পহেলা বৈশাখ নির্বিঘ্নে করতে সারাদেশে রেড এ্যালার্ট
- রমনা বটমূলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থলে থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাঙালীর প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ নির্বিঘœ করতে পুরো সপ্তাহজুড়েই সারাদেশে রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। আজ বিকেল পাঁচটা থেকে রমনা পার্কসহ আশপাশের রাস্তায় যানবাহন চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে রমনা ও সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান থেকে সর্বসাধারণকে চলে যেতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখ সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত রমনা পার্ক ও সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। কোন প্রকার ভাসমান দোকান ও হকার বসতে দেয়া হচ্ছে না। এ সব এলাকায় যাতায়াতকারীদের গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।
শিশু-কিশোরদের জামার পকেটে প্রয়োজনীয় মোবাইল ফোন নম্বর বা যোগাযোগের ঠিকানা লিখে দিয়ে রাখতে অনুষ্ঠানস্থলে গমনাগমনকারীদের অনুরোধ করা হয়েছে। যাতে কেউ হারিয়ে গেলে তাকে পাওয়া সহজ হয়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ইলিশ কিংবা যে কোন ধরনের খাবার গ্রহণের পূর্বে খাবারের মানের পাশাপাশি মূল্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের প্রতিবাদে পহেলা বৈশাখের আগের দিন আজ সোমবার সারাদেশে জামায়াতের হরতাল ডাকার বিষয়টি মাথায় রেখেই সারাদেশে রেড এলার্ট থাকছে। বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকছে রমনা বটমূলসহ রাজধানীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থল। আকাশে র্যাবের হেলিকপ্টার টহল দিবে, রমনার ঝিলে প্রস্তুত থাকছে নৌবাহিনীর ডুবুরী দল, ডগ স্কোয়াড, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াট, ক্রাইসিস রেসপন্স টিম, পুলিশ ও র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স আর পুরো এলাকায় বসানো হয়েছে অসংখ্য সিসি ক্যামেরা। থাকছে ওয়াচ টাওয়ার। সেখানে শক্তিশালী বাইন্যুকুলার সংযোজিত বিশেষ রাইফেল নিয়ে পাহারায় থাকছে র্যাব ও সোয়াট। এ সব রাইফেল দিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও অনায়াসে আঘাত করা সম্ভব।
রবিবার দুপুর আড়াইটায় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানান, নগরীতে কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উদ্বেগের কোন কারণ নেই। রমনা পার্ক এলাকায় হাতব্যাগ বা অন্যান্য ব্যাগ বহন, ধূমপান ও গাছে ওঠা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান শেষ করতে আয়োজকদের অনুরোধ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানানো হয়, উত্তর দিকে থেকে আসা গাড়ি এবি হাউস থেকে হলি ফ্যামিলি রাস্তায়, পূর্বদিক থেকে আসা গাড়ি জিরো পয়েন্ট থেকে আব্দুল গণি রোড ও মৎসভবন থেকে সেগুন বাগিচার কার্পেট গলি পর্যন্ত, দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা গাড়ি জগন্নাথ হল থেকে পলাশীর রাস্তায় এবং পশ্চিম দিক থেকে আসা যানবাহন আজিজ সুপার মার্কেটের পাশের রাস্তায় পার্কিং করা যাবে।
রবিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় রমনা বটমূলে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করে র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানান, যে কোন ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে র্যাব প্রস্তুত রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও কন্ট্রোলরুম স্থাপন করে পুরো এলাকার ওপর নজর রাখবে। বিশেষ টহলে থাকবে র্যাবের হেলিকপ্টার। মঙ্গল শোভাযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাবের বিশেষ দল থাকছে। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে নীলক্ষেত পলাশী হয়ে বকশীবাজার-চানখারপুল হয়ে হাইকোর্ট মাজার হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে।
আজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ডিএমপি কমিশনারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা রমনা বটমূলের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের কথা রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, রমনা বটমূলে প্রবেশ পথগুলোতে বসানো হচ্ছে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর। ওয়াচ টাওয়ারে বিশেষ রাইফেল নিয়ে পাহারা দিচ্ছে র্যাব। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও থাকছে জলকামান, এপিসি (আর্মার পেট্রোল কার) ও মহিলা গোয়েন্দা দল। অসুস্থদের সেবা দিতে থাকছে ভ্রাম্যমাণ একাধিক মেডিক্যাল টিম। থাকছে অনুসন্ধান সেল। পুরো এলাকায় থাকছে অসংখ্য বেরিকেড আর চেকপোস্ট। বসছে একাধিক কন্ট্রোলরুম। সেখান থেকে পুরো এলাকার ওপর মনিটরিং করা হবে। অনুষ্ঠানস্থলে সন্দেহজনক কোন সরঞ্জাম, বস্তু, ব্যাগ, অস্ত্র, ছুরি, কাঁচি, পটকা, দাহ্যপদার্থ, ক্ষয়কারক তরল, ব্লেড, নেইল কাটার, দিয়াশলাই, গ্যাসলাইটার সঙ্গে বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।