বাংলাদেশে নিউজিল্যান্ডের গুপ্তচরবৃত্তি- তথ্য পায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ, ভারত
GCSB's secret Bangladesh spy mission
http://m.nzherald.co.nz/nz/news/article.cfm?c_id=1&objectid=11433216
বাংলাদেশে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। দেশটির গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশনস সিকিউরিটি ব্যুরো (জিসিএসবি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে গোপন এ নজরদারি কার্যক্রম চালায়। মোবাইল যোগাযোগে আড়ি পাতার জন্য রাজধানী ঢাকাতেই রয়েছে বিশেষ এক স্থাপনা। এছাড়া তারা গোয়েন্দাগিরিতে প্রাপ্ত তথ্য আদান-প্রদান করেছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সঙ্গে। অপরদিকে আবার র্যাবের নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও আড়ি পাতে সংস্থাটি। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এনএসএ'র গোপন নজরদারি কার্যক্রম ফাঁস করে দেয়া অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেনের নতুন ফাঁস করা নথিতে উঠে এসেছে এসব তথ্য। এ নিয়ে নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যমগুলো গতকাল ছিল সরব।
নিউজিল্যান্ডের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড মার্কিন সংবাদ ওয়েবসাইট দ্য ইন্টারসেপ্টের সঙ্গে যৌথভাবে ফাঁস হওয়া নতুন নথিপত্রগুলো বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন ছেপেছে। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকা সত্ত্বেও নিউজিল্যান্ড গোপন নজরদারিতে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য তাদের সঙ্গে আদান-প্রদান করেছে। এ নথিতে স্পষ্ট হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট এ দেশটিতে জিসিএসবি তাদের ইলেক্ট্রনিক গোয়েন্দা অভিযান চালাতে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করার জন্য এ নজরদারি চালানো হয়। ২০০১ সালে ৯/১১ হামলার পর চালু করা হয় ওই নজরদারি ব্যবস্থা। বাংলাদেশে গোয়েন্দাগিরির বিষয়টি উঠে এসেছে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, এনএসএ'র এপ্রিল, ২০১৩'র এক রিপোর্টে। রিপোর্টের বিষয়বস্তু ছিল নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে এনএসএর পারস্পরিক সম্পর্ক। 'এনএসএ-কে অংশীদাররা কি সরবরাহ করে' (হোয়াট পার্টনার প্রোভাইডস টু এনএসএ) শীর্ষক একটি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, '২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশ সন্ত্রাসবিরোধী টার্গেটের ওপর গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের জন্য নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকায় রয়েছে জিসিএসবি। সংস্থাটি বাংলাদেশ সন্ত্রাসবিরোধী বিষয়ক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংকেতিক গোয়েন্দা তথ্যসূত্র যারা মার্কিন গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের কাছে রিপোর্ট করে।'জিসিএসবি সদস্যদের সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাসহ পাঠানো হয়েছে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। বাংলাদেশী গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নির্যাতন প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা অবহেলা করা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানবাধিকার সংস্থাগুলো একাধিক রিপোর্ট নথিভুক্ত করেছে। এ যাবৎ কালে ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে বাংলাদেশে জিসিএসবির নজরদারি অভিযানের বিষয়টি সব থেকে আশ্চর্যজনক বলে হেরাল্ডের প্রতিবেদনে আখ্যা দেয়া হয়। নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান তেমনটা নেই বললে চলে। নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা আছে, 'নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ যদিও পারস্পরিক সম্পৃক্ততা