বাঙালি উদ্বাস্তু পুনর্বাসন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ণ সমাধান করেনি পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষের ক্ষেত্রে জন-বিনিময় হয়নি যারা এখানে অনেকদিন আগে এসেছে তাদের এখন তৃতীয় প্রজন্ম চলছে তাই ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী সম্ভবত তারা স্বাভাবিক ভাবেই নাগরিক কেউ যদি পরবর্তীকালে এসেও থাকে তার দায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে নিতে হবে তারা বে-আইনি লোকদের ঠেকাতে পারেনি দুই বঙ্গের ভাষা বাংলা, তাই তাদের ভাষা দিয়ে পৃথক করা যাবে না পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের পরিবহণ যোগাযোগ আছে কারণ সেখানে তাদের পূর্ণ জনবিনিময় হয়েছে তাছাড়া, তাদের পুনর্বাসন সম্পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থির জন্য ভারত কেন নিয়ন্তণ ব্যবস্থা নেয় না অথচ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ভারতের সম্পূর্ণ সহযোগিতায় যে দ্বিজাতি তত্ত্বের ফলে ভারত ভাগ হয়েছে তার দায় তৎকালীন নেতৃত্বেরও আছে তারা বাংলা ভাগে রাজি ছিলেন না, পরে আবার রাজি হন অথচ জনবিনিময় হয়নি বাংলাদেশের কিছু জেলা প্রথম দিকে পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হবে বলে ধার্য ছিল, পরে তা বাতিল হয় আর এখনও আছে ছিটমহল সমস্যা এই সমস্যা তো দুই রাষ্ট্রেরই দায়
উদ্বাস্তু সমস্যা মানবিক সমস্যা এর সমাধান মানবিক দৃষ্টিতে সহানুভূতির সঙ্গে করতে হবে পৃথিবীর বহু দেশেই এই সমস্যা আছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষিত হচ্ছে না বলে এই সমস্যার উদ্ভব প্রতিবেশী সকল দেশের সঙ্গে ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলছে, বাংলাদেশের সঙ্গেও সেটা ঘটুক তা হলে আর কোনও সমস্যা হবে না নেপালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্যের জন্য ভারত ঝাঁপিয়ে পড়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, এই মানবিক সহানুভূতি অতীব প্রশংসনীয় উদ্বাস্তুর ক্ষেত্রে সমস্যা তো আরও অনেক জটিল, তাই বিবেচনাও করতে হবে অনেক অনেক উদার দৃষ্টিতে আসামে তো ভারতের শ্রেষ্ঠ ভাষা বাংলাকেই প্রথমে স্বীকৃতিই দেওয়া হয়নি, যে ভাষা হল আমাদের জাতীয় সংগীতের ভাষা সেজন্যই ঘটেছে ১৯শে মে-র (১৯৬১) নারকীয় হত্যা, তাতে নারী সহ ১১জন বাংলাভাষীর প্রাণ যায় তাই এটা স্পষ্ট যে তাদের দৃষ্টি ভুল দিকে প্রসারিত তারা অকারণে প্রতিহিংসা পরায়ণ অথচ ঝাড়খণ্ডে, এবং কর্ণাটকে বাংলাভাষাকে দ্বিতীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে আসামের এই ভুল দৃষ্টিভঙ্গী ভারতের আভ্যন্তরীণ সম্প্রীতি নষ্ট করবে, প্রাদেশিকতার সৃষ্টি হবে, যেটা সর্বতোভাবে ঠেকানো দরকার বাংলা-ভূখণ্ডের পূর্ব অংশ থেকে আসা মানুষকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করার ফল হবে সুদূর প্রসারী দরকারে রাষ্ট্রসংঘে এজন্য দরবার করতে হবে বাংলাদেশে সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষিত না হলে এ সমস্যা কখনওই দূর হবে না ভারত সরকারের বরং সেদিকে নজর দেওয়া উচিত, নয়তো বিদেশি সমস্যার কখনও শেষ হবে না মানুষ যদি এসেও থাকে তবে তারা এসেছে প্রাণের ভয়ে, সে ভয় দূর করার দায় ভারত নিক ইংলন্ড যেমন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত হবার ফলে লন্ডনে লোকের ভীড় বেড়েছে ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি মিলে যে সার্ক তৈরি হয়েছে সেই সার্ক ভুক্ত দেশগুলিও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মতো ব্যবস্থা নিলে এসব সমস্যা আর থাকবে না এতে জাল টাকার সমস্যাও মিটবে প্রতিবেশী দেশের দুষ্কৃতীরা এ কাজে আর সুবিধে করতে পারবে না ইংরেজ আমলে ভারত ছিল অনেক বড় আয়তনের, সেই বিভক্ত দেশের শিল্পপতিরা এখানে এসে শিল্প গড়লে লাভই হবে কিংবা ভারতীয় শিল্পপতিরা সেদেশে গিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে ভারতের শ্রীবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারবে পৃথিবীটা তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে গ্লোবাল ভিজেল হয়ে গেছে, তাই তেমনি বিশ্ব দৃষ্টি নিয়ে এধরণের সমস্যাগুলি দেখতে হবে নিজের কক্ষে বন্দী থাকার দিন আর নেই বাঘ সাপ সিংহ হাতিকে মানুষ সুরক্ষা দিচ্ছে আর মানুষেরই সুরক্ষায় কেন পিছিয়ে যাবে? তাহলে তো পৃথিবীর অন্য দেশে শিক্ষা ও জীবিকার জন্য যাওয়া চলে না আমরা যে অগ্রগতি ঘটিয়েছি তা সারা পৃথিবী থেকে জ্ঞান আহরণ করেই সম্ভব হয়েছে যে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে প্রধান মন্ত্রী নিজে উৎসাহ দিচ্ছেন তার মূল জ্ঞান তো বিদেশ থেকেই এসেছে সুতরাং ভারতের মতো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের পক্ষে উপযুক্ত উদার দৃষ্টিভঙ্গী থাকা দরকার সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই সাম্প্রদায়িকতা রোধ করাই আসল কাজ, মানুষকে বিদেশি চিহ্নিত করা নয় ইতিহাস চিরকাল এক থাকে না, মাত্র কিছুদিন আগেই ভারত ছিল ইংরেজদের অধীন আসামে যদি নেপালের মতো প্রলয় হয় তবে বাংলা কি আসামকে সহায়তা দেবে না? অবশ্যই দেবে সেটাই স্বাভাবিক, সেটাই মানবিক মহাপুরুষের বাণী-- ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না
মনোজকুমার দ. গিরিশ
মণীশ পার্ক, কোলকাতা