মুক্তবাজার এই উপমহাদেশে নারী শিকার শিশু শিকারের ধর্ষণ ষাঁড় সংস্কৃতিই শাসনের চাবিকাঠি, মুনাফার আরবপতি মালামাল লটারি।
পলাশ বিশ্বাস
মুক্তবাজার এই উপমহাদেশে নারী শিকার শিশু শিকারের ধর্ষণ ষাঁড় সংস্কৃতিই শাসনের চাবিকাঠি,মুনাফার আরবপতি মালামাল লটারি।
নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে অবাধে।প্রাচীনকালে জীবিত মানুষকে শৃঙ্খলিত দাসে পরিণত করা হতো। দাসত্বের সেই শৃঙ্খল আমাদের দেশের নারী ও শিশুদের স্কন্ধে আমরা চাপিয়ে দিয়েছি নিজেরাই। যার ফলে মুক্তির আশায় তারা বন্দি হয়ে পড়ছে দাসত্বে। এই উপমহাদেশ থেকে নারী ও শিশু পাচারের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট প্রচণ্ড প্রভাবশালী। এরা এতই প্রভাবশালী যে, বিএসএফ,র্যাব বা পুলিশ এদের টিকিও স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখে না।
রুজি রোজগার হীন বাঙালিক ভূগোলে রাজনৈতিক সীমান্ত ডিঙিয়ে নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে অবাধে।দেহ ব্যবসা,যৌণকর্ম বলা যায় সরাসরি এবং বন্ধুয়া শিশুশ্রমে এপার বাংলা ওপার বাংলার রাজনৈতিক সংরক্ষণে আন্তরজাতিক সীমা এখন কার্যতঃ দেহ মন্ডী,জ্যান্ত মাংসের প্রবাহমান দরিয়া।বিগত কয়েক দশকে সমগ্র বিশ্বজুড়ে নারী ও শিশু পাচারের মাত্রা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ নারী ও শিশু পাচারের একটি উত্স এবং ট্রানজিট রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত৷ প্রতিদিন এদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশু বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে অথবা বিমান যোগে পাচার হয়ে যাচ্ছে৷ পাচারকৃত নারী ও শিশুদের নিয়োগ করা হচ্ছে পতিতালয়ে বা অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং শ্রমঘন অমানবিক কর্মক্ষেত্রে,যা আধৌ পৃথীবীর কোনো দেশে শ্রম আইন,নাগরিক ও মানবাধিকারের আওতায় পড়ে না।ভারত বা বাংলাদেশে ত প্রশ্নই উঠছে না।
সীমান্ত এলাকাগুলিতে সীমান্তরক্ষীদের নজরদারিতে,রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মানব তস্করি এখন কার্যতঃ কুটির শিল্প এবং এই ব্যবসায় যুক্ত যারা সেই গরুচোরের দল ধরা ছোঁযার বাইরে বসবাসকারি রাঘব বোয়াল।
না ভারতবর্ষের হিন্দু বাদী সরকার না বাংলাদেশের কার্যতঃ ইসলামি শাসণতন্ত্রে পণ্য হয়ে যাওয়া নারী ও শিশুর প্রতি কোনো দরদের সবুত পাওয়া যাচ্ছে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে,পুরুষতান্ত্রিক আধিপাত্যের ফাঁকা বুলির রঙিন চাঁদমারিতে।
সংঘবদ্ধ পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হয়ে প্রতিদিন ভারতের বোম্বেসহ মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হচ্ছে হাজার হাজার নারী, শিশু ও বালক। মানব পাচারের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে স্থলবন্দর বেনাপোল। ২০১৪ সালে সাড়ে ৮ মাসে বেনাপোল সীমান্তে ভারতে পাচারকালে ৮৭৮ জন নারী, শিশু ও পুরুষকে উদ্ধার করেছে বিজিবি।
উল্লেখ্য, এই উপদেশের যে সব নারী শ্রমিক শ্রম বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের জন্য দেশের মাটি ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন তাদের উপর যে অমানবিক নির্যাতন চলছে তার খবর ভারত বাংলাদেশ সরকার রাখছে না।অসৎ প্রশাসনের সদস্যদের যোগসাজশে সময় ও সুযোগ বুঝে জল ও স্থলপথে সীমান্তের চোরাগলি দিয়ে পাচার করা হচ্ছে মানব নামের নারী-শিশু। বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়েও বৈধ ও জাল পাসপোর্টে পাচারকরা হচ্ছে নারী, পুরুষ ও শিশু। সংঘবদ্ধ দালালচক্রসহ প্রশাসনের সদস্যরা লুটছেন মোটা অঙ্কের অর্থ। দেশের মানব সম্পাদ পাচার হওয়ায় দেশের অবক্ষয়সহ পরিবেশ ও সংসারে অশান্তি বাড়ছে। এ যেন দেখার কেউ নেই। রাজনৈতিক আশ্রয়েসহ আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে পাচারের সঙ্গে সড়িত রাঘব বোয়ালরা।
