বাংলা ভাগ ও নেপথ্য ইতিহাস : শরদিন্দু উদ্দীপন
তথ্য সূত্রঃ শ্রদ্ধেয় জগদীশ চন্দ্র মণ্ডল, কোলকাতা-৭০০১৫২
(Jagadish Chandra Mandal is the worthy son of Mahapran Jogendra Nath Mandal,who wrote on Mandals personality and works in four volumes which had been highly appreciated by mainstream media.He explained the complicated Ambedkar Mandal relationship bringing front the back scenario of partition.-Palash Biswas)
"১৯৩৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের পরে যখন কংগ্রেস দল বাংলা সহ সকল প্রদেশেই মন্ত্রী সভা গঠনে অস্বীকৃত হইলেন তখন বাংলার দ্বিতীয় সংখ্যা গরিষ্ঠ " কৃষক প্রজা " দলের নেতা মৌলভী এ কে ফজলুল হক তৃতীয় সংখ্যা গরিষ্ঠ লীগ দলের নেতা খাজা স্যার নাজিমুদ্দিনের সহিত কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা গঠন করেন। ইহারএক বছর পরেই মৌলভী এ কে ফজলুল হক লীগ দলে যোগদান করেন এবং বাংলার মন্ত্রীসভা কার্যত লীগ মন্ত্রীসভায় পরিণত হয়। ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া লীগের সাধারণ কনফারেন্সে বাংলার লীগের প্রতিনিধিগ ণ ফজলুল হক সাহেবের নেতৃত্বে পত্রপুষ্পে শোভিত একখানি স্পেসাল ট্রেনে লাহোর গমন করেন।লাহোরের লীগ কাউন্সিল অধিবেশনে পাকিস্তান প্রস্তাব রূপে যে প্রস্তাব গৃহীত হয় সেই প্রস্তাবটি বাংলার ফজলুল হক সাহেবই উত্থাপন করেন। সম্মেলন অন্তে অনুরূপ সজ্জিত স্পেশাল ট্রেনে "শেরে বাঙ্গাল জিন্দাবাদ" ধ্বনি দ্বারা অভি নন্দিত হইয়া হক সাহেব বাংলায় প্রত্যাবর্তন করেন। তখন তিনি বাংলার প্রধান মন্ত্রী। কিন্তুবিস্ময়ের বিষয় এই যে, পাকিস্তান প্রস্তাবের প্রস্তাবক হ ওয়া সত্বেও বাংলাদেশে হক সাহেবের বিরুদ্ধে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা দিল না। তাঁহার মন্ত্রীসভায় যে সব হিন্দু মন্ত্রীগণ ছিলেন - যথা নলিনী রঞ্জন স্রকার, স্যার বিজয় প্রাসাদ সিংহ রায়, কাসিম বাজারের মহারাজা শ্রীশচন্দ্র নন্দী, প্রসন্ন দেব রায়কত এবং মুকুন্দ বিহারীমল্লিক,তাহেদের কেহই পদত্যাগ করিলেন না। কোথা হইতেও কোনরূপ প্রতিবাদ ধ্বনিত হইল না।" আমার দু-চারটি কথা, শ্রী যো গেন্দ্রনাথ মণ্ডল...।
এর পর আমরা জানি যে, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির সহযোগিতায় হক সাহেব দ্বিতীয়বার মন্ত্রীসভা গঠন করেন। কিন্তু বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবে সেই মন্ত্রীসভাও ভেঙে যায়। তপশীল জাতির অধিকংশ এম এল এ দের নিয়ে মহাপ্রান যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল এই অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থন করেন। এই অনাস্থা প্রস্তাবের পর যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলদাবী করেন যে যারা তাদের দাবী মেনে নেবেন তাদেরকেই তাঁরা সমর্থন জানাবেন।
এই দাবীগুলি হল ঃ
১) তপশীল এম এল এ দের মধ্যে ৩ জন মন্ত্রী ও ৩ জন পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি নিযুক্ত করতে হবে।
২) তপশীল জাতির শিক্ষার জন্য প্রতিবছর ৫ ল ক্ষ টাকা বরাদ্দ করতে হবে।
