১৯০৮ সালের ৮ই মার্চ দিনটিতে বস্ত্র-চর্ম সহ বিভিন্ন শিল্পের নারী শ্রমিকরা আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে কাজের সময় কমানো, কাজের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সমকাজে পুরুষের সমান মজুরি, ভোটাধিকার ও শিশুশ্রম বিলোপের দাবিতে হাজারে হাজারে পথে নেমেছিল। তারপর ১৯১০ সালে এই দিনটিকে স্মরণে রেখেই একটা দীর্ঘ সংগ্রামের পথ চলার শুরু। সংগ্রাম, এক সমাজ গড়ে তোলার যেখানে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ থাকবে না, থাকবে না মানুষে মানুষে ধনী-দরিদ্র, উচু-নিচু, জাত-ধর্ম-বর্ণ ভিত্তিক ভেদাভেদ। শতাধিক বছরের এই সংগ্রামে মেয়েরা লড়াইকরে জিতেছে বহু অধিকার- শিক্ষার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, ভোটাধিকার, স্বাধীন স্বনির্ভরভাবে বেঁচে থাকার আইনী অধিকার। তবুও, খাতায় কলমে লেখা বহু অধিকারই সমাজের বেশীর ভাগ মেয়ের জীবনে আজও বাস্তবায়িত হয়নি। পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোকে বজায় রেখেই পুঁজিবাদী সমাজে বদলে গেছে শোষণের ধরণ। যেমন বিভিন্ন ছোট বড় এনজিও, নিউজ মিডিয়া, বিজ্ঞাপনের কল্যাণে 'নারীদিবস'মানে আমাদের বোঝানো হয়- মেয়েদের জন্য পোশাক, গয়না বা জুতোয় ছাড় বা বড় জোর 'উইমেন হরলিক্স'...
কিন্তু কন্যাভ্রূণ হত্যা, পারিবারীক তথা যৌন হিংসা থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর মদতে রাষ্ট্রীয় ধর্ষন- এই সমাজ বাস্তবতাকে বুকে নিয়ে নারীর বেঁচে থাকার অধিকার, মর্যাদাপূর্ণ কাজের অধিকার, শিক্ষার অধিকার তথা প্রকৃত লিঙ্গসাম্যের অধিকারের পক্ষে লড়াই জারি রয়েছে আজও। আর এই লিঙ্গসাম্যের অধিকারের প্রশ্নে, অন্য যৌনতার সাথীদের স্বপক্ষে শুরু হয়েছে ৩৭৭ ধারার পুনঃ আইনীকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
আশার কথা এই, যে আজ গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে ধর্ষণ, যৌন হিংসা তথা লিঙ্গ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন একপ্রকার গতিপ্রাপ্ত হয়েছে; এবং তা হয়েছে সাধারণ মানুষ, ছাত্রছাত্রী, যুবক যুবতীদের স্বাধীন স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণের কারণেই। আমরাও সচেতনভাবেই সেই আন্দোলনে সামিল। তাই সমাজের সমস্ত স্তরের মেয়েদের অধিকার-মর্যাদা-মুক্তির প্রকৃত লড়াই তথা লিঙ্গবৈষম্যবিহীন সমাজ গড়ে তোলার লড়াইকে এগিয়ে যেতে হবে আরো অনেক পথ। আসুন এই আন্দোলনকে প্রকৃত বদলের দিশায় এগিয়ে নিয়ে যাই ...