মের মোড়কে বেঁধে দিলেন। মদ-গাঁজা, সিদ্ধি-ভাং ও চুল্লু-তাড়ির নেশা ধরিয়ে জনগণকে বুদ করে রেখে নিজেদের বর্ণশ্রেষ্ঠ হিসেবে সুরক্ষিত করলেন!
ভাবীকালের গবেষকেরা নিশ্চিত এ নিয়ে বিস্তর পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন। ম্যান মিউজিয়ামের এমন উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে বাংলা সেদিন হোমো- ইরেক্টাস জামানার আদিম হিংস্রতার জন্য বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেবে। কিন্তু ততদিন তো চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে কালিকা পুরাণের সাজেশন। তাইতো আবেগ মোহিত গলায় মুখ্যমন্ত্রীর গলায় চণ্ডী পাঠের ফোয়ারা ছোটে। কোল্লামখুল্লা প্রোমোদের জন্য মদ, গাঁজা, চুল্লুর ঢালাও জোগানের ফরমান জারি হয়। বেঁচে থাক ব্রহ্মন্যবাদ। বেঁচে থাক আদিম হিংস্রতার পৈশাচিক প্রবৃত্তি।