৩) সরকারী চাকরীতে জাতির ভাগিদারী পুরোপুরি মেনে নিতে হবে এবং
৪) উচ্চ পদের সরকারি চাকরিতে তপশীল জাতির প্রার্থী গ্রহণ করতে হবে।
হক সাহেব এই দাবী গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন । নাজিমুদ্দিন দাবীগুলি মেনে নেয়। তপশীল জাতির ২২ জন এম এল এ নাজিমুদ্দিনকে সমর্থন করায় তিনি ১৯৪৩ সালে মন্ত্রীসভা গঠন করেন। এই মন্ত্রীসভাকে আরো ৫ জন হিন্দু নেতা সমর্থন করেন এবং মন্ত্রিত্ব অর্জন করেন।
তারা হলেনঃ
১)তুলসী চরণ গোস্বামী,
২)হাওড়ার কংগ্রেস নেতা বরদা প্রসন্ন পাইন,
৩)উত্তর পাড়ার বিক্ষাত জমিদার তারক নাথ মুখার্জি,
৪)প্রেম হরি বর্মা ও
৫)পুলীন বিহারী মল্লিক।
এছাড়াও এই মন্ত্রীসভার আরো ৬ জন হিন্দু পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি ছিলেন।
তারা হলেন ঃ
১) পাবনার নরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী
২) জে এন গুপ্ত (নেতাজী সুভাষের জীবনী রচয়িতা)
৩) রংপুরের যতীন্দ্র চক্রবর্তী
৪) রায় বাহাদুর অনুকুল চন্দ্র দাস
৫) আসানসোলের বঙ্কু বিহারী মণ্ডল ও
৬) যশোরের রসিকলাল বিশ্বাস
যোগেন্দ্রনাথে যুক্তি ছিল যে, তপশীল জাতির অধিকাংশ মানুষ গরীব। তারা কৃষক ও শ্রমিক। শিক্ষা দীক্ষায় অন গ্রসর। মুসলমানদের অধিকাংশ তাই। এই মন্ত্রীসভা দ্বারা অনগ্রসর মানুষের কল্যাণ সাধিত হবে। উল্লেখ করা দরকার যে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল এই মন্ত্রী সভার সদস্য ছিলেন না। কিন্তু তার এই ভাগীদারী মডেল যেপরবর্তীকালে সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়ণের এক বৃহত্তম নিদর্শন হয়ে উঠবে তা সবর্ণ সমাজের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। তারা বুঝতে পারেন যে এই মডেল কার্যকরী থাকলে সবর্ণ সমাজ তাদের কৌলীন্য হারাবে এবং কোনদিনই ক্ষমতার শীর্ষ পদটি দখল করতে পারবে না।
শ্যামাপ্রসাদ ফজলুল হককে এবং মুসলিম লীগকে সমর্থনের পেছনে ছিল বাংলার জমিদারদের সমর্থন।
তারা ফজলুল হককে সামনে রেখে তাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ রাখতে চেয়েছিলেন। এই সময় সবর্ণ সমাজের জমিদারেরা ছিলেন কংগ্রেস পার্টির প্রত্যক্ষ সমর্থক।
কিন্তু নাজিমুদ্দিন ও পরবর্তী কালে সোহরাবর্দী বাংলার প্রধানমন্ত্রী হলে তাদের সেই প্রচেষ্টা মার খেয়ে যায়। সক্রিয় হয়ে ওঠে হিন্দু মহাসভা ও কট্টর পন্থী মুসলিম লীগ। লীগ ১৯ জুলাই ১৯৪৬ সালে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম প্রস্তাব গ্রহণ করে। ১৬ আগস্ট ১৯৪৬ বিক্ষোভ প্রদর্শনের দিন ধার্য করা হয়। ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টিও মুসলিমলীগকে সমর্থন করে।
এই সময় ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও আইনসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে "সম্মানের সাথে" ক্ষমতার হস্তান্তর বিষয়টি আলোচনা করার জন্য ক্যাবিনেট মিশন ভারতে আসে। দুইটি যুযুধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে শুরু হয় ভাগ বাটোয়ারার হিসেব নিকেশ। ইংরেজরা কংগ্রেসের হাতে ক্ষমতার ভার দিয়ে যাবার প্রস্তাবদিলে জিন্না বেঁকে বসে। ১৯৪৬ সালে দিল্লীতে মুসলিম লীগের সম্মেলনে জিন্না ফজলুল হকের দেখানো পথে পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবী তোলেন। এই সুযোগে কংগ্রেস ভারতের কয়েকটি বিশেষ পরদেশের বিভাগের জন্য দাবী তুলতে শুরু করে। এই বিভাগের প্রশ্নে কংগ্রেস বাংলা ও পাঞ্জাবের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়। করাণ আইন সভারনির্বাচনে এই দুটি প্রদেশ থেকে তারা প্রায় নির্মূল হয়ে যায়।
