Quantcast
Channel: My story Troubled Galaxy Destroyed dreams
Viewing all articles
Browse latest Browse all 6050

মুজিবকে যারা হত্যা করল, তারা গোড়ায় সবাই মুজিবের অনুগতই ছিল।

$
0
0

আহমদ শরীফের ডায়েরি #০৩

Kai Kaus

"... হুজুগে বাঙালী, সুযোগসন্ধানী, সুবিধেবাদী নগদজীবী বাঙালী। চাটুকারিতায় তোয়াজে তোষামোদে স্তবে-স্তুতিতে ছোট-বড়-মন্দ-মাঝারি সব দেবতার পূজারী বাঙালী আবার যথাসময়ে যথাস্থানে যথাপ্রয়োজনে যথাপাত্রে অকৃতজ্ঞ হয়ে বেওয়াফা হয়ে নতুন শক্তির ওফাদারী হচ্ছে বাঙালীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। চিরকাল বাঙালী তাই পর-প্রভাবিত, মেরুদন্ডহীন-অনৃতভাষী, আত্মসম্মানবোধ-রিক্ত, পরাধীন, ভীত-ভেতো, সরকার ঘেঁষা, সরকার ভীরু ও সরকারের পা চাটা। তার বাঘা-তেজ নেই, আছে সর্বার্থে ও সর্বাত্মকভাবে কুকুরেপনা - তবু কুকুরের মতো প্রভুর দু:খে-বিপদে-আপদে প্রভুর প্রতি অনুরাগ, আনুগত্য, প্রভুর অনুগামিতা তার থাকে না। এক্ষেত্রে কুকুরেরও অধম। এটি কুকুরের মহৎ গুণ কিন্তু বাঙালীর তা নেই। সে আত্মরতিপরায়ণ বলেই নিমক হারাম।

মুজিবকে যারা হত্যা করল, তারা গোড়ায় সবাই মুজিবের অনুগতই ছিল। শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণার ও প্রণোদনার উৎস ছিলেন, তিনি এ ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্ব অর্জন করেননি নিজ গুণে বা যোগ্যতায়। ছয়দফায় তিনি একজন দলীয় নেতা হয়েছিলেন; গোটা বাঙালীর নয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বাঙালী মাত্রই অপমানিত বোধ করে উত্তেজিত হয়েছিল, কেননা মুসলিমলীগকে ১৯৪৬ সনে ভোট দিয়ে ব্রিটিশের হাত শক্ত করে ব্রিটিশের ভেদনীতিকে সফল করে পাকিস্তানপ্রাপ্তি ঘটিয়েছিল বাঙালী মুসলিমরাই, উত্তর ভারতীয় রইস মুসলিমদের প্র্য়োজন-পূরণ লক্ষ্য না বুঝেই। শেখ মুজিব বাঙালীর ক্ষোভ ও ক্রোধের মুক্তির প্রতীক ও পরম প্রতিভু হয়ে উঠলেন।

শেখ মুজিবের সাড়ে তিন বছরের দু:শাসন কিন্তু হত্যা-লুন্ঠনের বিভীষিকা মুজিবকে গণশত্রুতে পরিণত করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অন্তর্জাতিক রাজনীতির স্বার্থে সে সুযোগে তাকে হত্যা করায়।

রাজনীতির ক্ষেত্রে এমনি অকৃতজ্ঞতার নজির অসংখ্য। রাজনীতির রাজা-রাজ্যের ইতিহাসই তার সাক্ষ্য ও প্রমাণ। শোয়া দুশ বছর আগে বুরবন বংশ এভাবেই নিশ্চিহ্ন হয়েছিল ফ্রান্সে। ১৯১৮ সনে সবংশ নিধন হলেন রাশিয়ার জার। এক সময়ের জাতীয় ত্রাতা ওলিভার ক্রমওয়েলকে স্মরণে রাখেনি ইংল্যান্ড, মায়ানমারের আউংসাংও নিহত হয়েছিলেন কেবিনেট সদস্য সহ। ভারত স্বাধীন হল যার আন্দোলনে সে গান্ধীও হলেন নিহত। অনন্য ব্যক্তিত্বের ইন্দিরা, তার পুত্র রাজীব, জুলফিকার আলী ভুট্টো, তারও আগে লিয়াকত আলী, জন কেনেডী, প্রেমাদাসা প্রমুখ অসংখ্য রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতা-সংগ্রামী নিহত হয়েছেন রুষ্ট ও দুষ্ট অকৃতজ্ঞ রাজনীতিক আততায়ীর হাতে।

শেখ মুজিবও এভাবেই এ নিয়মেই হয়েছে সপরিবারে নিহত্। কিন্তু মুজিবকন্যা হাসিনা এবং তার চাটুকার আঁতেলরা ও রাজনীতিকরা একে যেন পৃথিবীতে নতুন ঘটা একটা অসামান্য বীভৎস ঘটনা রূপে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন গত তেরো মাস ধরে। কান ঝালাপালা হয়ে গেল। বাড়াবাড়ি ধৈর্যের ও সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে। রুচিমান সংস্কৃতিমান যুক্তি-বুদ্ধিমান লোকেরা আউং সাং কন্যা সুকি, ভুট্টোর কন্যা, বন্দরনায়েকের কন্যা, ইন্দিরার পুত্র, গান্ধীপরিবার, কেনেডি পরিবার কখনো এমনি হত্যার জন্য প্রতিহিংসাপরায়ণতার আভাস দেয়নি, কিংবা এমনি নগ্নভাবে পিতৃ বা পরিবার-হত্যার ফায়দা ওঠানোর চেষ্টা করেনি কেউ।

হাসিনার মধ্যেই কেবল মৌরুসী সম্পত্তির মতো বাংলাদেশ দখলে রাখার এমনি আস্ফালন ও মায়াকান্না দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে শিক্ষার সুরুচির বিবেচনা-শক্তির কোন পরিচয় মেলে না। তার স্বপ্ন ও সাধ অনেক কিন্তু যোগ্যতা নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণতার রাক্ষুসে হিংস্রতা এবং ক্ষমতার গদী স্থায়ী ভাবে ধরে রাখার লিপ্সাই পরিবারকে মানে, যশে, খ্যাতিতে, ক্ষমতায়, বিত্তে, বেসাতে, অর্থ-সম্পদে চিরপ্রতিষ্ঠ রাখার মোহ তাকে পেয়ে বসেছে। এ পথেই তার ঘটবে আশু পতন॥" - ০৮/০৮/১৯৯৬

- আহমদ শরীফ / আহমদ শরীফের ডায়েরি : ভাব-বুদ্বুদ ॥ [ জাগৃতি প্রকাশনী - ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ । পৃ: ১৫৭-১৫৮ ]


Viewing all articles
Browse latest Browse all 6050

Trending Articles