ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই!
লীড নিউজ হয়েছে- "সন্নিকটে পবিত্র রমযান শরীফ : কথা রাখছে না ব্যবসায়ীরা।"
উল্লেখ্য, গত ১৯ মে-২০১৫ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে বেসরকারি পণ্য সরবরাহকারী ও আমদানিকারকরা পণ্যের দাম বাড়বে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। পাশাপাশি রোযায় ব্যবহƒত ১০ পণ্যের সন্তোষজনক মজুদের কথা জানিয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রী; কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
প্রসঙ্গত আমরা মনে করি, প্রতি বছর পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার আগে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য ক্ষণস্থায়ী উদ্যোগ নিয়ে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না। এক্ষেত্রে দেশে পণ্যের চাহিদা এবং আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য সরকারের কাছে থাকতে হবে। আগাম ব্যবস্থা নিয়ে নিশ্চিত করতে হবে চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পর তৎপরতা দেখালে চলবে না, এজন্য বছরজুড়েই পণ্যমূল্যের উপর নজরদারি রাখতে হবে। সরকারের দক্ষ মার্কেট ইন্টেলিজেন্স থাকতে হবে। সিস্টেমেটিক উপায়ে বাজারের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের আগাম তথ্য থাকতে হবে এবং সেই অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
দেশে কোন্ পণ্যের চাহিদা কত, উৎপাদন কত হবে, কী পরিমাণ আমদানি করতে হবে, কোন্ দেশে কোন্ পণ্য পাওয়া যাবে, দাম কেমন হবে- এসব বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য নেই সরকারের কোনো সংস্থার কাছে। ব্যবসায়ীরা যে যার মতো আমদানি করছে। কখনো দরকারের চেয়ে বেশি আমদানি করে লোকসানের মুখে পড়ছে ব্যবসায়ীরা, আবার কখনো কম আমদানি করে বাজারে সরবরাহ ঘাটতি সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারের কথা বলে তারা নিজেরাই নির্ধারণ করে দিচ্ছে নিত্যপণ্যের স্থানীয় বাজারদর। আর সরকার তা চোখ বুজে মেনে নিচ্ছে। তাই ভোক্তা অধিকার আইন করে, পরিবেশক প্রথা চালু করে এবং মোবাইল কোর্ট বসিয়েও খুচরা পর্যায়ে দাম ঠিক রাখা যাচ্ছে না।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছে, বিভিন্ন পণ্যের দাম শুধুই আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে ঘটছে বলে ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক দাবি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকার মেনে নিচ্ছে। কোনো ক্ষেত্রেই তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করছে না। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা সাধারণত খ-িত চিত্র হাজির করে নির্বিঘেœ নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এছাড়া মূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যে বাজার সিন্ডিকেট কাজ করছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার নানা রকম প্রচারণা চালালেও তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই।
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস এলে প্রতি বছর ডাল, চিনি, তেল এবং পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। আগের বছরের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এসব পণ্যের আগাম সরবরাহ এবং আমদানি নিশ্চিত করলে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অথচ সরকারের তরফ থেকে এ ব্যাপারে কাগজে-কলমে উদ্যোগ নেয়া হলেও বাস্তবে তা কার্যকর করা হয়নি। এই সুযোগ পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।
মূলত, চাহিদা ও যোগান সম্পর্কে সরকারের কোনো ধারণা না থাকায় পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণের সুযোগ পাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। প্রকৃত মজুদ তথ্য না থাকায় তারা সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে বোকা বানাচ্ছে।
অথচ ২০১১ সালের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশের ৫ ধারা অনুযায়ী, উৎপাদক, পরিশোধক বা আমদানিকারক অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিকভাবে হ্রাস, বৃদ্ধি বা পুনঃনির্ধারণ করতে ইচ্ছুক হলে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ব্যবসায়ী সমিতির মাধ্যমে উক্ত রূপ হ্রাস, বৃদ্ধি বা পুনঃনির্ধারণ করবে। এবং উক্ত রূপে পুনঃনির্ধারিত মূল্য কার্যকর হওয়ার অন্ততঃ ১৫ দিন আগে তা মনিটরিং সেল, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। কিন্তু সরকার ব্যবসায়ীদের বাগে রাখতে না পারায় এ বিধান অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
সঙ্গতকারণেই বাজারে প্রচুর সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও কতিপয় ব্যবসায়ী দাম বাড়ায়। কিন্তু কতিপয় মুনাফালোভী ব্যবসায়ী যাতে পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে, তার জন্য সরকারকে কঠোর তদারকি করতে হবে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, চেম্বার অব কমার্সসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আন্তরিক হলেই ভোক্তারা পাবে তাদের অধিকার।
অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অনৈতিক ও অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে শাস্তি প্রদানের উদ্যোগ নিতে হবে। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও এ বিষয়ে নানা বিধিমালা এবং আইন প্রবর্তিত থাকলেও প্রয়োগ দুর্বলতার কারণে বহুদিন ধরে তা অকার্যকর হয়ে আছে।
সরকার আন্তরিক হলে সুদক্ষ বাজার-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অবশ্যই পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অসৎ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গা যায় না- এটা কোনো দক্ষ মন্ত্রী বা সরকারের অজুহাত হতে পারে না, যেমনটি আমরা অতীতে শুনে এসেছি। সরকারের অনেক কিছু করার থাকে।