১৯৪৭ সালের ২০শে জুন বাংলা ভাগের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। এই সভায় কংগ্রেসের হিন্দু সদস্যগণ বাংলা ভাগের পক্ষে কিন্তু মুসলমান সদস্যরা বাংলা ভাগের বিপক্ষে ভোট দেয়। যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের নেতৃত্বে তপশীল জাতি ফেডারেশন বাংলা বিভাগের পূর্নত বিরোধিতা করে। তখন তিনি অন্তর্রর্তী কালীনভারতবর্ষের আইন মন্ত্রী। ১৯৪৭ সালের ২৩শে এপ্রিল হিন্দুস্থান টাইমসে একটি পূর্ণ বয়ান দিয়ে তিনি জানান যে, তপশীল জাতি বাংলা বিভাগের সম্পূর্ণ বিরোধী।
জিন্না কিন্তু বাংলা ভাগের বিরোধী ছিলেন। বড়লাটকে একটি চিঠি দিয়ে তিনি বাংলা ও পাঞ্জাব ঐক্য না ভাঙার কথাই বলেন। তিনি জানান যে, বাংলা ও পাঞ্জাবের একটি সাধারণ চরিত্র আছে, যা এদের কংগ্রেসের সদস্য হওয়ার থেকেও অনেক বেশি। তিনি আরো জানান যে, এরা নিজেরাই ঠিক করুক তারা কোন গ্রুপেথাকবে। ২৬শে এপ্রিল জিন্না মাউন্ট ব্যাটেন কে বলেছিলেন যে, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হবেন যদি বাংলা ঐক্যবদ্ধ ভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হয়।
এই সময় অবিভক্ত বাংলার নেতৃত্ব দেন শরৎচন্দ্র বসু। তিনি তখন বাংলা কংগ্রেসের সভাপতি হলেও কার্যত তার হাতে কোন ক্ষমতা ছিলনা। তার চেষ্টায় ফজলুল হকের নেতৃত্বে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন হয়। কংগ্রেসি চক্রান্তেই তাকে জেলে যেতে হয়। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দেন এবং সার্বভৌমবাংলা গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। শরৎচন্দ্র বসু মহাপ্রাণকে তপশীল জাতির নেতা হিসেবে গ্রহণ করেন।
অমৃতবাজার পত্রিকাও বাংলা ভাগের পক্ষে জনমত গঠন করতে সক্রিয় ছিল। তারা জানায় যে, বাংলার ৯৮.৬ শতাংশ মানুষ দেশভাগ চাইছে, এটা নাকি তারা একটি ওপিনিয়ন পোল করে সংগ্রহ করেছে। পার্টিশান লীগের পক্ষ থেকে পশ্চিম বাংলাকে আলাদা করে তাকে ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করার উপরে ব্যপক প্রচার শুরুহয়। এই বিভাগে এগিয়ে আসে মাড়োয়ারি ব্যবসাদার, বিড়লা,গোয়েঙ্কা, ঈশ্বর দাস জালান। তারা প্রচুর পরিমাণে অর্থ ঢালতে শুরু করে দেশ বিভাগের পক্ষে কারণ এই বিভাগে তারাই সবথকে বেশি লাভবান হবেন। তাদের পয়সা দিয়েই তখন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, বিধান রায়, নলিনী সরকার, এন সি চ্যাটার্জিদের আন্দোলনচলে। ৪ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে, তারকেশ্বরে হিন্দু মহাসভার একটি সম্মেলনে এন সি চ্যাটার্জি বলেন,"বিষয়টা আর দেশভাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বাংলার হিন্দুরা আলাদা প্রদেশ গড়ে শক্তিশালী দিল্লী কেন্দ্রিক জাতীয় সরকারের অধীনে থকাবে। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি একই সুরে বলেন যে, দেশ ভাগই সাম্প্রদায়িক সমস্যার একমাত্রসমাধান।