বাংলাদেশ মহিলা অভিবাসী নারী শ্রমিক সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ভয়াবহ নির্যাতনের কবল থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশী নারী শ্রমিকরা বিদেশে স্বেচ্ছায় কারাবরণের পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ পর্যন্ত স্বেচ্ছায় কারাবরণকারী বাংলাদেশী নারী শ্রমিকের সংখ্যা শত শত। স্বেচ্ছা কারাবরণ ছাড়াও নির্যাতন সহ্য করতে না পারায় প্রতিবছর হাজার হাজার নারী শ্রমিক শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাংলাদেশেই সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থার কাছে বিদেশে কর্মরত নারী শ্রমিকদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ জমা পড়ছে গড়ে ৪ হাজার। প্রবাসে নারী শ্রমিকদের উপর নির্যাতনের খবর অহরহই পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিনই বুড়ো গৃহকর্তার এমনকি তার ছেলেদের একান্তবাসের লালসার শিকার হয়ে অনেকে সন্তানসম্ভাবাও হয়ে পড়ছেন।
খবরে প্রকাশ, অনেকেই শিকার হচ্ছে বিকৃত ও নির্মম একান্তবাসের। কিন্তু চাকরি ও মানসম্মানের ভয়ে তা বাইরে প্রকাশ করছেন না। নীরবে মুখ বুঁজে সব নিপীড়ন সহ্য করে যাচ্ছেন। অনেক নারী শ্রমিক দেশে ফিরেছে গর্ভে অবৈধ সন্তান নিয়ে। এরকম ঘটনা আজকাল হরদম ঘটছে।
বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশী নারী শ্রমিকরা সম্ভ্রম লুণ্ঠনের শিকার হয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি কিন্তু এর কোনো প্রতিকার পায় না তারা।
প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন শ্রমিক সংগঠনগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের জর্ডানে বাংলাদেশী নারী শ্রমিকরা সবচয়ে বেশ নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার। এ তালিকায় পরের স্থানে রয়েছে লেবানন ও দুবাই। অন্য দেশগুলোতেও নির্যাতিত হচ্ছে নারী শ্রমিকরা।
বাংলাদেশে ঘরে ফেরা নারী শ্রমিকরা জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের উপর নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বাড়ছেই। শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনা, নির্যাতন চলে তাদের উপর। কর্মীর সঙ্গে নিয়োগকর্তারা ক্রীতদাসের মতো আচরণ করে।
বাংলাদেশে নির্যাতনের শিকার হয়ে ও সম্ভ্রম হারিয়ে ভারত থেকে দেশে ফেরে অধিকাংশ নারী। ভারতে যেয়ে অনেক নারী রয়েছে নিখোঁজ। অনেক পরিবারের সদস্যদের চাপা কান্না যেন থামার নয়।
ভারতের মহানাগরিক সংস্কৃতিতে দেহদাসী ভোগে শাসক শ্রেণির এই নারকীয় উল্লাস নিযে উচ্চ বাটচ্য নেই কিন্তু ভদ্র সমাজে।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ে বাংলাদেশী নারী কর্মীদের দেহব্যবসায় বাধ্য করছে একটি চক্র। ওই চক্রটি ভালো কাজ দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে নারী কর্মীদের দুবাই পাঠায়। তারপর নির্যাতন করে ওই নারীদের অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করে।
উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রবাসে বাংলাদেশে নারী শ্রমিক ও গৃহকর্মীরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। তারা ঠিকমতো খাবার পান না, ক্ষুধার্ত থাকেন অধিকাংশ সময়। দিনের পর দিন কাজ করেন, কিন্তু নিয়মিত বেতন-ভাতা তারা পান না। এমনকি নিত্যদিন সম্ভ্রম লুণ্ঠনের শিকার হন।
বাংলাদেশি জনপ্রিয় সংবাদপত্র যুগান্তরে প্রকাশিত তথ্য রোমহর্ষকদেশ থেকে নারী ও শিশু পাচারের ঘটনা কমছে না। এর অন্যতম কারণ নারী ও শিশু পাচারের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার কিংবা বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিদানে ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতার কারণে নারী ও শিশু পাচার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ পুলিশের এক হিসাব মতে, প্রতিবছর প্রায় ১০ হাজার নারী ও শিশু পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। আর এ কাজে জড়িত রয়েছে প্রভাবশালী চক্র দেশে ও দেশের বাইরের।
যে কোনো দেশ ও সমাজের কাছে সবচেয়ে যত্ন ও মনোযোগের দাবিদার যারা, সেই নারী ও শিশুদের অবস্থা আমাদের দেশে সবচেয়ে করুণ, এটা দুর্ভাগ্যজনক।
তারাই সবচেয়ে বেশি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য এবং সহিংসতার শিকার। এর কারণ সামাজিক পশ্চাৎপদতা তথা সাংস্কৃতিক বিপর্যয়।
দেশে যে কোনো দৈব-দুর্বিপাক কিংবা দুর্ঘটনার প্রথম ও প্রধান শিকার হয় নারী ও শিশুরা।
যেখানে সর্বোচ্চ যত্ন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন নারী ও শিশুদের, সেখানে আমাদের সমাজে তাদের জন্যই সঞ্চিত সবচেয়ে বেশি বঞ্চনা।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাব থেকে জানা যায়, দেশের শহরাঞ্চলের ৫৩ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৬২ শতাংশ নারী পরিবারে তাদের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন দ্বারা শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৪৩ শতাংশ নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার। এর ভেতর ১২ শতাংশ যৌতুক বিষয়ক নির্যাতনের শিকার।
নারীদের ওপর সংঘটিত সামাজিক নিষ্ঠুরতার এ চিত্র উদ্বেগজনক।
এ থেকে মুক্তির চেষ্টায় যেসব নারী পরিচিত গণ্ডির বাইরে পা রাখে, তারা প্রায়ই সহজ শিকার হয়ে পড়ে পাচারকারী চক্রের।
পাচারকারীরা নির্যাতনমুক্ত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের ঠেলে দেয় আরেক অন্ধকার জগতে। এভাবেই বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া নারীদের স্থান হচ্ছে ভারত, পাকিস্তান, ওমান, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পতিতালয়ে।
আর শিশুরা ব্যবহৃত হচ্ছে উটের জকি হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। এসব শিশু পরবর্তী জীবনে আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। একই নিয়তির করুণ শিকার হয় পাচার হয়ে যাওয়া নারীরা।
মঙ্গলবার যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। প্রভাবশালী এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে নতুন নতুন চক্র যোগ হচ্ছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি শক্তিশালী চক্র এ নারী ও শিশু পাচার কাজে সহযোগিতা করছে বলে জানা যায়। আমরা দেশ থেকে নারী ও শিশু পাচারের এ শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মূলোৎপাটন চাই। একই সঙ্গে দেশে পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে সবার সচেতনতাও প্রত্যাশা করি। -