সীমিত। তবে, নিউজিল্যান্ড সরকারের এক সূত্র হেরাল্ডকে জানিয়েছেন যে, জিসিএসবির চারটি বিশ্লেষণ বিভাগের একটির প্রধান মনোযোগ হলো বাংলাদেশ। আর এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এমনটাই রয়েছে। বিভাগটিকে আইসিটি বলা হয় যা আন্তর্জাতিক অভিযান সংক্রান্ত ইস্যুগুলোর বিভাগ। ৯/১১ হামলার পর সন্ত্রাসী হুমকির বিষয়ে মনোযোগ দিতে ২০০২ সালের এপ্রিলে বিভাগটি স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ প্রকল্পটি ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্কের অধীনে শুরু হয় বলে প্রতীয়মান হয়। ইরাকে মার্কিন অভিযানে যোগ দেয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার পর যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের বিষয়ে সে সময় ইতিবাচক মনোভাব ছিল তার সরকারের। 'নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে এনএসএর সম্পর্ক'শীর্ষক ওই নথিতে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরুর সময় ২০০৪ উল্লেখ করা আছে। কিন্তু এনএসএর এক কর্মকর্তা ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে জিসিএসবি নিয়ে সংক্ষিপ্ত একটি নিবন্ধ লেখেন। সেখানে বলা হয়েছে, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে বিশেষ করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে ইসলামি উগ্রপন্থিদের কর্মকাণ্ড নিয়ে রির্পোট করার মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অবদান রেখেছে জিসিএসবি। ২০০৯ সালের আরেকটি গোয়েন্দা নথিতে কিভাবে বাংলাদেশে গোয়েন্দাগিরি হয়েছে তার বিস্তারিত দেয়া আছে। ওই নথিতে বলা হয়েছে, জিসিএসবির 'ওসিআর'নামক ইউনিটের একটি দল- সিগন্যালস ইন্টেলিজেন্স ডেভেলপমেন্ট টিম ওই গোয়েন্দাগিরি পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত। জিসিএসপি সরাসরি নজরদারি করেনি বলে প্রতীয়মান হয়। এর পরিবর্তে তারা মিত্র একটি সংস্থার নজরদারি সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে। ২০০৯ সালের ওই নথিতে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থায় আড়ি পাতার জন্য রাজধানী ঢাকায় বিশেষ একটি স্থাপনা রয়েছে। উল্লেখ্য, গোপন একটি আড়ি পাতার স্থান লুকানোর জন্য নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশে কোন দূতাবাস বা অন্য কোন আনুষ্ঠানিক ভবন নেই। স্নোডেনের নথিতে ইঙ্গিত মেলে ঢাকা ইউনিটটি মার্কিন নিয়ন্ত্রণাধীন একটি ভবনের ভেতরে অবস্থিত। সেখানের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে এনএসএ এবং সিআইএ। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা এফ-৬ পরিবেশ জরিপের বর্ধিত অংশের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ জিএসএম (মোবাইল ফোন) যোগাযোগ সংগ্রহের কাজ অব্যাহত রয়েছে। এফ-৬ সংকেতটি ব্যবহার করা হয় স্পেশাল কালেকশন সার্ভিস নামক সিআইএ-এনএসএ যৌথ একটি ইউনিটের জন্য যারা মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেট থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আড়ি পাতে। রিপোর্টে বলা হয়, মোবাইল ফোনে আড়ি পাতার ওই স্থাপনাটি বেশিরভাগ জিসিএসবি ব্যবহার করে। নিউজিল্যান্ডের গ্রিন পার্টির সহ-দলপতি রাসেল নরম্যান মনে করেন নিউজিল্যান্ডের উচিত বাংলাদেশকে গোয়েন্দা সহায়তা দেয়া বন্ধ করা। তিনি বলেন, জিসিএসপি নিউজিল্যান্ডকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থার সবগুলো ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘতে জড়িত হয়েছে। কাজেই এটা নিশ্চিত করা অসম্ভব যে তাদের কাছে দেয়া তথ্য নিরপরাধ মানুষকে হত্যা বা নির্যাতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। ২০১৩ সালের এনএসএ রিপোর্টে জানা গেছে জিসিএসবি তাদের বাংলাদেশে প্রাপ্ত তথ্য দিয়েছে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে। এতে বলা হয়, জিসিএসবির বাংলাদেশ সন্ত্রাসবিরোধী রিপোর্টে নতুন সব গোয়েন্দা সূত্র পাওয়া গেছে যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, সিআইএ এবং ভারতকে গত এক বছরে সফল সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাতে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কোনটি তা সেখানে উল্লেখ করা হয়নি। