আমরা কি পারি না, বাংলাদেশের নদীগুলো দূষণ থেকে বাঁচাতে ?
নয়ন চ্যাটার্জি
বাংলাদেশের অধিকাংশ নদ-নদী, পুকুর ও জলাশয় দূষণে আক্রান্ত, সেই দূষণ এতটাই মারাত্মক যে, ঐ পানি খাবার হিসেবে ব্যবহার করা তো দূরের কথা, স্নান পর্যন্ত করা সম্ভব নয়। দূষিত এ জলাশয়গুলোর জল ব্যবহারে বিভিন্ন প্রাণঘাতি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবা বহুলাংশে বেড়ে যায়।
নদীদূষণের নানা ধরনের কারণ নিয়েই আমি প্রায়শই আলাপ-আলোচনা দেখি, কিন্তু কিছু কিছু আলোচনা নানান ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দয়ে এড়িয়ে যায় মানুষ। কিন্তু সেই দূষণ কিন্তু ছোট-খাট নয়, বরং অনেক বড়। অনেকদেশই এখন বিষয়গুলো নিয়ে সরব, শুধু বাংলাদেশ বাদে।
সত্যিই কথা বলতে, বাংলাদেশের নদীগুলো দূষণের যতগুলো মূল কারণ আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দূর্গা পূজার সময় প্রতিমা বিসর্জন। বিষয়টি নিয়ে হয়ত অনেকেই মাধা ঘামান না, ভাবেন বছর একদিন একটি ছোট মূর্তি ভাসালে আর এমন কি দূষণ হবে ? আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, বিষয়টি আপনি যত ছোট মনে করছেন, আপনার পাশের দেশ হিন্দু নেতৃত্বাধীন ভারত কিন্তু তত ছোট মনে করেনি। গত কিছুদিন আগে তাদের খোদ কোর্ট থেকে আদেশ দিয়ে অনেক নদীতে প্রতিমা বিসর্জন নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। এই তো দু'সপ্তাহ আগেই গঙ্গা-যমুনায় প্রতিমা নিষিদ্ধ করেছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। জল দূষণ রুখতেই গঙ্গা ও যমুনা নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, আদালতের এই নির্দেশের ফলে আসন্ন গণেশ চতুর্থী ও দুর্গা পুজায় আর গঙ্গা ও যমুনা নদীতে কোনো প্রতিমা ডুবানো যাবে না। (http://goo.gl/tsv4cQ,http://goo.gl/LKmnrx)
এ সম্পর্কে কিন্তু ভারতের জিনিউজ অনেক আগেই পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা নিয়ে রিপোর্টে করেছিলো। রিপোর্টে বলা হয়: "ভয়াবহ আকার নিচ্ছে গঙ্গা দূষণ। ভারতের পবিত্রতম নদী গঙ্গার দূষণ বিপদমাত্রা ছুঁয়েছে অনেক আগেই। ফি বছর দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জনের পর তা আরও ভয়াবহ আকার নেয়। ক্রমেই কমছে নদীর নাব্যতা। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গীন, যে অবিলম্বে কোনও ব্যবস্থা না নিলে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে ফেরি ও জাহাজ পরিষেবা বন্ধ হতে পারে । এমনই আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। " (http://goo.gl/vsRieA)
পরিবেশবাদীদের দৃষ্টিতে জলে মূর্তি বিসর্জন কেন ক্ষতিকর:
ভারতীয় পরিবেশবাদীরা অভিযোগ করে বলছে, মূর্তির গায়ে সিসাযুক্ত রং এবং ক্যাডমিয়ম ও অন্যান্য জৈব যৌগ জলকে সারা বছর দূষিত করছে। সেই সঙ্গে মূর্তির মাটি, বাঁশ, ফুল, বেলপাতা, মালা বা শোলার যাবতীয় অলঙ্কার ভরাট করে তুলছে নদীর তলদেশ। বিসর্জনের পর মূর্তির গায়ে থাকা সিসা ও ক্যাডমিয়াম গঙ্গাতে মিশে মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢোকে। স্নানে ও পানে সিসা নিয়মিত শরীরে ঢুকলে মানুষের বুদ্ধি কমে, স্মৃতি হ্রাস পায়, রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হয়, কোষ্ঠকাঠিন্যও দেখা দেয়। কলকাতার মানুষের শরীরে নানাভাবেই নিয়মিত সিসা ঢুকছে। ক্যাডমিয়াম এর কারণে দুরারোগ্য ব্যাধি হয় বৃক্কে, যকৃতে ও অস্থিমজ্জায়। মূর্তি বিসর্জন, আবর্জনা, নোংরা ও বর্জ্য নিক্ষেপের কারণে নদী হারাচ্ছে তার স্বচ্ছতাও। শুধু মূর্তি বিসর্জন নয়, হিন্দুঘরে প্রতিদিন দেবতার পুজো হয়। পূজার উপচার ফুল, বেলপাতা, তুলসীপাতা,ধূপকাঠি, টিকে। একদিনের পূজার