হাইকোর্টের ফর্মূলা বনাম আমার প্রস্তাবিত মডেলঃ নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনোত্তর উভয় সরকারই গণতান্ত্রিক ও নিরপেক্ষমুখী হতে হবে
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদ নির্বাচিত হওয়া বিষয়ক হাইকোর্টের চুড়ান্ত রায়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে "নির্বাচনকালীন সরকার"বিষয়ে দুইটি ফর্মূলা দেয়া হয়েছে। সমস্যার মূলে নিবার্হী প্রধানমন্ত্রীসহ দলীয় এককক্ষ সংসদ ভিত্তিক সরকারব্যবস্থা এবং চার দশকের প্রতিহিংসার রাজনীতির ধারা। সংবিধান সংশোধন ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নিবার্হী ক্ষমতা কোনভাবে হস্তান্তরযোগ্য নয়। তাই চলমান সংবিধানের অধীনে কোন ফরমূলায় নির্বাচনকালীন "নিরপেক্ষমুখী সরকার"গঠনের সুযোগ নেই।
আপীল/সুপ্রিমকোর্ট নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীতা বাতিল করেনি। সংবিধানের ৭নং বিধানের সাথে অসঙ্গতি হওয়ায় ১৩শ সংশোধনীর মডেলটা বাতিল করেছে। চুড়ান্ত রায়ে প্রয়োজনে ৭নং বিধানের সাথে সামঞ্জসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রনয়ণের পরামর্শও রয়েছে। ৭নং বিধানের সামঞ্জসে মডেলসহ চুড়ান্ত রায়ের দিকনিদের্শনা ও পরামর্শগুলো আমার প্রতিবেদনে রয়েছে। আমার প্রতিবেদনটি রেফারেন্সে না এনে নিজের ভাষায় যুক্তি ও ব্যাখ্যা দিয়ে একই রায় ও পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
চুড়ান্ত রায়ে আমার মডেলটি উপর পর্যাবেক্ষণ থাকলে সকল মহল জ্ঞাত হতো এবং সহজেই গ্রহণীয় হতো। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেত্রীরও তা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না্। জাতির ৪৩ বছরের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংকটর স্থায়ী সমাধানের জন্যে ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা বিভাগ, দুইকক্ষ সংসদব্যবস্থা এবং দ্বিতীয়কক্ষ ভিত্তিক অন্তর্বর্তীকালীণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করা ছাড়া সহজ বিকল্প নেই। ৭নং বিধানের সাথে সামঞ্জসে নিরপেক্ষমুখী নির্বাচনকালীন সরকারের জন্যে সংবিধান সংশোধন করতেই হবে।
৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনকে ঘিরে অজান্তেই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দাবী-অভিমত ক্রমশঃ আমার প্রস্তাবিত নিরপেক্ষমুখী নির্বাচনকালীন সরকারের দিকে ঐক্যমুখী হয়েছিল। আমার প্রস্তাবিত মডেলটি হলো, দুইকক্ষ সংসদব্যবস্থা এবং দ্বিতীয়কক্ষ ভিত্তিক অন্তর্বর্তীকালীণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। প্রথমকক্ষের নির্বাচনকালে ভারতের সংসদীয় সরকারব্যবস্থার মতো রাষ্ট্রপতির উপর নির্বাহী কর্তৃত্ব ন্যস্ত থাকবে এবং নির্দলীয় প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপরিচালনা রাষ্ট্রপতির জন্যে বাধ্যতামূলক থাকবে।
এখন দুইকক্ষ সংসদব্যবস্থা ও অন্তর্বর্তীকালীন সংসদীয় সরকারব্যবস্থার বিধানাবলী প্রনয়ণ করতে হবে। অতঃপর প্রথমে (২০১৫) দ্বিতীয়কক্ষের নির্বাচন ও গঠন করতে হবে। এ নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হবে না। দুইবছর পর (২০১৭) অন্তর্বর্তীকালীন সংসদীয় সরকারব্যবস্থার অধীনে প্রথমকক্ষের (সরকার গঠনের সংসদ) নির্বাচন করতে হবে। তাহলে ১০ম সংসদের ধারাবাহিকতাসহ নির্বাচিত সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের ধারা হবে। তাহলে সকল মহলের জয়-জয় ব্যবস্থার সমন্বয় হবে।
প্রথমকক্ষের নির্বাচনকালে দ্বিতীয়কক্ষের সরকারী ও বিরোধী দলসমূহ থেকে ৫ জন করে এবং ৫ জন প্রজ্ঞাবান নির্দলীয় নাগরিক নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। ৫ জন প্রজ্ঞাবান নির্দলীয় নাগরিক থেকে ঐক্যমত্যে বা লটারীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি প্রধানউপদেষ্টা নিয়োগ দিবেন। প্রধানউপদেষ্টাসহ ৫ জন প্রজ্ঞাবান নির্দলীয় নাগরিক ছাড়া নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ ও কার্যকরী হবে না। "তিনমাসের"নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষমুখী হবে, আর "পাঁচ বছরের"নির্বাচনোত্তর সরকার অনিরপেক্ষমুখী হওয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আমাদেরকে একইসাথে নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনোত্তর নিরপেক্ষমুখী সরকারের কথা ভাবতে হবে।