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে বাংলাদেশের একাধিক সংস্থা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইনটেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) আর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ। আর দেশটিতে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় সংস্থা হলো র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব। এসব সংস্থাগুলোর প্রতিটির বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে। উদাহরণস্বরূপ ২০০৮ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ করে যে ঢাকার মগবাজারে স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদর দপ্তরটি আটক ব্যক্তিদের নির্যাতনে ব্যবহার করা হয়। ২০১০ সালে একজন ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী অভিযোগ করেন যে, এনএসআই তাকে গ্রেপ্তার, নির্যাতন করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। দুবছর পর ওই কর্মীকে রহস্যময় পরিস্থিতিতে মৃত পাওয়া যায়। তার পা আর পায়ের আঙুল ছিল ভাঙা। সারা শরীরে ছিল নির্যাতনের চিহ্ন। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আর প্রধান পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলো একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। সব থেকে উল্লেখযোগ্য হলো, টাস্কফোর্স ফর ইন্টেরোগেশন সেল নামক কুখ্যাত এক সেলের অংশ হিসেবে তারা একসঙ্গে কাজ করে। র্যাবের নিয়ন্ত্রণাধীন ঢাকার উত্তরে একটি ভবনের ভেতর তা অবস্থিত। ২০১১ সালে বৃটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকা প্রতিবেদন করে, ওই ইন্টেরোগেশন সেলকে 'রাষ্ট্রের শত্রুদের কাছ থেকে তথ্য আর স্বীকারোক্তি বের করে নিতে ব্যবহার করা হয়েছিল। এটাকে একটি 'টর্চার সেন্টার'বলে উল্লেখ করা হয় যা আটক ব্যক্তিদের ওপর 'ইচ্ছাকৃত এবং নিয়মতান্ত্রিক'অন্যায় ব্যবহার চালানোর জন্য ব্যবহার করা হতো। ২০০৯ সালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত অভিযোগে সেখানে আটক এক বৃটিশ নাগরিককে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ আসে। তার মুখ ঢেকে ও চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে ডান কাঁধে ও মেরুদণ্ডের নিম্নভাগে ড্রিল চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য মতে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ অন্য যেসব নির্যাতনের পদ্ধতি ব্যবহার করে তার মধ্যে রয়েছে, এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া, আঙুলে পেরেক গেঁথে দেয়া, বৈদ্যুতিক শক দেয়া, লোহার রড দিয়ে পায়ে মারধর, পিঠে বালি ছড়িয়ে দিয়ে লাঠি দিয়ে প্রহার, বরফ দিয়ে নির্যাতন, আঙুল ছিদ্র করে দেয়া আর মৃত্যুদণ্ডের নকল মহড়া। গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন সরকার র্যাব সদস্যদের দ্বারা গর্হিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণ উল্লেখ করে র্যাবের জন্য তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। একই মাসে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এতে দেশের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ও নিয়মবদ্ধ নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্মম কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ আনা হয় যেসব অপরাধ মানবতা বিরোধী অপরাধের সামিল। এনএসএ নথি থেকে এটা স্পষ্ট হয়নি, বাংলাদেশকে দেয়া গোয়েন্দা তথ্য কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে কার্যকর কোন তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা ছিল কি না। এসব তথ্য