আওয়ামী লীগের দ্বৈততার সংকট
"... আওয়ামী লীগ তার জন্মলগ্ন থেকেই দ্বৈধতার সংকটে ভুগছে। জন্মলাভের সময়ে সরকারী মুসলিম লীগের অপশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের তথা আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। কিন্তু ভোট ব্যাংককে পকেটে ভরার জন্য এক সময়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটি ছেঁটে ফেলা হয়। নতুন চেহারা ধারণ করার নামে দলটির নতুন নাম 'আওয়ামী লীগ' সাব্যস্ত হয়। নামে কী বা আসে যায়। গোলাপকে যে নামেই ডাকো, গোলাপ গোলাপই। আওয়ামী মুসলিম লীগ আওয়ামী লীগ নামে নিজেকে যতই সেক্যুলার হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করুক না কেন, সংগঠনটি যে মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালী মুসলমানের অর্থবিত্ত ও বৈভব অর্জনের একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে, একথা অস্বীকার করা ইতিহাসকেই অস্বীকার করা।
মুসলমানদের আওয়ামী লীগ যতই হিন্দুদের আস্থা অর্জনের জন্য নানা কসরত করেছে, ততই লক্ষ্য করার বিষয়, তারা অধিক পরিমাণে যত্নবান হওয়ার চেষ্টা করেছে নিজেদের খাঁটি মুসলমান হিসেবে জাহির করার। আর এ জন্যই বহু আওয়ামী নেতা-কর্মীকে দেশী কোট তথা মুজিব কোট পরিধানের পাশাপাশি টুপি পরতে এবং মুখে দাড়ি রাখতে দেখা যায়। অনেককে নামাজ-রোজার প্রতিযোগিতায়ও নেমে পড়তে দেখা যায়। হজ করার বিষয়েও এরা পিছিয়ে নেই। নামের আগে বাহারী ঢঙে 'আলহাজ' এবং 'হাজী' শব্দদ্বয় এরা বেশ ঢাকঢোল পিটিয়েই ব্যবহার করে থাকেন।
তবে, কালের আবর্তে হিন্দু ভোটের তোয়াজ করতে গিয়ে এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের প্রতি আনুগত্য দেখাতে গিয়ে সেক্যুলারিজমের সমর্থক সাজার নামে ধর্ম নিয়ে আওয়ামী লীগের বাড়াবাড়ি এদেশের সরলপ্রাণ মানুষের ধর্মানুভূতিতে যেভাবে আঘাত করেছে তাতে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক ধারণা জন্মেছে যে, আওয়ামী লীগ ধর্মহীনতায় বিশ্বাসী এবং ইসলামের বিরুদ্ধ শক্তি। অথচ এই আওয়ামী লীগ, যার নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালে অখন্ড পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে জনগণের কাছে ওয়াদা করেছিলেন যে, ক্ষমতায় গেলে তিনি ও তার দল কোরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী কোন আইন প্রণয়ন করবেন না। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যুদযের পরপরই ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোই আওয়ামী লীগের অন্যতম কাজে পরিণত হল।
... আওযামী লীগের জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দেয়া, মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা, একদলীয় শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা, লুটপাট ও দূর্নীতির লীলাভূমিতে দেশকে পরিণত করা, সর্বোপরি, অনাহার ও দুর্ভিক্ষের কবলে দেশকে নিক্ষেপ করা - এসকল গণবিরোধী, জাতিবিরোধী কর্মকান্ড মানুষের চরম ঘৃণা ও ধিক্কারের উদ্রেক করে। আগেই বলেছি, আওয়ামী লীগ জন্মের পর থেকেই দ্বৈধতার সংকটে ভুগছে। পুঁজিবাদে বিশ্বাসী হয়েও সমাজতন্ত্রের বুলি তাদের কপ্চাতে হয়েছে। ধর্মবিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরেও ধর্মহীনতার প্রচার ও প্রসারকে উৎসাহিত করতে গভীর আগ্রহ দেখাতে হচ্ছে। এতে কাদের লাভ, আজ তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
... আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দেশের বৃহত্তম বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিকেও অনেক সময়ই আত্মরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণ করতে দেখা যায়। ব্রাহ্মণ্যবাদ ও ভারতীয়দের তুষ্ট করার জন্য বিএনপিকেও অনেক সময় বলতে শোনা যায়, আমরা মৌলবাদী নই। অথচ আওয়ামী লীগ যাদের মৌলবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে, বিএনপি ক্ষমতা লাভের আশায় তাদের সঙ্গে ঐক্য মোর্চা করেছে। আসলে রাষ্ট্র্ঘাতী চক্রের প্রচারমাধ্যমের কৌলিণ্যে এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী, ধর্মবিরোধী কুচক্রীরা আমাদের চিন্তা ও কৃষ্টির জগতে যে সর্বাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে, তার ফলে আমাদের অনেকের মধ্যেই ধর্মানুরাগ ও ধর্মবিশ্বাসকে কেন্দ্র করে এক ধরণের হীনমন্যতা জন্ম নিয়েছে।
....যে কোন সভ্য জাতি ধর্মের অপব্যবহার ও অসদ্ব্যবহার ঘৃণার চোখে দেখে। কিন্তু ধর্মনিষ্ঠ মানুষের ধর্মানুরাগ, ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মীয় মূল্যবোধ তার জীবনাচার থেকে সে বাদ দিতে পারে না। আজ মাদ্রাসা-মসজিদের ওপর যে নগ্ন হামলা নেমে এসেছে, দেশব্যাপী ওলামা-মাশায়েখদের বিরুদ্ধে যে বিষোদগার হচ্ছে, এবং ইসলামী মূল্যবোধ নির্ভর রাজনৈতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে যে ফ্যাসিস্ট অভিযান চালানো হচ্ছে তা কোন অবস্থাতেই একটি বহুবাচনিক গণতান্ত্রিক সমাজ বিকাশের সহায়ক হতে পারে না। এ এক অসুস্থ রাজনীতির পরিচায়ক॥"
- দু:সময়ের কথাচিত্র : সরাসরি / মাহবুব উল্লাহ-আফতাব আহমাদ ॥ [ বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স - ফেব্রুয়ারি, ২০০২ । পৃ: ৬২৫-৬২৭ ]
Pl see my blogs;
Feel free -- and I request you -- to forward this newsletter to your lists and friends!