Quantcast
Channel: My story Troubled Galaxy Destroyed dreams
Viewing all articles
Browse latest Browse all 6050

শ্রমিক আন্দোলনের দিশা – একটি প্রস্তাবনা

$
0
0

শ্রমিক আন্দোলনের দিশা – একটি প্রস্তাবনা



।। অরূপ বৈশ্য।।
   (শিলচর থেকে প্রকাশিত মাসিক অরুণোদয়ে প্রকাশেরর জন্য)
         
(C)Image:ছবি
 আশির দশক থেকে পুঁজির বিশ্বায়নের যে নতুন পর্যায় শুরু হয়েছে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর এক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বব্যাপী সংগঠিত শ্রমিকদের ইউনিয়নের চাপ 'কল্যাণকামী(welfare)' রাষ্ট্রকে বজায় রাখার অন্যতম বাধ্যবাধকতা ছিল। জনগণের বিভিন্ন অংশকে চলতি ব্যবস্থার মধ্যে বেঁধে রাখার যে জাতীয় পুঁজিবাদী উন্নয়নের রাষ্ট্রীয় নীতি বজায় ছিল তার মেরুদণ্ড ছিল অর্থনৈতিকভাবে সচল এই সংগঠিত শ্রম। ভারতবর্ষে সংগঠিত শ্রমিকের এই সংখ্যা মোট শ্রমবাহিনীর দশ শতাংশেরও কম ছিলতথাপি অর্থনৈতিকভাবে সচল এই জনগোষ্ঠী কল্যাণকামী রাষ্ট্র বজায় রাখার মূল চালিকা শক্তি ছিল।
              কিন্তু আশির দশক থেকে চালু ব্যাক্তিগতকরণ ও ঠিকাপ্রথার উদারবাদী নীতির ফলে আর্থিকভাবে সচল এই শ্রমিকশ্রেণির অধিকাংশ অস্থায়ীঠিকা শ্রমিক কিংবা বেকারে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রায় সব হিসেবে দেখা গেছে যে কৃষির সাথে যুক্ত কৃষি শ্রমিক ছাড়াও ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের অধিকাংশএমনকি আসামের মত পশ্চাৎপদ রাজ্যেদিনমজুরে রূপান্তরিত হয়েছে এবং এদের এক বড় অংশ নিজ জেলারাজ্য ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রব্রজিত শ্রমিক হিসেবে মূলত সার্ভিস সেক্টরের সাথে যুক্ত হয়েছে। মজুরি প্রাপ্ত কৃষি শ্রমিকরা তাদের শ্রমশক্তি বিক্রি করে কৃষি-বাণিজ্যে বিনিয়োজিত পুঁজির প্রকৃত অধীনস্থ (real subsumption) হয়ে পুঁজির মুনাফা বৃদ্ধি করছে। উপরন্তু ১৯৯১ থেকে প্রায় ৮% বিকাশের হারের পরিস্থিতিতেও কারখানা উৎপাদনে (manufacturing)তেমন কোন শ্রম-নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়নি। উৎসা পট্টনায়ক লিখেছেন, "কর্পোরেট শিল্পপতিরা যে শুধুমাত্র অতিরিক্ত কোন শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করেনি তাই নয়, তারা তাদের একচেটিয়া ক্ষমতাকে ব্যবহার করে পুঁজির আদিম সঞ্চয়ন প্রক্রিয়া চালু রেখেছে (আরও সাধারণভাবে আমি যাকে অধিগ্রহণের (encroachment) মাধ্যমে সঞ্চয় হিসেবে অভিহিত করি) যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ছাড়উচ্ছেদ ও বিস্থাপনের মত জনবিরোধী বিভিন্ন শর্ত সরকারের উপর আরোপ করাজমির ফাটকা বাণিজ্য ইত্যাদি রয়েছে"