ব্যবহার করে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে কি না সে বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে নিউজিল্যান্ড নিশ্চয়তা চেয়েছে বা পেয়েছে কি না তাও স্পষ্ট নয়। তবে এতে এতটুকু স্পষ্ট হয়েছে যে, জিসিএসবি দ্বিমুখী পন্থা অবলম্বন করেছে। একদিকে তারা যেমন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সঙ্গে গোয়েন্দা দিয়েছে। অপরদিকে তারা গোপনে র্যাবের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করেছে। ২০০৯ সালের একটি জিসিএসবি রিপোর্টে বলা হয়, এফ-৬ আড়ি পাতার ইউনিট র্যাব সদরদপ্তর থেকে বিভিন্ন র্যাব ইউটিটে তাদের নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থায় সফলভাবে আড়ি পাততে সক্ষম হয়। আর র্যাবের ওপর আড়ি পাতা সংগ্রহশালায় এমনকি র্যাব সদর দপ্তর ও র্যাব- সদরদপ্তরের একটি পরীক্ষামূলক ভিডিওকনফারেন্স। ওই রিপোর্টে র্যাবের অভ্যন্তরীণ ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলা এক র্যাব কর্মকর্তার আড়ি পাতা ছবিও সংযুক্ত ছিল। রিপোর্টে বলা হয়, 'র্যাব অতীতেও জিসিএসবির জন্য একটি সক্রিয় টার্গেট ছিল। আর বাংলাদেশের স্থানীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতির যদি অবনতি হয় তাহলে এ তথ্য ভবিষ্যৎ অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।'নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদনে শেষে বলা হয়, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা ওই অঞ্চলের অনেক দেশের তুলনায় অনেক কম। দেশটি নিউজিল্যান্ড থেকে অনেক দূরে। আর জিসিএসবি এ কাজ যে নিউজিল্যান্ডের প্রতি সরাসরি কোন হুমকির জবাবে ছিল তেমন কোন ইঙ্গিতও নেই। এদিকে, রেডিও নিউজিল্যান্ডের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির প্রধামনন্ত্রী জন কি জিসিএসবি'র বিরুদ্ধে নতুন এসব অভিযোগ নিয়ে কোন আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানান।
http://mzamin.com/details.php?mzamin=+NzE4NDc%3D&s=Mw%3D%3D
GCSB's secret Bangladesh spy mission
http://m.nzherald.co.nz/nz/news/article.cfm?c_id=1&objectid=11433216
বাংলাদেশে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। দেশটির গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশনস সিকিউরিটি ব্যুরো (জিসিএসবি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে গোপন এ নজরদারি কার্যক্রম চালায়। মোবাইল যোগাযোগে আড়ি পাতার জন্য রাজধানী ঢাকাতেই রয়েছে বিশেষ এক স্থাপনা। এছাড়া তারা গোয়েন্দাগিরিতে প্রাপ্ত তথ্য আদান-প্রদান করেছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সঙ্গে। অপরদিকে আবার র্যাবের নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও আড়ি পাতে সংস্থাটি। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এনএসএ'র গোপন নজরদারি কার্যক্রম ফাঁস করে দেয়া অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেনের নতুন ফাঁস করা নথিতে উঠে এসেছে এসব তথ্য। এ নিয়ে নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যমগুলো গতকাল ছিল সরব।
নিউজিল্যান্ডের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড মার্কিন সংবাদ ওয়েবসাইট দ্য ইন্টারসেপ্টের সঙ্গে যৌথভাবে ফাঁস হওয়া নতুন নথিপত্রগুলো বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন ছেপেছে। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকা সত্ত্বেও নিউজিল্যান্ড গোপন নজরদারিতে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য তাদের সঙ্গে আদান-প্রদান করেছে। এ নথিতে স্পষ্ট হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট এ দেশটিতে জিসিএসবি তাদের ইলেক্ট্রনিক গোয়েন্দা অভিযান চালাতে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করার জন্য এ নজরদারি চালানো হয়। ২০০১ সালে ৯/১১ হামলার পর চালু করা হয় ওই নজরদারি ব্যবস্থা। বাংলাদেশে গোয়েন্দাগিরির বিষয়টি উঠে এসেছে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, এনএসএ'র এপ্রিল, ২০১৩'র এক রিপোর্টে। রিপোর্টের বিষয়বস্তু ছিল নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে এনএসএর পারস্পরিক সম্পর্ক। 