রানার তুমি ফিরে এসো!
আজ আবার চিঠি লেখার দিন,আজ আবার রানারের দিন!
প্রোমোটারের দখলে তারাশন্করের বাড়ি,মাতৃভাষার বড় বিপদ!
যদি সত্যিই বাঙালি কোথাও বেঁচে থাকে,আজ আবার সেই চিঠি লেখার দিন!হয়ত কখনো কখনো প্রতিবাদে ভালোবাসা ফিরলেও ফিরে আসে!
পলাশ বিশ্বাস
প্রসঙ্গঃতারাশঙ্করের বাড়ি রক্ষায় চিঠি মেয়রকে
রানাররা হারিয়ে গেছে!
হারিয়ে গেছে কবি !
হারিয়ে গেছে কবিতা!
নির্মম ক্রয়শক্তি,অমানবিক পেশীবল আজ সমাজ বাস্তব!
নির্মম ক্রয়শক্তি,অমানবিক পেশীবল আজ সামাজিক মূল্যবোধ!
বাজার সবকিছু ছিনিয়ে নিল!
সুখ শান্তি,জান মাল,জীবন জীবিকা ধর্ম রাজনীতি দাম্পত্য প্রেম!
সবকিছু ছিনিয়ে নিল মুক্ত বাজার!
বাঙালিক যৌন জীবন যাপন এখন খবরের কাগজ!
বাঙালিক যৌন জীবন যাপন সাহিত্য সংস্কৃতি বহুকাল!
সকাল সকাল আহা কি আনন্দ!
সকাল সকাল বাহা কি আনন্দ!
সকাল সকাল এই সময়
সকাল সকাল প্রতিদিন
সকাল সকাল বর্তমান
সকাল সকাল আজকাল
সকাল সকাল ভোরের আলো
সকাল সকাল জনকন্ঠ,যুগান্তর
রক্তে ভেসে যায় সীমান্ত ডিঙ্গিয়ে এপার ওপার!
আমি ব্যাটা নমোর পোলা,এই বাংলায় আজও অছুত!
নাগরিকত্ব আছে,আবার নেই নাগরিকত্ব!
নেই দেশে বসবাস,আসলে আজও ছিন্নমূল,বাস্তহারা!
যেমন আমার বাবা ছিলেন!
যেমন লক্ষ লক্ষ মানুষ পতঙ্গপালের মত সীমানার কাঁটাতারে রক্তাক্ত পুনর্বাসনের জন্য সারা মহাদেশে এপার ওপার হয়েছিল কিছু হাড় হারামজাদাদের ক্ষমতালিপ্সার আগুনে দগ্ধ হয়ে!
সেই আগুন আজও জ্বলছে!
সেই কাঁটাতারই আজ আহা কি আনন্দ!
সেই কাঁটাতারই আজ এই সময়!
সেই কাঁটা তারই আজ বর্তমান!
সেই কাঁটাতার আজকাল!
সেই কাঁটাতার প্রতিদিন!
সেই কাঁটাতার ইত্তেফাক,ভোরের আলো!
সেই কাঁটাতার যুগান্তর,নবদিগন্ত,মানবজমীন.যুগশঙ্খ!
সেই কাঁটাতারই মানবজমীন!
আজও প্রাণের গভীরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই কাঁটাতার বিঁধে আছে!
ভরা বরষায়,গঙ্গার ভাঙ্গণে, বন্যায়, ভূমিকম্পে, সাইক্লোনে, সুনামিতে, বসন্তের আগ্রাসনে সেই রক্তনদীর ভাসান আমাদের উত্সব,বিসর্জন!
যারা ভিন ভিন ভাষায় আমার কাঁচা হাতের লেখায়,ব্যাকরণ,বানান ভূল লেখায়,উচ্চারণ ভূলে,অলন্করণ ব্যাতিরেকে,ভূল ছন্দে,বিলম্বিত লয়ে আমার রক্ত ক্ষরণের মুখোমুখি প্রায়শঃ,তাঁদের চোখে নির্ঘাত আমি অপরাধী,দাগী!সত্যি বলতে আমার মাতৃভূমি নেই,পিতৃভূমি নেই!
ছন্নছাড়া,ভিটেছাড়া,বাস্তুহারা বাঙালির দেশ পৃথীবীর সব দেশ!
ছন্নছাড়া,ভিটেছাড়া,বাস্তুহারা বাঙালির ভাষা পৃথীবীর সব ভাষা!
আমাদের কোন দেশ নেই!
আমাদের মাতৃভাষা নেই!
পৃথীবীর সব দেশ আমাদের দেশ!
পৃথীবীর সব ভাষা আমাদের মাতৃভাষা!
স্বাধীনতার উত্সবে আমাদের জীবন জীবিকা সবকিছু কাঁটাতার!
মিথ্যা ইতিহাস হাজার বছরের,মিথ্যা ভূগোলের আধিপাত্য হাজার বছরের ,মিথ্যা পরিচয়ের বন্দিত্ব হাজার বছরের,সেই রক্তপাতেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমরা গঙ্গার ভাঙ্গনে ভেসে চলেছি,কাঁটাতার তবু কাঁটাতারই,রক্তনদীও সেই রক্তনদী,যার বাঁধন হয়না কখনো!
চিঠি লেখার দিনকাল নেই আর,প্রেম যেহেতু জলভাত,অপরাধ,ব্যবসা বাণিজ্য আজ!কে কার সাথে রাত্রিযাপন করল না করল,কত বার কার সাথে সহবাস,সম্মতিতে না অসম্মতিতে,কতটা বিয়ে,কতটা না বিয়ে,বিয়ে করে বা বিয়ে না করেও কত সিঁড়ি ভাঙা হল ,না হল,কতবার ধর্ষণ,কতজনে ধর্ষণ,প্রেমের শিরোনাম সারি সারি!
প্রাণ নেই,ভালোবাসা নেই,কবিও নেই,কবিতাও নেই,মাতৃভাষা এবং গোটা দেশটাই নেই,ঠিকানা উধাউ,তাই চিঠিরাও নিঃখোঁজ!
তারাশন্করের গোটা বাড়িটাই প্রোমোটারের দখলে!
সীমান্তের এপার ওপার প্রোমোটার সিন্ডিকেট রাজ!
সীমান্তের এপার ওপার মগের মুল্লুক লাগাম ছাড়া!
সীমান্তের এপার ওপার রাজনীতিতে জীবন যাপন!
যদি সত্যিই বাঙালি কোথাও বেঁচে থাকে,আজ আবার সেই চিঠি লেখার দিন!হয়ত কখনো কখনো প্রতিবাদে ভালোবাসা ফিরলেও ফিরে আসে!
রানার
সুকান্ত ভট্টাচার্য
রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে, রানার !
রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার।
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-
কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার।
রানার ! রানার !
জানা-অজানার
বোঝা আজ তার কাঁধে,
বোঝাই জাহাজ চলেছে চিঠি আর সংবাদে;
রানার চলেছে, বুঝি ভোর হয় হয়,
আরো জোরে, আরো জোরে, এ রানার দূর্বার দূর্জয়।
তার জীবনের স্বপ্নের মত পিছে সরে যায় বন,
আরো পথ, আরো পথ-বুঝি হয় লাল ও পূর্ব কোণ।
অবাক রাতের তারারা আকাশে মিটমিট করে চায়;
কেমন ক'রে এ রানার সবেগে হরিণের মত ধায় !
কত গ্রাম, কত পথ যায় স'রে স'রে
শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে;
হাতে লণ্ঠন করে ঠনঠন্ জোনাকিরা দেয় আলো
মাভৈঃ রানার ! এখনো রাতের কালো।
এমনি ক'রেই জীবনের বহু বছরকে পিছু ফেলে,
পৃথিবীর বোঝা ক্ষুধিত রানার পৌঁছে দিয়েছে 'মেলে'।
ক্লান্তশ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ, মাটি ভিজে গেছে ঘামে
জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে।
অনেক দুঃখ, বহু বেদনায়, অভিমানে অনুরাগে
ঘরে তার প্রিয়া একা শয্যায় বিনিদ্র রাত জাগে।
রানার ! রানার !
এ বোঝা টানার দিন কবে শেষ হবে ?
রাত শেষ হয়ে সূর্য উঠবে কবে ?