             কল্যাণকামী রাষ্ট্র ছিল পুঁজিবাদের অভ্যন্তরে শ্রম-সৃষ্ট মূল্যকে শ্রম-শক্তির দিকে স্থানান্তরিত করার এক সংগ্রামযেখানে শ্রমিকের মজুরির অপ্রতুলতা ও নিরাপত্তাহীনতা পুঁজির অস্তিত্ব ও পুনরুৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপদ স্বরূপ। বিশ্বায়ন ও পুঁজির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া মুনাফার জন্য শ্রমের দরকে তার প্রকৃত দামের নীচে নামিয়ে আনার ক্রমবর্ধমান কার্যকারণ-গত প্রক্রিয়াকে সচল করে দিয়েছে।       শ্রম-প্রক্রিয়ার উপর ম্যানেজারিয়্যাল নিয়ন্ত্রণ বৌদ্ধিক কাজ ও তার রূপায়ণকে পৃথক করে দিয়েছে। জ্ঞান ও দক্ষতার বিস্তৃতির বদলে তার মেরুকরণ চলছেএক ক্ষুদ্র অংশ তা আয়ত্ত করছে ও গরিষ্ঠাংশরা তা হারাচ্ছে। তাতে স্তরীভূত শ্রম-সংগঠনশ্রমিকের হাত ও মাথার উপর নিয়ন্ত্রণঅতি-মুনাফা ইত্যাদি সহ জনগণের চাহিদা ছাড়া বাকী সবকিছুর জন্য সুবিধেজনক পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছে। পুঁজিবাদের সঙ্কটকালে যান্ত্রিকীকরণমজুরি হ্রাস অথবা শ্রম-সময়ের বৃদ্ধি ঘটানোর উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সরকারি তথ্য অনুসারে, ১৯৯১ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে সংগঠিত পাবলিক সেক্টরে বিনিয়োগ দ্রুত হ্রাস পেয়েছে এবং সংগঠিত ব্যক্তিগত খণ্ডে সেই অনুপাতের অনেক কম বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অসাম্য বৃদ্ধির এক পদ্ধতির মাধ্যমে বিকাশের হারের বৃদ্ধি ঘটানো হচ্ছেএই বৃদ্ধি অসাম্যকে আরও বাড়িয়ে দেওয়ার ইন্ধন হিসেবে কাজ করছে। বিকাশের হারের এই ঘাতক বৃদ্ধিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অমিত ভাদুড়ি লিখেছেন, " দরিদ্র জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিকাশের হার বৃদ্ধি যে সামান্যই অবদান রেখেছে তাই নয়রাষ্ট্রের কল্যাণকামী ব্যয় কমিয়ে দিয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর চাহিদাকে কমিয়ে দিয়েছে"। সুতরাং বিকাশের লক্ষ্য প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে শ্রমের অধিকার ও তার সাথে সম্পর্কিত জনগণের কল্যাণকামী প্রয়োজনকে সুনিশ্চিত করার সমস্ত আইনি ব্যবস্থা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
              বাজার অর্থনীতিতে শ্রমিকের শ্রমশক্তি একটি পণ্য হলেও অন্যান্য সব পণ্যের সাথে এর সুনির্দিষ্ট পার্থক্য রয়েছে। শ্রমশক্তি ব্যয় হওয়ার আগে পর্যন্ত এই পণ্য জীবন্ত শ্রমিকের সাথে ওতোপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। শ্রমশক্তি হচ্ছে জীবন্ত ব্যক্তির শ্রম করার ক্ষমতা যা শ্রমিকের উৎপাদনশীল ভোগের উপর নির্ভরশীল। ঐতিহাসিকসামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তির উপর নির্ভর করে শ্রমশক্তির মূল্য নির্ধারিত হয়। শ্রমই একমাত্র পণ্য যা মজুরি ও উদ্বৃত্ত মূল্য আহরণের উপর নির্ভর করে উৎপাদিত হয় না। সেটা উৎপাদিত হয় বাজারের পরিধির বাইরে পরিবার ও গৃহের অভ্যন্তরে যেখানে বাজার ও রাষ্ট্র বাইরে থেকে তার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ও তাকে আত্মস্থ ও ব্যবহার করে। অনুরূপভাবেঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে নির্দিষ্ট ভারতীয় বর্ণব্যবস্থাকে কী পুঁজিবাদী অসম বিকাশের কাঠামোয় আত্মস্থ করে নিতে পারে না? ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থা একইসাথে স্তরীভূত ও বহুধা খণ্ডিত। এই স্তরীভবন ও খণ্ডিকরণ একই মতাদর্শের অঙ্গ ও এই মতাদর্শের ধারক হিসেবে গভীরে প্রোথিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোই হচ্ছে বর্ণব্যবস্থা। কিন্তু এই ব্যবস্থাটি সে অর্থে অদ্বিতীয় নয় যাতে স্তরীভূত ও বহুধাবিভক্ত শ্রমবাহিনীকে ভারতবর্ষের অসম পুঁজিবাদী বিকাশ উদ্বৃত্ত মূল্য আহরণের কাঠামোয় আত্মস্থ করে নিতে নিতে পারে না। উপরন্তু সম্মতিসূচক আধিপত্য ও বলপ্রয়োগ শুধুমাত্র ভারতবর্ষের মত পিছিয়ে পড়া দেশের বৈশিষ্ট্য নয়তুলনামূলকভাবে কম মাত্রায় বলপ্রয়োগের বৈশিষ্ট্য উন্নত পুঁজিবাদী পশ্চিমী দেশেও বিদ্যমান। সম্প্রদায়গত পরিচিতির সাথে শ্রমিকের সাংস্কৃতিক যোগসূত্র তার জীবনধারণের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করে যা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন শ্রমের চেয়ে অধিক উদ্বৃত্ত মূল্য আহরণের উপযোগী। অন্যদিকে গোষ্ঠীগত আদিম চেতনা শ্রমিক শ্রেণিকে বিভাজিত করার উপযোগী এবং ঐ বৈশিষ্ট্যে আধুনিকতা-বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি ও পুঁজিবাদীদের স্বার্থ এক জায়গায় মিলে যায়।
              কায়িক শ্রমিক ও সার্ভিস সেক্টরে নতুন কর্মীদের ক্ষেত্রে এই ঘটনাপ্রবাহ দৃশ্যমান। আই.টি সেক্টরের সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে এই যে এই সেক্টরের সাথে শহুরে বর্ণহিন্দু মধ্যবিত্তদের প্রাগ্রসর শিক্ষাইংরেজি জ্ঞান এবং কিছু পরিমাণে পশ্চিমী সামাজিক ধ্যান-ধারনা ও আচার আচরণ সহ তাদের সাংস্কৃতিক পুঁজিকে ব্যবহার করতে পেরেছে। উচ্চবর্ণের বাইরে অন্যান্য বর্ণের মধ্যবিত্তরাও কিছু পরিমাণে এই সেক্টরে সামিল হয়েছেকিন্তু বর্ণ-বিভাজনের প্রাচীরকে অতিক্রম করতে পারেনি। চা-শ্রমিকদের মত প্ল্যান্টেশন লেবারদের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ জমানায় শ্রম-শোষণের বা মার্ক্সীয় ভাষায় উদ্বৃত্ত শ্রমের মূল্য আহরণের ক্ষেত্রে পুঁজি বহুলাংশে নির্ভর করত বলপ্রয়োগ বা অর্থনীতি বহির্ভূত শোষণের উপর। উপরন্তু চা-বাগান গড়ে উঠেছিল মূলত প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় যেখানে শ্রমিকরা বনাঞ্চলের প্রাকৃতিক খাদ্য অত্যন্ত কম পরিশ্রমে সংগ্রহ করার ফলে প্রয়োজনীয় শ্রমের মূল্যকে কমিয়ে রাখার সহায়ক ছিল। এই দ্বিবিধ কারণে চা-শিল্পে নিয়োজিত পুঁজির কাছে শ্রম শক্তির ব্যবহারিক মূল্য ও উদ্বৃত্ত মূল্য (মুনাফা) ছিল অত্যন্ত বেশি। স্বাধীনতা-উত্তর দীর্ঘ পর্যায়ে