'এনএসএ-কে অংশীদাররা কি সরবরাহ করে' (হোয়াট পার্টনার প্রোভাইডস টু এনএসএ) শীর্ষক একটি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, '২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশ সন্ত্রাসবিরোধী টার্গেটের ওপর গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের জন্য নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকায় রয়েছে জিসিএসবি। সংস্থাটি বাংলাদেশ সন্ত্রাসবিরোধী বিষয়ক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংকেতিক গোয়েন্দা তথ্যসূত্র যারা মার্কিন গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের কাছে রিপোর্ট করে।'জিসিএসবি সদস্যদের সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাসহ পাঠানো হয়েছে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। বাংলাদেশী গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নির্যাতন প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা অবহেলা করা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানবাধিকার সংস্থাগুলো একাধিক রিপোর্ট নথিভুক্ত করেছে। এ যাবৎ কালে ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে বাংলাদেশে জিসিএসবির নজরদারি অভিযানের বিষয়টি সব থেকে আশ্চর্যজনক বলে হেরাল্ডের প্রতিবেদনে আখ্যা দেয়া হয়। নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান তেমনটা নেই বললে চলে। নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা আছে, 'নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ যদিও পারস্পরিক সম্পৃক্ততা সীমিত। তবে, নিউজিল্যান্ড সরকারের এক সূত্র হেরাল্ডকে জানিয়েছেন যে, জিসিএসবির চারটি বিশ্লেষণ বিভাগের একটির প্রধান মনোযোগ হলো বাংলাদেশ। আর এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এমনটাই রয়েছে। বিভাগটিকে আইসিটি বলা হয় যা আন্তর্জাতিক অভিযান সংক্রান্ত ইস্যুগুলোর বিভাগ। ৯/১১ হামলার পর সন্ত্রাসী হুমকির বিষয়ে মনোযোগ দিতে ২০০২ সালের এপ্রিলে বিভাগটি স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ প্রকল্পটি ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্কের অধীনে শুরু হয় বলে প্রতীয়মান হয়। ইরাকে মার্কিন অভিযানে যোগ দেয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার পর যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের বিষয়ে সে সময় ইতিবাচক মনোভাব ছিল তার সরকারের। 'নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে এনএসএর সম্পর্ক'শীর্ষক ওই নথিতে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরুর সময় ২০০৪ উল্লেখ করা আছে। কিন্তু এনএসএর এক কর্মকর্তা ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে জিসিএসবি নিয়ে সংক্ষিপ্ত একটি নিবন্ধ লেখেন। সেখানে বলা হয়েছে, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে বিশেষ করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে ইসলামি উগ্রপন্থিদের কর্মকাণ্ড নিয়ে রির্পোট করার মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অবদান রেখেছে জিসিএসবি। ২০০৯ সালের আরেকটি গোয়েন্দা নথিতে কিভাবে বাংলাদেশে গোয়েন্দাগিরি হয়েছে তার বিস্তারিত দেয়া আছে। ওই নথিতে বলা হয়েছে, জিসিএসবির 'ওসিআর'নামক ইউনিটের একটি দল- সিগন্যালস ইন্টেলিজেন্স ডেভেলপমেন্ট টিম ওই গোয়েন্দাগিরি পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত। জিসিএসপি সরাসরি নজরদারি করেনি বলে প্রতীয়মান হয়। এর পরিবর্তে তারা মিত্র একটি সংস্থার নজরদারি সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে। ২০০৯ সালের ওই নথিতে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থায় আড়ি পাতার জন্য রাজধানী ঢাকায় বিশেষ একটি স্থাপনা রয়েছে। উল্লেখ্য, গোপন একটি আড়ি পাতার স্থান লুকানোর জন্য নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশে কোন দূতাবাস বা অন্য কোন আনুষ্ঠানিক ভবন নেই। স্নোডেনের নথিতে ইঙ্গিত মেলে ঢাকা ইউনিটটি মার্কিন নিয়ন্ত্রণাধীন একটি ভবনের ভেতরে অবস্থিত। সেখানের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে এনএসএ এবং সিআইএ। