Sushanta Kar | 12:25pm Mar 8 |
ধর্ষক মাত্র, ধর্ষণের অভিযোগে হাজতবাসী মাত্রকে নাগাল্যাণ্ডে যখন উন্মত্ত জনতা মেরে প্রকাশ্যে মেরে ফেলল তখন তাদের ভাবাদর্শগত প্রেরণা মোটেও 'নারী মুক্তি' নয়। উগ্রজাতীয়তাবাদ। নিহতের বড় ভাই কারগিল যুদ্ধে আহত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছিলেন। তবু, এই পুরুষকে হত্যার জন্যে 'ধর্ষক' প্রচারটিই যথেষ্ঠ ছিল না। 'বাংলাদেশী অনুপ্রেবেশকারী' বানিয়ে দেয়া হলো। গোটা উত্তরপূর্বাঞ্চলে বাঙালি মুসলমান হলেই 'বাংলাদেশী' বলে ধরে চড় থাপ্পড় কষিয়ে দেয়া, গুলি করে মেরে ফেলা দীর্ঘদিনের বর্ণবিদ্বেষী রাজনীতি। সরিফউদ্দীনের মৃত্য সেই রাজনীতির শেষ সংযোজন মাত্র। অন্যদিকে বারাক ওবামা প্রজাতন্ত্র দিবসে দেশে বেড়াতে এলে যারা উল্লাসে মাতেন দিল্লীর নির্ভয়াকাণ্ড নিয়ে বিবিসির তথ্যচিত্রের সমর্থকদের তারা ঔপনিবেশিক চেতনার ধারক বলেন। এই তথ্যচিত্র দেখিয়েছে দেশজোড়া প্রতিবাদ, বিশ্বময় নিন্দা, এবং মৃত্যদণ্ড আসামীকে মোটেও ভীত বা অনুতপ্ত করেনি। শুধু সেই নয়, একাধিক আইনজীবীও মনে করেন রাত নটার পরে বাড়ির বাইরে বেরোয় যে মেয়েরা তারা চরিত্রহীনা। তাদের ধর্ষণ করা উচিত। নিজের সন্ততি হলেও গায়ে কেরোসিন ঢেলে মেরে ফেলা উচিত। এই সব উন্মাদ পুরুষতান্ত্রিকেরা মোটেও ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি নয়। নির্ভয়া ধর্ষণ বিশ্বকে দেখিয়েছে ভারতীয়দের প্রতিবাদী চরিত্রকেও। তারপরেও যারা এই তথ্যচিত্রকে ভয় পাচ্ছেন, তারা পুরুষতন্ত্রেরই ধারক বাহক। কিন্তু সেই প্রশ্নকে লুকিয়ে একে জড়িয়ে ফেলছেন ভারতবর্ষের সম্মানের সঙ্গে। নাগা-উগ্রজাতীয়তাবাদ কিম্বা ভারতীয় উগ্রজাতীয়তাবাদ, 'বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী' বিরোধী বর্ণবিদ্বেষ, কিম্বা বাকি ভারতে পূর্বোত্তরীয় বিরোধী বিদ্বেষ, কিম্বা গোটা দেশে দলিত আদিবাসী বিরোধী বিদ্বেষ, এর কোনোটাই পুরুষতন্ত্র মুক্ত নয়। পুরুষতন্ত্র মুক্ত নয় 'হারামজাদা' ' ৪০ পিল্লে', 'হিন্দুরমণীর চার সন্তান', 'মুসলমান মেয়েদের কবর থেকে তুলে ধর্ষণে'র প্রবক্তারাও। নারী মুক্তি তাই শুধু পুরুষবিরোধী লড়াই নয়। একদিকে নির্ভয়া আর দিকে শরিফউদ্দীন ---দুই দেশে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লালিত, বর্ধিত পুরুষতন্ত্রের শিকার। পুরুষতন্ত্র পুরুষকেও ছাড় দেয় না। তাই, সে পুরুষেরও সংগ্রাম।শ্রেণি এবং পরিচিতিগুলোর সম মর্যাদা-সম অধিকার ছাড়া এ অর্জিত হবারই নয়। নারীকে 'নারীচিন্তা'তে আবদ্ধ রাখার সমস্ত আয়োজনও তাই নারী বিদ্বেষী পুরুষতন্ত্র। পুরুষতান্ত্রিক বাজার আজকের দিনে আয়োজন করবে নারীর জন্যে ফ্যাসন শো, রান্নার প্রতিযোগিতা। সেই বাজারী নারী দিবসকে বর্জন করে, বৃহত্তর সমাজ চিন্তায় নারীকে শরিক করেই পালিত হোক মহান নারী দিবস। সবাইকে নারী দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা।