আজ প্রীতিলতার ৮২তম প্রয়াণ দিবস। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ 'প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার'।
১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৮২তম আত্মাহুতি দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের পটিয়ার ধলঘাট নিজ গ্রামে বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাস্টসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁর আবক্ষমূর্তিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করার কার্যক্রম চলছে। এছাড়া তার আত্মত্যাগের কথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বোঝাতে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রীতিলতা নামে নাটকের মহড়া অনুষ্ঠিত হবে।
মাস্টারদা সূর্য সেনের নির্দেশ পেয়ে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে কয়েকজন বিপ্লবীকে সঙ্গে নিয়ে প্রীতিলতা চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে ইংরেজদের ওপর আক্রমণ করেন। অভিযান শেষে গুলিবিদ্ধ হলে ইংরেজদের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কায় তিনি নিজের পকেটে থাকা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহনন করেন।
কিন্তু অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছেন বিস্মৃতির অতলে। প্রীতিলতার জন্মস্থান পটিয়ায় তার স্মরণে হওয়ার কথা প্রীতিলতা কমপ্লেক্স। গত বছরের ৯ জানুয়ারি পটিয়ায় এসে এই কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার সেই প্রকল্প। আবার চলতি বছরের ৫ মে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এসে বীরকন্যার সম্মানে প্রীতিলতা সাংস্কৃতিক ভবন, বিদ্যালয়, স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এতে ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়। ৫ মাস পার হলেও নির্মাণকাজই শুরু হয়নি। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর সেই ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রীতিলতার স্মরণে এক লাখ টাকা অনুদানের একটি চেক দিয়েছিলেন মুক্তবাণী পত্রিকার প্রকাশক ববিতা বড়ূয়া। কিন্তু পরে ডিজঅনার হয় সে চেকটিও!
প্রীতিলতা ট্রাস্টের সভাপতি পঙ্কজ চক্রবর্ত্তী সংবাদমাধ্যমে বলেন, প্রীতিলতার স্মরণে যে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়, তা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। তাছাড়া সরকারিভাবে এ পর্যন্ত তেমন কোনো অনুদান পাইনি।
বীরকন্যা প্রীতিলতার ৮২তম আত্মাহুতি দিবস উপলক্ষে পটিয়া গৌরব সংসদ ও প্রীতিলতা ট্রাস্টের উদ্যোগে সকাল ৮টায় ধলঘাটে বীরকন্যার আবক্ষমূর্তিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, আলোচনা সভা, বীরকন্যা প্রীতিলতা নাটকের শুভ মহরত, দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন প্রীতিলতা ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক অরুণ বিকাশ চৌধুরী।
চবির প্রীতিলতা হলে ভূরিভোজ প্রসঙ্গে প্রভোস্ট ড. মাহবুবুল হক বলেন, প্রীতিলতাকে স্মরণ করে আত্মাহুতি দিবসে কোনো আলোচনা অনুষ্ঠান রাখা হয়নি। কারণ বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ঈদ ও পূজা উপলক্ষে বাড়িতে চলে গেছে।
কলকাতার বেথুন কলেজে বিএ পরীক্ষা শেষে প্রীতিলতা স্থায়ীভাবে চলে আসেন চট্টগ্রামে। এখানে তিনি নন্দকানন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে (বর্তমান অপর্ণা চরণ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ) প্রধান শিক্ষক হিসেব যোগ দেন। সংগ্রামের মাঝেও স্থানীয় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন করে গেছেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার অথচ আজ তার ইতিহাস ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতলে।
- See more at: http://news.zoombangla.com/bangladesh/2014-09-24-07-17-39-1-21557#sthash.3HpkcCXl.dpuf