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা এফ-৬ পরিবেশ জরিপের বর্ধিত অংশের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ জিএসএম (মোবাইল ফোন) যোগাযোগ সংগ্রহের কাজ অব্যাহত রয়েছে। এফ-৬ সংকেতটি ব্যবহার করা হয় স্পেশাল কালেকশন সার্ভিস নামক সিআইএ-এনএসএ যৌথ একটি ইউনিটের জন্য যারা মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেট থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আড়ি পাতে। রিপোর্টে বলা হয়, মোবাইল ফোনে আড়ি পাতার ওই স্থাপনাটি বেশিরভাগ জিসিএসবি ব্যবহার করে। নিউজিল্যান্ডের গ্রিন পার্টির সহ-দলপতি রাসেল নরম্যান মনে করেন নিউজিল্যান্ডের উচিত বাংলাদেশকে গোয়েন্দা সহায়তা দেয়া বন্ধ করা। তিনি বলেন, জিসিএসপি নিউজিল্যান্ডকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থার সবগুলো ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘতে জড়িত হয়েছে। কাজেই এটা নিশ্চিত করা অসম্ভব যে তাদের কাছে দেয়া তথ্য নিরপরাধ মানুষকে হত্যা বা নির্যাতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। ২০১৩ সালের এনএসএ রিপোর্টে জানা গেছে জিসিএসবি তাদের বাংলাদেশে প্রাপ্ত তথ্য দিয়েছে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে। এতে বলা হয়, জিসিএসবির বাংলাদেশ সন্ত্রাসবিরোধী রিপোর্টে নতুন সব গোয়েন্দা সূত্র পাওয়া গেছে যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, সিআইএ এবং ভারতকে গত এক বছরে সফল সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাতে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কোনটি তা সেখানে উল্লেখ করা হয়নি। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে বাংলাদেশের একাধিক সংস্থা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইনটেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) আর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ। আর দেশটিতে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় সংস্থা হলো র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব। এসব সংস্থাগুলোর প্রতিটির বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে। উদাহরণস্বরূপ ২০০৮ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ করে যে ঢাকার মগবাজারে স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদর দপ্তরটি আটক ব্যক্তিদের নির্যাতনে ব্যবহার করা হয়। ২০১০ সালে একজন ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী অভিযোগ করেন যে, এনএসআই তাকে গ্রেপ্তার, নির্যাতন করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। দুবছর পর ওই কর্মীকে রহস্যময় পরিস্থিতিতে মৃত পাওয়া যায়। তার পা আর পায়ের আঙুল ছিল ভাঙা। সারা শরীরে ছিল নির্যাতনের চিহ্ন। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আর প্রধান পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলো একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। সব থেকে উল্লেখযোগ্য হলো, টাস্কফোর্স ফর ইন্টেরোগেশন সেল নামক কুখ্যাত এক সেলের অংশ হিসেবে তারা একসঙ্গে কাজ করে। র্যাবের নিয়ন্ত্রণাধীন ঢাকার উত্তরে একটি ভবনের ভেতর তা অবস্থিত। ২০১১ সালে বৃটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকা প্রতিবেদন করে, ওই ইন্টেরোগেশন সেলকে 'রাষ্ট্রের শত্রুদের কাছ থেকে তথ্য আর