"১৯৩৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের পরে যখন কংগ্রেস দল বাংলা সহ সকল প্রদেশেই মন্ত্রী সভা গঠনে অস্বীকৃত হইলেন তখন বাংলার দ্বিতীয় সংখ্যা গরিষ্ঠ " কৃষক প্রজা " দলের নেতা মৌলভী এ কে ফজলুল হক তৃতীয় সংখ্যা গরিষ্ঠ লীগ দলের নেতা খাজা স্যার নাজিমুদ্দিনের সহিত কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা গঠন করেন। ইহারএক বছর পরেই মৌলভী এ কে ফজলুল হক লীগ দলে যোগদান করেন এবং বাংলার মন্ত্রীসভা কার্যত লীগ মন্ত্রীসভায় পরিণত হয়। ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া লীগের সাধারণ কনফারেন্সে বাংলার লীগের প্রতিনিধিগ ণ ফজলুল হক সাহেবের নেতৃত্বে পত্রপুষ্পে শোভিত একখানি স্পেসাল ট্রেনে লাহোর গমন করেন।লাহোরের লীগ কাউন্সিল অধিবেশনে পাকিস্তান প্রস্তাব রূপে যে প্রস্তাব গৃহীত হয় সেই প্রস্তাবটি বাংলার ফজলুল হক সাহেবই উত্থাপন করেন। সম্মেলন অন্তে অনুরূপ সজ্জিত স্পেশাল ট্রেনে "শেরে বাঙ্গাল জিন্দাবাদ" ধ্বনি দ্বারা অভি নন্দিত হইয়া হক সাহেব বাংলায় প্রত্যাবর্তন করেন। তখন তিনি বাংলার প্রধান মন্ত্রী। কিন্তুবিস্ময়ের বিষয় এই যে, পাকিস্তান প্রস্তাবের প্রস্তাবক হ ওয়া সত্বেও বাংলাদেশে হক সাহেবের বিরুদ্ধে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা দিল না। তাঁহার মন্ত্রীসভায় যে সব হিন্দু মন্ত্রীগণ ছিলেন - যথা নলিনী রঞ্জন স্রকার, স্যার বিজয় প্রাসাদ সিংহ রায়, কাসিম বাজারের মহারাজা শ্রীশচন্দ্র নন্দী, প্রসন্ন দেব রায়কত এবং মুকুন্দ বিহারীমল্লিক,তাহেদের কেহই পদত্যাগ করিলেন না। কোথা হইতেও কোনরূপ প্রতিবাদ ধ্বনিত হইল না।" আমার দু-চারটি কথা, শ্রী যো গেন্দ্রনাথ মণ্ডল...।
এর পর আমরা জানি যে, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির সহযোগিতায় হক সাহেব দ্বিতীয়বার মন্ত্রীসভা গঠন করেন। কিন্তু বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবে সেই মন্ত্রীসভাও ভেঙে যায়। তপশীল জাতির অধিকংশ এম এল এ দের নিয়ে মহাপ্রান যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল এই অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থন করেন। এই অনাস্থা প্রস্তাবের পর যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলদাবী করেন যে যারা তাদের দাবী মেনে নেবেন তাদেরকেই তাঁরা সমর্থন জানাবেন।
এই দাবীগুলি হল ঃ
১) তপশীল এম এল এ দের মধ্যে ৩ জন মন্ত্রী ও ৩ জন পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি নিযুক্ত করতে হবে।
২) তপশীল জাতির শিক্ষার জন্য প্রতিবছর ৫ ল ক্ষ টাকা বরাদ্দ করতে হবে।
৩) সরকারী চাকরীতে জাতির ভাগিদারী পুরোপুরি মেনে নিতে হবে এবং
৪) উচ্চ পদের সরকারি চাকরিতে তপশীল জাতির প্রার্থী গ্রহণ করতে হবে।