পারিপার্শ্বিক উন্নয়নের ফলে প্রাকৃতিক খাদ্য আহরণের ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হয়ে আসায় চা-শিল্প থেকেই শ্রমিকদেরকে মজুরি হিসেবে পাওয়া প্রয়োজনীয় শ্রমের মূল্যের উপরই জীবনধারণ নির্ভরশীল। ব্রিটিশ আমলের প্রত্যক্ষ বলপ্রয়োগ বন্ধ হয়ে গেলেও অপ্রত্যক্ষ বলপ্রয়োগের নানা প্রাতিষ্ঠানিক কূটচাল এখনও বজায় রয়েছে এবং শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা প্রসূত দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে 'নিরিখ (task)বৃদ্ধিও অন্তিম সীমায় পৌঁছে গেছে। জাতিগত শোষণের অবশিষ্ট চরিত্র বজায় থাকায় চা-শ্রমিকরা এখনও সামাজিকভাবে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম মজুরি থেকে বঞ্চিত। কিন্তু পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনের ফলে এভাবে ন্যূনতম মজুরি না দিয়ে অতি-মুনাফা আহরণ শ্রমিকরা আর বেশিদিন মেনে নেবে না। দ্রুত নগরায়ণ ও শহর-নগরের বিস্তৃতির পরিস্থিতিতে নির্মাণ,পরিবহণ ক্ষেত্র ও আনুষঙ্গিক বিবিধ ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত হতে গড়ে উঠছে প্রব্রজিত অসংগঠিত শ্রমিকদের বিশাল বিশাল ঘেঁটো। এই শ্রমিকদের না আছে শ্রমের নিরাপত্তানা নাগরিক সুবিধা। দ্রুত বেসরকারিকরণের ফলে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা গরিষ্ঠাংশ নাগরিকদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। শিল্পের নামে জমি জবরদখল ও কৃষির বাণজ্যিকীকরণ, কেন্দ্রীভূত বৃহৎ কারখানা উৎপাদনের পরিবর্তে অ্যাসেম্বলি-লাইন পদ্ধতির মাধ্যমে শিল্প-উৎপাদনবেসরকারিকরণ ও অস্থায়ী ও ঠিকা প্রথায় শ্রমিক নিয়োগের পদ্ধতি ইত্যাদির উপর গুরুত্ব আরোপের ফলে সর্বহারা ও নিঃস্ব শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে চলেছে। আশির দশক থেকে চালু উদার অর্থনীতি ইতিমধ্যে উৎপাদন সম্পর্কেও পরিবর্তন সাধন করেছে। সংগঠিত শ্রমিক ইউনিয়নের দরকষাকষির ও        নীতি-নির্ধারণে প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা এখন একেবারে তলানিতে। সাম্প্রদায়িক-ফ্যাসিস্ট রাজনীতির প্রভাবাধীন ইউনিয়ন তাদের প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শগত আবেগের ছত্রছায়ায় শ্রমিক সদস্য সংখ্যা কিছু পরিমাণে ধরে রাখতে সক্ষম রয়েছেবাকী ইউনিয়নগুলির সদস্য সংখ্যা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। বিশ্বায়নের নতুন পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে  শ্রমিক ইউনিয়নগুলিকে যদি তাদের রণনীতি নির্ধারণ করতে না পারেতাহলে নিঃস্ব ও অসংগঠিত শ্রমিকবাহিনী কোন বিকল্পের অভাবে ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের দিকে আকর্ষিত হবে। এমতাবস্থায় শ্রমিক ইউনিয়নগুলি কী কর্মসূচীর ভিত্তিতে সংগ্রাম গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবে?