স্বীকারোক্তি বের করে নিতে ব্যবহার করা হয়েছিল। এটাকে একটি 'টর্চার সেন্টার'বলে উল্লেখ করা হয় যা আটক ব্যক্তিদের ওপর 'ইচ্ছাকৃত এবং নিয়মতান্ত্রিক'অন্যায় ব্যবহার চালানোর জন্য ব্যবহার করা হতো। ২০০৯ সালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত অভিযোগে সেখানে আটক এক বৃটিশ নাগরিককে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ আসে। তার মুখ ঢেকে ও চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে ডান কাঁধে ও মেরুদণ্ডের নিম্নভাগে ড্রিল চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য মতে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ অন্য যেসব নির্যাতনের পদ্ধতি ব্যবহার করে তার মধ্যে রয়েছে, এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া, আঙুলে পেরেক গেঁথে দেয়া, বৈদ্যুতিক শক দেয়া, লোহার রড দিয়ে পায়ে মারধর, পিঠে বালি ছড়িয়ে দিয়ে লাঠি দিয়ে প্রহার, বরফ দিয়ে নির্যাতন, আঙুল ছিদ্র করে দেয়া আর মৃত্যুদণ্ডের নকল মহড়া। গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন সরকার র্যাব সদস্যদের দ্বারা গর্হিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণ উল্লেখ করে র্যাবের জন্য তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। একই মাসে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এতে দেশের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ও নিয়মবদ্ধ নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্মম কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ আনা হয় যেসব অপরাধ মানবতা বিরোধী অপরাধের সামিল। এনএসএ নথি থেকে এটা স্পষ্ট হয়নি, বাংলাদেশকে দেয়া গোয়েন্দা তথ্য কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে কার্যকর কোন তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা ছিল কি না। এসব তথ্য ব্যবহার করে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে কি না সে বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে নিউজিল্যান্ড নিশ্চয়তা চেয়েছে বা পেয়েছে কি না তাও স্পষ্ট নয়। তবে এতে এতটুকু স্পষ্ট হয়েছে যে, জিসিএসবি দ্বিমুখী পন্থা অবলম্বন করেছে। একদিকে তারা যেমন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সঙ্গে গোয়েন্দা দিয়েছে। অপরদিকে তারা গোপনে র্যাবের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করেছে। ২০০৯ সালের একটি জিসিএসবি রিপোর্টে বলা হয়, এফ-৬ আড়ি পাতার ইউনিট র্যাব সদরদপ্তর থেকে বিভিন্ন র্যাব ইউটিটে তাদের নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থায় সফলভাবে আড়ি পাততে সক্ষম হয়। আর র্যাবের ওপর আড়ি পাতা সংগ্রহশালায় এমনকি র্যাব সদর দপ্তর ও র্যাব- সদরদপ্তরের একটি পরীক্ষামূলক ভিডিওকনফারেন্স। ওই রিপোর্টে র্যাবের অভ্যন্তরীণ ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলা এক র্যাব কর্মকর্তার আড়ি পাতা ছবিও সংযুক্ত ছিল। রিপোর্টে বলা হয়, 'র্যাব অতীতেও জিসিএসবির জন্য একটি সক্রিয় টার্গেট ছিল। আর বাংলাদেশের স্থানীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতির যদি অবনতি হয় তাহলে এ তথ্য ভবিষ্যৎ অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।'নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদনে শেষে বলা হয়, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা ওই অঞ্চলের অনেক দেশের তুলনায় অনেক কম। দেশটি নিউজিল্যান্ড থেকে অনেক দূরে। আর জিসিএসবি এ কাজ যে নিউজিল্যান্ডের প্রতি সরাসরি কোন হুমকির জবাবে ছিল তেমন কোন ইঙ্গিতও নেই। এদিকে, রেডিও নিউজিল্যান্ডের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির প্রধামনন্ত্রী জন কি জিসিএসবি'র বিরুদ্ধে নতুন এসব অভিযোগ নিয়ে কোন আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানান।
http://mzamin.com/details.php?mzamin=+NzE4NDc%3D&s=Mw%3D%3D