হক সাহেব এই দাবী গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন । নাজিমুদ্দিন দাবীগুলি মেনে নেয়। তপশীল জাতির ২২ জন এম এল এ নাজিমুদ্দিনকে সমর্থন করায় তিনি ১৯৪৩ সালে মন্ত্রীসভা গঠন করেন। এই মন্ত্রীসভাকে আরো ৫ জন হিন্দু নেতা সমর্থন করেন এবং মন্ত্রিত্ব অর্জন করেন।
তারা হলেনঃ
১)তুলসী চরণ গোস্বামী,
২)হাওড়ার কংগ্রেস নেতা বরদা প্রসন্ন পাইন,
৩)উত্তর পাড়ার বিক্ষাত জমিদার তারক নাথ মুখার্জি,
৪)প্রেম হরি বর্মা ও
৫)পুলীন বিহারী মল্লিক।
এছাড়াও এই মন্ত্রীসভার আরো ৬ জন হিন্দু পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি ছিলেন।
তারা হলেন ঃ
১) পাবনার নরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী
২) জে এন গুপ্ত (নেতাজী সুভাষের জীবনী রচয়িতা)
৩) রংপুরের যতীন্দ্র চক্রবর্তী
৪) রায় বাহাদুর অনুকুল চন্দ্র দাস
৫) আসানসোলের বঙ্কু বিহারী মণ্ডল ও
৬) যশোরের রসিকলাল বিশ্বাস
যোগেন্দ্রনাথে যুক্তি ছিল যে, তপশীল জাতির অধিকাংশ মানুষ গরীব। তারা কৃষক ও শ্রমিক। শিক্ষা দীক্ষায় অন গ্রসর। মুসলমানদের অধিকাংশ তাই। এই মন্ত্রীসভা দ্বারা অনগ্রসর মানুষের কল্যাণ সাধিত হবে। উল্লেখ করা দরকার যে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল এই মন্ত্রী সভার সদস্য ছিলেন না। কিন্তু তার এই ভাগীদারী মডেল যেপরবর্তীকালে সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়ণের এক বৃহত্তম নিদর্শন হয়ে উঠবে তা সবর্ণ সমাজের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। তারা বুঝতে পারেন যে এই মডেল কার্যকরী থাকলে সবর্ণ সমাজ তাদের কৌলীন্য হারাবে এবং কোনদিনই ক্ষমতার শীর্ষ পদটি দখল করতে পারবে না।
শ্যামাপ্রসাদ ফজলুল হককে এবং মুসলিম লীগকে সমর্থনের পেছনে ছিল বাংলার জমিদারদের সমর্থন।
তারা ফজলুল হককে সামনে রেখে তাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ রাখতে চেয়েছিলেন। এই সময় সবর্ণ সমাজের জমিদারেরা ছিলেন কংগ্রেস পার্টির প্রত্যক্ষ সমর্থক।
কিন্তু নাজিমুদ্দিন ও পরবর্তী কালে সোহরাবর্দী বাংলার প্রধানমন্ত্রী হলে তাদের সেই প্রচেষ্টা মার খেয়ে যায়। সক্রিয় হয়ে ওঠে হিন্দু মহাসভা ও কট্টর পন্থী মুসলিম লীগ। লীগ ১৯ জুলাই ১৯৪৬ সালে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম প্রস্তাব গ্রহণ করে। ১৬ আগস্ট ১৯৪৬ বিক্ষোভ প্রদর্শনের দিন ধার্য করা হয়। ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টিও মুসলিমলীগকে সমর্থন করে।
এই সময় ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও আইনসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে "সম্মানের সাথে" ক্ষমতার হস্তান্তর বিষয়টি আলোচনা করার জন্য ক্যাবিনেট মিশন ভারতে আসে। দুইটি যুযুধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে শুরু হয় ভাগ বাটোয়ারার হিসেব নিকেশ। ইংরেজরা কংগ্রেসের হাতে ক্ষমতার ভার দিয়ে যাবার প্রস্তাবদিলে জিন্না বেঁকে বসে। ১৯৪৬ সালে দিল্লীতে মুসলিম লীগের সম্মেলনে জিন্না ফজলুল হকের দেখানো পথে পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবী তোলেন। এই সুযোগে কংগ্রেস ভারতের কয়েকটি বিশেষ পরদেশের বিভাগের জন্য দাবী তুলতে শুরু করে। এই বিভাগের প্রশ্নে কংগ্রেস বাংলা ও পাঞ্জাবের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়। করাণ আইন সভারনির্বাচনে এই দুটি প্রদেশ থেকে তারা প্রায় নির্মূল হয়ে যায়।