ঘরেতে অভাব; পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া,
পিঠেতে টাকার বোঝা, তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া,
রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে,
দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে
কত চিঠি লেখে লোকে-
কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখে ও শোকে
এর দুঃখের চিঠি পড়বে না জানি কেউ কোনো দিনও,
এর জীবনের দুঃখ কেমন, জানবে পথের তৃণ
এর দুঃখের কথা জানবে না কেউ শহরে ও গ্রামে,
এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই পাঠাবে সহানুভূতির খামে-
রানার ! রানার ! কী হবে এ বোঝা ব'য়ে।
কী হবে ক্ষুধার ক্লান্তিকে ক্ষ'য়ে ক্ষ'য়ে ?
রানার ! রানার ! ভোর তো হয়েছে- আকাশ হয়েছে লাল,
আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দুঃখের কাল ?
রানার ! গ্রামের রানার !
সময় হয়েছে নতুন খবর আনার;
শপথের চিঠি নিয়ে চল আজ
ভীরুতা পিছনে ফেলে-
পৌঁছে দাও এ নতুন খবর
অগ্রগতির 'মেলে',
দেখা দেবে বুঝি প্রভাত এখুনি-
নেই, দেরী নেই আর,
ছুটে চলো, ছুটে চলো, আরো বেগে
দুর্দম, হে রানার।।
রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে, রানার !
রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার।
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-
কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার।
রানার ! রানার !
জানা-অজানার
বোঝা আজ তার কাঁধে,
বোঝাই জাহাজ চলেছে চিঠি আর সংবাদে;
রানার চলেছে, বুঝি ভোর হয় হয়,
আরো জোরে, আরো জোরে, এ রানার দূর্বার দূর্জয়।
তার জীবনের স্বপ্নের মত পিছে সরে যায় বন,
আরো পথ, আরো পথ-বুঝি হয় লাল ও পূর্ব কোণ।
অবাক রাতের তারারা আকাশে মিটমিট করে চায়;
কেমন ক'রে এ রানার সবেগে হরিণের ম ধায় !
কত গ্রাম, কত পথ যায় স'রে স'রে
শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে;
হাতে লণ্ঠন করে ঠনঠন্ জোনাকিরা দেয় আলো
মাভৈঃ রানার ! এখনো রাতের কালো।
এমনি ক'রেই জীবনের বহু বছরকে পিছু ফেলে,
পৃথিবীর বোঝা ক্ষুধিত রানার পৌঁছে দিয়েছে 'মেলে'।
ক্লান্তশ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ, মাটি ভিজে গেছে ঘামে
জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে।
অনেক দুঃখ, বহু বেদনায়, অভিমানে অনুরাগে
ঘরে তার প্রিয়া একা শয্যায় বিনিদ্র রাত জাগে।
রানার ! রানার !
এ বোঝা টানার দিন কবে শেষ হবে ?
রাত শেষ হয়ে সূর্য উঠবে কবে ?
ঘরেতে অভাব; পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া,
পিঠেতে টাকার বোঝা, তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া,
রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে,
দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে
কত চিঠি লেখে লোকে-
কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখে ও শোকে
এর দুঃখের চিঠি পড়বে না জানি কেউ কোনো দিনও,
এর জীবনের দুঃখ কেমন, জানবে পথের তৃণ
এর দুঃখের কথা জানবে না কেউ শহরে ও গ্রামে,
এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই পাঠাবে সহানুভূতির খামে-
রানার ! রানার ! কী হবে এ বোঝা ব'য়ে।
কী হবে ক্ষুধার ক্লান্তিকে ক্ষ'য়ে ক্ষ'য়ে ?
রানার ! রানার ! ভোর তো হয়েছে- আকাশ হয়েছে লাল,
আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দুঃখের কাল ?
রানার ! গ্রামের রানার !
সময় হয়েছে নতুন খবর আনার;
শপথের চিঠি নিয়ে চল আজ
ভীরুতা পিছনে ফেলে-
পৌঁছে দাও এ নতুন খবর
অগ্রগতির 'মেলে',
দেখা দেবে বুঝি প্রভাত এখুনি-
নেই, দেরী নেই আর,
ছুটে চলো, ছুটে চলো, আরো বেগে
দুর্দম, হে রানার।।