পর এগুলো বর্জ্য পদার্থ। প্রতিদিন আসবে টাটকা ফুল,পাতা, পরদিন তা আবার বাসী হবে। যেখানে সেখানে ফেলা চলবে না, পাপ হবে, ফেলতে হবে জলে। সেই সুবাদে আসে কাগজের ঠোঙার কাগজ, প্লাস্টিকের ঠোঙার প্লাস্টিক, ধূপকাঠির পোড়াশেষে ধূপ না থাকা কাঠিটুকু, টিকের ছাই – নদীখাতের জলধারণক্ষমতা কমাতে, দূষক পদার্থের গাঢ়ত্ব বাড়াতে যাদের জুড়ি নেই। (এ সম্পর্কে 'হিন্দু সংস্কৃতি ও গঙ্গা দূষণ'নামক সিদ্ধার্থ শঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের দুটি বিজ্ঞাননির্ভর লেখা আছে। লেখা দুটো পড়তে পারেন:http://goo.gl/9CA1xs ,http://goo.gl/gGeRbV )
ভারতীয় পরিবেশবাদীরা অভিযোগ করে বলছে, মূর্তির গায়ে সিসাযুক্ত রং এবং ক্যাডমিয়ম ও অন্যান্য জৈব যৌগ জলকে সারা বছর দূষিত করছে। সেই সঙ্গে মূর্তির মাটি, বাঁশ, ফুল, বেলপাতা, মালা বা শোলার যাবতীয় অলঙ্কার ভরাট করে তুলছে নদীর তলদেশ। বিসর্জনের পর মূর্তির গায়ে থাকা সিসা ও ক্যাডমিয়াম গঙ্গাতে মিশে মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢোকে। স্নানে ও পানে সিসা নিয়মিত শরীরে ঢুকলে মানুষের বুদ্ধি কমে, স্মৃতি হ্রাস পায়, রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হয়, কোষ্ঠকাঠিন্যও দেখা দেয়। কলকাতার মানুষের শরীরে নানাভাবেই নিয়মিত সিসা ঢুকছে। ক্যাডমিয়াম এর কারণে দুরারোগ্য ব্যাধি হয় বৃক্কে, যকৃতে ও অস্থিমজ্জায়। মূর্তি বিসর্জন, আবর্জনা, নোংরা ও বর্জ্য নিক্ষেপের কারণে নদী হারাচ্ছে তার স্বচ্ছতাও। শুধু মূর্তি বিসর্জন নয়, হিন্দুঘরে প্রতিদিন দেবতার পুজো হয়। পূজার উপচার ফুল, বেলপাতা, তুলসীপাতা,ধূপকাঠি, টিকে। একদিনের পূজার পর এগুলো বর্জ্য পদার্থ। প্রতিদিন আসবে টাটকা ফুল,পাতা, পরদিন তা আবার বাসী হবে। যেখানে সেখানে ফেলা চলবে না, পাপ হবে, ফেলতে হবে জলে। সেই সুবাদে আসে কাগজের ঠোঙার কাগজ, প্লাস্টিকের ঠোঙার প্লাস্টিক, ধূপকাঠির পোড়াশেষে ধূপ না থাকা কাঠিটুকু, টিকের ছাই – নদীখাতের জলধারণক্ষমতা কমাতে, দূষক পদার্থের গাঢ়ত্ব বাড়াতে যাদের জুড়ি নেই। (এ সম্পর্কে 'হিন্দু সংস্কৃতি ও গঙ্গা দূষণ'নামক সিদ্ধার্থ শঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের দুটি বিজ্ঞাননির্ভর লেখা আছে। লেখা দুটো পড়তে পারেন:http://goo.gl/9CA1xs ,http://goo.gl/gGeRbV )
দেখা যাচ্ছে, ভারতের জনগণ এখন মূর্তি বিসর্জনের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে অনেকটাই সবর, অথচ বাংলাদেশে (যেখানে বছরে লক্ষ লক্ষ প্রতিমা বিসর্জন হয়) বিষয়টি নিয়ে কেউ সরব নয়। কিন্তু বাংলাদেশের নদীগুলোর অবস্থা তো আরো করুন, নদীতে স্রোত ও জল নেই বললেই চলে। সেখানে যদি ফি প্রতিমা বিসর্জন চলতে থাকে, তবে অদূর ভবিষ্যতে নদীর পানি বলে কিছু থাকবে না, হবে বিষের ডিপো, ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে মহামারী, প্র্রাণ হারাবে বহু মানুষ।
তাই আমার মনে হয়, আসছে দূর্গা পূজায় প্রতিমা বিসর্জন নিয়ে বাংলাদেশের জনগণ ও পরিবেশবাদীদের সরব হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে নদীতে নয় দূষণ এড়াতে প্রতিমাগুলো সযত্নে মাটিতে পুতে ফেলা যেতে পারে। এতে একদিকে বাংলাদেশের নদীগুলো যেমন বড় ধরনের দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে হিন্দুধর্মের মহত্ত্বও জনগণের সামনে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, ধর্মের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য ধর্ম। তাই সময় থাকতেই পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হওন।
Pl see my blogs;
Feel free -- and I request you -- to forward this newsletter to your lists and friends!