১৯৪৭ সালের ২০শে জুন বাংলা ভাগের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। এই সভায় কংগ্রেসের হিন্দু সদস্যগণ বাংলা ভাগের পক্ষে কিন্তু মুসলমান সদস্যরা বাংলা ভাগের বিপক্ষে ভোট দেয়। যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের নেতৃত্বে তপশীল জাতি ফেডারেশন বাংলা বিভাগের পূর্নত বিরোধিতা করে। তখন তিনি অন্তর্রর্তী কালীনভারতবর্ষের আইন মন্ত্রী। ১৯৪৭ সালের ২৩শে এপ্রিল হিন্দুস্থান টাইমসে একটি পূর্ণ বয়ান দিয়ে তিনি জানান যে, তপশীল জাতি বাংলা বিভাগের সম্পূর্ণ বিরোধী।
জিন্না কিন্তু বাংলা ভাগের বিরোধী ছিলেন। বড়লাটকে একটি চিঠি দিয়ে তিনি বাংলা ও পাঞ্জাব ঐক্য না ভাঙার কথাই বলেন। তিনি জানান যে, বাংলা ও পাঞ্জাবের একটি সাধারণ চরিত্র আছে, যা এদের কংগ্রেসের সদস্য হওয়ার থেকেও অনেক বেশি। তিনি আরো জানান যে, এরা নিজেরাই ঠিক করুক তারা কোন গ্রুপেথাকবে। ২৬শে এপ্রিল জিন্না মাউন্ট ব্যাটেন কে বলেছিলেন যে, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হবেন যদি বাংলা ঐক্যবদ্ধ ভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হয়।
এই সময় অবিভক্ত বাংলার নেতৃত্ব দেন শরৎচন্দ্র বসু। তিনি তখন বাংলা কংগ্রেসের সভাপতি হলেও কার্যত তার হাতে কোন ক্ষমতা ছিলনা। তার চেষ্টায় ফজলুল হকের নেতৃত্বে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন হয়। কংগ্রেসি চক্রান্তেই তাকে জেলে যেতে হয়। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দেন এবং সার্বভৌমবাংলা গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। শরৎচন্দ্র বসু মহাপ্রাণকে তপশীল জাতির নেতা হিসেবে গ্রহণ করেন।
অমৃতবাজার পত্রিকাও বাংলা ভাগের পক্ষে জনমত গঠন করতে সক্রিয় ছিল। তারা জানায় যে, বাংলার ৯৮.৬ শতাংশ মানুষ দেশভাগ চাইছে, এটা নাকি তারা একটি ওপিনিয়ন পোল করে সংগ্রহ করেছে। পার্টিশান লীগের পক্ষ থেকে পশ্চিম বাংলাকে আলাদা করে তাকে ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করার উপরে ব্যপক প্রচার শুরুহয়। এই বিভাগে এগিয়ে আসে মাড়োয়ারি ব্যবসাদার, বিড়লা,গোয়েঙ্কা, ঈশ্বর দাস জালান। তারা প্রচুর পরিমাণে অর্থ ঢালতে শুরু করে দেশ বিভাগের পক্ষে কারণ এই বিভাগে তারাই সবথকে বেশি লাভবান হবেন। তাদের পয়সা দিয়েই তখন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, বিধান রায়, নলিনী সরকার, এন সি চ্যাটার্জিদের আন্দোলনচলে। ৪ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে, তারকেশ্বরে হিন্দু মহাসভার একটি সম্মেলনে এন সি চ্যাটার্জি বলেন,"বিষয়টা আর দেশভাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বাংলার হিন্দুরা আলাদা প্রদেশ গড়ে শক্তিশালী দিল্লী কেন্দ্রিক জাতীয় সরকারের অধীনে থকাবে। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি একই সুরে বলেন যে, দেশ ভাগই সাম্প্রদায়িক সমস্যার একমাত্রসমাধান।