প্রিয় ভারতবাসী,
ভারতের সংবিধান সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের সর্ববৃহৎ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সংবিধান হিসেবে গণ্য করা হয়। গণতন্ত্রপ্রেমী সব দেশ এই সংবিধানকে মহান সংবিধান হিসেবে অভিবাদন করে। এই সংবিধানের জন্যই বিগত ৬৫ বছর ধরে দেশের ২৯টি রাজ্য, ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, ২২টি মূখ্য ভাষা, ১৭০০ র বেশী মাতৃভাষা, ৭টি মুখ্য ধর্ম এবং ৬৭৪৮টির বেশী জাতীসমূহের বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও এদেশের মানুষ সংবদ্ধ নাগরিক জীবন উপভোগ করছে। বিবিধের মাঝে মিলনের এমন সুনিবিড় বন্ধন সারা বিশ্বে বিরল।
ভারতের সংবিধানের ভীত এমন ভাবে গড়া হয়েছে যে, এদেশের প্রত্যেক নাগরিক যেন আর্থিক, সামাজিক, ধার্মিক ও সাংস্কৃতিক মার্গ প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়। সমতা, স্বতন্ত্রতা, ন্যায় ও মিত্রতাই এই সংবিধানের মূল উদ্দেশ্য। এই সংবিধান ভারতের প্রত্যেক নাগরিককে ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ, ভাষা এবং আঞ্চলিক ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে এসে সদ্ভাবনার সাথে জীবন অতিবাহিত করার মৌলিক অধিকার প্রদান করে। আমাদের গর্ব এখানেই যে, ভারতের সংবিধান নির্মাতাগণ দেশকে এমন এক মহান সংবিধান প্রদান করেছেন যেখানে ধ্বনিত হয়েছে ঃ
না থাকবে কেউ ভুখা নাংগা না থাকবে কেউ নিরক্ষর গোয়াড়
সবার হাতে থাকবে কাজ, কেউ হবেনা অন্যায়ের শিকার।
জাতি ধর্ম, লিঙ্গ, ভাষা সব ভেদাভেদ হবে বিনাশ,
রাজা প্রজা কেউ রবেনা সবার হবে সমবিকাশ।
গর্বে ভরা উন্নত শির উন্নত বাণীর উড়বে নিশান
বিশ্ব মাঝে বন্দিত হবে মহান ভারতের সংবিধান।
কিন্তু অত্যন্ত বেদনার সাথে বলতে হচ্ছে যে, বিগত ৬৫ বছের ধরে দেশে যে সরকার গঠন হয়েছে তাদের সমতা, স্বতন্ত্রতা, ন্যায় ও মিত্রতার উপর কোন বিশ্বাস ছিলনা। বরং তারা হাজার হাজার বছরের প্রাচীন অসাম্য ব্যবস্থাকেই টিকিয়ে রাখার উপর বেশী মনযোগী ছিলেন। এই সরকারগুলির দ্বারা সংবিধানের এই বিপ্রতীপ প্রয়োগের ফলে ভারতের মত জনকল্যাণকারী শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্র আজ বিচ্ছিন্নতাবাদ, নকশালবাদ, আঞ্চলিকতাবাদ, উৎপীড়ন, দারিদ্র, ভুখমারি, ক্ষুধার্ত, বেকারত্ব ও সাম্প্রদায়িক হানাহানির ক্লেদাক্ত কর্দমে পতিত হয়েছে।
আজ ক্ষমতাসীন শাসকেরা ভারতীয় সংবিধানের মূল কাঠামোকে অগ্রাহ্য করে দেশের জল, জঙ্গল, জমিন এবং সরকারী সম্পদগুলিকে পুঁজিপতি এবং বিদেশি নেকড়েদের কাছে 'দু'কড়িমূল্যে বেঁচে দিয়েছে এবং দেশকে আর্থিক গোলামীর যূপকাষ্ঠের সামনে খাড়া করে দিয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে যে জনকল্যাণকারী নির্ণয় সংসদের অভ্যন্তরে নেওয়া প্রয়োজন তা আজ সংসদের বাইরে নেওয়া হচ্ছে যা ভারতের গণতন্ত্র, সংবিধান ও ভারতবাসীকে সরাসরি অপমান। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ লোকতন্ত্রের এমন অসহায় পরিণতিতে দেশবাসী ভারতকে স্বৈরাচারী, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দুর্ভাবনায় আতঙ্কিত।
এমন বিকট পরিস্থিতিতে ভারতের একজন আদর্শ দেশপ্রেমী নাগরিক হিসেবে, সংসদীয় গণতন্ত্র রক্ষার জন্য, দেশকে আর্থিক গোলামী থেকে মুক্ত করার জন্য, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সমতা, স্বতন্ত্রতা, ন্যায় ও মিত্রতার নিবিড় বন্ধনে জীবন অতিবাহিত করার জন্য আমাদের কাছে কেবল একটিই মাত্রই উপায় খোলা আছে যা হল ভারতের মহান সংবিধানের প্রতিটি অক্ষর সততার সাথে অনুসরণ করা। আগামী ২৬শে নভেম্বর, ২০১৪ এই বিশ্বমান্য সংবিধানের ৬৫ সাল পূর্ণ হতে চলেছে। এই উপলক্ষে সমস্ত ভারতবাসীকে "সংবিধান জাগৃতি অভিযান", "সংসদীয় লোকতন্ত্র দিবস" পালন করার সংকল্প গ্রহণ করতে আহ্বান জানাচ্ছি।
এই উপলক্ষে ঃ
ক) ভারতের জাতীয় পতাকা এবং সংবিধানের প্রতিরূপ নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে, আইনানুগ শৃঙ্খলা পূর্বক বিশাল সংখ্যক জন সমারোহের সাথে র্যালি প্রদর্শন করুন।
খ) ভারতের সংবিধানের উপর আলোচনা চক্র, সেমিনার, প্রদর্শনী, পথনাটক সহ সাংস্কৃতিক কর্মসূচী পালন করুন।
জন সচেতনতা ও জনকল্যাণের জন্য ন্যাশনাল সোশ্যাল মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া দ্বারা প্রচারিত