                  প্রথমতরাষ্ট্রের কল্যাণকামী সামাজিক সুরক্ষাগুলি ভেঙে দেওয়ার এবং শ্রম-আইন ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসপিউট অ্যাক্ট সংশোধন করে ইউনিয়ন করার অধিকার কেড়ে নেওয়ার যে কোন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ১০০ জনের কম শ্রমিক সংখ্যার কারখানায় ইউনিয়ন নিষিদ্ধ করার সরকারের যে প্রস্তাব তা আপাত দৃষ্টিতে ক্ষুদ্র মালিকদের সহায়ক মনে হলেওআজকের বহুজাতিক পুঁজির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের পরিস্থিতিতে সে পদক্ষেপ আসলে কর্পোরেট সেক্টরের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই করার চেষ্টা হচ্ছে। দ্বিতীয়তসকল শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ব্যাপক সংগ্রাম গড়ার পাশাপাশি সব জনগণের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা আদায়ের সংগ্রামও গড়ে তুলতে হবে শ্রমিক ইউনিয়নগুলিকে। দিল্লির বিশাল বিশাল কলোনিগুলোতে নাগরিক সুবিধা আদায়ের কর্মসূচীতে 'আপ'-এর ভূমিকার ফলে নির্বাচনে তাদের যে ব্যাপক সাফল্য দিয়েছে তা এই বিষয়গুলির গুরুত্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তৃতীয়ত,রূপের ও জনগোষ্ঠীর দিক থেকে বিচার করলে নির্দিষ্টভাবে সীমাবদ্ধকিন্তু অন্তর্বস্তুর দিক থেকে সর্বজনীন সাংস্কৃতিক বিষয়বস্তু নিয়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলনও গড়ে তুলতে হবে যাতে সামগ্রিকভাবে শ্রমিকের চেতনার মানোন্নয়নের এক প্রক্রিয়া নিরন্তর চালু থাকে। কিন্তু উৎপাদন এবং বণ্টন প্রক্রিয়াজীবনধারণের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তা ও মানুষ হিসেবে বিকশিত হওয়ার কার্যকলাপের উপর মেহনতি মানুষের যৌথ হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার লক্ষ্যে ইউনিয়নকে পরিচালিত না করলে,বর্তমান রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেহনতি মানুষের নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ীগত শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। এরজন্য প্রয়োজন প্রতিটি গ্রাম-শহরেপঞ্চায়েতেওয়ার্ডেমহল্লায়কারখানায় ও প্রতিটি জনপদে মেহনতি মানুষের ইউনিয়ন কমিটি গড়ে তোলা ও এই কমিটিগুলো যাতে সাধারণ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে মেহনতি মানুষকে পরিচালিত করতে পারে তারজন্য প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা ও উৎসাহ দিতে হবে। এই কমিটিগুলোকে এই লক্ষ্যে পরিচালিত করতে হবে যাতে এগুলি স্থানীয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের শুধুমাত্র প্রতিস্পর্ধী শক্তি (counterveiling force) নয়হয়ে উঠতে পারে মেহনতি মানুষের বিকল্প প্রতিষ্ঠানও। উচ্চতর কমিটিগুলো ও আগসারির নেতৃত্বকে নিয়ন্ত্রক না হয়ে সহযোগী ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দিশা নির্ধারণের জন্য সচল ও উদ্যমী ভূমিকা পালন করতে হবে। কমিটি পরিচালনার ক্ষেত্রে সমালোচনা ও আত্ম-সমালোচনার পদ্ধতি এক কার্যকরী পদ্ধতি তো নয়ইবরঞ্চ শ্রেণি সংগ্রাম থেকে সংগঠনকে বিযুক্ত করে দেখার এক বিপদজনক প্রক্রিয়া, সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রাখতে হবে শ্রমিকের স্ব-উদ্যোগ ও স্ব-পরিচালনা। পুঁজির নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ শ্রমিকের নিয়ন্ত্রণে আনার সুদূরপ্রসারী চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছার আগে বিষয়ীগত বিকল্প শক্তির বিকাশের লক্ষ্যে সংগঠনকে পরিচালিত করতে হবেযেখানে শ্রমিক শ্রেণির স্বতঃস্ফূর্ত জাগরণও এক বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। উৎপাদিকা শক্তি ও উৎপাদন পদ্ধতির বর্তমান বিকাশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পুঁজি উৎপাদন সম্পর্ককে অর্থাৎ পুঁজি-শ্রমের সম্পর্ককে পুনর্বিন্যস্ত করতে চাইছে, শ্রমিক শ্রেণি তাকে চ্যালেঞ্জ জানাবেই। তবে এই চ্যালেঞ্জ পুঁজির কাছে পুনরায় অধীনতা স্বীকার করেই শেষ হবেনা পুঁজির আধিপত্যকে ভেঙে দিতে সক্ষম হবে তা নির্ভর করছে শ্রমিক আন্দোলনে সঠিক দিশার উপর। তাই বর্তমান সময় ধ্বংস ও সৃষ্টিবর্বরতা ও সমাজবাদের এক যুগ-সন্ধিক্ষণ যার মাপকাঠি হিসেবে দিশাহীনতা এক ভয়ঙ্কর রূপে বিরাজমান। 
     
  

Viewing all articles
Browse latest Browse all 6050

Trending Articles